জগদল বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০৭:৪২:০৬ সন্ধ্যা

**জগদল বিশ্ববিদ্যালয়:

বৌদ্ধযুগে শিক্ষা ও সভ্যতার আলোচনা ও বিকাশের কেন্দ্র ছিল বিহার বা সংঘারাম। এ সংঘারাম সৰ্ব্বত্যাগী ভিক্ষু সংঘের আবাসস্থল। এসব বিহার বা সংঘারামকে কেন্দ্র করে তৎকালে শিক্ষা ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে । শিক্ষা ও সভ্যতার সৰ্ব্বোচ্চ স্থান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির উৎস হচ্ছে এ বিহার বা সংঘারাম। জগদল বিশ্ববিদ্যালয় তার ব্যতিক্রম নয় ।

রাজা রামপালের রাজত্ব বঙ্গদেশ ও মগধে (বিহার) আরম্ভ ১০৮৪ ও সমাপ্ত হয় ১১৩০ খৃঃ । তিনিই জগদ্দল সংঘারাম স্থাপন করেন। রামচরিত ঐতিহাসিক মহাকাব্য মতে নবনিৰ্ম্মিত রাজধানী নগরী রামপালে এ জগদল মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত ছিল। উত্তর বঙ্গের (বরেন্দ্রভূমি) গঙ্গা ও করতোয়া নদীর তীরে নৃপতি রামপাল নূতন নগরী রামবতী স্থাপন করেন। এ নগরীতে মহারাজ রামপাল জগদল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন।

এ জগদল বিশ্ববিদ্যালয় দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমাদ্ধে নিৰ্ম্মিত হয় । মাত্র একশত বর্ষকাল এ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর ছিল । এ সময়কালে এ বিশ্ববিদ্যালয় বহু পণ্ডিত ও বিজ্ঞ মনীষী তৈরীর কীৰ্ত্তি অর্জন করেন। তিব্বতীয় ত্রিপিটক হতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতবর্গ ও তাদের রচিত গ্রন্থাবলীর নাম জানা যায়। তিব্বত হতে জানা যায় যে এ জগদল বিহার বরেন্দ্রভূমিতে (উত্তরবঙ্গ) অবস্থিত ছিল । মি: এ. কে. মৈত্রেয় বলেন এ শিক্ষাকেন্দ্র দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত ছিল।

>>জগদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতবর্গ -

১। পণ্ডিত বিভূতি চন্দ্র :

পণ্ডিত বিভূতি চন্দ্র মহাপণ্ডিত উপাধিতে ভূষিত ছিলেন। তিনি পণ্ডিত সবরিশ্বর সমীপে অধ্যয়ন করেন। যিনি বিভূতি চন্দ্রের নিকট সদঙ্গযোগ নাম গ্রন্থ ব্যাখ্যা করেন। পরে বিভূতি চন্দ্র ঐ গ্রন্থ তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি আরও সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থ তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি বিক্রমশিলা মহাবিহারের শেষ প্রধান পণ্ডিত শাক্যশ্রী ভদ্রের সমসাময়িক ছিলেন। পণ্ডিত শাক্যশ্রী ভদ্র ১২০৩ খৃঃ জীবিত ছিলেন। পণ্ডিত বিভূতি চন্দ্রও ঐ সময়ে বিদ্যমান ছিলেন বলা হয়ে থাকে। মগধ ও বঙ্গে মুসলিম অভিযানের পূৰ্ব্বে বিভূতি চন্দ্র বিদ্যমান ছিলেন। পণ্ডিত বিভূতি চন্দ্রের রচিত গ্রন্থাবলী (সংস্কৃত ভাষায়) :

ক ) অন্তর-মঞ্জুরী-নাম

খ ) স্বপ্নোহন

গ ) ত্রি-সম্বর-প্রভা-মালা-নাম

ঘ ) বজ্র-কারিকা-কর্ম-সাধনা

ঙ ) আৰ্য্য-মোঘ-পাশ-সাধনা

চ ) বোধিচৰ্য্যাবতার-তত্ত্বপরীয়-পঞ্জিকা বিশেষ দয়োতানি-নাম

২। পণ্ডিত দানশীল :

পণ্ডিত দানশীল পণ্ডিত, মহাপন্ডিত, উপাধ্যায় ও আচাৰ্য উপাধিতে অলস্কৃত ছিলেন।

তিনি সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থ তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। পণ্ডিত জিনমিত্রের সাথে তার

নিবিড় সম্পর্ক ছিল ও উভয়ে একত্রে তিব্বতে অনুবাদ কাৰ্য সম্পাদন করেন। পণ্ডিত দানশীল প্রায় ৫৪ (চুয়ান্ন) টি সংস্কৃত গ্রন্থ একাকী তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। অনুবাদকরূপে তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন।

ক ) ধ্যান-সাদ-ধর্ম-বিবস্থল-বৃদ্ধি

৩। পণ্ডিত সুভকর :

পণ্ডিত সুখকর সুম্ভকর নামেও কথিত । তিনি পণ্ডিত সুভকররূপে সুপরিচিত । তিনি পণ্ডিত শাক্যশ্রীর অধ্যাত্ম গুরুরূপে উক্ত, যে শাক্যশ্রী কাশ্মীরদেশীয় ও বিক্রমশিলা বিহারের শাক্যশ্ৰী ভদ্র নামেও পরিচিত। পণ্ডিত সুভকর জগদল বিহারে অবস্থানকালে সিদ্ধৈক-বীরতন্ত্রটিকা নামে সংস্কৃত গ্রন্থ রচনা করেন।

৪ । পণ্ডিত মোক্ষকার গুপ্ত :

তিনি তর্কশাস্ত্র বিশারদ ছিলেন। তিনি তর্ক-ভাস' নামে একটি গ্রন্থ (Logic) রচনা

করেন ও তিব্বতীয় ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তিব্বতের বৌদ্ধধর্মকে এ চারজন পণ্ডিত

নানাভাবে উন্নতি করেন। পণ্ডিত মোক্ষকার মহাপণ্ডিত উপাধিতে ভূষিত ছিলেন।

সূত্রঃ উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়—শ্রী ইন্দ্র কুমার সিংহ

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379531
০৭ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৫:০৫
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো /

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File