আমি ধর্ষিত হয়েছিলাম
লিখেছেন লিখেছেন সজল আহমেদ ১৫ মে, ২০১৪, ০৩:২৫:৫১ দুপুর
৩০/১/১৯৭২
রহিমা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে।তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা,শরীরটা চালের বস্তার মতো ভারী হয়ে গেছে তার।সেবা করার মতো কেউ নাই তার,পিতা ছিল তাও তো গেল!পাশের বাড়ির মনসুরের মেয়ে তাকে একটু আধটু সেবা করে কিছুটা সুস্থ করে তুলেছে।
বিকেলে এই এলাকার চেয়ারম্যান সাহেবের আসার কথা,শোনা যাচ্ছে রহিমাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাকে একটা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দিবে চেয়ারম্যান সাহেব।
রহিমা ব্যাপারটা শুনেছে এবং মন্তব্য ও করেছে এ বিষয়ে।রহিমার মন্তব্য শুনে অনেকে বলেছে,মাইয়েটা মুন্কয় পাগল হইয়ে গেছে।যে দুই টেহা পাইব তাও খুইয়াইতে চায়।
রহিমার মন্তব্য ছিল,"চিহারমেন তো নিজেই রাজাকার আছিল অয় আমারে আর কি জিগাইব?অরে আসতি নিষেধ কইর কয়া দিলাম!আয় আসলি আমি অর মুহে একদলা কাশ মারুম!মাইনকার ব্যাটা মাইন্কা"আরো কি যেন একটু অশ্লীল ভাষায় রহিমা বল্ল তা শোনা গেলনা।
চেয়ারম্যানের চামচা ছোমেদ আলী রহিমার বাড়ি এসেছে।
রহিমার চৌকির পাশে রাখা চেয়ারে বসল ছোমেদ,ঐ রয়িমা উঠ,উঠ,উঠ হেঃ হেঃ হেঃ।
রহিমা চোখ মেলে তাকাল,কিডা ছোমেদ ন্যাভাই নি?
হ হেঃ হেঃ হেঃ।
কি খবর?
ছোমেদ গড় গড়িয়ে চেয়ারম্যানের শিখানো কথাগুলো বলতে লাগলো,
হুন আইজকা বিয়ালেত চিহারমেন ছাব তগো বাড়িত আইব হেঃ হেঃ হেঃ।তরে যা কই হুন,চিহারমেনের লগে দুইজন লুক আইব।তাগো সামনে বইসে চিহারম্যান ছাব তরে জিগাইব তুই ঐ দিন ধর্ষিতা হইছিলি কিনা হেঃ হেঃ হেঃ।তুই কি কবি জানস?
রহিমা।কি কমু?
কবি,আমি ধর্ষিতা হয়নাই সেদিন হেঃ হেঃ হেঃ।
রহিমা।ক্যান মিথ্যা কমু ক্যান তাতে চিহারমেনের কি লাভ অইব?
ধোর বুজলিনা এতেই তোরই লাভ,মাসে কয়ডা টেহাও পাবি বুজলিনা হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ হেডা ছাড়াও তুই যদি কও যে তুই ধর্ষিতা তাইলে তুরে বিয়া করব কিডা?হেঃ হেঃ হেঃ।
রহিমা নিশ্চুপ কোন কথা বল্ল না।ছোমেদ ল্যাওড়াতে ল্যাওড়া চলে গেল।
[স্কুল মাঠে আয়োজন চলছে,ঢাকা থেকে রহিমাকে দেখতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক কেউ হয়ত বা আসবে।বিশাল প্যান্ডেল বানাচ্ছে।]
বিকেলটা ঘনিয়ে এলো।রহিমাকে ডেকে নিতে এসেছে ছোমেদ।
রয়িমা ,রয়িমা ও রয়িমা হেঃ হেঃ হেঃ।
রহিমা।কি ছোমেদ ভাই কি অইল?
ল আয়োজন শু অইছে হেঃএ হেঃএ হেঃএ।
রহিমা।আমিতো হাটতাম্ফারিনা!
আরে ভ্যান লিয়াস্ছি হেএ হেএ হেএ।
(রহিমা ছোমেদার সাথে ভ্যানে করে স্কুল মাঠে চলে গেল।স্কুল মাঠে মানুষের ভিড়।চেয়ারম্যানকে মঞ্চে বসা দেখা গেল।ঢাকা থেকে যারা আসার কথা তারা এখনো আসেনি।চেয়ারম্যানকে দেখেই রহিমার গা জ্বলে উঠল।রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে বাটপার রাজাকার চেয়ারম্যানের দিকে।)
মাঠে পৌছলে ছোমেদ একগাল হেসে চেয়ারম্যানকে জানায়,বাঈ রয়িমার লিয়া চৈল্লা আসছি হেঃ হেঃ হেঃ।
চেয়াম্যান সাহেব একটা ধমক দিয়ে,ঐ হারামজাদা তরে না কইছি আমার সামনে পাইরিয়া ওয়ালা দাঁত দিয়া হেএ হেএ হেএ কৈরা কুতুনী মারবিনা!দাঁত মাজার নাম নাই খালি হেএ হেএ হেএ।আর যদি হাসস তাইলে থাপ্রায়া দাঁতের পাইর ফেইলা দিমু যাহ সর।
ছোমেদকে তেমন শরম পেতে দেখা গেলনা।
কিছুক্ষন পর চেয়াম্যান সাহেব রহিমাকে উদ্দেশ্য করে বল্ল,রয়ি তোরে ছোমেদ কিছু শিহায়া দিছে?
রহিমা।হুঁ
যা শিহায়া দিছে ঠিক এইরাম কইছ ভুল করিছ্না আবার!
রহিমা।উঁ ঠিকাছে।
চেয়ারম্যান সহ সকলে অপেক্ষা করছে মাননীয় অতিথিদের।প্রায় আধাঘন্টা পর তাদের অপেক্ষার প্রহর কাঁটল।অতিথিরা আসছেন।
চেয়ার ম্যান সাহেব তাদের মঞ্চে প্রধান অতিথির চেয়ার দখল করতে বল্লেন আর ছোমেদকে বল্লেন নাস্তার ব্যাবস্থা করতে।
বলা মাত্রই ছোমেদ চা নিয়ে হাজির!
চেয়ারম্যান সাহেব বিস্মিত এবং ছোমেদের কাজে খুশি হয়েছেন!ছোমেদ কে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে এত্ত তড়তড়ি আনলি কেমতে কি?
ছোমেদ।হেএ হেএ হেএ বাঈ আম্রে কি আপনে বলদ মোনে করেন্নি হেএ হেএ হেএ।নাস্তাতো সহাল বেলাই অর্ডার কৈরা আইছি হেএ হেএ হেএ।
চেয়ারম্যান যতটুকু ছোমেদের উপর খুশি হয়েছিলেন তার চেয়ে দ্বিগুন অখুশি হলেন ছোমেদের পাইরিয়া দাঁতের হাসিতে।অতিথিদের সামনে তিনি রাগটা কন্ট্রোলে রেখেছেন।
অতিথিদের নাস্তা পর্ব শেষ।রহিমাকে ডাকা হলো।রহিমার কেমন যেন লাগছে।
নিজেকে কেমন যেন পতিতা মনে হচ্ছে রহিমার।মনে হচ্ছে যেন রহিমা একজন পতিতা এবং তার শালিস বিচার হচ্ছে।।রহিমা নিশ্চিত যে তার বিয়ে হবেনা!
৮টি নরপশু কেড়ে নিয়েছে তার ইজ্জত!
নিজেকে এখন ইজ্জতহীন পতিতার মতো লাগে তার।গ্রাম বাসীরাও তো তাই ভাবে তাঁকে।অথচ বয়সই বা কত তাঁর?
গ্রামবাসীর মাথায় এতটুকু সেন্স নাই যে এতটুকু মেয়ে পতিতা কেমন করে হয়?সেদিন তো সে ধর্ষনের স্বীকার হয়েছিল ইচ্ছাকৃত ভাবে না!
ধিরে ধিরে রহিমা এগিয়ে গেল মঞ্চে গোল টেবিলের কাছে।
অতিথি প্রশ্নকর্তাদের প্রথম প্রশ্ন,
সত্যিই কি আপনি ধর্ষনের স্বীকার হয়েছিলেন?
রহিমা চুপ!
প্রশ্নকর্তাঃআপনি কি সত্যিই ধর্ষিতা?
রহিমা চুপ!
প্রশ্নকর্তাঃকথা বলুন,আপনি কয়জনের হাতে ধর্ষন হয়েছিলেন,আর ধর্ষকদের মধ্যে রাজাকার কি ছিল?
রহিমা মুখ খুল্ল,হ আমি ধর্ষিতা,আমারে ৮টা হকুন খুইবলা খাইছে।যার মইধ্যে বাঙলার ২ডা।
সারা মাঠ একদম স্তব্দ হয়ে গেল!যুবকরা শুনছে একটা যুবতীর ধর্ষন কাহীনি!
চেয়ারম্যানের মাথায় বাজ পড়ল,চেয়ারম্যান আর পথ না পেয়ে বলেই ফেল্ল,রয়ি তুই যে এগো কাছে মিথ্যা কৈলি এরা তো তোরে টেয়া দিবনা।
রহিমার চোখ রক্তবর্ণ!রহিমা রাগে কাঁপতে কাঁপতে চিত্কার মেরে মেরে বলতে লাগল,"হ আমি ধর্ষন হয়ছিলাম কিছু কুত্তার বাচ্চা,বেশ্যার বাচ্চা হারামীর হাতে যার মইধ্যে চিহারম্যানের ভাই একজন।হ তারা আমার কাপড় খুইলে ছিনায়ে নিছিল ইজ্জত!আমারে একটানা ২২ঘন্টা ব্যবহার করেছে জারজ গুলা,একবার ও মনে করেনাই আমার মতো তাগো একটা মাইয়াও তো থাকতে পারত!
আমার সামনেত গুলি করছে আমার ইমাম বাপরে!আমার সামনে উলঙ্গ কৈরে ধর্ষন করছে মায়রে তারপর তারে জিন্দা কবরে পুতেছে চিহার ম্যানের তাই!
হ আমরা পরিবার শুদ্ধা ধর্ষিত হইছি।আমরা পরিবার শুদ্ধা পতিতা হইছি।আমি ধর্ষিতা!আমি পতিতা!আমি ধর্ষিতা!আমি পতিতা!"
হু হু করে রহিমা কাঁদছে।
গ্রামবাসী তার দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে।চেয়ারম্যান রক্তবর্ণ চোখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
রহিমা কি ভেবে উপরে তাকাল,রহিমা যেন দেখতে পেল তার পিতা মাতা তার দিকে তাকিয়ে সাফল্যের হাসি হাসছে!রহিমা একটু মুচকি হেসে জানান দেয় ,আব্বাগো মাগো আমি ধর্ষিতা !
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন