সাদাচোখে বিশ্লেষণ: "যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে মুহাম্মাদ ﷺ এর বিয়ে কি অজাচার (Incest) ছিল, নাকি ইতিহাস নিয়ে ইসলাম বিদ্বেশী মহলের চরম মিথ্যাচার?"২য় পর্ব।
লিখেছেন লিখেছেন ঘুম ভাঙাতে চাই ১১ জুলাই, ২০১৫, ০৬:৩৮:০১ সন্ধ্যা
২য় পর্ব: প্রথম পর্বের লিংক Click this link
যাইদ (রাঃ) এর সাথে যয়নাব (রাঃ) এর বিবাহবিচ্ছেদ:
মহান আল্লাহ বলেন:
আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সুরা: রূম, আয়াত: ২১)
তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক স্বরূপ আর তোমরাও তাদের পোশাক স্বরূপ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৭)
মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের আদেশ দেয়, এবং অসৎকাজ নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে; এদেরকেই আল্লাহ অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা: তওবাহ, আয়াত: ৭১)
অর্থাৎ, ইসলামে হাজবেন্ড-ওয়াইফ সম্পর্কটা জাস্ট দুনিয়া কেন্দ্রীক ভোগ-বিলাসী কোন সম্পর্ক নয়, যার সমাপ্তিই হল মৃত্যু, বরং এই সম্পর্কের স্হায়িত্ব টিকে যাবে জান্নাত পর্যন্ত যা প্রতিটি মুমিন নারী-পুরুষের চুড়ান্ত গন্তব্য। বিবাহ হল একটি উত্তম বন্ধুত্ব। মহান আল্লাহ মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাথে সাথে তাদের উপর বেশ কিছু দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্যও চাপিয়েছেন, যা পালনে তারা একে অপরকে বন্ধুর মত সহায়তা প্রদান করবে এবং নিজেদের সম্পর্ককে জান্নাত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। তাদের ভুল-ত্রুটি আল্লাহ মাফ করে দিবেন তাদের সন্তানদের দোয়ায় যদি সে বাবা-মায়ের হাতে মুমিন হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু যদি এই বন্ধন সুখের না হয়, তবে আল্লাহ তাদের সে বিয়ে ভেংগে দেবারও নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ অসুখী বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা অপেক্ষা সেই বন্ধন ছিন্ন করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বন্ধন ছিন্ন করতে হবে উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা করে, যাতে কোন পক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। আমরা যয়নাব (রাঃ) ও যাইদ (রাঃ) এর মাত্র ২ বছরের সংসার জীবনের দিকে তাকালে দেখতে পাই, "হাজবেন্ড-ওয়াইফ হিসেবে তাদের মাঝে স্বাভাবিকভাবে যে "মায়া-মমতা, ভালবাসা, দায়িত্ববোধ, সহযোগীতামূলক আচরণ" ইত্যাদি জন্মানোর কথা ছিল, তা মোটেও জন্ম নেয়নি, তাদের সংসার জীবন সুখের ছিলনা। এক্ষেত্রে হয়ত দুজনের পরস্পর বিপরীত মানষিকতা, দুজনের দুটো ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠা_ সহজভাবে বললে, দুজনের ভিন্ন অবস্হানই দায়ী ছিল। তাছাড়াও আগেই উল্লেখ করেছি যে, যয়নাব (রাঃ) উম্মুল মুমিনীন হতে চেয়েছিলেন। আবার যাইদ (রাঃ) এর জীবনি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তার মাঝে সমাজের সাথে খাপ না খাওয়ার মনোবৃত্তি বিরাজ করত। তিনি যয়নাব (রাঃ) এর স্বামী (স্বামী শব্দটি আমি ব্যাবহারের পক্ষপাতি না, যদিও লেখার প্রয়োজনে করতেই হল) হিসেবে হীনমণ্যতায় ভুগতেন। এজন্য তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চাইছিলেন এবং তা বারবার রাসূল ﷺ এর নিকট উল্থাপন করছিলেন কিন্তু রাসূল ﷺ রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু তার চাপাচাপিতে কিছুটা ধমক দিয়ে তাকে সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেটি কোরানের আয়াত থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়। "স্বরণ করুন আল্লাহ যাকে (যায়েদ রাঃ) অনুগ্রহ করেছেন এবং আপনিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আপনি তাকে বলেছিলেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে ভয় কর।" (আহযাব:৩৭)
তবে মহান আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ভিন্ন, সেটি হল, আরবে শত শত বছর ধরে চলে আসা পোষ্যপুত্র সংক্রান্ত আরবীয় ভ্রান্ত বিশ্বাসের মুলোৎপাটন করা। আরবরা ছিল ইবরাহিম (আঃ) এর পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর এবং তারা দাবি করত, তারা মিল্লাতে ইবরাহিম এর উপর প্রতিষ্ঠিত। অথচ মহান আল্লাহ ইবরাহিম ধর্মে পোষ্যপুত্রকে আপনপুত্র হিসেবে কোন অনুমোদন দেননি, বরং, তা ছিল আরববের নিজস্ব মনগড়া বিশ্বাস। তাই জাহিলিয়াতে পোষ্যপুত্রকে আপনপুত্র হিসেবে মানা হত, তাকে দত্তক নেয়া পিতার সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপারে উত্তরাধিকার হিসেবে গণ্য করা হত, পোষ্যপুত্রের কাছে তার বংশপরিচয় গোপন করা হত, তাকে দত্তক নেয়া পিতা নিজ বংশপরিচয় প্রদান করত... যা কিনা স্পষ্টত মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ genetics বা বংশগতিবিদ্যা আমাদের হাতে আছে যা আমাদের জন্য সত্য অনুধাবনকে খুব সহজ করে দিয়েছে। বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে আমরা ঔরসজাত সন্তান আর পোষ্য সন্তানের মাঝে পার্থক্য নিয়ে কিছুটা আলোচনায় যেতে পারি যা আমাদের পরবর্তী বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধা করে দিবে।
প্রকৃত পুত্র ও পালিত পুত্রের মাঝে যে পার্থক্য কোথায়?
পিতার সাথে ঔরসজাত সন্তানের অস্তিত্বগত সম্পর্ক বিদ্যমান। পিতা হচ্ছেন সন্তানের জন্মগ্রহণ ও অস্তিত্বলাভের বস্তুগত কারণ। সন্তান হল পিতা ও মাতার শারিরিক ও আত্নিক বৈশিষ্টাবলির উত্তরাধিকারী। যেমনটি আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন, " ফাতিমা আমার শরীরেরই অংশ, যা তাকে বিষন্ন করে, তা আমাকেও বিষন্ন করে, তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ৬০৮৭, অধ্যায়ঃ ৪৫/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত ,পাবলিশার: ইফাবা)"
কাজেই এধরণের একত্ব ও রক্তসম্পর্কের কারণেই পিতা ও সন্তান একে অপরের ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে এবং বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ, পিতা তার ঔরসজাত সন্তানের বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারেননা আবার পুত্রও তার পিতার বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বা মাকে অথবা সৎ মাকে বিয়ে করতে পারেনা।
সুতরাং এধরণের সম্পর্কের সাথে অস্তিত্বগত বা রক্তগত সম্পর্ক রয়েছে, তা কেবল কথার জোড়ে বা গায়ের জোড়ে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না, যেটি সূরা আহযাবে বলা হয়েছে, এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ সত্য বলেন এবং তিনি এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন। (আহযাব:৪)
কাজেই উত্তরাধিকার, বিয়ে, তালাক ইত্যাদি বিধানগুলোর ক্ষেত্রে একজন পালিত পুত্র একজন ঔরসজাত পুত্রের সমকক্ষ হওয়া তো দূরের কথা, সে প্রকৃত সন্তানের দাবিদারই হতে পারেনা। আবার অনেকক্ষেত্রেই পালিত সন্তানের কাছে তার বংশপরিচয় গোপন করা হয় এবং দত্তক নেয়া পিতা-মাতা তাকে নিজেদের পরিচয় প্রদান করেন অথচ সেটি স্পষ্টত মিথ্যা, কারণ তারা তার প্রকৃত বাবা-মা নন। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, তোমরা তাদেরকে তাদের পিতার পরিচয়ে ডাক কিন্তু যদি পিতৃপরিচয় না জানো, সেক্ষেত্র তারা দ্বীনি ভাই ও বন্ধু।
তাই আরবদের এধরণের অংশিদারিত্ব সঠিক নয়, বরং বংশ পরিচিতিকে হাসি-ঠাট্টার বিষয় বানিয়ে ফেলা। মহান আল্লাহ জাহেলিয়াত যুগের অনেক ভ্রান্ত প্রথাই রাসূল ﷺ এর নিজের দ্বারা প্রথম রহিত করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় কয়েকটি ঘটনা:
১. খুনের বদলে খুন: এই মারাত্নক রীতিকে রাসূল ﷺ রহিত করেছিলেন তার বংশের ইবন রবীয়া ইবন হারিছের রক্তের বদলা বাতিল ঘোষনা করে।
২. সুদ প্রথা: রাসূল ﷺ তার দাদা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদের দাবী বাতিল ঘোষণা করে সর্বপ্রথম তা বাতিল বলে রায় দেন।
একইভাবে "পোষ্যপুত্র" সম্পর্কে যেসব জাহিলিয়াত ভ্রান্ত বিশ্বাস আরবে বিদ্যমান ছিল, আরব সমাজে তা রাসূল ﷺ কর্তৃক যয়নাব (রাঃ) কে বিয়ে করার মাধ্যমে দূর করেছিলেন। ইসলামি আইন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, পোষ্যপুত্র বা পোষ্যকন্যা বলতে কিছুই নেই। পালকপুত্র বা কন্যার দ্বারা পর্দা প্রথাও নষ্ট হয়। তবে যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের কে দত্তক/পালক নেয়া যায়। যেমন আয়েশা (রাঃ) তাঁর আপন ভাইয়ের ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন। এছাড়াও রাসূল এর ঘরে দুররা বিনতে আবু সালামা (রাঃ) তার নিজ কণ্যার স্নেহে মানুষ হন, যিনি ছিলেন তার দুধ ভাই আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ (রাঃ) ও উম্মে সালামার কণ্যা।
চলবে______
বিঃদ্রঃ: আমি খুবই অসুস্হ তাই ঠিকভাবে লিখতেও পারছিনা। লেখাটাকে যতটা সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলাম ততটা সম্ভব হচ্ছেনা কিন্তু কথা দিয়েছিলাম লেখাটা রোজার মাঝেই শেষ করব তাই হয়ত আমাকে খুব অল্প কথায় লেখাটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার এই অনিচ্ছাকৃত দূর্বলতার জন্য আমি দুঃখিত।
বিষয়: বিবিধ
২৬৮৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনাকে সুস্থ্যতা দান করুন ও আর বেশি বেশি মানুষের ঘুম ভাঙানোর তৌফিক দিন । আমীন
বাংলাদেশে নাস্তিক ২ প্রকারের। ১. নকল নাস্তিক এরা মূলত উগ্র হিন্দু এরা নিজেদের ধর্মীয় উগ্রতার জন্য নাস্তিক সেজে ইসলাম নিয়ে গালাগালি করে। ২. স্বল্প জ্ঞানের মূর্খ্য। কিয়ামত পূর্ব সময়ে এদের আধিক্য বেড়ে যাবে।
হাসান ইবনে সাব্বাহ (রঃ)..আনাস বিন মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,(কিয়ামতের আলামত হল) লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, আল্লাহ যদি সবকিছুরই স্রষ্টা হন, তবে তার সৃষ্টিকর্তা কে? (বুখারী: ৬৭৯৮, ১০ম খন্ড)
কোরানের ভাষ্যমতে এরা কখনো ঈমান আনবেনা কারণ তারা অহংকারী। এরা কোন যুক্তি মানবেনা। আর এরা হেদায়েতও পাবেনা বরং পাক্কা জাহান্নামী।
যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন; তখন তারা বলে, নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! নিশ্চয়ই এরাই নির্বোধ কিন্তু তারা সে ব্যাপারে অবগত নয় (সূরা বাকারা আয়াত: ১৩)
হে মুহাম্মাদ! যদি আমি কাগজের উপর লিখিত কোন কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর তারা তা নিজেদের হাত দ্বারা স্পর্শও করতো; তবুও কাফির ও অবিশ্বাসী লোকেরা বলত যে, এটা প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আনআম:৭)
তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেননি যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত না।
এইভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে উহা সঞ্চার করি।
তারা কোরানের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবেনা এবং অতীতে তাদের পূর্ববর্তীগণেরও আচরণ এরূপই ছিল। যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে তাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, না, বরং আমরা জাদুগ্রস্হ হয়ে পরেছি। (সুরা হিজর, আয়াত:১১,১২,১৩,১৪,১৫)
তাই এসব লোকদের দায় আল্লাহর, আমার না।
অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য।(সুরা আলা:১৭, ৩০ পারা)
অনন্তর যেদিন আমি তাদেরকে একত্রিত করব-যাতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তাদের কি দশা হবে? এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে, তা সম্যকরূপে প্রদত্ত হবে এবং কারো প্রতি অত্যাচার করা হবেনা (সুরা আল ইমরান, আয়াত:২৫)
সুতরাং, তাদের সামান্য হাঁসতে দাও, অতঃপর তারা অনেক বেশি কাঁদবে, এটা হল তাদের (কৃতকর্মের) পুরস্কার যা তারা উপার্জন করতো। (সুরা তওবাহ, ৮২)"
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সুস্থ করে দিক।
আরো কিছু বিষয় আপনার থেকে জানার ইচ্ছা, যেমন...
১. হযরত আয়শা (রাঃ) এর বিবাহ সম্পর্কিত বর্ণনা ও নাস্তিকদের জবাব,
২. মানব জাতিকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার খলিফা হিসেবে পাঠাবেন বলেছেন, অথচ সরাসরি দুনিয়াতে না পাঠিয়ে জান্নাতে বানিয়ে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার অপরাধে কেন দুনিয়াতে পাঠালেন?
৩. রাসূল (সা) বলেছেনঃ আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেই মুর্তিপূজক ছিলেন না, অথচ আমরা ইব্রাহীম আঃ এর পিতা আযর কে মুর্তিপূজক হিসেবে দেখতে পাই.
৪. বুখারীর একটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) এর ১৩ স্ত্রীর কথা উল্লেখ আছে, অথচ আমরা জানি সর্বমোট ১১ স্ত্রী, একসাথে ৯এর অধিক ছিল না।
এছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে, যা আমি জানতে খুবই আগ্রহী, আমি আশা করি আপনি এগুলোর যথাযথ প্রামানিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নেক ও সুস্থ হায়াত দান করুক (আমীন)।
আর এটি উসতাদ নোমান আলীর একটি লেকচার এটিও দেখতে পারেন। Click this link
আপনার দুই নাম্বার প্রশ্ন ছিল, মানব জাতিকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার খলিফা হিসেবে পাঠাবেন বলেছেন, অথচ সরাসরি দুনিয়াতে না পাঠিয়ে জান্নাতে বানিয়ে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার অপরাধে কেন দুনিয়াতে পাঠালেন?
নাহ ভুলটা এখানেই। দোষটা আপনার না, দোষটা মডারেট ইসলামিস্টদের যারা "ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদি ফলিফাহ" আয়াতের ভুল অনুবাদ লিখেছেন ও তার ভিত্তিতে নতুন মতবাদ তৈরী করেছেন যে, মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি বা পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। এটি সঠিক না, এই অনুবাদ যরা করেছেন আপনি দেখবেন, এরা কেউ মূল ধারার আলেম নন, বরং মডারেট ইসলামিস্ট ছিলেন। তারা নিজেদের মত করে কোরানের অনুবাদ করেছেন ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। মানুষ জ্বীন জাতির প্রতিনিধি, মোটেও আল্লাহর প্রতিনিধি না। মানুষ জ্বীন জাতির জায়গায় স্হলাভিষিক্ত, আল্লাহর জায়গায় নয়। জ্বীন জাতির দায়িত্বটা মানুষের উপরে বর্তানো হয়েছে, আল্লাহর দায়িত্ব মানুষ কাধে নেয়নি। আল্লাহর মালিকানায় কারো অংশিদারিত্ব নেই। আমি খুব সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করব। কোরানে বলা হয়েছে যখন আদ জাতিকে ধ্বংশ করা হল, তখন সামুদ জাতিকে তাদের স্হলাভিষিক্ত করা হল। আদ ও সামুদ দুটি জাতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ছিল তাই একটিকে যখন অপসারণ করা হয়েছে অন্যটিকে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে বা প্রতিনিধিত্ব দেয়া হয়েছে। আবু বকর (রাঃ) কে ডাকা হত খলিফাতুর রাসূল বা রাসূলের প্রতিনিধি কারণ তিনি রাসূলের জায়গায় স্হলাভিষিক্ত হয়েছেন, রাসূলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আবার উমার রাঃ কে ডাকা হত খলিফাতুল আবু বকর বা আবু বকরের প্রতিনিধি কারণ তিনি আবু বকরের জায়গায় স্হলাভিষিক্ত। আবু বকরের দায়িত্ব এবার পালন করবেন তিনি। বিস্তারিত আলোচনায় যেতে পারছিনা কারণ শরীর ও সময় কোনটাই আমার পক্ষে কাজ করছেনা। সহজকথা মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি না, জ্বীন জাতির প্রতিনিধি বা তাদের স্হলে স্হলাভিষিক্ত, আল্লাহর জায়গায় না। আদম ও হাওয়া (আঃ) কে জ্বীন জাতির বিকল্প হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল আল্লাহর ইচ্ছায় তারা জান্নাতের একটা অংশে ছিলেন আবার আল্লাহর ইচ্ছায় তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। ব্যাপারটার সহজ উত্তর এই।
৩ নাম্বার প্রশ্নের সহজ উত্তর হল, আরব কুরাইশরা ছিলেন ইবরাহিম (আঃ) এর পুত্র ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর। তাদের ধারাটি এসেছে ইবরাহিম (আঃ) এর স্ত্রী হাজেরা (আঃ) থেকে যিনি ছিলেন মিশরীয় ও মুসলিম। কোরানে ইবরাহিম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ইবরাহিম ছিল একজন জাতি। একজন একক ব্যক্তি কিভাবে জাতি হয়? কারণ তৎকালীন যুগে সমস্ত মানুষই ছিল মুশরিক, একমাত্র ইবরাহিম (আঃ) ব্যতীত তাই মানুষ জাতিকে দুভাবে ভাগ করলে ইবরাহিম (আঃ)পরেন একভাগে আর গোটা পৃথিবীর মানুষ পরে অন্যভাগে। আর এই একক ব্যক্তি যিনি কিনা জাতিও বটে ইবরাহিম (আঃ) এর বংশ থেকেই পরবর্তীতে সকল নবীর আগমণ ঘটেছে। ইবরাহিম বংশের দুটি ধারা গিয়েছে একটি ইহুদি ও অন্যটি আরব কুরাইশ। আযর ছিল ইরাকি ও মুশরিক সে ইবরাহিম বংশের প্রতিষ্ঠাতা না। আল্লাহ নূহ (আঃ) কে বলেছিলেন মহাপ্লাবণ থেকে তার পরিবার কে রক্ষা করবেন কিন্তু তার ছেলে কেনানকে আল্লাহ যখন পানিতে ভাসিয়ে দিল তখন নূহ (আঃ) কিন্তু আল্লাহকে বলেছিলেন, আপনি তো ওয়াদা করেছিলেন আমার পরিবারকে রক্ষা করবেন, তবে আমার ছেলেকে কেন পানিতে ভাসিয়ে দিলেন? আল্লাহ উত্তর দিয়েছিলেন, কাফিররা কখনো নবী পরিবারের কেউ না। যাইহোক পরে কখনো লিখলে এটা নিয়ে ব্যাখ্যায় যাবো ইনশাআল্লাহ।
৪ নাম্বার প্রশ্নে বুখারীর হাদিসটি উল্লেখ করা উচিত ছিল। যাইহোক রাসূল (সাঃ) এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন, যথাক্রমে:
১.খাদিজা (রাঃ)
২.সাওদা বিনতে জামআ (রাঃ)
৩.আয়েশা (রাঃ)
৪. হাফসা বিনতে উমার (রাঃ)
৫.যয়নাব বিনতে খুজাইমা (রাঃ)
৬.উম্মে সালামা (রাঃ)
৭.জুরায়রিয়া বিনতে হারিস (রাঃ)
৮.যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)
৯.উম্মে হাবিবা (রাঃ)
১০.মায়মুনা বিনতে হারিস (রাঃ)
১১. সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রাঃ)
১২.মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ)
১৩.রায়হানা (রাঃ)
উল্লেখ্য শেষের দুজন নারীকে কোন কোন ইতিহাসগ্রন্হে রাসূল ﷺ এর দাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। এদুজনকে তিনি দাসী হিসেবে পেয়েছিলেন তবে বিবাহ করেছিলেন এবং মারিয়া কিবতিয়ার গর্ভে ইবরাহিম (রাঃ) নামের পুত্রসন্তানও জন্ম নিয়েছিল যে অল্প বয়সে মারা যায়। রায়হানা (রাঃ) সমস্যাটা এই জায়গাটাতেই বাধানো হয়েছে কিছু ইতিহাসগ্রন্হে ও তাফসীরে। যেমন তাফসীরে ইবনে জারীর, আত তাবারী ও ওয়াকিদী নামক ব্যক্তি। এই দুজনকে বাদ দিলে রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর সময় ৯জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। এই হল ব্যাপার।
বেশ কয়েকমাস আগে কোপেনহেগেন এর এক মসজিদে - কোন সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়াই - অনলাইন বোখারী শরীফে 'এইজ অব আয়েশা' লিখে সার্চ বাটনে ক্লিক করেছিলাম। তাতে আমি যে কয়টা হাদীস পেলাম - তা পড়ে ভীষন রকমের অবাক হলাম।
কারন ঐ হাদীস সমূহ অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে পড়লে - লিটারেলী যে কেউ এটা ক্লিয়ারলী আবিষ্কার করতে পারবে (যেহেতু আমার মত ইসলামের জ্ঞানহীন মানুষ পেরেছি) কিংবা বলা যায় যে বোখারী শরীফের হাদীস দিয়েই ১০০% প্রমান করা যাবে যে - আয়েশা রাঃ কে রাসুলুল্লাহ্ সঃ ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন নি এবং ৯ বছর বয়সে ঘরে তুলে আনেন নি।
এ নিয়ে আমি ঐ সময়ে এ ব্লগে একটা লিখা লিখেছিলাম হাদীসগুলোকে কোট করে। লিখাটির ভাষাকে আর একটু পলিশ করবো বলে তা পরে ড্রাফট এ নিয়ে রেখেছি।
আমি তা কপি পেষ্ট করছি নিচে। এবং আশা করবো আপনি / আপনারা এর উপর আপনাদের জ্ঞানকে ব্যবহার করে পূর্নতা দেবেন। সে ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আমি ছুটি পাব। ধন্যবাদ।
যাই হোক আমি কিছু হিন্টস দেই - যা আমার স্মরনে আছে।
১। সার্চ এ প্রাপ্ত হাদীসের বেশ কয়েকটিতে আয়েশা রাঃ বর্ননা করেছেন ওনার বাবা আবু বকর রাঃ এর হিজরত এর উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ ও ফিরে আসা এবং উঠোনে মসজিদ বানানো সংক্রান্ত। এবং সে সময়ে ওনার বয়সের হিন্টস তিনি দিয়েছেন এ সকল হাদীস বর্ননাকালে। দু একটি হাদীসে তার পর পর খাপছাড়া ভাবে মদীনায় হিজরতকে এ্যাড করা হয়েছে। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে হাদীসসমূহ পড়লে ঐ পার্থক্য এড়িয়ে বয়স এর ধারনা পাওয়া যাবে।
২। ওনার বোনের ছেলে সম্ভবতঃ উরুয়া রঃ ওনাকে ওনার বয়স নিয়ে প্রশ্ন যখন করছে তার উত্তরে সম্ভবতঃ তিনটি হাদীস আছে। প্রতিটি হাদীসে ওনার উত্তর এটা ক্লিয়ার করে যে তিনি তার তথাকথিত এ্যাকুরেট বয়স! ৬ ও ৯ জানতেন না বলেই ঘটনা বলে বুঝাতে চেয়েছেন - ওনার বয়স কতটা হতে পারে? মোহাম্মদ সঃ এর ঘাঁড়ের উপর দিয়ে বর্শা খেলা দেখা সংশ্লিষ্ট হাদীস সমূহ দ্রষ্টব্য।
৩। আমরা হাদীস ও সিরাহ হতে এবং সম্ভবতঃ অন্যান্য সোর্স হতে এটাতে প্রায় শিওর হই যে - আয়েশা রাঃ ওনার বোন আসমা রাঃ হতে ১০ বছরের ছোট। আসমা রাঃ এর আর্লি বয়সের যে রেফারেন্স এবং পরবর্তীতে মৃত্যুর যে রেফারেন্স তা আয়েশা রাঃ এর মৃত্যুর রেফারেন্স এর সাথে মিলিয়ে পেছন দিকে আসলে দেখা যায় আয়েশা রাঃ এর বয়স ডেফিনিটলী ১৭ এর নিচে ছিল না।
৪। যে দু তিন টি হাদীসে আয়েশা রাঃ এর মুখে ৬ ও ৯ সংখ্যা দুটি এসেছে - তা পড়তে গেলে খাপছাড়া বলে মনে হবে। সাধারনত আমার দাদী ও নানী পারতোনা বিয়ের সময় ওনার বয়স কত ছিল তা বলতে - কিন্তু আয়েশা রাঃ তা বললো।
জাকির নায়েক সহ অসংখ্য মানুষের মুখে আমি এই ৬ ও ৯ এর ব্যাখ্যা শুনেছি - কিন্তু আমি মনে করি ওনারা এ নিয়ে একটু ক্রিটিক্যাল থিংকিং করলে এই ৬ ও ৯ এর ধাঁধাঁ বের করে ফেলতে পারবেন।
ইমরান হোসেন এর এক বক্তৃতা হতেও আমি জেনেছি কোরানে কিনা নাবালিকা বিয়ে করায় না করা আছে। আমি রেফারেন্স দিতে পারছিনা এ মূহুর্তে হয়তো আপনি জানতে পারেন। আয়েশা রাঃ বুঝাতে চেয়েছেন - ব্যাক্তি জীবনে রাসুল সঃ ছিলেন কোরানের বাস্তবায়ন কিংবা চলমান কোরান। তো রাসুল সঃ এমন কিছু করতে পারেন না যা কোরানের বিপরীত, তথা কোন হাদীস কোরানের সাথে কন্ট্রাডিক্ট হতে পারে না।
হাসান ইবনে সাব্বাহ (রঃ)..আনাস বিন মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,(কিয়ামতের আলামত হল) লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, আল্লাহ যদি সবকিছুরই স্রষ্টা হন, তবে তার সৃষ্টিকর্তা কে? (বুখারী: ৬৭৯৮, ১০ম খন্ড)
তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেননি যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত না।
এইভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে উহা সঞ্চার করি।
তারা কোরানের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবেনা এবং অতীতে তাদের পূর্ববর্তীগণেরও আচরণ এরূপই ছিল। যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে তাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, না, বরং আমরা জাদুগ্রস্হ হয়ে পরেছি। (সুরা হিজর, আয়াত:১১,১২,১৩,১৪,১৫)
যখন তাদেরকে বলা হয়, লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে তোমরাও অনুরূপ ঈমান আন; তখন তারা বলে, নির্বোধেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনব? সাবধান! নিশ্চয়ই এরাই নির্বোধ কিন্তু তারা সে ব্যাপারে অবগত নয় (সূরা বাকারা আয়াত: ১৩)
হে মুহাম্মাদ! যদি আমি কাগজের উপর লিখিত কোন কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করতাম, অতঃপর তারা তা নিজেদের হাত দ্বারা স্পর্শও করতো; তবুও কাফির ও অবিশ্বাসী লোকেরা বলত যে, এটা প্রকাশ্য যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আনআম:৭)
অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্য।(সুরা আলা:১৭, ৩০ পারা)
অনন্তর যেদিন আমি তাদেরকে একত্রিত করব-যাতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তাদের কি দশা হবে? এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করেছে, তা সম্যকরূপে প্রদত্ত হবে এবং কারো প্রতি অত্যাচার করা হবেনা (সুরা আল ইমরান, আয়াত:২৫)
সুতরাং, তাদের সামান্য হাঁসতে দাও, অতঃপর তারা অনেক বেশি কাঁদবে, এটা হল তাদের (কৃতকর্মের) পুরস্কার যা তারা উপার্জন করতো। (সুরা তওবাহ, ৮২)"
মন্তব্য করতে লগইন করুন