“দু’জন মিলে একটি সংসার”
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ১৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:১৪:৫৩ রাত
হ্যালো:আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছ দোস্ত?
দোস্ত:অআলাইকুম সালাম।আলহামদুল্লিাহ ভালো।না,মানে আপনাকে চিনতে পারলাম নাতো।
রিকু:ওহ!তাই নাকি।আমি রিকু।
রাসেল:হুম,তাইতো বলি নাম্বারটা অপরিচিত লাগছে কেন।তুমি কেমন আছ?
রিকু:এই তো ভালই।ভাবছিলাম এবারের ঈদ তোমাদের বাড়িতে কাটাব।
রাসেল:তা বেশ ভালো হবে।আস।
রিকু:আমি অলরেডি তোমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়না দিয়েছি।
কখন আসা যাবে বন্ধু।২ ঘন্টা জার্নি তো শেষ হয়ে গেল।
রাসেল:এইতো আর ২ ঘন্টা হয়তো লাগবে।তবে আমি বাড়ি থেকে একটু দুরে আছি ।অসুবিধা নেই আমার এক ভাই গিয়ে নিয়ে আসবে।
রাসেল:আচ্ছা ভাইয়া আমার এক বন্ধু অনেক দুর থেকে আসতেছে আপনি আপাতত ওকে আপনাদের বাসায় নিয়ে যান।আমি আগামিকাল তহুরা ,জিন্নাত,মরিয়ম,জাহিদা এবং আমার মা বাবা সহ আসতেছি।
কবির:তা বেশ ভাল হবে ।এবারের ঈদে বেশ আনন্দ হবে।তা তোমার বন্ধু কখন আসবে?
রাসেল:এইতো ২ ঘন্টা পর বাস স্টান্ড গেলেই হবে।
রাসেলের বাবা:এ কেমন কাজ করলি ?বেয়াই বাড়িতে নেই আমাদের এখানে নিয়ে আসলেই পারতি।
রাসেল:আমরা তো আগামীকাল যাচ্ছি।তাছাড়া কবির ভাইয়া সব মেনেজ করে ফেলবে।
:
কবির:আম্মা ,আমরা এসে পড়ছি।আচ্ছা মেহমানকে নিযে ফ্রেশ হয়ে আস আমি ভাত দিচ্ছি।
খাবার শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।সকালবেলা ফজরের আযানে ঘুম ভাঙল সবার ।নামায শেষ হল।
কবিরের চাচাতো কাকাঃকবির আমার বাবার অবস্থা বেশি একটা ভালো না।রাসেলকে ফোন করে বলে দাও ওরা যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে।
রাসেলরা দুপুর নাগাদ কবিরদের বাড়তে পৌঁছল।
মরিয়ম:রাসেল,ভাইয়া বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছ।কিছু হয় নিতো!ঐযে মুজাম্মেল কাকা এদিকেই আসছে এবং কান্না করতেছে।
রাসেল:কি হয়েছে কাকা?
কাকা:বাবারে আমার বাবাতো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।বাড়িতে সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।
রাসেল,রিকু,কবির সবাই মৃত্যু দেহের পাশে বসে কোরআন পড়ছে।বাড়ির অন্যসব কান্না করছে,কেউ স্বজনদের সান্ত্বনা দিচ্ছে।অবশেষে মৃত্যু ব্যাক্তির দাফন কাজ রাতে সম্পন্ন হল।
রাতের খাবার শেষ।
রিকু:কিরে দোস্ত,তোমার না শালী আছে তাঁদের দেখলাম নাতো।
রাসেল:ভাই,মেঝ শালীটা তোমার সামনে আসবে না ।কারণ,তাঁর পর্দা করার সময় হয়েছে।বাকি দুইটা দেখতে পাইবা।
রিকু:আমার জন্য পানি হবে।
রাসেল:হুম ,তা হবে।
রাসেল ,মরিয়ম মরিয়ম বলে ডাকতে শুরু করল।
মরিয়ম:ভাইয়া,আসছি।
মরিয়ম আপু,এক জগ পানি ও গ্লাস রেডি কর।
রাসেল:পানির মধ্যে এক বাটি লবন দিল।
মরিয়ম:ভাইয়া,আরেক বাটি আমি দিলাম।
রাসেল:নাও ,আমার শালীর দেয়া পানি।
রিকু:যে পানি দিয়েছে তাঁকে আগে খেতে হবে,তারপর আমি খাব।
মরিয়ম পাশের ঘরে থাকায় কথাটা শুনতে পেল।মরিয়ম মেয়েটা একটু প্রতিবাদী টাইপের সাথে সাথে বলে ফেলল পানি চাইলেন আর খাবেন না।এ কেমন কথা।ব্যাচ এক কথায় দুই কথা বেজে গেল ঝগড়া।
কবির:কিরে,মরিয়ম কি হয়ছে?চুপ কর।
মেয়েটা একটু চড়া মেজাজের হলেও রিকুর কাছে তাঁকে ভালো লেগে যায়।তাছাড়া,মরিয়মের ফ্যামিলিটাও ধর্মভীরু।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রিকুও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
সকালে যে যার মত ঘুম থেকে উঠল।আজ রিকু তাঁদের বাড়িতে চলে যাবে।সকালের নাস্তা শেষে রাসেলের শাশুড়িকে বলল আজ আসি খালাম্মা।একমাত্র মরিয়ম ব্যতিত পরিবারের সবাই তাঁকে জোর করা সত্ত্বেও সে চলে যেতে নাছোড়বান্দা।যেই বলা সেই কাজ।
রিকু:কবির ভাই,বেশ ভালো কাটলো এ দু’দিন।আপনাদের আমাদের বাসায় নিমন্ত্রন রইল।বাসে ওঠে রিকু চলে যাচ্ছে তাঁর বাড়িতে।রিকু ভাবতেছে,কি করা যায় মেয়েটাকে সে ভুলতে পারছে না।
মরিয়ম:কি আছে তাঁর মাঝে।দেখিনি তারপরও কেমন মায়া অনুভূতি হচ্ছে।কেন?এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সে।
রাসেল মরিয়মকে সাফ বলে দিল আর কখনও যেন রিকুর সাথে কোন কথা নাহয়।এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল।
মরিয়ম অধ্যায়টা একবারেই ভুলে গেল।সামনে তাঁর এস এস সি পরীক্ষা।
রাসেল:ভাইয়া ফোনটা নাও তো কে যেন তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে।
মরিয়ম:না,আমার সময় নেই। আজ আমার রসায়নের সাপ্তাহিক পরীক্ষা আছে।
রাসেল:আরে নাও,আমি দোয়া করে দিলাম পরীক্ষা ভালো হবে ।ইনশাহআল্লাহ।
৬মা্স কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই।হঠাৎ একদিন ফোন করল রিকু যেদিন মরিয়ম ভীষণ অসুস্থ।মরিয়ম চিকেন পক্সে আক্রান্ত।
রিকু:মরিয়ম আপা,কেমন আছেন?
মরিয়ম:এতটাই অসুস্থ ছিল যে কিছুই বলতে পারল না্।
রিকু:আমি বিদেশে চলে যাচ্ছি ঠিকমত পড়ালেখা কর।
মরিয়ম:মনে মনে খুবকষ্ট পেলেও কিছুই প্রকাশ করল না।
এবার থেকে রিকু মরিয়মের সাথে কথা না বললেও মরিয়মের পরিবারের অন্য সবার সাথে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে।
মরিয়ম এস এস সিতে খুব ভালো রেজাল্ট করল।গ্রামের একটি কলেজে এইচ এস সিতে ভর্তি হল মরিয়ম।লেখাপড়া ভালোই চলছে মরিয়মের।
হঠাৎ একদিন রিকু বন্ধুদের চাপাচাপিতে দু’পরিবারকে নিজের মতামত জানাল সাথে মরিয়মকেও সুযোগ বুঝে স্পষ্ট জানিয়ে দিল।
মরিয়ম:আমার পরিবারকে রাজি করাতে পারলে আমার কোন সমস্যা নেই।
মরিয়মের বাবা এবং চাচা রাজি না হতে চাইলেও কবির বদ্ধ পরিকর এখানেই বোনকে বিয়ে দিবে।
মরিয়মের পরিবার কিছু শর্ত ঝুড়ে দিল ।মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে।তাঁরা কিছু দিতে পারবে না।
রিকুর পরিবার কোনক্রমেই রাজি হতে চাইল না।কারণ,দু’জনের বাড়ির দূরত্বটা অনেক বেশি,মেয়েটা শ্যামলা বর্ণের।যাই হোক রিকু তাঁর সিদ্ধান্তে অটল সে এখানেই বিয়ে করবে।আশ্চর্যের বিষয় হল দু’জন কখনই দু’জনাকে সরাসরি দেখে নি।ছবিতে দেখেছে মাত্র।
ইতিমধ্যে একমাসের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে পড়ল।১০দিন শেষ ও হয়ে গেল।কিন্তু,বিয়ের কোন নাম নেই।রিকুর পরিবারের কেউ রাজি না হওয়াতে মরিয়মের পরিবারও বেঁকে বসল।বিয়েটা ভেঙে গেল।রিকু এবং মরিয়ম দু’জনের মনই খুব খারাপ হযে গেল।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে কবির আবারো তাঁর চেষ্টা চালাতে শুরু করল।এবার মরিয়মের পরিবারে একমাত্র চাচা ছাড়া বাকি সবাই রাজি হয়ে গেল।রিকুও থেমে থাকে নি।তাঁদের পরিবারেও তাঁর এক বোন ব্যতিত আর সবাই মোটামুটি রাজি হয়ে গেল।বিয়ের দিন ঠিক হল।আল্লাহর রহমতে বিয়েটাও সঠিকভাবে সম্পন্ন হল।মরিয়ম এইচ এস সি পরীক্ষা দিল রেজাল্ট ও ভালোই হল।
রিকুর একটাই চাওয়া মরিয়মকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা।মরিয়ম এখনও রিকুর প্রচেষ্টায় সংসার করার পাশিপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছে।রিকু এবং মরিয়ম মিলে একটি সুখি ও সুন্দর সংসার গড়ে তুলছে।তাঁদের বাচ্চা ও হযেছে।
কিন্তু,রিকুর সাথে আজ অবধি তাঁর শ্বশুড়ের সাথে দেখা হযনি।কারণ,দু’জনেই প্রবাসী।
বিষয়: বিবিধ
১৪১০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মনোযোগ সহকারে আরো একবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যালো:আসলামু আলাইকুম,কেমন আছ দোস্ত।
এখানে মনে হয় আসসালামু আলাইকুম হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন