ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা প্রথম ধাপের ভোটের চেয়ে দেড় শতাংশ বেশি। দেশে সাধারণত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো জমজমাট হলেও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম দুই ধাপে সেই চিত্র দেখা যায়নি। তবে এই চিত্রও সব উপজেলায় এক নয়। এবার দুটি ধাপেই উপজেলাভেদে ভোটের হারে ব্যাপক তারতাম্য দেখা গেছে। দ্বিতীয় ধাপে এক উপজেলায় সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ এবং আরেক উপজেলায় সর্বনিম্ন ১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রায় একই চিত্র ছিল প্রথম ধাপেও। ভোটের হারে এই তারতম্য দেখা গেছে ব্যালট ও ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে। দ্বিতীয় ব্যালট পেপারের চেয়ে ইভিএমে ৬ শতাংশ ভোট কম পড়েছে, যা প্রথম ধাপে ছিল ৫ শতাংশ।
গত ৮ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ করা হয়, যাতে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধানকাটা ও ঝড়বৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল ইসির পক্ষ থেকে। এবার সে রকম কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে প্রথম ধাপের চেয়ে কম ভোট পড়ার আভাস দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে উপস্থিতির যে হার সেটি এ পর্যন্ত আমরা যেটা পেয়েছি, সেটি ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারে।
গতকাল মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো ফল একীভূত করে ইসি সচিবালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ১৫৬ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মোট ভোটার তিন কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬২০ জন। এদের মধ্যে
ভোট দিয়েছেন এক কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ জন। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৯ সালে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪১ শতাংশ।
জানা গেছে, এবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে ১২৯ উপজেলায়। এতে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ভোট হয়েছে ২৩টিতে, ভোট পড়েছে ৩২ দশমিক ১৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায়, ৭৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলায় ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫ উপজেলায় ২০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। সেগুলো হলো- রাজশাহীর বাগমারা, নওগাঁর চাটমোহর, যশোরের শার্শা, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ এবং নোয়াখালীর সেনবাগ। অপরদিকে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ৭ উপজেলায়। সেগুলো হলো- ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, দিনাজপুরের কাহারোল ও বোঁচাগঞ্জ, নওগাঁর পোরশা, বাগেরহাটের ফকিরহাট, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়ি। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ভোট পড়েছে ২০ উপজেলায়। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে ভোট পড়েছে ১২ উপজেলায়। তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় ওই তিনটির ফল ইসি থেকে সমন্বয় করা হয়নি।
দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ শেষে সিইসি বলেছিলেন, নির্বাচনে উপস্থিতির যে হার সেটি এ পর্যন্ত আমরা যেটা পেয়েছি সেটা ৩০ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে একেবারে নির্ভুল তথ্য হয়তো বুধবার (গতকাল) আপনারা পাবেন। প্রথম ধাপের ভোটের পরে বলেছিলেন ধানকাটা ও ঝড়বৃষ্টির জন্য ভোট কম পড়েছে। এবার কী বলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নিঃসন্দেহে আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনই খুব উৎসাহব্যঞ্জক মনে করি না। একটা প্রধানতম কারণ হতে পারে, দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে এবং জনগণকে ভোট প্রদানেও নিরুৎসাহিত করেছে।
এর আগে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। প্রথম ধাপের ফল বিশ্লেষণ থেকেও ভোটের হারে তারতম্য দেখা যায়। প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছিল জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল সোনাতলা, মিরসরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১৭ শতাংশ। ওই ধাপে ৫ উপজেলায় ২০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের আক্কেলপুরে ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, বগুড়ার সোনাতলায় ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ, মিরসরাইয়ে ১৭ দশমিক শূন্য শতাংশ ও কুষ্টিয়া সদরে ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, ঢাকার নবাবগঞ্জে ১৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ ভোট পড়ে। অপরদিকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের ঘরে ভোট পড়েছিল ৮ উপজেলায়। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, কুড়িগ্রামের চররাজিবপুর ৬৪ শতাংশ, জয়পুরহাটের কালাই ৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং টুঙ্গিপাড়ায় ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। প্রথম ইভিএমে ভোটের হার ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ব্যালটে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম ধাপে ইভিএমে ৫ শতাংশ ভোট কম পড়ে।
এবার দেশের উপজেলাগুলোয় চার ধাপে নির্বাচন করছে ইসি। আগামী ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন