আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৪৬
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ০৭:২২:২৫ সকাল
আজকে যেমন আমরা প্রতি নিয়ত দেখছি যে, দায়ী ইল্লেলল্লাহ বা ইসলাম প্রচারকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছা মত যে কোন অভিযোগ যথা অঙ্গী-জঙ্গী, সন্ত্রাসী, যুদ্ধ অপরাধী --- এনে তাদেরকে অতি সহজেই ধরাশায়ী করা হচ্ছে; এমন কী কেউ এর বিরুদ্ধে দাড়ানো তো বহু দূর, অন্যায়ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছে না, কেননা আজকের বাস্তবতা হ’ল, যে হকের পক্ষে কথা বলবে তার জন্যও অপেক্ষা করবে ঐ একই পরিণতি যা ভোগ করছে দায়ী ইল্লেলল্লাহ বা ইসলাম প্রচারকরা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় বিশ্ব খ্যাত ভারতের দায়ী ইল্লেল্ললাহ জাকির নায়েকের কথা। তার জনপ্রিয়তার ভীত হয়ে ভারতীর বর্তমান শাসক গুষ্ঠি তার বিরুদ্ধে একের পর এক বিভিন্ন অভিযোগ এনে গ্রেফতারি পরয়োনা জারি করছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দাবী হল এই সস্মানিত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে বা ভবিৎষতে আনা হবে তার নিরপেক্ষতা প্রমানের জন্য তদন্ত হতে হবে কোন মুসলিম দেশ যথা তুরস্ক বা সৌদি আরবের দ্বারা কোন ভাবেই পক্ষপাততুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে নয়। কিন্তু তৎকালের চিত্র ছিল ঠিক এর বিপরীত। কারন তখন মুসলমানরাই ছিল ‘সুপার পাওয়ার’ । ফলে মুসলমানদের কাছে সস্মানিত এই সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের অপপ্রচারের অর্থই ছিল নিজেকে সমূহ বিপদের মাঝে ঠেলে দেওয়া; ঐ অপ-প্রচারকারী যেই হোক না কেন, এমন কী কোন দেশের মুসলিম নামধারী ফাসেক রাজা/ বাদশা হলেও, তার জন্যও ঐ একই পরিণতি অপেক্ষা করত। তৎকালীন পরিস্থিতিতে, ঐ সকল ইসলাম প্রচারকদের প্রভাবকে খর্ব করার একমাত্র যে অপশনটি অবশিষ্ট ছিল, তা হল কিংব্দন্তিতে পরিণত হয়ে যাওয়া ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহদেরকে মানুষের আসন থকে অনেক অনেক উদ্ধে তুলে ভগবান/দেবতার আসনে বসানো। ফলে তারা যে পথ ও আদর্শকে রেখে গেছে নিজেদের জান মালের কুরবানীর দ্বারা যাতে করে মুসলমানরা তা থেকে অনুপ্রেরণা পায়, তা ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে। কেননা আমজনতা মনে করবে আমরা সাধারন মানুষ হয়ে কিভাবে ভগবান/দেবতাদের পথকে অনুসরণ করব। এটা অসম্ভব, অবাস্তব হতে পারে না বরং আমরা তাদের সস্মান করতে পারি তাদের কবর মাজারকে পূজা আর্চনার মধ্য দিয়ে! উল্লেখ্য এর বাস্তব উদাহরণ সেই সময়ে তাদের সস্মুখে বর্তমান ছিল। পূর্বে ব্রাহ্মবাদীরা একই সূত্র প্রয়োগ করে ‘মানুষ বৌদ্ধাকে’ ভগবানের আসনে বসিয়ে দিয়ে বুদ্ধার জন্মস্থান ভারত উপমহাদেশ থেকে তার প্রচারিত ধর্মকে বিতাড়িত করতে সমর্থ হয়ে ছিল।
এই একমাত্র অথচ জটিল অপশনটি কীভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করা যায় অর্থাৎ কিভাবে সমাজের ভিতরে প্রভাবশালী ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলাহদের প্রকৃত ইমেজকে পরিবর্তন করে সৃষ্ট পীর/ দরবেশ/ সুফীদের ইমেজ রূপে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। অন্য কথায় ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেলল্লাহদেরকে কীভাবে ‘মানুষের’ আসন থকে অনেক অনেক উদ্ধে তুলে ‘ভগবান/দেবতার’ আসনে বসানো যায় তারও পথ বাতলে দিয়ে গেছেন এই গুনধর সুলতান হোসেন শাহ্ শরীফ মক্কী। এ সম্পর্কে, Islam in Bangladesh Through Ages গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫২ পৃষ্ঠায় ডঃ আব্দুল করিম “Bangladesh during the Muslim rule” শিরোনামে এক নিবন্ধে বলেন,
“He was respectful to the Sufi Saints: it is said that once a year he walked down from his capital Ikdala to Pandua to visit the Shrine of Shaikh Nur Qutbul Alam. He also granted 22 villages for the maintenance of the Shrine of that Saint. ”
এখানে আমরা দেখি যে, তৎকালে অত্যান্ত প্রভাবশালী এবং কিংবদন্তীতে পরিণত হয়ে যাওয়া ব্যাক্তি শায়খ আলাউল হকের ছেলে শায়খ নুরে কুতুবুল আলমের প্রভাবকে খর্ব করার জন্য হোসেন শাহ্ এই শেখকে সস্মান প্রদর্শন করে ছিলেন একজন ইসলাম প্রচারক হিসাবে নয় বরং একজন সাধু/সুফী হিসাবে। উল্লেখ্য কাউকে সাধু/সুফী/পীর পরিচয়ে পরিচিত করার অর্থই ছিল, যিনি একজন আলৌকিক ক্ষমতাধর অতি মানবিক সত্তা যার কাছে বিপদ আপদ বালা মুসিবদ থেকে বাচার জন্য প্রার্থনা/দোয়া করা যায় কিংবা তার জিকির করা যায় কিন্ত তার রেখে যাওয়া পথকে অনুসরণ করা যায় না! কেননা একজন সাধারন মানুষ হয়ে একজন আতি মানবিক সত্তা বা ব্যাক্তির পথকে অনুসরণ করার প্রশ্নই আসে না! আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ ছিলেন একজন মুসলিম সুলতান অথচ শত ব্যাস্ততার মাঝেও তিনি প্রতি বছর তার রাজধানী একডালা থেকে পান্ডুয়াতে অবস্থিত ঐ সুফীর (ইসলাম প্রচারক শায়খ নুরে কুতুবুল আলমের) মাজারে যেতেন। আমজনতার কাছে তার অর্থ হল, ঐ সুফী (যিনি প্রকৃত পক্ষে ছিলেন একজন ইসলাম প্রচারক) একজন আলৌকিক ক্ষমতাধর সুফী যে মানুষকে বিপদ আপদ বালা মুসীবত থেকে রক্ষা করতে পারে, তা না হলে সুলতান কষ্ট ও তার মুল্যবান সময় নষ্ট করে তার মাজারে যাবেন কেন? শুধু তাই নয় সুলতান হোসেন শাহ্ অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে ঐ মাজারের রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য ২২টি গ্রামকে দান করে ছিলেন যাতে করে মুসলিম নামধারী এক দল কবর মাজার পুজারী ভক্তের দল তৈরী হওয়ার পূর্বে তার ঐ প্রজেক্ট আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে না যায়। আমার ধারনা যদি ভুল না হয়ে থাকে তবে সমাজের ভিতরে প্রভাবশালী ইসলাম প্রচারক বা দায়ী ইল্লেললাহদের কবরকে সুফী/পীরের কবরে এবং তাদের ইসলাম প্রচার কেন্দ্রকে সুফী-পীরের মাজারে রূপান্তরের এটাই সর্ব প্রথম প্রচেষ্টা, আর যার রূপকার হচ্ছেন আমাদের মহামান্য সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ মক্কী। উল্লেখ্য তৎকালীণ অর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের প্রজেক্ট অর্থৎ ইল্লেললাহদেরকে সুফী/সাধু/পীরে রূপান্তর অত্যন্ত বিপদ জনক কাজ ছিল, যা বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা এক মাত্র ছিল রাজা বাদশাদের অন্য কারো পক্ষে তা ছিল অসম্ভব কাজ।
চলবে------
বিষয়: বিবিধ
৬৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন