ক্রেটার লেক

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:০০:৪৫ রাত









ওরেগন কেভস থেকে ফিরে আসলাম গ্রান্টস পাস শহরে। এই শহরটা সত্যি খুব পছন্দ হওয়ার মত। রাস্তাঘাট খুব ঝকঝকে আর সুন্দর করে সাজানো। ডাউনটাউনের প্রায় প্রত্যেকটা রাস্তায় ভাল্লুকের নানান কিসিমের ভাষ্কর্য বসানো। চারিদিকের পরিবেশ বেশ ভালো লাগল। শহরটা ততটা বড় না হলেও এদিককার সবচেয়ে বড় শহর। পেছনের আড়াই'শ কি:মি: ও সামনের দেড়,শ কি:মি: এর ভেতর এটাই বড় শহর।

হোটেলে চেকইন করেই ছুটলাম ক্রেটার লেকের দিকে। গ্রান্টস পাসে ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে,খাওয়ার নিয়ত ছিলো কিন্তু হাতে সময় নেই। আসার সময় পথের খাবার হিসেবে সাথে নিয়েছি ছোট ছোট দারুন বন রুটি,বেগল নাক রুটি,বাটার,বিস্কুট,কুড়মুড়ে ও মজার কর্ন নাট,পটেটো চিপস,সিদ্ধ ডিম,বেশ কিছু ফলমূল এবং ডাচ ব্রাদার্সের কফি। এগুলো চালানোর পরও ভাতের ক্ষুধা বলে একটা ব্যাপার আছে,সেটাই মিস করছিলাম। কিন্তু মন পড়ে আছে ক্রেটার লেকে,তাই ছুটলাম। গ্রান্টস পাস থেকে প্রায় ১৩০ কি:মি: উত্তর-পূর্ব দিকে এই লেক।

প্রায় ৭৭০০ বছর পূর্বে আগ্নেয় পর্বত মাউন্ট মাজামা'র পতনের পর এই লেকের সৃষ্টি হয়। ভূ-আলোড়নের ফলে এই পর্বতটি নীচে দেবে যায়। এতে জ্বালামুখের গভিরতাও অনেক কমে আসে। তারপরও বর্তমানে এখানে পানির গভীরতা ১৯৪৯ ফুট। আয়তন ৫৩ ব:কি: মিটার। এটি আয়তনের দিক দিয়ে আমেরিকার সবথেকে বড়,পুরো উত্তর আমেরিকায় ২য়। গবীরতার দিক দিয়ে এটি বিশ্বে দশম স্থান দখল করেছে। এর ভেতর একটি ছোট দ্বীপ আছে নাম উইজার্ড আইল্যান্ড ,সেখানে তিনটি ঘর দেখেছি। কখনও কখনও মানুষ সেখানে থাকে। কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকা প্রায় অসম্ভব।

এই লেকের পানির উৎস্য হল বৃষ্টি ও তুষার গলা পানি। শীতে এর চারিপাশ সাদা তুষারে ভরে থাকে। এর চারিপাশি খাড়া পাহাড় রয়েছে।

জি.পি.এস এর ডিরেকশন অনুযায়ী চলছিলাম হাইওয়ে ৫ হয়ে হাইওয়ে ২৩৪ এবং শেষে হাইওয়ে ৬২তে আসলাম। সবকিছু ঠিক ছিলো কিন্তু ক্রেটার লেক ন্যাশনাল পার্কে ঢোকার পর জি.পি.এস এর কানেকশন লাপাত্তা হয়ে গেল। আমেরিকায় এটা একটা সমস্যা। পাহাড়ী এলাকায় অথবা বনের ভেতর নেটওয়ার্ক হঠাৎ পাওয়া যায় এবং হঠাৎ গায়েব হয়ে যায়। তারপরও চলতে থাকলাম কিন্তু দীর্ঘক্ষন চলার পরও লেকের দিশা পেলাম না। প্রায় ১০মাইল বা ১৬ কি:মি: গিয়ে থামলাম। মনে হল রাস্তা ভুল করেছি। আশপাশে লোক জন ছিলোনা। কারো কাছে ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে হলে ১৬ কি:মি: পেছনে এসে জানতে হবে। কারন সেখানে একটি ছোট্ট বাজার আছে। তখন বিকেল প্রায় ৫টা বাজতে চলেছে। সকাল ৪.৩০ থেকে ড্রাইভ করেই চলেছি। বেশ অস্বস্তি লাগল। কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র আমি না। ওদিকে খানিকটা মোশন সিকনেস শুরু হয়েছে। প্রচুর আকাবাকা পথে চললে এমন হতে পারে। তারপরও পেছনে ফিরলাম সেই বাজারের দিকে। চলার সময় মনে হচ্ছিলো এই বুঝি বমি চলে আসল। কিন্তু মনের ভেতর ভিন্ন চিন্তা নিয়ে ধীরে ড্রাইভ করে চলে আসলাম। এবার একটি ছোট্ট ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের লোকের কাছে ক্রেটার লেকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। লোকটা শুনে বলল-আপনি ঠিকই ছিলেন। যে পথে ১৬ কি:মি: গিয়েছিলেন ,সে পথে আর ১০ কি:মি: গেলে লেকে যাওয়ার রাস্তা পেতেন। লোকটা একটা ম্যাপ দিয়ে দিল এবং সুন্দর করে কলম দিয়ে মার্ক করে দিল কিভাবে যাব তা বুঝাতে। আমি এখান থেকে মোশন সিকনেস রিলিফের ওষুধ কিনলাম এবং পানি,কোল্ড ড্রিংক্স। ওষুধ খাওয়ার ২/৩ মিনিটের ভেতর সমস্যা কেটে গেল।

এবার চলে ক্রেটার লেকের রাস্তা পেলাম। এখানে লেক কর্তৃপক্ষের অফিস রয়েছে। গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫ ডলার দিয়ে প্রবেশ করতে হয়,মোটর হোম হলে সম্ভবত ৮০ ডলার,মোটর সাইকেল ১০ ডলার। ভেতরে আরও অন্তত ৮/৯ কি:মি: চলার পর লেকের একটি পাড়ে গিয়ে উঠলাম। এই লেকের চারিপাশে রোড রয়েছে যা রিম ড্রাইভ নামে পরিচিত। যে লুকআউটে আসলাম,সেটাই প্রসিদ্ধ লুকআউট। সমুদ্র সমতল থেকে এটার উচ্চতা প্রায় ৮ হাজার ফুট।

বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না যে,পানি এত নীল হতে পারে। অসাধারন,পুরোই অসাধারন। গভীর নীল পানি। খাড়া পাড় চারিদিকে। কোনো কোনো পাশে পাহাড়ের উপর থেকে মসৃন বালুর আস্তরন চলে গেছে লেকের ভেতরে। শুধু আকৃষ্টই হলাম। এপাশে বেশ কিছু বৃক্ষ রয়েছে পাড়ের উপর। আনুমানিক ৪শ ফুট হবে এপাশের পাড়। অন্যপাশের পাড় ৭/৮ফুট হতে পারে।

আমি তাকিয়ে থাকলাম অপলক। এত কষ্ট করে এসেছি এখানে,দেখেই মনে হল কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। যে কোনো মানুষেরই এটা ভালো লাগবে। সত্যি ভালো লাগার মতই একটা স্থান। ঠান্ডা হাওয়া বইছিলো,তবে রৌদ্রজ্জ্বল দিন। আমি ছবি তুলতে থাকলাম। অনুভূতি ছিলো আরামদায়ক। সমস্ত কষ্টের কথা ভুলে গেলাম। সবমিলে বোধ হয় ১৫ মিনিট থাকলাম,অথচ এই জিনিস দেখার জন্যে সারাদিন রাস্তায়। এখানে বেশ কয়েকটি লজ রয়েছে রাত্রি যাপনের। আমি এখানেই থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময়মত রিজার্ভ করতে না পারায় সম্ভব হয়নি। এতটাই চাহিদা যে খালি পাওয়া কষ্টকর।

এবার ফিরতি পথ ধরলাম। মনে অনাবিল শান্তি,তবে পেটে নয়। এখানে যে ভারতীয় রেস্টুরেন্টে আছে তা বেশ দূরে। হোটেলে ফিরে আসলাম। এবার নেট ঘেটে হালাল রেস্টুরেন্ট পেলাম যা লেবানিজ। দ্রুত চললাম সেখানে কিন্তু এরা শুক্র-শনিবারে বন্ধ রাখে। মন খারাপ হল। এবার খানিক পর কাসাব্লাঙ্কা নামক রেস্টুরেন্ট পেলাম। এটা মরোক্কোর রাজধানীর নাম,,মুসলিম দেশ তাই ভাবলাম এটা হালাল হবে। আবার ছুটলাম কয়েক মাইল। কিন্তু দেখলাম এটা আসলে রেস্টুরেন্ট না,,চলতি পথে কিছু খাবার নিয়ে কেটে পড়ার মত স্থান। পছন্দ হলনা। ওদিকে পেটে ক্ষুধা। শেষে চায়নিজ খেলাম আর একটা স্টোরে ঢুকে এটা সেটা কিনে হোটেলে ফিরলাম। রাতে এশার নামাজ পড়েই এক ঘুম দিয়ে দেখী সকাল। সকালে হোটেলেই নাস্তা করলাম এবং পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওন হলাম......

বিষয়: বিবিধ

১৫৫১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377362
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৩৩
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার লেখা, চালিয়ে যান।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪১
312822
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ...লোক জন কোথায় গেল !!
377379
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : হুম প্রথমবার মনে হয় ভ্রমন করতে গিয়ে কিছু খেতে পারলেন না!
এমন জায়গা দেখার জন্য ৫-৬ ঘণ্টা ড্রাইভ করাই যায়। অনেক ধন্যবাদ।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১১:৪২
312823
দ্য স্লেভ লিখেছেন : উত্তম বলেছেন , এমন স্থান দর্শনের পর তাই মনে হয়েছিলো
377434
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৪৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam n eid Mubarak. Beautiful sharing. Jajakallahu khair.
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৫৭
312852
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাকিুম সালাম। জাজাকাল্লাহ খায়রান। ঈদ মোবারক সিস্টার Happy
377511
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:২০
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : ক্রেটার লেকটা আপনার বর্ণনা পরে আর ফটো দেখে খুবই ভালো লেগে গেল | আপনার ক্রেটার লেক দেখে আর লেখা পরে ছোট বেলার রাঙামাটির লেকে আমাদের কাজিনরা মিলে হৈ হল্লাগুলোর কথা মনে পড়লো অনেকদিন পর | অনেক ধন্যবাদ |
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
312914
দ্য স্লেভ লিখেছেন : রাঙ্গামাটির লেকে আমিও গিয়েছিলাম ,অনেক ভালো লেগেছিলো। তবে এটা এক অসাধারন জিনিস। খালি চোখে বেশী ভালো লাগে। পুরো নীল পানি

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File