ক্রিকেট
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ মার্চ, ২০১৫, ০২:৩১:০১ দুপুর
আমি মাঝে মাঝে ইউটিউবে নানান কিসিমের ভিডিও দেখী। দু একজন বন্ধু মাঝে মাঝে কিছু লিংক দিয়ে দেখতে বলে। কখনও হাস্যকর কিছু দেখী,কখনও পিস টিভির প্রখ্যাত আলেমদের বক্তব্য শুনি,কখনও জ্ঞান বিজ্ঞান,বিশ্ময়কর বিষয় সংক্রান্ত কিছু বিষয়ও দেখী। তো সেদিন একটি পুরোনো ভিডিও দেখলাম যা মোটামুটি এরকম :
এক আগন্তক এসে এক চায়ের দোকানে বসা লোকজনদের উদ্দেশ্যে বলল-ভাই ইন্ডিয়া কত রান করেছে ?
সেই চায়ের দোকানে শক্তিশালী এক যুবক বসা ছিল, সে উঠে এসে আগন্তুকের মুখে ঘুষি মেরে ফেলে দিল। তখন আশপাশের লোকেরা বলল-ভাই কি হয়েছে ? কি সমস্যা ?
যুবক: আরে এখনও শিক্ষা ব্যবস্থা মান্ধাতার আমলে আছে, অশিক্ষা জাতিকে শেষ করছে।
লোকেরা: তাতে ওর কি দোষ ?
যুবক: সামাজিক অপরাধ শিল্পে পরিনত হয়েছে।
লোকেরা: কিন্তু এই লোকটার দোষ কোথায়,ওকে মারলে কেন ?
যুবক: এখনও ভারতের কোটি কোটি লোক অভূক্ত রয়েছে,তাদের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
লোকেরা: তাতে ওর কি দোষ ?
যুবক: এখনও ভারতের অর্ধেক লোক চিকিৎস্যা সেবা থেকে বঞ্চিত,জীবিকার জন্যে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে আর এর মধ্যে এই হারামজাদা এসে জিজ্ঞেস করছে স্কোর কত !!
এবার সকল লোকেরা পড়ে থাকা আগন্তুককে ধরে চরম ধোলাই দিল।
আমি ক্রিকেট খেলাকে খারাপ বলছি না। এমনকি আমি নিজেই একসময় ক্রিকেটার ছিলাম,অনুল্লেখযোগ্য হলেও বিগ হিটার ছিলাম্, ছক্কা মারলে বলের খবর হয়ে যেত। আমরা প্রতিদিন বিকেলে এবং সময় পেলে সকালেও খেলতাম। সেখানে আমাদের শরীর চর্চা হত। সেটার একটা উদ্দেশ্য ছিল। ফুটবলও আমরা সকলে মিলে আনন্দ করে খেলেছি। কিন্তু আমি যেটা উল্লেখ করছি সেটা হল উম্মাদনা। হ্যা, আমিও এটা নিয়ে মেতেছিলাম। যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে মাথার মধ্যে টেনশন কাজ করত। পছন্দের টিমের জন্যে নফল নামাজ পর্যন্ত পড়তাম। কিন্তু পরবর্তীতে উপলব্ধী আসে। চিন্তা করলাম একটি দেশ পুরো মত্ত হয়ে রয়েছে এই খেলা নিয়ে। এর উদ্দেশ্য এবং প্রাপ্তী কি ?
দেখলাম একটি জাতিকে এর ভেতর দিয়ে পুরো উম্মাদ বানানো যায়। যে জাতির লোকেরা নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিনব্যাপী বা ৫ দিন ব্যাপী ম্যাচ দেখার কাজে লিপ্ত থাকে,তারা সামনে যাবে কিভাবে ? ক্রিকেট ইউরোপের লোকেরাও খেলে ,কিন্তু বাঙ্গালীর মত উম্মাদনা নিয়ে কি তারা খেলা দেখে ? তারা কি সকল কাজ বাদ দিয়ে এটা নিয়ে পড়ে থাকে। বাস্তবতায় অর্থনৈতিক উন্নতিই আমাদের চোখে পড়ে,আর সেটাকে উন্নতি অগ্রগতি হিসেবে ধরলেও বলা চলে এই অগ্রগতি এই উম্মাদনার ভেতর দিয়ে আসেনা। আর সার্বিক জীবনাচার গননায় ধরলে বলতে হয়-এইটা একটা বাতিল মাল।
ক্রিকেট এখন আর খেলা নয়, এটি একটি বড় বিনোদনের আসর। এটি একটি বিশাল ব্যবসায়ের আসর,বিশাল জুয়ার আসর,বিশাল উম্মাদনার আসর,বিশাল সময় নষ্টের আসর। এমনকি এটির ভেতর থেকে যারা উৎফুল্য তারাও আসলে আনন্দ পুরোটা পায় না। বহু দূরের খেলা নিয়ে অনেকে অনর্থক তর্ক,গীবত,মারামারিতে লিপ্ত হয়। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে।
দল জিতলে আনন্দে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে,সাধারন মানুষের জান মালের ক্ষতি করে। কদিন আগে বেঙ্গল টাইগাররা খেলায় জিতেছে,ভাল কথা জিতুক। কিন্তু এটা নিয়ে সারা ঢাকায় এক শ্রেনীর মানুষ রং মাখামাখি করল। হিজাব পরা অনেককে দেখলাম এসবে মত্ত হয়েছে। এদের পরিবারও বিশেষ বিশেষ দিনে ছাড় দেয়।
যে কোনো খেলাকে খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। এই অবাধ উম্মাদনা কোনো কল্যান বয়ে আনবে না। এই আগ্রহ,আকাঙ্খা,ত্যাগ,একাগ্রতা,মনোযোগ জাতির কল্যানে ব্যয় হলে আমরা সত্যিই উন্নতির দিকে ধাবিত হতাম।
এখনও আমাদের লোকেদের একটা বড় অংশই দারিদ্র সীমার নীচে,এখনও ছিন্নমূল নির্মূল হয়নি,এখনও অধিকাংশ লোক অশিক্ষত,এখনও শিক্ষিত যুবক তরুনদের কর্ম নিশ্চিত হয়নি,সুশাসন সুদূর পরাহত,ব্যপক সামাজিক অপরাধ দমনের ব্যবস্থা হয়নি আর জনতা সকল অবস্থা উপেক্ষা করে ক্রিকেট জ্বরে ভুগছে। বাঙ্গালী তুমি পরগাছা হয়েই বেচে থাকো,তোমার এই নাচানাচিতেই আনন্দ।
পুন:শ্চ: এবার নিয়ে ২ বার বিশ্বকাপ দেখা হল না। একজন জিজ্ঞেস করছিল-খেলা দেখছেন না ? বললাম- ওয়াসিম আকরাম খেলছে না ক্যান ? সে খেললে আমি খেলা দেখতাম। আমি নিশ্চিত, ওয়াসিম আকরাম পরের বারও খেলতে যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ক্রিকেট এখন আর খেলা নয়, এটি একটি বড় বিনোদনের আসর। এটি একটি বিশাল ব্যবসায়ের আসর,বিশাল জুয়ার আসর,বিশাল উম্মাদনার আসর,বিশাল সময় নষ্টের আসর। এমনকি এটির ভেতর থেকে যারা উৎফুল্য তারাও আসলে আনন্দ পুরোটা পায় না। বহু দূরের খেলা নিয়ে অনেকে অনর্থক তর্ক,গীবত,মারামারিতে লিপ্ত হয়। অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে।
পুরো লেখাটির সাথে একমত, বিশেষ করে কপি পেস্ট। আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য।
বাংলাদেশে এই খেলা নিয়ে বেশী এক্সাইটেড হয় তারাই যারা কি না দেশের সেরা স্টুডেন্ট - বুয়েটের পোলাপানরা । বুয়েটে বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য পুরো ছুটি দেওয়া হয় ।
খোদ ব্রাজিলেও তো এরকম হয় না ।
আর বিশ্বকাপের সময় পতাকা উন্মাদনা তো সীমা পরিসীমা ছাড়িয়ে যায় , কিন্তু আজ ক্রিকেটে যে বাংলাদেশে কোয়ার্টার ফাইনালে কোয়ালিফাই করলো তার আবেগ কি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ছাদ ছাদে ?
আপনি বলেন ভালই, বলেছেনও তাই-
তবে আমার করা বলে আপনি ছক্কা মারতে পারবেননা তা আমি নিশ্চিত
আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম, আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরকালে জবাবদিহী করবেন আমরা জীবন কোন কাজে ব্যয় করেছি? তো যারা খেলোয়াড়, খেলা যাদের পেশা তারা কি উত্তর দিবে সারাজীবন শুধু খেলেছি?
চমৎকার একটি উক্তি আছে খেলাধূলা বিষয়ে- ‘মুসলমান খেলাধুলা, তামাসা, হাসি ঠাট্টা করবে এটা কোন দোষের ব্যাপার নয়। তবে এটা যেন তার অভ্যাস, চরিত্র ও প্রকৃতিতে পরিণত না হয়ে পড়ে। কারণ তখন সে কঠোরতার স্থানে ছাড় দেবে আর কাজের সময় বেহুদা কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়বে’।(উমর ইবনে আব্দুল আজীজ)!
চমৎকার লিখেছেন! শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহু খাইর!
এখন আর উৎসাহ পাই না। দেশ হয়ে আছে জাহান্নাম, এই সময় ক্রিকেট আর আগের মত টানে না।
অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে চমৎকারভাবে আলোকপাত করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন