৭১ এর চেতনায় স্বাধীন সত্তা এবং ভারতের সেবাদাস হবার নোসখা?

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৫৮:৪৯ দুপুর

এক)

চেতনা ছাড়া মানুষ হয় না।মানুষ্য সমাজে চেতনা বিহীন সত্তা কল্পনা করা যায় না।কারন মানুষ তার ভিতরের চেতনা (বিশ্বাস) দিয়ে বাহির জগতের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ইসলামে এই চেতনার মূল্য সবচেয়ে বেশী।

কোরআনে বলা হয়েছে,চেতনা (আমরা ঈমানের প্রতিশব্দ হিসাবে ভাবতে পারি) ছাড়া কোন কাজই মহান আল্লাহর কাছে গৃহিত হবে না।কোন বিশ্বাসী ব্যক্তির - কি চেতনা হবে- তাকে তা ঠিক করতে হবে কোরআন সুন্নাহর নিক্তিতে। বিপরীত চেতনা হলে জাহান্নাম হবে তার নিশ্চিত ঠিকানা।

অবশ্য এই চেতনার - চৈতন্য নিয়ে আওয়ামীলীগ আর বামপন্থীদের (মুশরিক+ নাস্তিক) অবস্থা একই রকম। তাদের আচরণ এবং পরিণতি উভয় একই হবে - এবং তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

আমরা যে চেতনার কথা বলছি তা হল - ৭১ এর চেতনা।আমাদের দেশে অন্য দশটি বিষয়ের মত এই চেতনা নিয়েও রয়েছে চরম মোনাফিকি।ক্ষমতার সাথে ব্যবসা বানিজ্য তো আছেই।নিজেদের সকল অপরাধ ঢাকার জন্য এই চেতনার চাইতে বড় বর্ম আর কিছু নাই।চার হাজার কোটি টাকা সরকারী ব্যাংক থেকে লোপাট করার ক্ষমতা দেয় ৭১ এর চেতনা।

অবশ্য ৭১ এ ভারতীয় হোটেল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বর্তমান সময়ে চেতনার চৈতন্য বেড়ে আসল রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা আড়ালে চলে গেছে।

চেতনা শব্দটির সাথে আরেকটি শব্দ বাজারজাত করা হয়েছে, তা হল নতুন প্রজন্ম।দুষ্ট লোকেরা বলে এবং সত্যই বলে - এই শাহবাগী প্রজন্মের নেতারা উচ্ছিষ্টভোগী ভারতীয় দালালদের নতুন প্রজন্ম।এদের সাথে আমার দেশের নতুন প্রজন্মের কোন সম্পর্ক নেই। ভারতীয় মিডিয়া মেইড নতুন প্রজন্ম নিয়মিত ভারতীয় দুতাবাস থেকে মাসোহারা পায়। নতুন প্রজন্ম নিয়ে ব্যবসাটা ভালই জমেছে। চলবে তা আরো কিছু দিন।চেতনায় যারা বিকালাঙ্গ তাদের মুনিব যতদিন চাইবে ততদিন তা শাহবাগে বা গণভবনে চলবে।আওয়ামী চেতনার নাটাইটা হল দিল্লির বাবুদের হাতে। খুব বেশী দেশীয় বানাতে হলে বলা যায় - আওয়ামী পিতার বাকশালী ভুতের নতুন সংস্করণ।যাকে বলা হচ্ছে ৭১ এর চেতনা।

এই একটি গুন সকল অন্যায়,অনৈতিক কর্মকান্ডকে জায়েজ হয়ে যায়।আইন আদালত, নিয়ম নীতি কিছুই লাগে না।দেশের একমাত্র মালিক মনে করে সকল কর্মকান্ড চালাতে পারা যায়।

দুই)

১৯৭১ সাল হঠাৎ করে আমাদের জাতীয় জীবনে উদয় হয়নি।বরং এর আগে ছিল বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলন। তার পর স্যার সলিমুল্লাহ সহ এই ভুখন্ডের মানুষের প্রকৃত স্বাধীকারের জন্য সংগঠন করা।সময়টা ছিল - ১৯০৬ থেকে ১৯০১১ পর্যন্ত। ঐ সময়টা ছিল আমাদের স্বাধীকার চেতনার প্রথম গনপ্রকাশ।

[b] তাই মুসলিম মানষই আমাদের জাতীয় জীবনের প্রথম মৌলিক চেতনা। এটাকে যারা স্বীকার করেন না তারা মূলত আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেন।এটা জোর গলায় বলার সময় এসেছে।মনে রাখতে হবে - বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিকাদারী কাউকে বা কোন পরিবারকে দেয়া হয়নি।

১৯২২ এবং ১৯২৮ সালে পন্ডিত শহীদুল্লা প্রথম এই এলাকার স্বাধীনতা চেয়ে বক্তৃতা করেছিলেন সাহিত্য সভায়।


বঙ্গ ভাগ হওয়া আবার তা রদ হওয়ার মাঝেই বাংলাদেশের বর্তমান আকার ছিল। জাতিসত্তার যে উম্মেষ ঘটেছিল তা আরো বড় ক্যানভাসে এবং প্রকাশ্যে অর্জিত হয় ১৯৪৭ সালে।বর্তমানের শুরুটা ঐখান থেকে। কিছু নষ্ট চিন্তার মানুষ আছেন যাদের বিবেককে অন্যের কাছে বন্ধক দিয়ে রেখেছেন।তারা শুধু মাত্র এই মহা সত্যের বিপক্ষে দাড়ান।[/b]

১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবটা বলবো আবার একবার পড়তে।

১৯৪৭ সালের আযাদীর পর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের পরিপূর্ণ স্বাধিকারকে আরো এগিয়ে দেয়।পশ্চিমের সাথে আমাদের বিভেদ রেখাটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে যায়।অবশ্য পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর যা ছিল উচিত - তা সবই অনুচিত ভাবে এগিয়েছিল।

তার পর ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ - এর পর ১৯৭১ সাল। যা আমাদের গর্ব এবং অহংকার।মনে রাখতে হবে ৭১ সালে নতুন করে এই ভুখন্ডের গণমানুষের চেতনার যাত্রা শুরু হয়নি। বরং এখন যারা বিকৃত মিডিয়াতে দাবী করছেন, তারা সবাই ইতিহাসের সাথে প্রতিনিয়ত বলাৎকার করছেন। ভুখন্ড একই,ভু খন্ডের মানুষ ও একই। হঠাৎ করে চেতনা ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত হয়ে গেল।এটা কোন টকশো অথবা ড্রইংরুমের একান্ত তার নিজস্ব চেতনা হতে পারে। ১৬ কোটি মানুষের অবশ্যই নয়।

তিন)

যারা নিজেদেরকে একেবারে ১৯৭১ থেকে শুরু করেন তারা আমাদের বিগত শত বছরের স্বাধীন চেতনাকে অস্বীকার করেন। এর মধ্যে শটতা,ধোকা,বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস রয়েছে।রয়েছে এই ভুখন্ডের ইতিহাস নিয়ে মনগড়া ইতিহাস চর্চা। এই প্রজাতির শিক্ষিত মানুষগুলো আমাদেরকে যে চেতনার কথা বলে তা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের চেতনা নয়।

বঙ্গ ভঙ্গ এবং ১৯৪৭ সালের আযাদীর দ্বারা পাওয়া আমাদের এই জনগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনা নিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সাধারন মানুষ যুক্ত হয়েছিল।


কোথাকার কোন নাস্তিক অথবা অতি মৌলবাদী কমিউনিষ্ট কলিকাতার কোন হোটেলে বসে কি চেতনায় বিভোর ছিলেন - তা নিয়ে তখন (১৯৭১) যেমন এদেশের মানুষ বিবেচনা করেনি - আজ তার কোন মূল্য নেই।

আজ আওয়ামীলীগ এবং বামপন্থী মহল যাকে ৭১ এর চেতনা বলেন এবং সেই চেতনায় দীক্ষিত হতে নসীহত করেন জাতীকে, তারা মূলত ভারতের পরিক্ষিত দালাল ও পোষ্য সেবাদাস।বরাবরের মত এই শ্রেনীর মানুষ আপন জাতিসত্তার সাথে গাদ্দারী করেছে। আজ তা একেবারে উলঙ্গ অবস্থান গ্রহন করেছে। শেখ মুজিব যা গোপনে করেছেন সেই ৬০ এবং ৭০ এর দশকে - শেখ হাসিনা তা প্রকাশ্যে করছেন ২০১৩তে।

না বলা একটি ইতিহাস বলছি -

শেখ মুজিব পাকিস্তানের সেই ২২ পরিবারের অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন।আমি সচেতন ভাবে শেখ মুজিবকে দালাল বলবো না। তবে অবশ্য তিনি গোপালগন্জের কোন জমিদারপুত্র ছিলেন না। শেখ মুজিব হাফ মন্ত্রী (সমাজ কল্যান ১৯৫৪) হবার পূর্বে বাওয়ানী গ্রুপের একটি ফ্যক্টরীতে চাকরী করতেন।এটা তার আত্মজীবনীতে রয়েছে। এটা ছিল তার চাকুরী। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী ছিলেন সেই ব্যবসায়ীরা শেখ মুজিবকে ধানমন্ডীর ১০ নাম্বার বাড়ীটি উপহার দিয়েছিল।গাড়ী দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল? কেমন করে এত বড় বাড়ীর মালিক হলেন? এর উত্তর পাওয়া গেলে ২৫শে মার্চ আগের রাতে শেখ মুজিব গ্রেফতারের নাটকটির শেষ দৃশ্য বুঝা যাবে।

বক্তৃতায় স্বাধীনতা চাওয়া আর বাস্তবে স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র নেয়া এক কথা নয়।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই সত্যটি বের করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।

মেজর জলীল (রাঃ) তার অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতার মধ্যে লিখেছেন, এবং বিষয়টা পরিস্কার করেছেন। আওয়ামী রাজনীতি এবং ভারতের অবস্থান ইত্যাদি জানার জন্য বইটা পড়া প্রয়োজন।

৭১ এর চেতনার নাম করে আজ কি হচ্ছে -

এই চেতনার নাম করে আজ ফাসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।বিচারিক হত্যাকান্ড চালানো হচ্ছে।

উম্মাদের মত করে উল্ল্যাস করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী সহ তার সভসদরা।

যেভাবে আইন আদালত মানবতাকে পরিহাস করা হচ্ছে।

যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে।

যেভাবে আমাদের বেশী দামে কিনা স্বাধীনতাকে ভারতের কাছে অতি অল্প দামে বিক্রি করা হয়েছে।

তাতে বাকশালী এই চেতনার ব্যবসায়ীদেরকে রুখতে হবে।

থামাতে হবে দেশ সর্বনাশা কর্মকান্ড থেকে।

ভারত আমাদের দেশ দখল করবে না। কারন ভারত ১৬ কোটি মানুষের পেটের দায়িত্ব নিবে না। ভারত চাইবে তার সেবাদাসরা যেন এদেশের ক্ষমতায় থাকে চিরদিন। আর সেজন্য ভারত আওয়ামীলীগ এবং শেখ পরিবারের প্রতি এত দরদ,ভালবাসা এবং এত ইনভেষ্ট।

এখানে বিএনপি বা অন্য দলের অপেক্ষা করলে আমাদেরকে সিকিমের ভাগ্য বরন করতে হবে। সকলের প্রয়োজনে, সবার জন্য, আগামীর বাংলাদেশের জন্য দেশের প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবী।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশের সত্যিকার নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন -ইসলামী ছাত্র শিবির সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছে।

আগামীর ইতিহাস হবে তাদের।

যারা ভারতীয় গোলামী থেকে বাঁচার জন্য দেশীয় দালাল, মীরজাফর আর ঘষেটি বেগমদের সাথে অকুতভয় লড়াই করছে। রক্ত দিচ্ছে,শহীদ হচ্ছে। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা হলেন এই পথের যাত্রীদের প্রেরণার বাতিঘর।


বিষয়: বিবিধ

১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File