সাদাচোখে বিশ্লেষণ: "যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে মুহাম্মাদ ﷺ এর বিয়ে কি অজাচার (Incest) ছিল, নাকি ইতিহাস নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহলের চরম মিথ্যাচার?" প্রথম পর্ব।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ১৫ জুন, ২০১৫, ০১:০৭:৩৩ দুপুর
প্রথম পর্ব।
বিধবা যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে সর্বপ্রথম "যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) এর বিয়ে অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনরায় আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাথে বিবাহবন্ধন" এমন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহল দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক মিথ্যাচার ও বিকৃত তথ্য উপস্হাপন করে সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে আসছে। মহান আল্লাহ এই ঘাত ও প্রতিঘাতের ঘটনা দ্বারা আরবের বংশমর্যাদা সংক্রান্ত কুসংষ্কার, পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুপ্রথার উপরে সজোড়ে আঘাত হানেন ও তা বিলোপ সাধন করেন এবং পর্দা সংক্রান্ত আয়াত ও হুকুম আহকাম নাজিল করেন
প্রথমেই বলে নিচ্ছি ইনশাআল্লাহ! আমি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ও বিস্তারিত আলোচনা করব, যেন আমার আলোচনার সামান্যতম দূর্বলতার কোন সুযোগ নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহল মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ না পায়। কাজেই যাদের পড়ার, জানার ও বোঝার মত ধৈর্য্য ও আগ্রহ নেই তাদের জন্য আফসোস!
উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর পরিচয়:
যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) ৫৯০ খৃষ্টাব্দে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের বিখ্যাত বনি হাশেম গোত্রের জাহাশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ এর আপন ফুফু উমায়মা বিনতে আবদুল মুত্তালিব এর কণ্যা। তিনি হালকা-পাতলা গড়নের মহিলা ছিলেন। মর্যাদায় তিনি ছিলেন প্রথম দিককার মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত। মক্কায় চরম নির্যাতনের মুহূর্তে ভাই আবদুল্লাহ (রাঃ) সহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সপরিবারে আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাথে মদিনায় হিজরত করেন। ইসলাম গ্রহণের সময়কালে তিনি ছিলেন বিধবা, ৬২২ খৃষ্টাব্দে তার প্রথম স্বামী ( তার নাম ও অন্যান্য ব্যাপারে হাদিস বা ইতিহাসগ্রন্হে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়না) মৃত্যুবরণ করেন। কাজেই রক্ত সম্পর্কে তিনি ছিলেন রাসূল ﷺ -এঁর আপন ফুফাতো বোন। ইসলামি বিধি মোতাবেক ফুফাতো বোনের সাথে বিয়ে কোন অনৈতিক ব্যাপার নয়। কিন্তু যেসকল দুশ্চরিত্র (যারা নিজেরাই অশ্লীলতার ধরাক-বাহক) ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল ﷺ_ এর চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টায় মহাব্যস্ত, তারা কখনোই পাঠকদের সামনে তাদের এই সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন না, বরং মোটা হেডিং এ " মুহাম্মাদ ﷺ_ এঁর আপন ছেলের স্ত্রী" পরিচয়টির প্রচারণা চালাতে সদা ব্যস্ত থাকেন। এই অভিযোগ জঘণ্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) এর পরিচিতি:
শৈশবে বেদুইনরা তাকে একটি কাফেলা থেকে অপহরণ করে এবং উকায মেলায় কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। হাকিম ইবনে হিজাম তাকে নিজ ফুফু খাদিজা (রাঃ) এর জন্য ক্রয় করেন। রাসূল ﷺ এর সাথে বিয়ের পর খাদিজা (রাঃ) যাইদ বিন হারিসা (রাঃ) কে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর হাতে অর্পন করেন। রাসূল (সাঃ) তাকে মুক্ত করে দেন এবং নিজ পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। যাইদ (রাঃ) এর পিতা হারিসা তার সংবাদ জানার পর রাসূল ﷺ এর নিকট আসেন এবং বলেন, তার জন্য তার মা অস্হির হয়ে আছে, পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত। তিনি পুত্র যাইদকে সাথে করে নিয়ে যেতে চান। আল্লাহর রাসূল ﷺ ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে যাইদ (রাঃ) এর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেন। কিন্তু যাইদ (রাঃ) যেতে অস্বীকার করেন, জবাব দেন, তিনি মুহাম্মাদ ﷺ কে ছেড়ে কোথাও যাবেননা। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে আপন পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পিতার মায়া-মমতা দিয়েই তাকে বড় করে তোলেন। এজন্য সাহাবীরা তাকে যাইদ বিন মুহাম্মাদ (মুহাম্মাদের ছেলে যাইদ) বলেই ডাকত এবং আরবের পৌত্তলিক বিশ্বাস অনুযায়ী তাকে নবী ﷺ এর পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য করা হত।
কুরান ও হাদিসে বর্ণিত জাহিলিয়াতের সময়কার বেশ কিছু কুসংষ্কার সম্পর্কে নীচে বর্ণনা দেয়া হল।
#মহান আল্লাহ কোন মানুষের জন্য তার বুকে দুটি হৃদয় সৃষ্টি করেননি; তোমাদের স্ত্রীরা, যাদের সাথে তোমরা যিহার (স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করা) করে থাকো, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং যাদেরকে তোমরা পোষ্যপুত্র ডাকো, তাদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি, এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ সত্য বলেন এবং তিনি এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন।
#তোমরা তাদেরকে ডাকো তাদের পিতৃ পরিচয়ে, আল্লাহর দৃষ্টিতে ইহাই অধিক ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। এ ব্যাপারে ভুল করলে তোমাদের কোন অপরাধ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব, মাদানী, আয়াত: ৪ ও ৫)
#আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগের কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম হলঃ কারো বংশ-কুল নিয়ে খোটা দেওয়া, কারো মৃত্যু উপলক্ষে শোক প্রকাশার্থে বিলাপ করা। আরেক হাদিস বর্ণনা কারী সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি কামনা করা।(বুখারী, অধ্যায়: ৫০ আম্বিয়া কিরাম, হাদিস নাম্বার :৩৫৭১, মান সহীহ)
কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জাহিলিয়াতে "যিহার ( যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করে, মা ডাকে, তবে সেই স্ত্রী মায়ের সমতুল্য হয়ে যাবে, ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে বা তালাক হয়ে যাবে), পোষ্যপুত্র ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুপ্রথা, বংশমর্যাদা নিয়ে গর্ব-অহংকার প্রদর্শন, কারো মৃত্যুতে বিলাপ, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি কামনা করা" সহ প্রচুর কুসংষ্কার, ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস ইত্যাদি ছিল আরবের লোকদের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাসের মূলভিত্তি বা অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তাই জাহিলিয়াত পরিত্যাগ করে সদ্য মুসলিম হওয়া ব্যক্তিগণ যারা কিছুদিন আগে জাহিলিয়াত মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেছেন, "জাহিলিয়াতের মাঝে জন্মগ্রহণ, তাদের সাথে কুরাইশদের রক্ত সম্পর্ক বা আত্নীয়তা বিদ্যমান, পূর্বে তারা একই ধর্মবিশ্বাস-সামাজিক রীতি-নীতি লালন-পালন করেছেন, দীর্ঘদিন কুরাইশদের মাঝে অবস্হান করেছেন" ইত্যাদি কারণে এসব মুসলিমগণ তখনো জাহিলিয়াত যুগের এসব কুসংষ্কার হতে মুক্ত হতে পারেননি।"
উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, যখন আরবের বেদুইনরা পৌত্তলিকতা ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তারা বলাবলি করতে লাগলেন, "আমরা তো মুমিন হয়ে গেলাম" ঠিক সেই মুহূর্তে কোরানের আয়াত নাজিল হয়:
বেদুইনরা বলে, আমরা ইমান এনেছি৷ আপনি বলে দিন; তোমরাতো ঈমান আননি, বরং বল, আমরা মুসলিম হয়েছি, আর ঈমানতো এখনও তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, কাজেই যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের আনুগত্য কর, তবে তিনি তোমাদের কর্মসমূহ থেকে একটুও কম করবেন না৷ নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"৷ (সূরা হুজরাত-১৪)
প্রাথমিক পর্যায়ে সদ্য মুসলিম হওয়া ব্যক্তিদের মানষিক অবস্হাও ছিল সবে পৌত্তলিক ধর্ম পরিত্যাগী মুসলিম হওয়া বেদুইনদের মতই। মুসলিম হবার পরেও তারা নানান প্রাচীন কুসংষ্কার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিলেন।
এটি খুব স্পষ্ট প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সমাজ ও মানবসৃষ্ট ধর্ম বিধবা নারীদের সাথে আচরণে সবসময়েই ছিল কঠোর মনোভাবের, আরবও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। ইসলাম এ অবস্হার পতন ঘটাল। কুরআন নির্দেশ দিল:
#তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন তাদেরও(বিবাহ সম্পাদন কর); তারা অভাবগ্রস্হ হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ( সুরা নূর: ৩২)
আগেই উল্লেখ করেছি যে, যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) ছিলেন বিধবা এবং তার বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল-ﷺ -চিন্তিত ছিলেন। তিনি ঠিক করলেন তার পোষ্যপুত্র যাইদ (রাঃ) এর সাথে যয়নাব (রাঃ) এর বিবাহ দিবেন। যাইদ (রাঃ) ছিলেন একজন আলিম এবং যয়নাব (রাঃ) ছিলেন একজন দানশীলা পরহেজগার মহিলা এবং এই দুজনেই ছিলেন প্রথম দিককার মুসলিমদের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাদের বিবাহ প্রদানের মাধ্যমে তাদের ইসলামিক জীবন আরো মজবুত করতে চেয়েছিলেন। কারণ কুরআন বলছে,
চরিত্রবান নারী চরিত্রবান পুরুষের জন্য এবং চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবান নারীর জন্য (সূরা নূর : ২৬)
তিনি জাহাশ পরিবারের কাছে তার মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। কিন্তু জাহাশ পরিবার রাসূল এর এমন প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করে। কারণ একদিকে কুরাইশ বংশীয়া যয়নাব (রাঃ), অন্যদিকে যাইদ (রাঃ) ছিলেন দাস। একদিকে সম্ভ্রান্ত পরিবারের যয়নাব (রাঃ), অন্যদিকে পিতৃপরিচয়হীন যাইদ (রাঃ) যাকে পরবর্তীতে রাসূল-ﷺ - পোষ্যপুত্র হিসেবে লালন-পালন করেন। তৎকালীন সমাজে কুরাইশ বংশের নারীর সাথে মরুচারী বেদুইন পুরুষের বিবাহই ছিল চরম দোষণীয়, সেখানে একজন দাসের সাথে বিবাহের কথা তো অকল্পনীয়। অর্থাৎ বংশমর্যাদার কুসষ্কার সদ্য মুসলিম হওয়া কুরাইশদের মাঝে তখনো বিদ্যমান ছিল যা একটি হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।
#ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী ﷺ –কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লোকদের মধ্যে অধিক সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু, সে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত। সাহাবা কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর নবী ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁরা বললেন, আমরা এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তবে কি তোমরা আমাকে আরবদের উচ্চ বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? তারা বলল, হ্যা। তখন নবী ﷺ বললেন, জাহেলিয়াতের যুগে তোমাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। (বুখারী:৩১৩৫, অধ্যায় ৫০-নবী রাসূল)
প্রশ্ন কর্তারা ছিলেন কুরাইশ সাহাবী যাদের মাঝে বংশমর্যাদা সংক্রান্ত বিশ্বাসের প্রভাব তখনো বিদ্যমান ছিল। এজন্য দেখা যায় কুরাইশ বংশীয়া যয়নাব (রাঃ) নিজেও প্রথমে এ বিয়ের প্রস্তাবে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
ইসলাম বলে সমতার কথা, ভ্রাতৃত্বের কথা_ তাই বংশ মর্যাদার ভিত্তিতে মুসলিম সমাজ বিভক্ত থাকুক, সেটি মহান আল্লাহ অপছন্দ করলেন না, তাই তিনি এ ব্যাবস্হা উচ্ছেদ করতে মনস্হির করলেন। তখন কোরান ঘোষণা করল:
#যখন মহান আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তখন মুমিন নর-নারীদের সেই সেই বিষয়ে (ফয়সালার বিপরীতে) কোন এখতিয়ার থাকবেনা; আর যে মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের (সিন্ধান্তের) বিরুদ্ধাচরণ করবে, সে সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হবে (আহযাব ৩৬)
যয়নাব (রাঃ) ছিলেন খুবই পরহেজগার নারী তাই কুরআনের এই আয়াত নাজিল হবার পর তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং যাইদ (রাঃ) এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এই বিয়েতে যয়নাব (রাঃ) এর অনাগ্রহের অন্য আরো একটি কারণ ছিল, সেটি হল, তিনি উম্মুল মুমিনীন হতে চেয়েছিলেন, যা তিনি তখন রাসূল ﷺ এর নিকট প্রকাশ করেননি। এটি প্রকাশ করলে আল্লাহর রাসূল ﷺ তাকে ফীরিয়ে দিতেননা। কারণ আমরা মায়মুনা (রাঃ) এর ব্যাপার জানি যে, তিনি যখন রাসূল ﷺ কে বিয়ের প্রস্তাব দেন, তখন সূরা আহযাব এর ৫০ নাম্বার আয়াত নাজিল হয় এবং আল্লাহর রাসূল মায়মূনা (রাঃ) কে বিয়ে করেন। কাজেই ব্যাপারটি গোপন না থাকলে, আল্লাহর রাসূল ﷺ তার অন্য কোন বিধবা আত্নীয়াকে দিয়ে এমন কুপ্রথা ভাঙ্গার দৃষ্টান্ত স্হাপন করতে চাইতেন।
ইতিহাসবিদ মন্টোগোমারী ওয়াটের মতে- যায়নাব (রাঃ) নিজে উম্মুল মুমিনীন হবার বাসনা পোষণ করতেন। হ্যাঁ, সেই সময়ে আরবের যে কোন মেয়েদের উম্মুল মুমিনীন হবার বাসনা থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। তখনকার সমাজে নেতৃ-পর্যায়ের এবং প্রতাপশালী ব্যক্তিকে তার অপরাপর স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করতে অনেক মহিলা এগিয়ে আসতেন।
যাইহোক, আল্লাহর রাসূল ﷺ এই বিয়েতে প্রচন্ড খুশি হয়েছিলেন। এই বিয়েতে আল্লাহর রাসূল বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, খাদ্যশস্য ও খেজুর ইত্যাদি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ৬২৫ খৃষ্টাব্দের দিকে এ ঘটনা ঘটে। যদিও ঘটনাপ্রবাহে এই বিয়ে খুব বেশিদিন স্হায়ী হয়নি, কিন্তু সমকালীন আরবের সামাজিক অবস্হানের উপর এটি ছিল বিশাল এক কুঠারাঘাত। যেখানে সমাজে দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ছিল সামাজিক মান-সন্মান ও মর্যাদা ইত্যাদির ভিত্তিই হল "উচু বংশমর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি", সেখানে ইসলাম সামাজিক মর্যাদার মানদন্ড হিসেবে স্হাপন করে "তাকওয়া বা আল্লাহভীতি" কে।
১ম পর্বের সমাপ্তি_________
আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পর্বগুলো রোজার মাসে প্রকাশ করব।
বিঃদ্রঃ ফেসবুকের "পবিত্র কোরানের বাণীসমূহ, বাঁশেরকেল্লা সহ বেশ কয়েকটি পেজ ও ফেসবুক সেলিব্রেটিদের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি। আপনারা এর আগে আমার অনেক লেখাই আমার অনুমতি ছাড়া নিজেদের পেজে বা ওয়ালে পোস্ট করেছেন, আমার কাছে সেটা দোষনীয় না, সত্যের প্রচার আসল বিষয়। কিন্তু আপনারা যখন দাবি করেন যে, সেটি আপনাদের নিজের সম্পত্তি এবং কিছু ফেসবুক সেলিব্রেটি (এমনকি নারীরা) যারা আমার লেখা কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেন এবং নিজেরা হাজার হাজার বাহবা নেন, লাইক ইনকাম করেন, তখন সেটি আমার কাছে ভন্ডামি আর মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। মানষিকতা পরিবর্তন করুন। দয়া করে আমার ব্লগীয় নামটাই উল্লেখ করবেন, সূত্র উল্লেখ করবেন। মিথ্যা দিয়ে বাহবা কেন নেবেন? আপনারাও পড়ুন, জানুন, আলেমদের সাথে বসুন এবং সত্যের প্রচার করুন।
বিষয়: বিবিধ
২২৯০ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খাইর
আরবের তথাকথিত বংশমর্যাদা, পোষ্যপুত্র উত্তরাধিকার প্রথা বিলপের জন্য কোরানের একটি আয়াত নাজিল করে দিলেই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা না করে কতই না ধানাইপানাই যুক্তি। মানুষ কি এতো বোকা যে নারী লোভি মোহাম্মদের আসল মতলব বুঝে না।
নবীর একটি কুকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য বেহুশের মত এখন বংশমর্যাদা, দাসের মর্যাদা, মরুচারী বেদুইন.......... এসব নিয়ে আবল/তাবল কথা বলে বরংচ আপনি ইসলাম ধর্মের মানব বৈষম্য, বংশ বৈষম্য, দাস বৈষম্য কে অপকটেই স্বীকরার করে নিলেন। আবার এই আপনারাই বলেন ইসলাম ধর্মে নাকি সবাই সমান, কোন ভেদাবেদ নেই। আশ্চর্য কারবার!!
আপনার মত নির্বোধের সাথে কুতর্কে আমি যেতে চাইনা। আর আপনি যে মিথ্যাচার করেন সেটাও এর আগে হাতেনাতে ধরেছি। কাজেই মিথ্যাবাদী, নির্বোধের সাথে কথা বলাটাই বোকামী। কি সুন্দর যুক্তি! এত কিছু না করে একখানা আস্ত কোরান আসমান থেকে পাঠিয়ে দিয়েই তো হয়!! এজন্যই আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই বলেছিলেন,
হে মুহাম্মাদ! যদি আমি কাগজের উপর লিখিত কোন কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর তারা তা নিজেদের হাত দ্বারা স্পর্শও করতো; তবুও কাফির ও অবিশ্বাসী লোকেরা বলত যে, এটা প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আনআম:৭)
তারা কোরানের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবেনা এবং অতীতে তাদের পূর্ববর্তীগণেরও আচরণ এরূপই ছিল। যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে তাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, না, বরং আমরা জাদুগ্রস্হ হয়ে পরেছি। (সুরা হিজর, আয়াত:১৩,১৪,১৫)
জ্বি! একটিভ ফর্মে লিখলে লেখা যায়, মুহাম্মাদ ﷺ ১৩ জন নারীকে বিবাহ করেছিলেন। যারা ছিলেন মুমিনদের মাতা। এটাকে প্যাসিভ ফর্মে লিখলে হবে, ১৩ জন নারী মুহাম্মাদ ﷺ কে বিবাহ করেছিলেন মুমিনদের মাতা হবার জন্য। উভয়টিই সত্যি। আপনি যে নির্বোধ সেটা আপনার লেখায়ই প্রমাণ দিয়েছেন। বংশমর্যাদা, দাস সমস্যা, মরুচারী বেদুইন এর নিম্ন মর্যাদা ইত্যাদি ছিল তৎকালীন আরব মুশরিকদের সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংষ্কারের অংশ, তা ইসলামের অংশ ছিলনা, বরং ইসলাম তা বিলুপ্ত করেছে।
জ্বি! মানুষ আপনার মত বোকা নয় বলেই মুসলিমরা বুঝে যে, মুহাম্মাদ ﷺ প্রচারিত ধর্মই সত্য। ফিলিস্তিনের ৪,৫৫০,৩৬৮ মুসলিম জানে আজ যদি তারা ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে নেয়, তবে আজ থেকেই সমস্ত অত্যাচার বন্ধ হয়ে যাবে, ইজরাইল তাদের আরো পুরষ্কৃত করবে। কিন্তু তারা কেন মুহাম্মাদের ﷺ এর প্রচারিত ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করেনা?? কারণ তারা আপনার মত নির্বোধ না, বোকা না, তাই শত নির্যাতন তাদের মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রচারিত ধর্ম থেকে ফেরাতে পারেনা।
মায়ানমারের ৮ লাখ রোহিঙ্গা জানে, যদি আজ তারা ইসলাম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়, তবে আজ থেকেই সব অত্যাচার বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তারা কেন মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রচারিত ইসলাম ত্যাগ করেনা? কারণ তারা আপনাদের মত বোকা না।
সেন্ট্রাল আফ্রিকার মুসলিমরাও জানতো, তারা যদি খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে নিত, তবে ১০,০০০ মুসলিমকে খৃষ্টানরা ধর্মের নামে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতোনা। কিন্তু তবুও তারা মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রচারিত ধর্ম ত্যাগ করেনি কারণ তারা বোকা ছিলনা। চীনের উইঘুরের মুসলিম, কাশ্মিরের মুসলিম, আসামের মুসলিম, গুজরাটের মুসলিম, আফগানিস্তানের মুসলিম, বসনিয়া, চেচনিয়া, মালির মুসলিম সবাইকে প্রশ্ন করেন, তোমরা কেন বোকামী করছ? পৃথিবীর মানুষের বানানো ধর্ম গ্রহণ করে নাও। তোমাদের প্রতি সব সহিংসত আজই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তারা আপনাদের চোখে চোখ রেখে উচ্চস্বরে বলবে: আমি সাক্ষ দেই আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। কারণ তারা আপনাদের মত নির্বোধনা, বরং তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান। এই পৃথিবীর মাটি তারা কামড়ে ধরে আজীবন বাঁচার স্বপ্ন দেখেনা। তারা বিশ্বাস করেছে কিয়ামত হবেই, তাদের প্রতি পৃথিবীবাসীর নির্যাতনের বদলা আল্লাহ অবশ্যই নিবেন কিন্তু আপনারা অতি চালাকেরা অট্ট হাসিতে গর্ব করে বলেছেন, ভুয়া! সব ভুয়া। ধর্ম হল আদিকালের গালগপ্প। আপনারা আল্লাহর উপর ঈমান আনেননি, নতুন ধর্ম আনলেন যার নাম বিজ্ঞান। ঈমান আনলেন ডিডেরট, বেরন ডি হোলবাখ, ডারইউন, কাল মার্কস, দুরখেইম, নাৎসে, ফ্রয়েড, এঙ্গেলস এর মত বস্তুবাদিদের উপর। গর্ব করে তারা প্রচার করতে লাগলেন, সব নির্বোধেরা এবার বিজ্ঞান নামক ধর্মে বিশ্বাস আনবে। ডারউইন বলেই বসলেন, আল্লাহ বলে কিছুই নেই সবই বিবর্তনের ফল। সত্যিই তা ছিল আশার বাণী কারণ স্রষ্টার অসারতা প্রমাণ হলে পৃথিবীর মানুষের মাঝে ধর্মের জন্য যে হানাহানি, তা বন্ধ হয়ে যাবে, সকলে বিজ্ঞান নামক ধর্মে ঈমান এনে ভাই ভাই হয়ে যাবে। মুসলিম জলাশয়ের দিকে তাকিয়ে বলে: এই হল পানি, কিন্তু হিন্দু বলে, নাহ! এতো জল। কিন্তু এবার সবাই বলবে, এ হল, H2O যা কিনা ১০০% নির্ভুল ও সত্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আপনাদের ধর্ম ভাই এডউইন হাবল প্রমাণ করে বসলেন "বিং ব্যাং থিওরী" অনেক বিতর্কের পর আপনার অন্য ভাইয়েরাও তা মানতে বাধ্য হল মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তা এগিয়ে চলেছে "Endless expansion অথবা Big crunch" নামক ভয়াবহ ধ্বংশযজ্ঞের দিকে। কিয়ামত সত্য প্রমাণ হয়েই গেল। আপনারা এবার শেষ আশা হিসেবে ডারউইনের প্রচারিত ধর্ম "বিবর্তন থিওরী" এর দিক চেয়ে রইলেন। কিন্তু জীবাশ্ন বিজ্ঞান(paleontology), প্রাণরসায়ণ(Biochemistry), অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা(anatomy), বংশগতিবিদ্যা (genetics) সব আশায় পানি ঢালল। এসব বিজ্ঞান ধর্মের এসব শাখা প্রশাখা আপানাদের ধর্ম গুরুদের ভাগ করল দুভাগে।
১. The theory of intelligent design
২.the theory of evolution.
একদল পূর্বপুরুষদের theory of evolution কে আকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন যদিও তা অসার। আবার আরেকদল ধর্ম সংষ্কারের জন্য theory of intelligent design কে সত্য প্রমাণ করতে চাইছেন, পূর্বপুরুষদের ভুল বলছেন।
আপনারা নিজেরাই আজ নানাভাগে বিভক্ত। ওহে! নিজেদের সমস্যার সমাধান করে আসুন অতঃপর মুসলিমদের কান্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। মুসলিমরা আল্লাহকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে, তাদের জীবন-মরণ সবই আল্লাহর হাতে তিনিই যথেষ্ট অভিভাবক হিসেবে। জ্বি! মুহাম্মাদ ﷺ ই আমাদের নেতা যাকে ১৩ জন নারী বিবাহ করেছিলেন যারা আমাদের মাতা এবং পৃথিবীতে ও জান্নাতেও তার স্ত্রী ও আমাদের মা।
ধন্যবাদ, দ্বান্ধিক বিষয়ে লিখতে কলম ধরার জন্য।
এ বিষয় সমূহ নিয়ে গবেষনাধর্মী প্রতিটি লিখা ই উম্মাহকে সত্যের আরো নিকটতর অবস্থানে নিবে বলে আমর বিশ্বাস।
পরবর্তি পর্ব সমূহ না পড়া পয্যন্ত লিখার প্রতি উপযুক্ত জাস্টিস করতে পারছিনা।
আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন এবং তার দ্বীনের খেদমতে আরো সিজনড করুন।
ভাইয়া এটা কোন সূরার কত আয়াত তা কিন্তু বলেন নি। যদি বলতেন সে ভাল হত...
আপনার পোস্টটিও পড়লাম
দুঃখিত আসতে পারিনি তাই আপনার আমন্ত্রণকৃত পোষ্টগুলোও পড়তে পারিনি।আশা করি সব গুলোই পড়তে পারব।আস্সালামুয়ালাইকুম
ছোটবেলায় আমার আম্মাকে এই সমস্যায় ভুগতে দেখেছিলাম।
আশা করি তাড়াতাড়ি সম্পুর্ণ সুস্থ হোন।
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন
অথচ সম্মান –মর্যাদা তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য। কিন্তু এসব মুনাফিক তা জানে না।
সূরা মুনাফিকুনঃ৮
মহান আল্লাহ সকল মানুষকেই তার পদ মর্যাদার দাবীতেই সত্যকে নিরপেক্ষ মন নিয়ে বুঝার তাওফিক দান করুন। জাযাকাল্লাহী খাইরান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কলমে ধরার উদ্যোগ নেয়ার জন্য। মহান আল্লাহ সাহায্যকারী।
মনোযোগের সাথে পড়েছি! আলাহামদুলিল্লাহ! তথ্যবহুল এবং উপকারী পোস্টটি শেয়ার করার জন্য শুকরিয়া! রমাদানে ব্লগে আসাটা নিয়মিত হবে না, দাওয়াত দিয়ে রেখো ভাই !
জাযকাল্লাহুখাইর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন