রাতারগুল, বিছানাকান্দি (সিলেট ভ্রমণ ২০১৫) (পর্ব ১)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:২৯:৩৩ বিকাল

গত পর্বের লিংকঃ জাফলং, তামাবিল (সিলেট ভ্রমণ ২০১৫)

জাফলং, তামাবিল, শাবিপ্রবি ট্যুর শেষে মাঝখানে একদিন রেস্ট নিলাম। পরদিন আবার সাতসকালে ইমাম উদ্দীন ভাই হাজির। ইমাম ভাই সত্যি সত্যি ইমাম এর মতোই কাজ করছেন। আমাদের দক্ষ গাইড তিনি বাট উইদাউট পে। হাহাহা। আজকের টার্গেট বাংলাদেশের আমাজনখ্যাত রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এবং দেশের আরেক প্রকৃতিকন্যা বিছানাকান্দি

পাঁচভাইতে নাস্তা সেরে সেখান হতেই একটি সিএনজি রিজার্ভ করলাম রাতারগুল পর্যন্ত। ভাড়া সম্ভবত ৩৫০ টাকা, ঠিক মনে নেই।

রাতারগুল পৌছার আগে রাতারগুল সম্পর্কে একটু বলে নিই। রাতারগুল জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট (ইংরেজি: Ratargul Swamp Forest) বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রাণীকুল।

সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ "রাতা গাছ" নামে পরিচিত। সেই রাতা গাছের নামানুসারে এ বনের নাম রাতারগুল।

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বনের অবস্থান। বনের দক্ষিণ দিকে আবার রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত ২৬ কিলোমিটার।

উদ্ভিদবৈচিত্র্য

বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু'টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান । বনের উদ্ভিদের চাঁদোয়া সর্বোচ্চ ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । এছাড়াও অরণ্যের ৮০ শতাংশ এলাকাই উদ্ভিদের আচ্ছাদনে আবৃত । বনের স্বাস্থ্য সন্তোষজনক । এখন পর্যন্ত এখানে সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে ।

এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ; আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম, বটগাছও। আছে বট গাছ।

প্রাণিবৈচিত্র‍্য

জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিশা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত।

(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)।

রাতারগুল পৌছে সিএনজি হতে নামতে যাচ্ছি এমন সময় এক তরুণ খুব পরিচিত ভঙ্গিতে এসে হ্যান্ডশেক করলেন। পরে বুঝলাম, এটি উনার একটি কৌশল ছিল। পরিচয় দিলেন। বিসিএস ক্যাডারে সদ্য জয়েন করেছেন। সম্প্রতি বিয়ে করে সিলেটে এসেছেন হানিমুনে।

বিষয়টি হচ্ছে রাতারগুল যেহেতু জলবন, তাই ঘুরতে ডিঙ্গিনৌকা ভাড়া করতে হয়। উনার কাছে ভাড়া চাইলো ৩,০০০ টাকা। উনি বললেন, “আমার আরো লোক আছে, তারা আসলে একসাথে দরদাম করে উঠবো।”

তরুণ ভাইটি আমার কাছে প্রস্তাব দিলেন- “আমরা আলাদা আলাদা বুঝলে ওরা এক নৌকায় নিবে না। দুই নৌকা ভাড়া করতে হবে। চলেন একসাথেই ভাড়া করি।” তরুণের প্রস্তাবটি পছন্দ হলো। যে নৌকাটি ৩,০০০ টাকা ভাড়া চাইলো সেটি পরে মাত্র ৭০০ টাকায় ঠিক হলো। আমরা বেশি লোক হওয়ায় ৫০০ টাকা দিলাম, আর উনি দিলেন ২০০ টাকা।

রাতারগুল-



ডিঙ্গি নিয়ে প্রথমেই গেলাম ওয়াচ টাওয়ার দেখতে। উপর হতে রাতারগুলের ভিউটা সত্যিই দেখার মতো।

ওয়াচ টাওয়ার হতে রাতারগুল-











ডিঙ্গি নিয়ে চলছি আমার রাতারগুল জলবনের ভিতর দিয়ে। খাল কখনো সরু, কখনো বেশ বড়।





শতবর্ষী অনেক বৃক্ষ এখানে আছে। দুটি শতবর্ষী বৃক্ষের মাঝখান দিয়ে পার হচ্ছে আমাদের নৌকা।



শতবর্ষী বৃক্ষ-



ইমাম ভাই এর সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল আবীর এর। তার কোলে পিঠে হেসে খেলেই ভ্রমণ করেছে সে।





সুন্দর একটি প্রজাপতি উড়ে এসে বসলো উনার হাতে।



হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো আমার স্ত্রী। সবাই চমকে উঠলাম। দেখি নৌকার অদূরেই একটি সাপ অদ্ভূতভাবে চেয়ে আছে আমাদের দিকে। সবাই বেশ আতঙ্কিত হয়ে গেলাম।

প্রচুর সুন্দর সুন্দর ছবি কালেকশানে আছে। কিন্তু ব্লগে ছবি দেয়াটা খুব ঝামেলার, রিসাইজ করে নিতে হয়।





(বিছানাকান্দি ভ্রমণটা আগামী পর্বের জন্য তোলা থাক। আগাম আমন্ত্রণ রইলো)।

বিষয়: সাহিত্য

২০৭৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377967
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৪৬
মুজাহিদ হোসাইন সজিব লিখেছেন : পোস্ট পড়ে লোভ সামলানো দায়, সময়-সুযোগ হলে যাবো, আনশাআল্লাহ!
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:০৮
313283
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : সুযোগ পেলে মিস করবেন না। আর হ্যাঁ, অবশ্যই টুনটুনিকে নিয়ে যেতে হবে।Love Struck Love Struck
377969
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : রাতারগুল একবার গিয়ে প্রচুর সুযোগ থাকা সত্বেও আর যাইনি। গিযেছিলাম জুন মাসে। তখন প্রচন্ড সাপের উপদ্রব থাকে সেখানে। চমৎকার ছবি গুলির জন্য ধন্যবাদ। রাতার গুল নিয়ে আমার তখন কার এক বিদেশি সহকর্মি বলেছিলেন যে এমন সুন্দর বনাঞ্চল তিনি আর দেখেননি।
হিন্দু মতে কারো গায়ে প্রজাপতি এসে বসা মানে..............!!!
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:১০
313284
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : মিস করলেন কিন্তু। সুযোগ আসলে আর মিস করবেন না। সত্যিই দেখার মতো। ”ব্ল্যাক ওয়াটার” নামে হলিউড এর একটি হরর মুভি আছে যেখানে কুমির তিনজনকে খেয়ে ফেলে। রাতারগুল দেখতে অনেকটা মুভির সেই জলবনটির মতো।

প্রজাপতির রহস্যতো খোলাসা করলেন না। যাকগে, আমরাতো মুসলমান। কুসংস্কারে কুছ পরোয়া নেহি।
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১১:৪৮
313292
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একবার গিয়েছি ভাই। আমার অসলে একটু ফোবিয়া আছে সাপ নিয়ে। গা গুলায়!!
শ্রি শ্রি প্রজাপতেয় নমঃ!!!
377986
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:০৬
মোস্তফা সোহলে লিখেছেন : পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:১৮
313296
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : শীঘ্রই আপনার অপেক্ষার অবসান হবে ইনশাল্লাহ।
378007
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ১২:০৩
আফরা লিখেছেন : খুব সুন্দর ছবিগুলো দেখে আমার ও যেতে ইচ্ছা হচ্ছে ।

ধন্যবাদ ভাইয়া
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:১৩
313325
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : দেশে এলে মিস করবেন না যেন। আপনাকেও ধন্যবাদ।
378083
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:১৯
ফখরুল লিখেছেন : দু'দিন আগে এস এ টিভির একটি প্রামান্য চিত্র দেখেছিলাম রাতারগুল নিয়ে। যাবার ইচ্ছে আরো বেশি বেড়ে গেলো। ধন্যবাদ ওহিদ ভাই সুন্দর পোষ্টের জন্য।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৩৬
313372
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ প্রিয় ফখরুল ভাই। আমার বর্ণনা আপনার উপকারে আসলে লেখা কিছুটা হলেও স্বার্থক হবে। Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File