সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজির এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজিরের বিভিন্ন সম্পত্তির ৮৩ দলিলের ১০৯ একর ৬২ দশমিক ৪৬ শতাংশ জমি যার বাজার মূল্য ১০ কোটি ৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।
এছাড়া, অভিযুক্তরা বাংলাদেশে তাদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয়/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করেছেন। অনুসন্ধান/মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে বলে দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেনের আদালতে এ নিবেদন করেন।
আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুয়ায়ী নিম্নবর্ণিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক (Attach) এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze) করার নির্দেশ দেন।
বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, দর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ১৮ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারার বিধান মোতাবেক অভিযোগ সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামীয় জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পদ ক্রোক (Attach) এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze) করণের আবেদন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম।
দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর নিবেদন করেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বেনজির আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী-জীশান মির্জা ও মেয়েদের নামে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
পিপি আরও উল্লেখ করেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিম্ন তফসিলে বর্ণিত স্থাবর/অস্থাবর সম্পদসমূহ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এছাড়া, অভিযুক্তরা বাংলাদেশে তাদের নামে-বেনামে অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিক্রয়/হস্তান্তর করে বিদেশে পাচারের চেষ্টা করছেন অনুসন্ধান/মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে বর্ণিত সম্পত্তিসমূহ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে।
পিপি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ (সংশোধিত-২০১৯) এর বিধি ১৮ এর বিধান মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামীয় অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (Attach) করণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze) করণের আবেদন করেন।
তফসিলে বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (Attach) করণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze) করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা কর্তৃক দাখিলকৃত দরখাস্ত ও সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হলো। বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (Attach) করণ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ (Freeze) করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। পিপির বক্তব্য, দরখাস্তে বর্ণিত আবেদন ও অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় দরখাস্তটি মঞ্জুরযোগ্য মর্মে প্রতীয়মান হয়।
কার নামে কত জমি ক্রোকের নির্দেশ আদালতের
বেনজিরের নামে সম্পত্তি রয়েছে গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজার এলাকায়। তার নামে মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮ একর ১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ (এর অর্থ মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার)
স্ত্রী জীশান
বেনজিরের স্ত্রী জীশান মির্জার নিজস্ব নামে সম্পত্তি রয়েছে ৭ একর ১৬ শতাংশ। যার মূল্য ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
বেনজিরের বড় মেয়ে ফারহিন
ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজির (বড় মেয়ে) জমির পরিমাণ, ১৩ একর ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ (মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা)
সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ম্যানেজিং পার্টনার হিসেবে সম্পত্তি আছে, ৮ একর ২৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। মোট মূল্য ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সাভানা ফার্ম প্রোডাক্টসের পক্ষে চেয়ারম্যান হিসেবে তার স্ত্রী জীশান মির্জার সম্পত্তি আছে, ২৮ একর ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মূল্য ৩ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।
সাউদার্ন পার্ক রিসোর্ট অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের পক্ষে চেয়ারম্যান জীশান মীর্জা ও স্বামী বেনজির আহমেদ। ১১ একর ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকার সম্পত্তি।
সাভানা এগ্রো লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান জীসান মীর্জা। স্বামী বেনজির আহমেদ। জমির পরিমাণ ১৬ একর ৬৫ শতাংশ। মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান জীশান মীর্জা। স্বামী বেনজির আহমেদ। ৪ একর ৫ শতাংশ। ৩০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
তিন সন্তান
ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজির, জারা জেরিন বিনতে বেনজিরের যৌথ নামে সম্পত্তি রয়েছে ৩৫ শতাংশ। যার বাজার মূল্য ৩০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
তিন কন্যা ও দুই নাতি
আর রুহ মিজান স্নেহা-পিতা মিজানুর রহমান। মাশরুর নুতক মিজান নাফিজ-পিতা মিজানুর রহমান। তাদের নামে সম্পত্তি আছে, ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ জমি রয়েছে।
আবু সাঈদ খালেদ, স্ত্রী ও বড় মেয়ের যৌথ নামে সম্পত্তি রয়েছে, ১১ একর ৪৯ শতাংশ। যার অর্থমূল্য ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন