শেরে মাইসুর টিপু সুলতান
লিখেছেন লিখেছেন চিরবিদ্রোহী ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫১:৩৮ বিকাল
Forgotten Heroes: A tribute to the greatest men on earth.
ফরগটেন হিরোস্ : এ ট্রিবিউট টু দ্যা গ্রেটেস্ট মেন অন আর্থ
পর্ব - ০৫ (প্রথম কিস্তি)
শেরে মাইসুর সুলতান নাসিবুদ্দৌলা ফাতিহ আলী খান বাহাদুর টিপু সাহেব পাদিশাহ (রহ.)
(নভেম্বর ১৭৫০ - ৪ মে ১৭৯৯ খ্রি: )
"তু রেহ নাওয়ার্দ-ই-শাওক্ব হ্যায়, মানজিল না কার ক্বাবুল
লাইলা ভি হাম-নাশিন হো তু মেহমিল না কার ক্বাবুল।
আয়ে জোয়েই আর বারহ কে হো দারিয়া-ই-তুর-তাইয
সাহিল তুঝে আতা হ্যায়তো সাহিল না কার ক্বাবুল।
সুবহা-ইআজল ইয়ে মুঝ সে কাহা জিবরিল নে
জো আক্বল কা গুলাম হো, উয়ো দিল না কার ক্বাবুল
বাতিল দোই পাসান্দ হ্যায়, হাক্ব লা শারিক হ্যায়
শিরকাত মায়্যানা-ই-হাক্ব-ও-বাতিল না কার ক্বাবুল।"
(ওয়াস্যিয়াত-ই- টিপু সুলতান; ড. ইকবাল
ভারতীয় উপমহাদেশে বণিকরূপে আসা অভিশপ্ত ব্রিটিশদের দেড় শতাব্দি অতিক্রম করে গেছে। এরই মধ্যে তারা প্রায় সমস্ত হিন্দে শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলেছে। স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখী দেশ। রাজপথ, পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি সর্বত্রই চলছে মহা বিপদের ঘনঘটা। ব্রিটিশদের দমন পীড়ন নীতিতে গোটা দেশ যেন প্রচন্ড বেদনায় ডুকরে কেঁদে উঠছিলো।
ভারতবর্ষে অত্যাচারী ব্রিটিশ বেণিয়েদের জেঁকে বসার ক্ষেত্রে তাদের বীরত্ব, সাহসীকতা ও যোগ্যতা যা না ছিলো তার চেয়ে অনেকগুনে বেশি ছিলো ভারতেরই কিছু ব্রিটিশ প্রেমী, ব্রিটিশদের উৎকোচ ভোগী দালাল জমিদার ও রাজ্যাধিপতির সর্বাত্মক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য-সহযোগীতা।
ভারতবর্ষে দক্ষিণ অঞ্চলের সম্বৃদ্ধ রাজ্য মাইসুর। তখনো অভিশপ্ত ব্রিটিশ বেনিয়েদের নাপাক কদম এখানে পড়েনি। সব দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ থেকেও শুধু মাত্র রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সেনাপতিদের স্বার্থপরতা, দায়িত্বহীনতা ও রাষ্ট্রিয় অর্থ দপ্তরে চলছে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা। শাসক দ্বিতীয় কৃষ্ণরাজা ওদিয়ার নিজেও যে খুব যোগ্য শাসক ছিলো তাও বলার উপায় নেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় নিরুপায় হয়ে এহেন পরিস্থিতে অর্থদপ্তরের দায়িত্ব তুলে দিলেন তার রাজ্যের সবচেয়ে যোগ্য, বিশ্বস্ত, সাহসী ও সৎ সেনাপতি হায়দার আলীর হাতে।
অতুলনীয় দক্ষতায় সামান্য সময়ের মধ্যেই তিনি অর্থ দপ্তরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন। পুরস্কার স্বরূপ রাজা তাকে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন (১৭৬১)। এরপর নিজের যোগ্যতা দক্ষতায় এক হাতেই রাজ্য সামলাতে থাকলেন হায়দার আলী। ঐতিহাসিকগণের ভাষায়, কৃষ্ণরাজা শুধু নামের রাজাই ছিলো, রাজার সব কাজ ও সিদ্ধান্ত হায়দারকেই নিতে হতো। বলতে গেলে, ১৭৬১ সাল থেকে কৃষ্ণরাজাকে নামমাত্র এবং লোকদেখানো দেখানো শাসক রেখে হায়দার আলী মাইশুর শাসন করতে থাকলেন।
(চিত্র: কৃষ্ণরাজা ওদিয়ার ও নাঞ্জরাজা ওদিয়ার)
১৭৬৬ সালে কৃষ্ণরাজা ওদিয়ার মৃত্যবরণ করেন। রাজার একমাত্র পুত্র নাঞ্জরাজা ওদিয়ার সিংহাসনে আরোহন করেন। কিন্তু মাত্র চার বছর রাজত্ব করে ১৭৭০ সালে বিষপানে তিনি মারা যান। নাঞ্জরাজার কোন যোগ্য উত্তরাধীকারি না থাকায় অভিজাতদের অনুরোধে রাজ্যের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত হায়দার আলী শামসুল মুলক আমিরুদ্দেীলা নওয়াব হায়দার আলী খান বাহাদুর উপাধি গ্রহণ করে রাজ্যের দায়িত্বভার নিজ হাতে তুলে নেন। কথিত আছে, নাঞ্জরাজা ওদিয়ারকে নাকি হায়দার আলী বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিকগণ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।
(চিত্র: সুলতান হায়দার আলী ও তাঁর সিংহাসন আরোহনের সময়কার মাইসূরের মানচিত্র)
সবদিক থেকে সফল হলেও হায়দার আলীর মনে একটা দুঃখ ছিলো। তাঁর কোন সন্তান ছিলো না, যে তার পরবর্তীতে তার উত্তরসূরী হবে। অবশেষে হায়দার আলী তাঁর স্ত্রী ফাতিমাকে সাথে নিয়ে ছুটে গেলেন সুদূর মাদ্রাজের আর্কট নামক গ্রামে, মহান সাধক হযরত টিপু সুলতানের খানকাহে। শায়েখের কাছে নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করলেন, তাঁর সাথে অশ্রুসিক্ত নয়নে পরম করুণাময়ের দরবারে পুত্র সন্তানের জন্য আবেদন করলেন। অবশেষে ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর মাইসুরের দেবানাহালি নগরীতে এই দপ্ততির ঘর আলো করে জন্ম নিলো এক পুত্র। শিশুপুত্রের নিস্পাপ মুখের দিকে প্রথমবার তাকিয়েই বলে উঠলেন, ”আমার পুত্রের শরীরের গঠন যেন বাঘের মতো! আমার বিশ্বাস এই পুত্র একদিন বাঘের মতোই সাহসী আর পরাক্রমশালী হয়ে উঠবে।” নিজ পিতার নামানুসারে পুত্রের নাম রাখেন ফাতিহ আলী খান, আর ডাক নাম রাখেন টিপু, যে শায়েখের দুআর বরকতের তাঁর জন্ম সেই শায়খের নাম অনুসারে। স্থানীয় কানাড়ি ভাষায় ”টিপু” শব্দের অর্থ বাঘ। অনেকে মনে করেন, শিশুটির মাঝে বাঘ্রসাদৃশ্য অবয়ব প্রত্যক্ষ করেই হায়দার তার নাম টিপু রাখেন।
(চিত্র: টিপুর জন্মস্থান, দেবানাহালী বর্তমান ব্যাঙ্গালুরু, কর্নাটক)
সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকেন শাহজাদা টিপু। সৎচরিত্র, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, সাহসীকতা আর ইবাদত গুজারের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠলে লাগলো তার মধ্যে। পিতা হায়দার আলী পুত্রের সুশিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। উস্তাদ শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে গোলাম রহমানের নিকট টিপু আরবী, ফারসি, উর্দু ও স্থানীয় কানাড় ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি কুরআন. হাদীস, ইলমে ফিকাহ, আদব, মানতিক, ও আরবী সাহিত্যে গভীর জ্ঞান ও উচ্চতর দক্ষতা লাভ করেন। একই সাথে রাজ্যের সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনাপতি গাজী খানের তত্ত্বাবধায়নে তিনি অশ্বারোহন, বন্দুক, তরবারী, তীর-ধনুক সহ প্রায় সব ধরণের অস্ত্র পরিচালনা ও রণবিদ্যায় দারুন পারদর্শী হয়ে উঠতে লাগলেন। বলা হয়ে থাকে, একজন ফরাসী সেনাপতি ফ্রেঞ্জ , তার কাছেও টিপু যুদ্ধ বিদ্যা অর্জন করেন। যেহেতু ফরাসিদের সাথে বাবা হায়দার আলীর পূর্বে থেকেই মিত্রতা ছিলো। এর সতত্যাও পাওয়া যায় পরবর্তীতে টিপুর ইউরোপীয় কায়দায় যুদ্ধ পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও বিখ্যাত ফরাসী রাষ্ট্রনায়ক ও বিজেতা নেপোলিয়ন বোনাপোর্ট কর্তৃক টিপুকে সাহায্য করার আগ্রহ থেকে।
ছোটবেলা থেকেই টিপু বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাঁকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। তাঁর সংগ্রহে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি বাঘ ছিলো, যেগুলোর যত্ন-আত্বি তিনি নিজেই নিতে ভালোবাসতেন। টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তাঁর অনুপ্রেরণার মতো। তাঁর রাজ্যের পতাকায় কানাড়ী ভাষায় লেখা ছিলো "বাঘই ঈশ্বরের শক্তির প্রতিক"। তিনি সিংহাসনে বসে মাঝে মাঝেই বলতেন তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি “ভেড়া বা শিয়ালের মতো মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো ”
টিপুর অসাধারণ বীরত্ব, বিক্রম ও যুদ্ধকৌশল প্রকাশ পায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই। বাবা হায়দার আলী বারবার মারাঠাদের উৎপিড়ণে বিরক্ত হয়ে মালবার আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন এবং যুদ্ধ শেখার জন্য কিশোর টিপুকে সাথে নিয়ে যান। ১৭৬৫ সালে যুদ্ধে টিপু সুলতান অসাধারণ বীরত্ব, পরাক্রম ও সেনা পরিচালনা দক্ষতার প্রমান রেখে মারাঠাদের একপ্রকার উড়িয়ে দেন। যুদ্ধে পরাজিত মারাঠা রাজা দ্বিতীয় মাধব রাও নারায়ণ একটি দূর্গে অবস্থান নেয় এবং হায়দার আলীর সন্ধি প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। এমতাবস্থায় টিপু সুলতান মাত্র ২০০০-৩০০০ সৈন্য সাথে নিয়ে দূর্গ আক্রমণ করেন এবং রাজাকে বন্দি করেন। পুত্রের এই অসীম বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে হায়দার এই কিশোর বয়সেই টিপুকে পাঁচ হাজার অশ্বারোহী সেনার অধিনায়ক নিযুক্ত করেন।
(চিত্র: মারাঠা-মাইসুর যুদ্ধ)
ইতোমধ্যেই প্রায় সারা ভারতে পা জমিয়ে বসা ব্রিটিশরা নজর দেয় দক্ষিণ ভারতের দিকে। সুচতুর ব্রিটিশ শাসকরা বুঝতে পারে, কোন রকমে মাইসুর কব্জায় আনতে পারলেই দক্ষিন ভারতে অধিকার অর্জণ করা যাবে। এমতাবস্থায় মূল্যবান উপহার ও হায়দার আলীর উপর প্রতিশোধ গ্রহনের লোভ দেখিয়ে ব্রিটিশরা মারাঠাদের সাথে কপট বন্ধুতের হাত বাড়ায়। অপরদিকে বিশাল পরিমাণ অর্থ ও উপহারাদি প্রদান করে নিজামদের সাথেও সম্পর্ক স্থাপন করে। সিদ্ধান্ত হয় একত্রে মাইসুর আক্রমণের।
(চিত্র: ব্রিটিশদের সাথে নিজামের যোগসাজশ)
১৭৬৭ সালে শুরু হয় প্রথম এ্যাংলো-মাইসুর যুদ্ধ (Anglo-Mysore War। আজীবন শত্র“ ব্রিটিশদের সাথে প্রথমবারের মতো সমরাঙ্গনে মুখোমুখি হলেন টিপু সুলতান। টিপুর অমিততেজী আক্রমণ, অসাধারণ রণকৌশলে ব্রিটিশ সৈন্যের মধ্যে “পালাও পালাও” প্রবণতা শুরু হয়ে গেল। কার সাধ্য এমন বীরের তরবারীর সামনে দাঁড়াবে! সাধের মুন্ডুটা দেহ ছাড়া করাতে ইচ্ছা আছে কার! ব্রিটিশ-মারাঠা-নিজাম বাহীনিকে টিপু যেন পাড়ার কুকুরের মতোই তাড়িয়ে রণাঙ্গন ছাড়া করে ছাড়লো। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সেনাধিনায়ক জন উড কিশোর টিপুর যুদ্ধ পারদর্শীতায় মুগ্ধ হয়ে জানতে চান ”কে এই ছেলে।” উত্তর আসে ”ছেলেটি মাইসুরের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনানায়ক হায়দার আলীর (তখনও তিনি শাসনভার হাতে তুলে নেননি) একমাত্র পুত্র ফাতিহ আলী খান টিপু।” মুগ্ধ সেনাপতি বললেন, ”This lad is crunching and chasing our soldier ” বোঝা যায়, টিপুর শত্র“রাও তাকে বাঘের মতোই পরাক্রমি মনে করতো।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হায়দার আলী ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন যে এতগুলো শত্র“র বহুমাত্রিক আক্রমণ উদিয়মান শক্তি মাইসুরের পক্ষে একা সামলানো সম্ভব না। তাই অনেক চিন্তা করার পর পুত্র টিপুকে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে প্রথমে মারাঠা রাজা মাধব রাওয়ের কাছে পাঠান। শত্র“র পুত্রকে রাজ দরবারে দেখে মাধব রাও তেলে -বেগুনে জ্বলে উঠেন। এই টিপুই দুই বছর পূর্বে অজেয় দূর্গের বাধা চুরমার করে তাকে আটক করেছিলো, কিছুদিন পূর্বেও অসীম তেজে ঘোড়া দাপিয়ে তার সৈন্যদের কচু-কাটা করেছিলো। কিন্তু যখনই টিপু কথা বলতে শুরু করেন, তার বাচন ভঙ্গি, মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার ও বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তি দেখে অত্যন্ত পুলকিত হন এবং ত্রিশ লাখ রুপি উপঢৌকন হিসেবে গ্রহন করে সন্ধি প্রস্তাবে সাক্ষর করেন। একই ভাবে টিপু হায়দ্রাবাদের নিজামের দরবারে সন্ধি প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন। বাহ্যিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা নিজাম হায়দার সম্পর্কে ভিতরে ভিতরে খুবই হিংসুক ছিলেন। টিপুর সাথে নিজামের কথপোকথন শুরু হলো। কিশোর টিপুর রাজনৈতিক জ্ঞান দেখে নিজাম অবাক না হয়ে পারলেন না। শেষে আঠারো লক্ষ রুপি উপহার হিসেবে গ্রহন করে মাইসুরের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
নিজামের সাথে সন্ধিবদ্ধ হওয়ার পর নিজাম-হায়দার মিলিত বাহিনী দক্ষিণ ভারতের চাঙ্গামায় ব্রিটিশ ঘাঁটিতে আক্রমন করেন। বলাবাহুল্য, এই যুদ্ধেও টিপু অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিলেন। খড়-কুটার মতো উড়ে গেলো ব্রিটিশ বাহীনি। এভাবে একে দক্ষিণ ভারতের প্রায় সবগুলো ব্রিটিশ কুঠি ও দূর্গ জয় করলো মিলিত বাহিনী। নভেম্বর নাগাদ ব্রিটিশদের সবচেয়ে শক্তিশালী আম্বর দূর্গ। পরাজিত ব্রিটিশরা সন্ধির আবেদন জানালে হায়দার তা মঞ্জুর করে আম্বর ত্যাগ করেন। এটাই ছিলো হায়দারের সবচেয়ে বড় ভুল। জোরদার আক্রমণ করলে হয়তো সেদিনই অন্তত দক্ষিণ ভারত স্বাধীন হয়ে যেত। এই সুযোগে কুটকৌশলি ব্রিটিশরা বিশাল পরিমাণ ঘুষ দিয়ে নিজামকে নিজের দিকে টেনে নেয়। আচমকা আক্রমনে দ্বিধাবিব্রত মাইসুর বাহিনী আম্বর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
দু’মাস পর নিজাম ও ব্রিটিশ বাহিনী মালাবার আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কর্ণাটক দখলে ব্যস্ত হায়দার টিপুকে সেখানে পাঠালেন। মেজর ফিটজেরাল্ড কর্ণেল উড, কর্ণের জোসেফ স্মিথের সম্মিলিত আঠাশ হাজার সুসজ্জিত বাহীনিকে মাত্র ছয় হাজার সৈন্য নিয়ে টিপু তৃণবৎ উড়িয়ে দিলো। এহেন ’পুঁচকে’ সেনাপতির কাছে লজ্জাজনক হারের অপমানের শোধ তুলতে কর্ণেল স্মিথ শক্তিবৃদ্ধির জন্য মারাঠাদের প্রচুর উৎকোচের মাধ্যমে হাতে আনলেন। এবার মারাঠাদের সাথে নিয়ে ব্যাঙ্গালুরু দূর্গ আক্রমণ করলেন। সাথে সাথে টিপু পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। এক টিপুকে সামলাতের মারাঠা-ব্রিটিশদের হাঁসফাঁস উঠে যাচ্ছিলো, এর মধ্যে হায়দার কর্ণাটক হতে ফিরে এসে যোগ দিলেন। বাপ-বেটা মিলে মারাঠা-ব্রিটিশদের আচ্ছামতো প্যাদানি দিয়ে তাড়ালেন। এরপর হায়দার টিপু ব্রিটিশদের হুশার দূর্গ জয় করলেন, তারপর কর্ণাটক। এভাবে উভয়ে মিলে দক্ষিণ ভারতের ব্রিটিশ ঘাঁটিগুলো একে একে দখল করতে করতে ১৭৬৯ সালের মার্চে মাদ্রার্জ দূর্গ আক্রমণ করলেন। ব্রিটিশরা নিজাম ও মারাঠাদের সহযোগীতা চাইলো। কিন্তু এই তিন বাহীনির যৌথ প্রচেষ্টায়ও মাইসুর বাহিনীকে দমে রাখা গেলো না। মাস কাল প্রচন্ড যুদ্ধের পর অবশেষে হায়দার ও টিপু মাদ্রাজ দূর্গ জয় করলেন। বাপ-বেটা বীরের বেশে মাদ্রাজে প্রবেশ করলেন। টিপু সুলতান তখন মাত্র ১৯ বছরের তরুন।
(চিত্র: ব্যাঙ্গালুরু দূর্গে উড়ছে মাইসুরের পতাকা)
ব্রিটিশরা ভালোভাবেই টের পাচ্ছিলো, মাদ্রাজ দূর্গ যদি হাতছাড়া হয় তাহলে দক্ষিন ভারতে অন্তত হায়দার ও টিপু বেঁচে থাকা পর্যন্ত আর কোনক্রমেই তিষ্ঠাতে পারবে না। সুতরাং, নিজেদের ভবিষ্যৎ রক্ষার্থে ব্রিটিশরা আবারো মাইসুরের সাথে সন্ধিচুক্তি করে, যার অন্যতম শর্ত ছিলো ভবিষ্যতে যে কোন বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে মাইসূর ব্রিটিশদের সাহায্য চাইলে ব্রিটিশরা সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে। এই চুক্তিটা ছিলো হায়দারের দ্বিতীয় ভূল। তিনি চেয়েছিলেন ইত্যাবসরে নিজের সামরিক শক্তিটা আরো একটু শানিয়ে নেবেন। কিন্তু পরে এই চুক্তিই হীতে-বিপরীত হয়।
এরই মাঝে নাঞ্জরাজা ওদিয়ারের মৃত্যুর পর হায়দার আনুষ্ঠানিক ভাবে সাম্রাজ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন (১৭৭০)। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম শাহী ফরমান পাঠিয়ে হায়দার আলীর সিংহাসনে আরোহণে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং সাথে সাথে প্রশংসাপূর্বক পত্রও প্রেরণ করেন। ফ্রান্সের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ফলে ফরাসি সেনানায়কগনের মাধ্যমে মাইসুরের সৈন্যকে আধুনিক ইউরোপিয় যুদ্ধকৌশলে প্রশিক্ষিত করা হয়। বিপুল পরিমানে আধুনিক কামান, বন্দুক, গোলা-বারুদ সহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র আমদানী করা হয়।
ওদিকে ব্রিটিশদের আঙ্গুলি হেলানে মারাঠারা নভেম্বর মাসে মাইসুর আক্রমন করে। চুক্তি অনুযায়ী হায়দার ব্রিটিশদের সাহায্য কামনা করলেও ব্রিটিশরা কোন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে না। অগ্যাত হায়দার একাই মারাঠাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইলে বিচক্ষণ টিপু পিতাকে প্রস্তাব করেন, ”মাইসুরের সৈন্য সবে মাত্র নতুন রণকৌশলের দীক্ষা লাভ করেছে। এখনো তারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেনি। এমতাবস্থায় সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়া মানে বিপুল পরিমানে সৈন্য ক্ষয়ের বিরাট সম্ভবনা। এর চেয়ে মারাঠাদের সাথে আপাতত কৌশলের লড়াই চালিয়ে যাওয়া হোক।” টিপুর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাইসুরের উত্তর-পুর্বাঞ্চলের বসতি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সেখানকার সব ফসল, রসদ ও দূর্গ ধ্বংস করে দেয়া হয়। মারাঠা বাহিনী ঐ অঞ্চলে উপস্থিত হওয়ার পর রসদ ও আবাসন সমস্যার কারণে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
পরের বছর অর্থাৎ ১৭৭১ সালে মারাঠা বাহিনী আবার মাইসুর আক্রমন করে। এবার তাদের এই অতর্কিত আক্রমনের জন্য মাইসুরের সেনা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। নিরুপায় হয়ে হায়দার আবারো ”মাদ্রাজ সন্ধি” অনুসারে ব্রিটিশদের সাহায্য কামনা করে, কিন্তু বিশ্বাসঘাতক ব্রিটিশরা এবারও সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকে। অবশেষে বাধ্য হয়ে হায়দার মারাঠাদের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়। চুক্তি অনুসারে ব্যাঙ্গালুরু পর্যন্ত রাজ্য ও নগদ ৫০ লক্ষ রূপী মারাঠাদের দিতে হয়। হায়দার মারাঠা ও ব্রিটিশদের এই বেঈমানি আজীবন ভুলতে পারেন নি। সেই সাথে টিপুর মনেও এই বিশ্বাসঘাতকা দাগ কেটে যায়, যা ভবিষ্যতে তাকে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।
১৭৭২ সালে মারাঠারাজ মাধব রাও নারায়ন পেশোয়া মারা যায়। তার মৃত্যুর পরেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার লড়াই শুরু হয়, আজীবন ”পেশোয়া” পদের জন্য লালায়িত মারাঠারা ক্ষমতার জন্য রক্তের আত্মীয়ের গলা কাটতে শুরু করে। এই সুযোগে টিপুর নেতৃত্বে মাইসুর বাহীনি একে একে হৃত এলাকাগুলো পূনরায় দখল করে নিতে শুরু করে। ১৭৭৩ সালে বাপ-বেটা মিলে মালাবারের হারানো অঞ্চলগুলোও পুর্ণবিজয় করে ফেলে। ১৭৭৩ সালের শেষ নাগাদ হায়দার ও টিপুর যৌথ নেতৃত্বে মারাঠাদের কাছে হারানো সব অঞ্চলই পুনরায় মাইসুরের মানচিত্রে যোগ হয়ে যায়।
(চিত্র: প্রথম ও দ্বিতীয় মাধব রাও নারায়ন পেশোয়া)
১৭৭৪ সালে মারাঠা রাজা হিসেব ক্ষমতায় বসেন দ্বিতীয় মাধব রাও নারায়ন। পরের বছর ১৭৭৫ সালে হায়দ্রাবাদের নিজামদের সাথে জোট বেঁধে মারাঠারা মাইসুর আক্রমন করেন, সূচনা হয় তৃতীয় মাইসুর-মারাঠা যুদ্ধ। এইবার টিপু সুলতান পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন। দক্ষ নেতৃত্ব, অসম বীরত্ব আর চমৎকার রণকৌশলে অল্প সময়ের মধ্যেই যৌথ বাহিনীকে ধুলোর মতো উড়িয়ে দেয়। ১৭৭৭ সালের মধ্যে টিপু কর্ণাটক পর্যন্ত জয় করে মাইসুর রাজ্যের বিস্তার ঘটান।
মাইসুরের এই অদম্য অগ্রযাত্রা ব্রিটিশদের চোখে শুলের মতো বিদ্ধ হচ্ছিলো। চিরায়ত স্বভার অনুযায়ী তারা ভিতরে ভিতরে যড়যন্ত্র আঁটতে শুরু করলো। হায়দার আলী ও টিপু সুলতানও এ বিষয় সম্পর্কে বেখবর ছিলেন না। ব্রিটিশদের বিশ্বাসঘাতকতার দগদগে দাগ এখনো তাদের স্মৃতিতে টাটকা। প্রায় সমস্ত দক্ষিণ ভারত জয় করার পর এবার হায়দার ও টিপু পুনরায় দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজে মনোযোগ দিলেন। ফরাসি যুদ্ধবিশারদদের সাহায্যে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ চলতে লাগলো। পাশাপাশি ব্রিটিশ নৌ-বাহিনীর মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কর্ণাটকের ভাটখালে ফরাসি ও ওলন্দাজদের সহযোগীতায় মাইসুরের নৌবাহিনী গঠন করা হয়।
১৭৭৯ সালে ব্রিটিশরা আবারো মারাঠা ও নিজামদের সাথে মৈত্রি চুক্তি করে। মাইসুরকে ধ্বংসের ছক আঁটা শুরু হয়। এর কিছু মাস পূর্বে মাইসুর রাজ্যের মালাবার সিমান্ত এলাকায় কেরালা ভার্মার নেতৃত্বে বিদ্রোহ চলে আসছিলো। সুলতান হায়দারের সর্বাত্মক চেষ্ঠা ছিলো আলোচনার মাধ্যমে এই বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রন করার। সে উদ্দেশ্যে অনুগত রাজা রাম ভার্মাকে পাঠিয়েছিলেনও। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্রিটিশ ও তাদের মিত্ররা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বিদ্রোহীদের পূর্ণমাত্রায় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করতে থাকে।
অপরদিকে ব্রিটিশ সৈন্যরা পন্ডিচেরিতে অবস্থিত ফরাসিদের মাহী পোর্টে আক্রমন করে এবং তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। কারণ হিসেবে বলা হয় ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী শক্তিকে সহযোগীতা এবং আমেরিকান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকানদের পক্ষে কাজ কর্।া আক্রমনে বন্দরে নিয়োজিত অনেক মাইসুর সেনাও নিহত হয়। এই ঘটনা থেকেই দ্বিতীয় এ্যাংলো-মাইসুর যুদ্ধের সূচনা। চার বছর ব্যপি চলমান এই যুদ্ধ ছিলো ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের জন্য সবচেয়ে বড় ও কঠিনতম যুদ্ধ। যুুদ্ধের জন্য সরাসরি ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড থেকে অসংখ্য সৈন্য আগমন করে।
১৭৮০ সালের জুন-জুলাই মাসে হায়দার আলী দুই পুত্র টিপু ও করিম খানকে নিয়ে তামিলনাডুতে ব্রিটিশ অবস্থানে হামলা চালায়। এরপর হামলা চালান উত্তর কর্ণাটকে। উভয়স্থানেই ব্রিটিশরা ধরাশায়ি হয়ে যায়। এমন সময় খবর আসে মাদ্রাজ থেকে অফিসার হেক্টর মুনরো কর্ণাটক উদ্ধারের জন্য আসছে আর তাকে সাহায্য করার জন্য হায়দ্রাবাদ থেকে কর্ণেল উইলিয়াম বেইলি নিজামের সেনাসহ মুনরোর সাহায্যের জন্য আসছে। অবস্থা বুঝে হায়দার আলী তিন হাজার সৈন্য সহ টিপুকে পাঠান বেইলিকে প্রতিহত করার জন্য এবং নিজে অপেক্ষা করতে থাকেন মুনরো।
(চিত্র: ব্রিটিশ সেনাপতি উইলিয়াম বেইলি ও হেক্টর মুনরো)
৩রা সেপ্টেম্বর, ১৭৮০। কর্ণেল বেইলি প্রায় নয় হাজার সৈন্য সহ পেরামবাক্কাম নদী পার হচ্ছে। এমন সময় টিপু সুলতান তাদের উপর হামলা শুরু করেন। এই হামলায় ব্যবহার করা হয় বিখ্যাত ”টিপুর রকেট”, যা টিপু সুলতানের নিজস্ব গবেষনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছিলো। রকেট আর কামানের উপর্যোপুরী হামলায় বেইলি বাহিনী নাস্তানাবুদ হতে থাকে। উপায়ান্তর না দেখে ১০ সেপ্টেম্বর সসৈন্য আত্মসমর্পন করে কর্ণেল বেইলি।
(চিত্র: টিপুর রকেটের আঘাতে লন্ডভন্ড বেইলি বাহিনী)
ওদিকে বেইলির আত্মসমর্পণের সংবাদে মুনরো পিছে হটতে বাধ্য হয়। এ সুযোগে হায়দার উত্তর কর্ণাটকে ব্রিটিশ স্থাপনাগুলো দখল করে নেন। এই পদক্ষেপটা হায়দারের আরেকটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। তিনি যদি এই সময়ে মাদ্রাজ দূর্গ দখল করে নিতেন তাহলে হয়তো দক্ষিণ ভারতে চিরকালের মতো ব্রিটিশ মুক্ত হয়ে যেতো। কিন্তু হায়দার ভেল্লোরের দিকে নজর দেয়ার এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশরা মাদ্রাজ দূর্গের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং সাহায্যের জন্য বাংলা হতে বিশাল বাহিনী সহ লেফট্যানেন্ট জেনারেল আইরেকে মাদ্রাজে ডেকে নেয়।
......................................................... (চলবে)
===================================
ফরগটেন হিরোস সিরিজের অন্য পর্বগুলো-
১. প্রথম পর্ব : শাহ সৈয়দ আহমাদ বেরলভী শহীদে বালাকোট (রহ.)
২. দ্বিতীয় পর্ব : শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)।
দ্বিতীয় পর্ব : শাহ সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপূরী (রহ.)।
৩. তৃতীয় পর্ব: সাইয়্যেদ মীর নিসার আলী (তীতুমীর)
৪.চতুর্থ পর্ব: মাওলানা গাজী ইমামুদ্দিন বাঙ্গালী (রহ.)
বিষয়: বিবিধ
৬৫৭১ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কষ্টকে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খইর।
টিপু সুলতানের সেই শব্দটি (সিংগার শব্দটি) এখনো শুনলে আবারো দেখবার জন্য মনটি আনচান আনচান করে।
অনেক কিছু জানলাম
ছোটবেলায় দেখা টিপু সুলতান সিরিজটি আমার অনেক প্রিয় ছিলো। টিপুর (রহ.) বিষয়ে পড়তে বা লিখতে গেলেই সেই থিম সংটা এখনো মনে হয় কানের কাছে বাজে, আর পুরো শরীরের একটা শিহরণ খেলা করে যায়।
কষ্টকে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খইর।
শহিদ সুলতান টিপুর মৃত্যদিবসে তাকে নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম আমি।http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/3609/sabuj1981/44438#.VHDOANKUeuk
আপনার ডিটেইল পোষ্টটির আরোভাল লাগল।
হায়দার অালি যদি মাদ্রাজ আক্রমন করতেন তাহলে উপমহাদেশের ইতিহাষ ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু তিনি যতটুক মনে হয় পিছন থেকে নিজাম ও মারাঠাদের আক্রমন এর আশংকায় ইংরেজদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। হায়দার আলির উপাধি ছিল দলওয়াই যেটা ঠিক প্রধান মন্ত্রি নয় বরং প্রধান প্রশাসক। ইকবালের টিপু সুলতান কবিতাটি বাংলা অনুবাদে দিলে ভাল হতো। আমি শেষ চার লাইন দিচ্ছি।
অনাদি প্রভাতে মোরে জিব্রাইল বলেছিল ডেকে,
হৃদয়েরে মুক্ত কর বুদ্ধির এ দাসত্বের থেকে।
উর্ধ্বে উঠে দ্বন্দ্ব হতে একত্বের মাঝে রও বেঁচে,
সত্য ও মিথ্যার মাঝে মধ্য পথ নিয়ো নাক বেছে।
ইকবালের কবিতাটার অনুবাদ যুক্ত করে দিচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় কিস্তি পড়ার আবেদন রইলো।
কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর।
কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খইর।
Barakallahu Fihi
মহান আল্লাহর করুনা এবং আপনাদের প্রেরণা থেকেই দু'কলম লিখে থাকি।
যে দূর্ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন, আশা করি এখন সেখানে সব ঠিক আছে। মহান আল্লাহর কাছে সবার সুস্বাস্থ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কামনা করছি। আমিন।
ইতিহাস বিমুখীতা মুসলিমদের স্বীয় শৌর্য্য-শক্তির কথা বেমালুম ভূলিয়ে দিয়েছে! ফলশ্রতিতে অপমান আর নির্যাতন কপাল লিখণ হয়ে গেছে যেন!
সুন্দর সাবলীল নান্দনিকতায় মহাবীর টিপু সুলতানের জীবনী আলোচনা হলেও চিন্তার মোড় কে ঘুরাবে!
উপস্হাপনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে!!
"একদা এই তোমরাই ছিলে অদম্য অজেয় বীর;
আজ তবে কেন নত হয়ে যায় তোমাদের সেই শির?
ছিল যে হাত বজ্র তাবৎ, ভেঙেছে দূর্গ প্রাচির
আজ সে হাত কেন ভিক্ষুক সম পড়ে থাকে নীচু, স্থীর!
যে পদভারে কেঁপেছে প্রাসাস কিসরা-কায়সারের;
আজ কেন তা দ্বারে দ্বারে ঘুরে কাফির-মুরতাদের?
মুসলমান- ওহে মুসলমান!!!
কোন সে বাতাম, যার প্রভাবে নিভু নিভু ঈমান"
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। বারকাল্লাহু ফিহী।
ঠাংকু।
স্টিকি পোষ্টে অভিনন্দন।
আপনাকে বিয়ের অভিনন্দন ও দিতে চাই ভাইয়া।
এইটা হয়তো হয়ে উঠবে না ভাইয়া। আমি সবসময় এই জিনিসটাকে বিশাল ভয় পাই। মনে হয় না আমার মধ্যে এর যোগ্যতা আছে
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
প্রয়োজনে দেবালয় থেকেও বের হয়ে আসবে কাবার প্রহরীরা।"
মুসলমানদের গৌরবময় অতীত ইতিহাসই ভবিষ্যৎ পথের অন্যতম পাথেয়।
সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। জাযাকাল্লাহু খইর।
ঐতিহাসিক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। জাযাকাল্লাহু খইর।
ধন্যবাদ।
বৃটিশদের সাথে উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশের যে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হয়েছিল মহিসূর তার মধ্যে অন্যতম ।
বৃটিশদের সাথে মুসলমানরা তত ইনটিমেট ছিল না যতটা ছিল হিন্দুরা । সে জন্যই বৃটিশরা হিন্দুদেরকে বেশী লাইম লাইটে নিয়ে এসেছিল । বৃটিশ উনবিনেশের সময় হিন্দুরা শিক্ষা দীক্ষায় , চাকরি - ব্যবসা এবং জমিদারিতে মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে ছিল।
বৃটিশদের নীতিই ছিল Divide & rule
উপমহাদেশে ব্রিটিশদের ভিত্তি গেড়েছে তিনটি যুদ্ধ, যার একটি পলাশী, একটি মাইসুর এবং একটি সিপাহি বিপ্লব।
তবে টিপু সুলতানের নামকরণ নিয়ে আপনি যে তখ্য দিয়েছেন, সেটি আমি এবার প্রথম শুনলাম। আপনি এই তথ্য কোথায় পেয়েছেন জানিনা তবে আমার কাছে যে তথ্য এতদিন ছিল তা উল্লেখ করলাম।
ছোটকালে সাহসী ফাতেহ আলী এক ফরাসী ব্যক্তির সাথে বনে শিকার করতে গিয়েছিল, হঠাৎ একটি বাঘ তাদের সামনে চলে আসে ঠিক সেই মুহুর্তে বন্দুক কাজ করছিল না, ফরাসী নাগরিক ভয়ে পালিয়ে যায়, ফাতেহ আলীর কাছে যেই ছুরিটি ছিল সেটি দিয়ে সে বাঘের আক্রমণ প্রতিহত করে এবং বাঘের শরীরের বেকায়াদা স্থানে সেটি বিদ্ধ হলে বাঘ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সেই থেকে ফাতেহ আলী বাঘের বাদশাহ তথা টিপু সুলতান বনে যায়।
আরো লক্ষ্যনীয় বিষয় ছিল, যে ইংরেজ কমান্ডার ফাতেহ আলির বিপক্ষে লড়ছিল, সে সস্ত্রীক বনে বেড়াতে গেলে তার স্ত্রী ও কণ্যাকে বাঘে মেরে ফেলে। ফলে সে কমান্ডারের মনে মানসিক দুঃচিন্তায় ছিল। সে ঘুমের ঘোরে বাঘ স্বপ্ন দেখে ভয় পেত। এই খবর কোনভাবেই ফাতেই আলী পেয়ে যায়।
সেই থেকে ইংরেজদের মনে ভীতি ঢুকাতে, ফাতেহ আলী নিজের নাম পরিবর্তন করে টিপু সুলতান ধারণ করে। এই তত্ব প্রতিষ্ঠা করতে টিপু সুলতানের যুদ্ধের পতাকার ছবি ছিল বাঘের, লড়াকু সৈন্যদের পোষাক ছিল বাঘের, তাঁর ব্যবহৃত অন্ত্রের গায়ে বাঘের ডোরকাটা দাগ অঙ্কিত থাকত। বাঘের ডোরাকাটা পোশাকের মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চাইতেন যে, বাঘ তোমার পরিবারকে সর্বশান্ত করেছে, সেই বাঘ আমি খালি হাতে মেরেছি। যে বাঘের স্বপ্ন দেখে তোমার নিদ্রাতঙ্ক হয়। আমি সেই বাঘের প্রতিচ্ছবি হয়ে তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়ব, যাতে করে পুরো দুনিয়ায় ব্রিটিশ রাজত্ব সৃষ্টির খায়েশ পুরণে হতাশ হয়।
আপনি যে তথ্যটি দিয়েছেন তা আমি পড়েছি, তবে ভিন্ন ভাবে। আমার উপস্থাপিত তথ্যগুলো একাধারে (১) সহীফায়ে টিপু সুলতান, মাহমুদ ব্যাঙ্গালোরি, (২) হিস্টোরি অব টিপু সুলতান, হাসান মুহিবুল্লাহ (৩) ইউরোপ কে সঙ্গীন মুজরিম, শহীদ জিয়াউর রহমান ফারুখী (রহ.), ও উইকিপিয়িায় দ্রষ্ঠব্য।
শেষ কিস্তিতে পুরো লেখার সব রেফারেন্স একসাথে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
সময় ব্যয় করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। জাযাকাল্লাহু খইর।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন