সাদাচোখে বিশ্লেষণ: "যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে মুহাম্মাদ ﷺ এর বিয়ে কি অজাচার (Incest) ছিল, নাকি ইতিহাস নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহলের চরম মিথ্যাচার?" শেষ পর্ব।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪০:৫০ রাত
লেখাটি একটি বিশেষ কারণে ডিলেট করতে হয়েছিল তাই আবার পোস্ট করলাম।
প্রথম পর্বের লিংক: Click this link
২য় পর্বের লিংক: Click this link
পাঠক, এত উদাহরণ টানার কারণ হল, ইসলাম বিদ্বেশীরা বিশেষত বাংলাভাষী ইসলাম বিদ্বেশীরা যয়নাব (রাঃ) এর সাথে রাসূল ﷺ এর বিবাহের ব্যাপারটি কালিমালিপ্ত করার জন্য সর্বদা জোড়াতালি মারা দুটি গল্প প্রচার করে থাকে সেগুলো হল,
গল্প এক: "কোন এক সময় নবী মুহাম্মাদ ﷺ যয়নাবের ঘরে প্রবেশ করে যখন যয়নাব পোশাকে কিছুটা এলোমেলো ছিল তাই নবী মুহাম্মাদের ﷺ দৃষ্টি তার উপর পরে ফলে.......... যেই ঘটনাটি যাইদ (রাঃ) এর নজর কাড়ে। তিনি তার স্ত্রীর প্রতি নবীর মনোভাব বুঝতে পারেন তাই তার নিকট প্রস্তাব করেন, আমি জয়নাবকে তালাক দিতে চাই (অর্থাৎ আমি তালাক দিই আর আপনি তাকে বিবাহ করে নেন)। জবাবে নবী মুহাম্মাদ ﷺ তার মনোবাসনা (যয়নাব রাঃ কে বিয়ে) গোপন করার জন্য বলেন, তাকে তালাক দিওনা তোমার কাছেই রাখ, খোদাকে ভয় কর।"
গল্প দুই: " মুহাম্মাদ ﷺ বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য যয়নাবের ঘরে প্রবেশ করেন যখন যাইদ (রাঃ) ছিলেননা। যয়নাব পোশাকে কিছুটা এলোমেলো ছিল যা নবী ﷺ এর নজরে পরে এবং এ ঘটনায় যয়নাব (রাঃ) ও মুহাম্মাদ ﷺ দুজনই বিয়ের জন্য অস্হির হয়ে ওঠেন। (আল্লাহ আমাদের এরূপ মিথ্যে থেকে হেফাজত করুন)
পাঠক, এসব নিতান্তই ইসলাম বিদ্বেশীদের মনগড়া মিথ্যাচার ব্যতীত আর কিছুই নয়। এই বিয়ে স্বয়ং মহান আল্লাহ সম্পন্ন করেছেন, এখানে কোন পরকীয়া প্রেম বিষয়ক কারণ জড়িত ছিলনা। তার প্রতি যদি সত্যিই এমন কোন আসক্তি বিদ্যমান থাকত, তবে তিনি তাকে আগেই বিয়ে করতে পারতেন কারণ যয়নাব (রাঃ) সে ব্যাপারে আগেই আগ্রহী ছিলেন। অথচ রাসূল ﷺ যাইদ (রাঃ) এর সাথে তার বিবাহ দিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, "আপনি যা নিজ অন্তরে গোপন রাখছেন আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন" একথার মানে কি?
উত্তর: যখন যাইদ ও যয়নাব (রাঃ) এর বৈবাহিক সম্পর্ক দোদুল্যমান, তারা বিবাহ বিচ্ছেদ চাইছিলেন এবং যাইদ (রাঃ) রীতিমত রাসূল (সাঃ) কে এব্যাপারে ব্যাবস্হা গ্রহণ করতে বলছিলেন, তখনই মহান আল্লাহ ওহী যোগে রাসূল ﷺ কে জানিয়ে দেন যে, তাদের সম্পর্ক টিকবেনা, অচিরেই ভেঙ্গে যাবে এবং আল্লাহ তোমার সাথে যয়নাব (রাঃ) এর বিবাহ দেয়ার দ্বারা আরবদের পোষ্যপুত্র সংক্রান্ত বিশ্বাসের উপরে আঁঘাত হানবেন তা বিলোপের জন্য। তাই যে মুহূর্তে তিনি যাইদ (রাঃ) কে উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, "তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ, আল্লাহকে ভয় কর," সে মুহূর্তেও এ ওহীর বাণীর প্রতি তার মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল কিন্তু তিনি যাইদ (রাঃ) ও অন্যান্য মুসলিমদের কাছে ব্যাপারটি গোপন রাখেন যা আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাজিলের দ্বারা প্রকাশ করে দেন। আর এই ওহীর কথা গোপন করার পেছনেও যৌক্তিকতা ছিল। যে সমাজে কোন পুরুষ যদি রাগ করেও তার স্ত্রীকে বলে ফেলত যে, "তুমি আমার মা" ব্যাস! এতেই তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যেত। অথচ কাউকে মা ডাকলেই বা ছেলে ডাকলেই জেনেটিক ধারা বদলে যায়না। ঠিক এমন পরিস্হিতিতে তাকে রীতিমত সেই সমাজের শত শত বছর ধরে পালন হয়ে আসা পোষ্যপুত্র সংক্রান্ত কুপ্রথার বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে, ফলাফলস্বরূপ তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হবেন। যদিও বাস্তবতা হল, যয়নাব (রাঃ) তার ফুফাতো বোন যার সাথে স্বাভাবিকভাবে বিয়ে কোনভাবেই অনৈতিক নয়। ঠিক একারণেই তিনি সমাজকে ভয় পাচ্ছিলেন। একাধিক হাদিসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য দেয়া হয়েছে। যেমন:-
"ইমাম বায়হাকী (রঃ).. হাম্মাদ ইবনে যায়দ.. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যাইদ (রাঃ) যয়নাব (রাঃ) এর ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে এলে রাসূল ﷺ তাকে বলেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক বজায় রাখ। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ আদৌ কোন কিছু গোপন করে থাকলে অবশ্যই তিনি এই আয়াতটি (যাইদের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে এবং তার সাথে যয়নাব এর বিবাহ হবে) গোপন করতেন। যয়নাব (রাঃ) তো অন্যান্য স্ত্রীদের উপর গৌরব করে বলতেন, তোমাদের অভিভাবকরা তোমাদের সাথে রাসূল ﷺ এর বিবাহ প্রদান করেছেন, আর মহান আল্লাহ স্বয়ং সপ্ত আসমানের উপর থেকে আমার সাথে রাসূল ﷺ এর বিবাহ প্রদান করেছেন। (বুখারী: ৪৭৮৭/৭৪২০, মুসলিম: ৮৩, ১৪২৮, তিরমীযী: ৩২১২, ৩২১৭-৩২১৯)
অর্থাৎ বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, মহানবী ﷺ অন্তরে যা গোপন করেছিলেন সেটি হল এই ওহীর (পরোক্ষ ওহী) জ্ঞান, যা তাকে পূর্বেই সরাসরি কুরআনের আয়াত নাজিল হওয়ার আগে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, এই বিয়ে ভেঙ্গে যাবে আর আমি (আল্লাহ) তোমার সাথে যবনাবের বিয়ে দিব ভুল প্রথা উচ্ছেদে। কিন্তু রাসূল ﷺ সমাজের ভয়ে বিষয়টি যাইদ ও অন্যান্য মুসলিমদের নিকট গোপন রাখেন। এজন্যই মহান আল্লাহ তাকে বলছেন, "আপনি মানুষকে ভয় পাচ্ছেন, অথচ মহান আল্লাহই হচ্ছেন সবচেয়ে উপযুক্ত সত্তা যাকে আপনার ভয় করা উচিত।" (আহযাব ৩৭)
পাঠক এই ঘটনা যখন ঘটে (৬২৭ খৃঃ) তখন যয়নাব (রাঃ) ছিলেন ৩৭ বছর বয়সের একজন নারী, আমি প্রথমেই বলেছি তিনি ছিলেন রোগা শুকনা মহিলা, যার ইতিপূর্বে দুজন পুরুষের সাথে সংসার জীবন কেটেছে অর্থাৎ তিনি মোটেও শকুন্তলার ন্যায় যুবতী নারী ছিলেননা, যাকে দেখে কোন পুরুষ সহজেই মুগ্ধ হয়ে যাবে। আর তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ ﷺ এর ফুফাত বোন যাকে ছোটকাল থেকেই রাসূল ﷺ দেখে আসছেন, তাকে নতুন করে দেখার কি আছে? এমন একজন নারীর সাথে যখন মুহাম্মাদ ﷺ এর পরকীয়ার সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য শকুন্তলা- দুষ্মন্ত টাইপ চটকদার মিথ্যা গল্প পরিবেশন করা হয় তখন কি তা হাস্যকর লাগেনা?
তারপর আবার বিষয়টি মোটেও এমন ছিলনা যে, যাইদ (রাঃ) তাকে তালাক দিয়ে দিলেন আর পরেরদিনই রাসূল ﷺ তাকে বিয়ে করে ঘরে উঠিয়ে নিলেন। ইসলামিক নিয়মমতে, হাজবেন্ড-ওয়াইফের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্ত্রীকে ইদ্দত (৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা) পালন করতে হবে। ইদ্দত পরিপূর্ণ হলে সে নতুন কোন পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আমি "আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪র্থ খন্ড, ৫ম হিজরীর ঘটনাবলি" অধ্যায় থেকে এই ঘটনার কিছু প্রয়োজনীয় কিছু অংশ উল্লেখ করছি:-
"ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন, যয়নবের ইদ্দত সমাপ্ত হলে নবী ﷺ যাইদ (রাঃ) কে বলেন, তুমি যয়নবের নিকট গিয়ে আমার কথা (বিবাহের প্রস্তাব) আলোচনা কর। যাইদ (রাঃ) তার কাছে গেলেন এসময় যয়নাব )(রাঃ) আটা খামীর করছিলেন। যাইদ (রাঃ) বলেন, তাকে দেখে আমার অন্তরে তার মহত্বের ছাপ মুদ্রিত হয়। আমি তার দিকে তাকাতে পারিনা; তবে যেহেতু রাসূল ﷺ এর তার কথা উল্লেখ করেছেন, তাই আমি তার দিকে পিঠ দিয়ে পেছনে ফীরে আসি এবং বলি, যয়নাব, সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমার কথা স্বরণ করে রাসূল ﷺ আমাকে তোমার নিকট প্রেরণ করেছেন। যয়নাব (রাঃ) জবাবে বললেন, মহান আল্লাহর সাথে পরামর্শ না করে আমি কোন কাজ করিনা। এই বলে তিনি নামাজের স্হানের দিকে (ইস্তিখারার নামাজ পড়তে) চলে গেলেন। তখন তার সাথে রাসূল ﷺ এর বিয়ে সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত নাজিল হল। (যা মসজিদে পাঠ করা হয় সকলের সামনে) এবং রাসূল ﷺ যয়নাব (রাঃ) এর গৃহে বিনা অনুমতিতেই প্রবেশ করেন। যয়নাব (রাঃ) রাসূল ﷺ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা দেখেই বুঝে ফেলেন তার সাথে রাসূল ﷺ এর বিয়ের ব্যাপারে আয়াত নাজিল হয়েছে। ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) সুলাইমান ইবনে মুগীরা সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেন।"
কাজেই ব্যাপারটি খুব স্পষ্ট। রাসূল ﷺ বিবাহ, সফর ও ব্যবসায়িক লেনদেনের ব্যাপারে ইস্তিখারা নামাজ ব্যতীত সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় রবের সাথে ইস্তিখারা করে নিল তাকে ব্যর্থ হতে হবেনা। স্বীয় রবের সাথে ইস্তিখারা না করা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কাজেই, যখন যয়নাব (রাঃ) যাইদ (রাঃ) এর নিকট হতে রাসূল ﷺ এর সাথে বিবাহের ব্যাপারে সংবাদ পেলেন তখন তিনি বললেন, আমি স্বীয় রবের সাথে পরামর্শ (ইস্তিখারা নামাজ) ব্যতীত কোন কাজ করিনা এবং নামাজের জায়গার দিকে অগ্রসর হলেন। এবং তার নামাজের মাঝেই সূরা আহযাবের ৩৭ নাম্বার আয়াত নাজিল হল এবং রাসূল ﷺ তা মসজিদে পাঠ করে যয়নাব (রাঃ) এর গৃহে প্রবেশ করলেন বিনা অনুমতিতে। যয়নাব (রাঃ) তার বিনা অনুমতিতে প্রবেশে (ইস্তিখারার আলামত অর্থাৎ আল্লাহর সিদ্ধান্ত) বুঝে ফেললেন রাসূল ﷺ কুরআনের আয়াত প্রাপ্ত হয়েই এসেছেন।
পাঠক, এটির ব্যাপারে এত বিস্তারিত আলোচনার কারণ হল, ইসলাম বিদ্বেশীরা "বিনা অনুমতিতে প্রবেশ" নিয়ে রীতিমত মিথ্যাচার করে যে, এসময় যয়নাব (রাঃ) এলোমেলো পোশাকে ছিলেন যা রাসূল ﷺ এর নজরে পরে। পাঠক, একজন নামাজরত মহিলা জায়নামাজে বসে বা দাড়িয়ে কিভাবে এলোমেলো পোশাকে থাকেন?? এটি কি আদৌ সম্ভব??
আবার যুক্তির খাতিরে (যদিও অযৌক্তিক) তাদের কথা মেনে নিলেও পাল্টা যুক্তিতে তারা হার মানবেন। কারণ আরব নারীদের পোশাক হল ছোট গলার লম্বা কামিজ ও ইজার এবং ওড়না যা সর্বদাই একজন নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে, যেখানে আমাদের দেশের নারীদের শাড়ি যা কিনা পেট ও পিঠ খোলা রাখে, লম্বা গলার ব্লাউজ যা কিনা গলার নিচের অনেকখানি অংশ খোলা রাখে। তাই একজন আরব নারী জায়নামাজে সর্বোচ্চ তার উড়নাটা মাথা থেকে নামিয়ে রাখতে পারেন কিন্তু তাতেও কি "তার পোশাক এলোমেলো হয়? শরীরের কোন অংশ দৃষ্টিগোচর হয়?" যা কোন পুরুষের চোখে যৌনতা আনবে?? অর্থাৎ এসব অপপ্রচার ইসলাম বিদ্বেশীদের বিকৃত মস্তিষ্ক নিসৃত ঘৃণ্য মিথ্যাচার।
তবে এখানে আরেকটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন রাসূল ﷺ ও যয়নাব (রাঃ) এর বিয়ের ব্যাপারে অপপ্রচারের পেছনে রসদ যুগিয়েছে আল-ওয়াকিদীর কিতাবুসসীরাহ ও কিতাবুততারিখ ওয়াল মাজাগী ওয়াল মাবআস (৭৮৪-৮২২ খৃঃ) গ্রন্হগুলি। কুরআন-হাদিসকে তোয়াক্কা না করে এই ব্যক্তি দলিল বিহীন ভিত্তিহীন গাল-পগ্গো দ্বারা তার ইতিহাস গ্রন্হ সাজিয়েছেন। রাসূল ও যয়নাব (রাঃ) এর বিয়ে হয় ২৭ মার্চ ৬২৭ খৃঃ এর দিকে যেখানে এই ব্যক্তির জন্ম তারও ১২২ বছর পর। ইসলামের মহান আলেমগণ তথা মুহাদ্দিস, ফকীহ, তাফসীরকারক, ইতিহাসবিদ সকলেই আল ওয়াকিদীর বর্ণনাসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইমাম শাফেয়ী (রঃ) ও ইমাম আহমদ (রঃ) এ ব্যক্তিকে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণকারী ও মিথ্যাবাদী বলেছেন। ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (ইবনু তাইমিয়া এর সময়কার একজন বিক্ষাত আলেম),আল্লামা আলূসী (রঃ)( তাফসীরে রুহুল মাআনীর রচয়িতা) এসব বর্ণনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, ইসলামের শত্রুরা এসকল কল্পকাহিনী তৈরী করেছে এবং মুসলিম লেখকদের মাঝে তা প্রচার করেছে।
এই বিষয়টি ইহুদীদের দ্বারা পরিচালিত উইকিপিডিয়াতেও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, এসব ভুল ও মিথ্যা বর্ণনা যা মুসলিম স্কলারদের নিকট প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এটি উইকিপিডিয়ার লিংক Click this link
পরবর্তীতে কিছু মুসলিম সাহিত্যিক যারা নন-আলিম তারা ওয়াকিদীর ইতিহাসগ্রন্হ থেকে নানান উপাদান সংগ্রহ করে ইসলামের ইতিহাসের নামে ভিত্তিহীন কথাবার্তা রচনা করেন। আর আজ এসব উপাদানই পশ্চিমা ইসলাম বিদ্বেশী ইতিহাসবিদদের হাতিয়ার। তারা কুরআন-হাদিসকে পাশ কাটিয়ে ভিত্তিহীন মিথ্যা ইতিহাসের জ্ঞান প্রচারে সদা সচেষ্ট থাকেন যা কিনা দুজন উত্তম চরিত্রের মানব ও মানবীকে কলুষিত করে যাদের শত শত বছর ধরে কোটি কোটি মানুষ অনুসরণ করে আসছেন।
"আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ এর স্ত্রীগণের মাঝে একমাত্র যয়নাব (রাঃ) নিজেকে আমার সমতুল্য বলে দাবি করতেন। তিনি সর্বদা গর্ব করে বলতেন, আমি হলাম রাসূল ﷺ এর ফুফাত বোন, তোমাদের বিয়ে তো দিয়েছে তোমাদের অভিভাবকরা, পক্ষান্তরে আমার বিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ সপ্ত আকাশের উপর থেকে। দীনের ক্ষেত্রে উৎকর্ষে, তাকওয়ায়, সত্যবাদিতায়,আত্বীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার ব্যাপারে, আমানতদারী ও দান-খয়রাতের ক্ষেত্রে যয়নাব বিনতে জাহাশের চাইতে উত্তম কোন নারীকে আমি দেখিনি। রাসূল ﷺ বলতেন, তোমাদের মাঝে সেই আমার সাথে সবার আগে মিলিত হবে (পরকালে) যার হাত অধিক লম্বা। আমরা (উম্মুল মুমিনীনগণ) সবাই একে অপরের সাথে হাত মিলিয়ে দেখতাম কার হাত বেশি লম্বা। অবশেষে আমরা বুঝলাম যয়নাব (রাঃ) এর হাত বেশি লম্বা। তিনি নিজ হাতে নিজের সকল কাজ করতেন এবং প্রচুর পরিমাণ দান-খয়রাত করতেন। (বুখারী-মুসলিম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪র্থ খন্ড, ৫ম হিজরীর ঘটনাসমূহ অধ্যায়)"
তিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজ তাকে কেন্দ্র করেই পর্দার আয়াত নাজিল হয়। তিনি বিভিন্ন চামড়াজাতীয় দ্রব্যাদি তৈরী করতেন এবং বিক্রি করে যা পেতেন তা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। যখন উমার (রাঃ) রাসূল ﷺ এর বিধবা স্ত্রীদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করলেন এবং সেই হিসাবে ১২০০০ দিরহাম তার নিকট পাঠালেন যয়নাব (রাঃ) তার সমস্ত কিছুই গরীবদের মাঝে দান করে দিলেন।
# মোটকথা, আরব তথা কুরাইশরা দাবি করত নবী ইবরাহিম (আঃ) এর বংশধর হিসেবে তারা ইবরাহিম মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত, অথচ পোষ্যপুত্র, যিহার, সুদ, রক্তপণের জন্য পবিত্র যুদ্ধ, বিধবা সৎ মাকে বিবাহ ইত্যাদি কোনটিই ইবরাহিম ধর্মের অংশ ছিলনা, বরং আরবদের নিজস্ব মনগড়া ধর্মীয় রীতি। তাই আল্লাহ ইবরাহিম মিল্লাতকে কলুষমুক্ত করে পূর্বাবস্হায় ফীরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন এজন্যই এই বিবাহের সিদ্ধান্ত। আল্লাহ বলেন, পূর্বে যেসব নবী অতীত হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রেও এটিই ছিল আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত। (আহযাব ৩৮)
কাজেই এই ঘটনা একদম সাদামাটা ও সব ধরণের অস্পষ্টতা থেকে মুক্ত। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখেনা, আজ আমরা ইতিহাসের একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আর প্রাচ্যের উপর কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সম্রাজ্যবাদীরা কেবল সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির আশ্রয়ই গ্রহণ করছেনা, বরং তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইতিহাস গবেষণার ধুয়ো তুলে মুসলিম ভূমিতে প্রবেশ করে এবং কিছু পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত লোককে লাখ লাখ টাকা খাইয়ে, ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে, কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তাদের হাতে তুলে দিয়ে সূক্ষ্ণ পরিকল্পনা সহ সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের দাসত্ব অর্থাৎ চিন্তামূলক দাসত্ব বাস্তবায়িত করছে। এদের প্রধান টার্গেট মুসলিমদের ভেতর থেকে ও বাইরে থেকে সমূলে ধ্বংশ করা।
অনুরোধ থাকবে লেখাটি প্রিয়জনদের পড়ার জন্য আহবান জানাবেন এবং প্রচারের দায়িত্বটি আপনিও পালন করবেন।
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত সত্য জানার ও প্রচারের শক্তি দিন। আমীন। জাঝাক আল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম।
বিষয়: বিবিধ
৩১৩০ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
আপনি অনেক জ্ঞানি ও বুদ্ধিমান।
মাশাআল্লাহ্। ১৪০০ বছরের পুরোনো প্রেক্ষাপটের ঘেরাটোপ এ আবদ্ধ একটা পাবলিকলী বিতর্কিত বিষয়কে - কোরান, হাদীস ও আজকের মানুষের বিচার বিবেচনা দিয়ে ক্রসচেক করে উপস্থাপন করেছেন। ওভারঅল আমার ভাল লেগেছে।
এ নিয়ে ইয়াসির কাদির সিরাহতে একটা বক্তব্য আছে। সেখানে উনি আর্লি স্কলারদের কাজ হতে ৩ টি ভিন্ন চিত্র একেছিলেন। আপনার আলোচনাও মোটাদাগে তার সাথে কনফরমিটি নিশ্চিত করেছে।
সেখানে আমি একটা কমেন্ট করেছিলাম এবং ইয়াসির কাদিকে আহ্বান জানিয়েছিলাম - সামহাউ কি গবেষনা করে ৪র্থ একটা অপশন পাওয়া যায় কিনা - যেখানে রাসুলুল্লাহ সঃ মূলতঃ জয়নাব রাঃ এর ইচ্ছা তথা রাসুলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার ইচ্ছা পোষনকে ওভার দ্যা পিরিয়ড গোপন রেখেছেন - যা আল্লাহ এক্সপোজ করছেন - বিশেষতঃ জয়নাব রাঃ এর দোয়ার কারনে?
এ্যানীওয়ে এটা আল্লাহ ভাল জানেন।
ব্যাক্তিগতভাবে এমন বিতর্কিত বিষয়াদিতে - আমি মনে করি - এ ধরনের বিষয়াদি একজন বিশ্বাসীর জন্য কোন প্রবলেম নয়। এতে তার বিশ্বাস তথা ঈমানে সমস্যা হয় না - বড়জোর সে শয়তানের কুমন্ত্রনায় টেস্টেড হয়।
কিন্তু যার ঈমান নেই তার জন্য এ জাতীয় বিষয় বড় হয়ে দেখা দেয়। সো আসলে ঐ জাতীয় ঈমান হীন লোকের প্রবলেম জয়নাব রাঃ কিংবা আয়েশা রাঃ এসব নয় - বরং তার প্রবলেম লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ তার জীবনে না থাকা।
জাজাক আল্লাহ আপনার পরিশ্রমের জন্য। আল্লাহ এ লিখার প্রতিটি বর্নকে আপনার জন্য 'রাসুলুল্লাহ সঃ এর পরিবারকে ডিফেন্ড করেছেন' - এমন বারাকাহ তে পরিপূর্ন করে দিন - যাতে কাল কেয়ামতের দিন এ লিখা আপনার নাজাতের উছিলা হয়ে যায়।
ভুল অপনোদন করে সঠিক উদ্ধৃতির মাধ্যমে সুন্দর বিশ্লেষন এসেছে পোস্টটিতে! জাযাকাল্লাহ খাইর! শুকরিয়া
পড়াশুনা রয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন