দেশটা কী অপরাধীদের অভয়ারণ্য ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৯ জুন, ২০১৬, ০৯:৩১:১৪ রাত
দেশের অপরাধ প্রবনতা কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না বরং তা এখন রীতিমত অপ্রতিরোধ্যই বলে মনে হচ্ছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে সমান তালে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশের অপরাধী ও অপরাধ প্রবনতা কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। আসলে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশের অপরাধ প্রবনতা ক্রমবর্ধমান। আর এ অবস্থায় কোন সভ্য সমাজ চলতে পারে না।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গুপ্তহত্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডও। এসব হত্যাকান্ডের হাত থেকে কোন শ্রেণির মানুষই রেহাই পাচ্ছেন না। জনমনে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের হলেও রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে অনেকটাই ব্যর্থ। দেশের অপরাধ প্রবনতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। কখন কে ঘাতকের নিশানার শিকার হবেন তা বলা রীতিমত কষ্টসাধ্য। যা আমাদের জন্য শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয় বরং আশঙ্কাজনকও বটে।
দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধ প্রবনতার সাথে সাথে দেশে নারী নির্যাতন ও নিগ্রহের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র আমাদেও চোখের সামনে ভেসে ওঠছে। নারীরা প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু দেশে আইনের শাসন না থাকায় ভুক্তভোগীরা এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে অপরাধীরা আস্কারা পেয়ে নতুন উদ্যোমে নির্বিঘেœ তাদের অপরাধ প্রবণতা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত গোটা দেশই এখন অপরাধীদের অভয়ারণে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি একেবারে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ দিন-দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কর্মচারী ক্লাবের সামনে থেকে এক অজ্ঞাত তরুনীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ১৯ জুন বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়। যা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয় বরং রীতিমত হৃদয় বিদারক।
প্রতক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বিশমাইল গেট দিয়ে ওই অপহরণকৃত তরুনী একটি ছেলে সঙ্গে কর্মচারী ক্লাবের দিকে আসছিলেন। তারা ক্লাবের সামনে আসলে বাইরে থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৩৯১০৩) তাদের গতিরোধ করে। এসময় মাইক্রোবাস থেকে ‘কয়েকজন’ নেমে মেয়েটিকে জোর করে গাড়ীতে ওঠানোর চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েটি চিৎকার করলে আসে পাশে লোকজন ছুটে আসেন।
লোকজন সেখানে পৌঁছানোর আগেই ছেলে-মেয়ে দুজনকেই তুলে নিয়ে গাড়িটি দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলে মেয়েটির ডান পায়ের একটি জুতা , একটি কানের দুল এবং একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি পাওয়া যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়েছিলাম। আশুলিয়া ও সাভার থানায় ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহসিনুল কাদির বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।’
এই অজ্ঞাতনামা তরুনীর ভাগ্যে সর্বশেষ কি ঘটেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সারাদেশেই বিভিন্ন আঙ্গীকেই নারী অপহরণসহ নানাভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী, মাননীয় স্পিকার এবং সংসদের বাইরে বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের প্রদান নারী হলেও আমরা কোন ভাবেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে পারছি না। যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হবে। তাই প্রলয়লীলা ঠেকিয়ে জাতিকে সুরক্ষা দিতেই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় জাতিস্বত্ত্বা ধ্বংস কোন ভাবেই রোধ করা যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
৯৩৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন