লালন নিজ ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠিত ধর্মের নামে চালিয়েছে, ও মোল্লাতন্ত্র প্রচার করেছেন।লালন পর্ব=৭
লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ২৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৫৩:৫৫ বিকাল
আমি পূর্বে উপস্থাপন করেছি যে- লালন তার নিজস্ব কোন মতবাদ প্রচার করে নি। সে মূলতঃ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থের বাণী সমুহকে নিজের মত করে, নিজের গড়া কিছু সাংকেতিক শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচার করেছেন। সেই সাথে লালন তাঁর নিজস্ব কিছু মতবাদ, প্রতিষ্ঠিত ধর্ম গ্রন্থের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। তাই বলে লালন যে একেবারেই ধর্ম বিষয়ে কিছুই জানতেন না, তা নয়। লালন তার গুরু সিরাজ সাঁই কর্তৃক প্রচলিত কোরাণের আধ্মাত্মিকতা জানার পরে, প্রচলিত কোরাণের সেই বাণী সমুহকে নিজের মত করে, নিজ গড়া সাংকেতিক ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। অনুরুপ ভাবে তিনি অন্য সম্প্রদায়ের ধর্ম বাণীর ও আধ্মাত্মিকতা আলোচনা করেছেন।
কেন না- মূলতঃ সকল সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থে একই কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তা শুধু মাত্র ভীন্ন ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে। সর্বপরি- লালন ঘরাণার যারা বিশ্বাস করেন, বা যারা প্রচার করেন যে- লালন সমস্ত ধর্ম গ্রন্থ বাদ দিয়ে নিজস্ব মতবাদ প্রচার করেছেন, তারা মূলতঃ ভুল অথবা মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে চলেছেন। আসল সত্য হলো- লালন পূর্ব থেকে চলে আসা প্রচলিত সম্প্রদায় সমুহের ধর্ম গ্রন্থের কথা ই প্রচার করেছেন। আজ লালনের এমন ই একটি গান উপস্থাপন করবো- যেখানে সে নিজের মতবাদ মানতে নয়, প্রতিষ্ঠিত এক সম্প্রদায়ের মতবাদ মানতেই আহবান করেছেন। আসুন দেখে নিই কি বলেছে লালন তার এই গানে-
রাসুল নামে কে এলো মদীনায়। কায়া ধারী হয়ে ভবে, তার ছায়া নাই।।
এক
কি দেবো তুলনা তারে,খুঁজে পায় না এ সংসারে।
মেঘে যারে ছায়া ধরে, ধূপেরই সময়।।
দুই
ছায়াহীন যার কায়া, তৃ-ভূবণে তারই ছায়া।
এ কথাটির মর্ম নেওয়া, অবশ্যয়ই চাই।।
তিন
কায়ার শরীর ছায়া দেখি, যার নাই সে লা-শারিকী।
লালন বলে তার হাকিকী, বলিতে ডরাই।।
এই গানটিতে লালন দু-টি সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা গড়া মুসলিম সাধক খাজা মাইনুদ্দীন চিশতি কর্তৃক। শব্দ দু-টি হলো- কায়া-দেহ, ধূপ-রৌদ্র।
এবার আসুন এই গানটির মাধ্যমে লালন কি বার্তা উপস্থাপন করেছেন। প্রথমে আমরা দেখবো এই গানটির মূখোবন্ধে লালন কি বলেছে-
রাসুল নামে কে এলো মদীনায়। কায়া ধারী হয়ে ভবে, তার ছায়া নাই।।
সাধারণ অর্থে- লালন শাহ এই গানটি লিখেছেন সে সময়ের কথা বলার জন্য, যে সময় মহাম্মদ মদীনায় হিজরত করলেন। তাই তিনি বলেছেন রাসুল নামে মদীনায় কে এলো, যে পৃথিবীতে কায়া বা দেহ ধারী কিন্তু যমিনে তার ছায়া পড়ে না। তার মানে তিনি বলতে চেয়েছেন, মহাম্মদের ছায়া যমিনে পড়ে নাই।
মূলতঃ এটা কি সত্য যে- মহাম্মদের, যমিনে কোন ছায়া পড়তো নাই? না! এ কথাটি সত্য নয়। রোদ্রে গেলে সাধারণ জীবের যে ছায়া পড়ে, ব্যক্তি মহাম্মদের ও সে রকমই ছায়া পড়তো। তবে- এখানে লালন যে ভুলটি করেছে, সে টা হলো- রাসুল শব্দটি ব্যবহার করে। মূলতঃ রাসুল বস্তুর ছায়া আছে, কিন্তু নবি বস্তুর ছায়া নাই। মহাম্মদের একাধারে দুটি উপাধী। এক, তিনি রাসুল, দুই ,তিনি নবি। ব্যক্তি মহাম্মদের ছায়া আছে, মহাম্মদের রাসুল অংশেরও ছায়া আছে, ছায়া নাই মহাম্মদের নবি অংশের। অথচ লালন কর্তৃক রাসুলের ছায়া নাই উক্তির মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে- লালন নবি ও রাসুলের পার্থক্য অবগত ছিলেন না।
তার পরেও এখানে বুঝা যায় যে- সাধারণ ভাবে লালন এই গানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থে বলা রাসুল বিষয় নিয়েই লিখেছেন, নিজস্ব কোন মতবাদ লেখেন নি। এবার আসুন, আমরা দেখে নিই এই গানের প্রথম কলিতে লালন কি বলেছেন।
কি দেবো তুলনা তারে,খুঁজে পায় না এ সংসারে। মেঘে যারে ছায়া ধরে, ধূপেরই সময়।।
গানের এই কলিটির প্রতি দৃষ্টি দিলে বুঝা যায় যে- লালন মহাম্মদের রুপ বা গুণ বর্ণনা করতেই এই উক্তি করেছেন, যে- এই রাসুলের বিষয়ে দেওয়ার মত কোন তুলনা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ রোদের মধ্যে যখন রাসুল কাজ করছেন, তখনো তার কোন ছায়া পড়ছে না। মূলতঃ এই ছায়া পড়ছে না টা হবে মহাম্মদের নবি অংশের, রাসুল অংশের নয়। আর মুসলিম সম্প্রদায়ে এই মহাম্মদের ছায়া পড়তো না বিষয়ে যা প্রচলিত আছে, তা হলো-
শীশু মহাম্মদ তার চাচা আবু তালেবের সাথে বানিজ্যের জন্য সিরিয়া যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে তারা এক যায়গায় তাঁবু গাড়লে, মহাম্মদ প্রচণ্ড রোদের মধ্য কি একটা কাজ করছিল। তো- সেই এলাকার এক ধর্ম যাজক তিনি দেখেন যে-শীশু মহাম্মদের ছায়া মাটিতে পড়ছে না। মহাম্মদ যে দিকেই যাচ্ছেন একটি মেঘ সে দিকে গিয়েই মহাম্মদকে ছায়া প্রদান করছেন। এই ধর্ম যাজক আবার জানতে পেরেছিলেন যে- আখেরী যামানার নবীর এই রকম গূণাবলি থাকবে। তাই সেই ধর্ম যাজক, মহাম্মদের চাচা আবু তালেবকে সাবধান করেছিলেন যে- তোমরা এই শীশুকে নিয়ে সিরিয়া যাইও না। কারণ- সেখানে গেলে তারা মহাম্মদকে মেরে ফেলবে, কারণ তার কাছে নবুয়তের চিহ্ন আছে। মেঘে তারে ছায়া করে রেখেছে।
দেখেন কেমন কথা- যেই লোক মহাম্মদকে এতদিন পালন করলো সেই চাচা আবুতালিব কোন দিনই দেখতে পা্ইলেন, অথচ এক ধর্ম যাজক একবার দেখাতেই দেখে ফেললেন যে মহাম্মদের মাথার উপরে একখণ্ড মেঘ ছায়া করে আছে। মূল কথা হলো- একদা মহাম্মদ নবি ও রাসুলের পরিচয মূলক আলোচনায় দেখিয়েছিলেন যে- মূলতঃ জীবের মধ্যে অবস্থিত নবি স্বত্বার কোন ছায়া পড়ে না। আর সেই কথার উপরে ভিত্তি করে, মোল্লারা ব্যক্তি মহাম্মদের ছায়া ছিল না প্রমাণে ঐ গল্পের অবতারণা করে। আর লালন, নবি ও রাসুলে পার্থক্য জ্ঞান না জানার দরুন, রাসুলের ছায়া ছিল না বলে প্রচার করেছেন।
এবার দেখেন এই গানের দ্বিতীয় কলিতে লালন কি বলেছে-
ছায়াহীন যার কায়া, তৃ-ভূবণে তারই ছায়া। এ কথাটির মর্ম নেওয়া, অবশ্যয়ই চাই।।
লালন তার গানের এই উক্তির মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন যে- ভূবণে ছায়াহীন কায়া হলো স্রষ্টার, কারণ আমরা স্রষ্টাকে দেখতে পায় না। অথচ- তৃ-ভূবণেন সকল কিছুই স্রষ্টার ছায়া রুপ। এস্থলে লালন আগের গানের মতই বুঝাতে চেয়েছেন যে- এই রাসুলই স্রষ্টা। তাই, যেই রাসুলের ছায়া ভূবণে পড়ে না, কিন্তু সেই রাসুলের ছায়াই ভরা এই তৃ-ভূবণ। এই উক্তটি হলো- মূলত লালনের। যাহা মুসলিম ধর্ম গ্রন্থ ও আধ্মাত্মিকতার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়। কারণ তৃ-ভূবণ নবির ছায়াময়, কিন্তু নবির ছায়া ভুমিতে পড়ে না।
এবার আসুন এই গানটির শেষ কলির প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করি। এই কলিতে লালন বলেছেন-
কায়ার শরীর ছায়া দেখি, যার নাই সে লা-শারিকী। লালন বলে তার হাকিকী, বলিতে ডরাই।।
কায়া শব্দের অর্থই হলো শরীর বা দেহ। সেখানে লালন কায়ার শরীর বলে নিজেকে একেবারেই ভাষা জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মূলতঃ এখানে লালন বলতে চেয়েছেন যে- কায়া মাত্রেই ছায়া আছে দেখা যায়, অথচ যার কায়া আছে কিন্তু ছায়া নাই, সে মানুষ নয়, সে ল-শারিকী বা স্রষ্টা। কিন্তু তিনি তা না বলে, বলেছেন কায়ার শরীর, যাহা অবস্থার যা কণ্ডিশানের মত আর কি।
তার মানে লালন এই গানেও রাসুল বলতে স্রষ্টাকেই বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। মূলতঃ রাসুল যে- স্রষ্টা, তার প্রমান কিন্তু প্রচলিত কোরাণে নাই। তার পরেও লালন মুসলিম সম্প্রদায়ের উক্তির মধ্যে নিজের মনগড়া ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের অপচেষ্টা করেন।
এই লেখাটি আমার নয়। এই লেখাটি লিখেছেন গুরুজী। আমি তার অনুমতি সাপেক্ষে এখানে পোষ্ট করলাম।গুরুজীর মূল পোষ্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন