ছোটদের সহজ হাদীস পাঠ (দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ০৯:৫০:১২ রাত
ছোটদের সহজ #হাদীস_পাঠ (দ্বিতীয় পর্ব)
১১.
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ
বাংলা: উচ্চারণ: কুল্লু মা'রুফিন সদাকাহ
অর্থ: প্রতিটি ভালো কাজই সদাকাহ! (বুখারী:৬০২১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি সৎকাজই আল্লাহর রাস্তায় দান করার মতো। আল্লাহর রাস্তায় দান করলে যেমন সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনি প্রতিটি ভালো কাজে সওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন- মানুষের সাথে ভালো কথা বলা, মানুষকে সাহায্য করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, সকল প্রকার ফরয, নফল ইবাদত ইত্যাদি।
টিকা: হাদীসটি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। (বুখারী:৬০২১, মুসলিম:১০০৫)
১২.
مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا
বাংলা উচ্চারণ: মান সল্লা আ'লাইয়্যা ওয়াহিদাতান সল্লাল্লাহু আলাইহি আশরা
অর্থ: (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-) "যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষন করেন।" (মুসলিম:৪০৮)
আমাদের রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ আমাদের উপর দশবার অনুগ্রহ করবেন। অপর হাদীসে এসেছে- "আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, আর আল্লাহর নৈকট্যের জন্য দশটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হবে। (নাসায়ী:১২৯৭) তাই আমরা বেশি বেশি নবীর উপর দরূদ পড়বো।
একটি দরূদ-
اللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ
‘‘আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদিও ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- সল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আল- আ-লি ইবরা-হীমা ইননাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদিওঁ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদিন কামা- বা-রাকতা ‘আলা- ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’’
টিকা: হাদীসটি আবু হুরাইরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, সহীহ মুসলিম: ৪০৮, আবু দাউদ:১৫৩০, তিরমিযী:৪৮৫
১৩.
لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়ারহামুল্লাহু মান লা ইয়ারহামুন নাস
অর্থ: আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না। (বুখারী:৭৩৭৬)
আল্লাহর তার প্রতি দয়া করেন না যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না। আমরা বেশি করে আল্লাহর রহমত পেতে চাইলে আল্লাহর সকল সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া দেখাবো। মানুষ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ এমনকি গাছ-গাছালিকেও বিনা কারণে আঘাত করবো না, তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করবো না।
টিকা: হাদীসটি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী, তাওহীদ অধ্যায়, হা:৭৩৭৬, মুসলিম:২৩১৯
১৪.
رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ
বাংলা উচ্চারণ: রিদার রব্বি ফী রিদাল ওয়ালিদি ওয়া সাখাতুররব্বি ফী সাখাতিল ওয়ালিদি
অর্থ: বাবার সন্তুষ্টির মধ্যেই রবের সস্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যেই রবের অসন্তুষ্টি। (আল মুসতাদরাক:৭৩৩১)
পিতামাতা সন্তুষ্ট হলে আল্লাহ তাআলাও সন্তুষ্ট থাকেন, পিতামাতা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন। সুতরাং কোনোভাবেই আমরা পিতামাতাকে কষ্ট দেবো না। তাদের মনে আঘাত দিয়ে তাদেরকে অসন্তুষ্ট করবো না। সব সময় তাদের আনুগত্য করবো, খেদমত করবো। এক হাদীসে এসেছে- "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত"।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। ইমাম হাকেমের আল মুসতাদরাক:৭৩৩১, তিরমিযী:১৮৯৯, মুসনাদে বাযযার:২৩৯৪, সহীহ আল জামে':৩৫০৬
১৫.
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা ক্ব-ত্বিউ'ন
অর্থ: (আত্মীয়তার সম্পর্ক) ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী:৫৯৮৪)
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। তাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে তাকে আল্লাহ রহমত থেকে বঞ্চিত করেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে, তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুললে নিজেদের মাঝে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং আয়ু বাড়ে। (তিরমিযী:১৯৭৯)
টিকা: হাদীসটি যুবাইর ইবনু মুত‘ইম (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী: ৫৯৮৪, মুসলিম:২৫৫৬ সহ প্রায় সকল হাদীসের গ্রন্থে এসেছে।
১৬.
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِى يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ
বাংলা উচ্চারণ: লাইসাল মু'মিনুল্লাযী ইয়াশবায়ু' ওয়া জারুহু জায়ি'উন ইলা জাম্বিহি
অর্থ: সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন নয়, যে পেট ভরে খায় অথচ তার পাশে তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে। (সহীহ আত তারগীব:২৫৬২)
আমাদের আশেপাশে যারা বসবাস করে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। সব সময় তাদের খোঁজ খবর রাখতে হবে। প্রতিবেশী যদি অনাহারে থাকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যে নিজে পেট ভরে খায়, আর পাশের জন খেতে পায় না, সে ভালো মুসলমান হতে পারে না।
টিকা: হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। ইমাম বুখারীর আদাবুল মুফরাদ: ১১২, বাইহাকীর সুনানুল কুবরা:১৯০৪৯, আল মুসতাদরাক:৭৩৮৭, তবারানীর মু'জামুল কাবীর: ১২৭৪১
১৭.
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা মান কানা ফী ক্বলবিহী মিসক্বলু যাররাতিন মিন কিবরি
অর্থ: যার অন্তরে অণুপরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম:৯১)
অহঙ্কার হচ্ছে নিজেকে বড় মনে করা। মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা, হেয় করা ও তাদের ঘৃণা করা। নিজের মাঝে বড়ত্ব, দাম্ভিকতা, ঔদ্ধত্য, অহম কিংবা গর্ব থাকা হলো বিনয়ের অভাব, সুন্দর চরিত্রের ঘাটতি। মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না, তাদেরকে ঘৃণা করা যাবে না। আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন- অহংকার হচ্ছে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মুসলিম: ৯১, তিরমিযী:১৯৯৮-৯৯,আবু দাউদ:৪০৯১ সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে।
১৮.
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
বাংলা উচ্চারণ: সিবাবুল মুসলিমি ফুসূকুন ওয়া ক্বিতালুহূ কুফরুন
অর্থ: মুসলমানকে গালি দেয়া পাপচারি এবং তার সাথে মারামারি করা কুফরী। (বুখারী:৪৮)
আমাদের আশেপাশে যারা আছে সবার সাথে ভালো আচরণ করবো। সবাইকে ভালোবাসবো। কখনো কাউকে গালি দেবো না। গালি দেয়া কিংবা মারামারি করা খারাপ কাজ। কেননা গালি দেয়া গুনাহের কাজ এবং মুসলমানদের সাথে লড়াই করা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজ।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বুখারী, মুসলিম সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে এসেছে। বুখারী, ঈমান অধ্যায়, হা:৪৮, মুসলিম: ৬৪
১৯.
لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا صُوْرَةٌ
বাংলা উচ্চারণ: লা তাদখুলুল মালাঈকাতু বাইতান ফিহী কালবুন ওয়ালা সু-রাতুন
অর্থ: যে ঘরে কুকুর এবং প্রাণীর ছবি/মূর্তি থাকে তাতে রহমতের ফেরেশতামন্ডলী প্রবেশ করেন না। (বুখারী: ৩৩২২)
কুকুর একটি নাপাক প্রাণি। মানুষ অথবা যে কোনো প্রাণির ছবি বা মূর্তি বানানো বৈধ নয়। আমরা আমাদের ঘরে সৌন্দর্যের নামে প্রাণির ছবি অথবা মূর্তি রাখবো না। কুকুরের মতো নোংরা প্রাণিকেও নিজেদের ঘরে রাখবো না। কেননা ঘরে প্রাণির ছবি বা কুকুর থাকলে রহমত-বরকতের ফেরেশতারা আসে না।
টিকা: হাদীসটি আবূ তালহাহ্ (রা.) সূত্রে বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে। বুখারী, সৃষ্টির সুচনা অধ্যায়, হা:৩৩২২, মুসলিম:২১০৬
২০.
إِنَّ أَبْغَضَ الرِّجَالِ إِلَى اللَّهِ الأَلَدُّ الْخَصِمُ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না আবগদার রিজালি ইলাল্লাহি আলাদ্দুল খসিমু
অর্থ: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ হলো 'কঠিন ঝগড়াটে' (বেশি বেশি তর্কপ্রিয়)
যারা মানুষের সাথে বেশি বেশি তর্ক-বিতর্ক করে, ঝগড়াঝাটি করে, বাক-বিতণ্ডা করে তারা আল্লাহর কাছে খুবই নিকৃষ্ট। আমরা কারো সাথে অযথা তর্ক করবো না, ঝগড়া-বিবাদে করবো না।
টিকা: হাদীসটি আয়িশাহ (রা.) সূত্রে বুখারী: ২৪৫৭, মুসলিম: ২৬৬৮ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে।
#ছোটদের_সহজ_হাদীস_পাঠ (তৃতীয় পর্ব)
২১.
الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ شُعْبَةً وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ
বাংলা উচ্চারণ: আল ঈমানু বিযউ' ওয়া সাবউনা শু'বাতান ওয়াল হায়াউ শু'বাতুম মিনাল ঈমান
অর্থ: ঈমানের শাখা সত্তরটির চেয়েও বেশি, আর লজ্জা-শরম ঈমানের একটি শাখা। (সহীহ মুসলিম:৩৫)
ঈমান হচ্ছে অন্তরের বিশ্বাস, মুখে উচ্চারণ আর কাজে পরিণত করার নাম। ঈমানের অনেক ধাপ, স্তর ও শাখা রয়েছে। এ সমস্ত ধাপ ও স্তর পার করে ঈমানের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছতে হয়। ঈমানের এ সমস্ত ধাপের একটি হলো লজ্জশীলতা। লজ্জা মানুষের চরিত্রের অন্যতম একটি দিক। লজ্জা না থাকলে মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। একজন মুসলমানের অবশ্যই লজ্জাশীল হতে হবে।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে। বুখারী: ৯, মুসলিম:৩৫
২২.
لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ
বাংলা উচ্চারণ: লা দরারা ওয়ালা দিরারা
অর্থ: ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। (মুসনাদে আহমাদ:২৮৬২)
ইসলামের অন্যতম একটি মূলনীতি হলো, কারো ক্ষতি করা যাবে না, নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া যাবে না। কাউকে কষ্ট দেয়া যেমন অপরাধ তেমনি নিজকে নিজে কষ্ট দেয়াও অপরাধ। আমরা মানুষের ক্ষতি করবো না, নিজেদের ক্ষতি হয় এমন কাজও করবো না।
টিকা: হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত রয়েছে, মুসনাদে আহমাদ, তাবারানী, দারাকুতনী সহ অন্যান্য গ্রন্থে। দ্রষ্টব্য: আল জামিউস সগীর:৯৮৮০
২৩.
لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ
বাংলা উচ্চারণ: লা ঈমানা লিমান লা আমানাতা লাহু ওয়ালা দীনা লিমান লা আ'হদা লাহু
অর্থ: যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না, তার দ্বীন নেই। (সহীহ ইবনে হিব্বান:১৯৪)
যে ব্যক্তি খিয়ানত করে ও যুলম করে সে পরিপূর্ণ মু’মিন নয়। আমানতদারীতা হলো সততা আর বিশ্বস্ততার নাম। যার কাছে আরেকজনের জান, মাল ও সম্মান নিরাপদ সে ব্যক্তি আমানতদার। যে প্রতিশ্রুতি পুরণ করে না বা কারো সাথে কৃত ওয়াদা পুরণ করে না সেই ব্যক্তির মাঝে ধার্মিকতা নেই। কেননা আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলাম তার আনুগত্য করবো, তার আদেশ নিষেধ মেনে চলবো।
আমরা কারো জান, মাল, সম্মানের ক্ষতি করবো না। কেউ আমাদের কাছে কিছু আমানত রাখলে খিয়ানত করবো না। প্রতিশ্রুতি দিলে রক্ষা করবো।
টিকা: হাদীসটি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। দ্রষ্টব্য: সহীহ আত তারগীব: ৩০০৪, আহমাদ:১১৯৭৫, বাইহাকী:১৮২৭৯, জামিউস সগীর:৯৬৮৫
২৪.
لَيْسَ الشَّدِيْدُ بِالصُّرَعَةِ إِنَّمَا الشَّدِيْدُ الَّذِىْ يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ
বাংলা উচ্চারণ: লাইসাশ শাদীদু বিসসুরাআ'তি ইন্নামাশ শাদীদুল্লাযী ইয়ামলিকু নাফসাহু ইন্দাল গাদাবি
অর্থ: শক্তিশালী সে নয় যে কুস্তিতে জয়লাভ করে, বরং সে-ই আসল শক্তিশালী বা বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। (বুখারী:৬১১৪)
রাগ বা ক্রোধ হলো খারাপ প্রবৃত্তির একটি অংশ। কোনো কারণে কারো রাগ ওঠলে, গোস্যা হলে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। মুখ থেকে অশ্লীল গালি আসে, খারাপ কথা বলে এবং নানা রকম খারাপ কাজ করে ফেলে। যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে স্থির রাখতে পারে, খারাপ কোনো কাজ করে না সে ব্যক্তি মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী, প্রকৃত বীর। আমাদের রাগ আসলে দাঁড়ানো থাকলে বসে যাবো, শুয়ে পড়বো। তখন মুখে পড়বো- আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজীম।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে বুখারী:৬১১৪, মুসলিম:২৬০৯ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে।
২৫.
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبِيرِنَا
বাংলা উচ্চারণ: লাইসা মিন্না মান লাম ইয়ারহাম সগীরিনা ওয়া ইয়া'রিফ শারাফা কাবীরিনা
অর্থ: যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (তিরমিযী:১৯২০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সেই ব্যক্তি আমাদের নীতির উপর নেই, আমার সুন্নাতের মাঝে নেই, ইসলামের পথে নেই যে ছোটদের আদর করে না, মমতা দেখায় না, করুণা করে না আর বড়দের সম্মান ও মর্যাদা দেয় না। আমরা আমাদের চেয়ে যারা ছোট তাদের আদর ভালোবাসা দেবো আর বড়দের সম্মান করবো।
টিকা: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আবু দাউদ, তিরমিযী ও অন্যান্য গ্রন্থে। দ্রষ্টব্য: সহীহ আত তারগীব: ১০০
২৬.
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
বাংলা উচ্চারণ: মান তাশাব্বাহা বিকাওমিন ফাহুয়া মিনহুম
অর্থ: যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। (আবু দাউদ:৪০৩১)
যে ব্যক্তি কথা, কাজ ও আচরণে অন্য জাতির সাথে মিল রাখে সে তাদের লোক বলেই গণ্য হবে। আমরা মুসলমান, সুতরাং আমাদের মিল থাকতে হবে মুসলমানদের কথা, কাজ ও চরিত্রের সাথে। আমরা কাফিরদের মতো বেশ-ভূষা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবন-যাপনের পদ্ধতি গ্রহণ করবো না। আমরা ইসলামী রীতি-নীতিতে আমাদের জীবন পরিচালিত করবো। সুতরাং কথা, কাজ ও আচরণে ইসলামী রীতি-নীতি কী আগে তা জানবো।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ, আহমাদ সহ অন্যান্যরা, জামিউস সগীর: ৮৫৭৪
২৭.
يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا، وَبَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا
বাংলা উচ্চারণ: ইয়াসসিরু ওয়ালা তুআ'সসিরু, ওয়াবাশশিরু ওয়ালা তুনাফফিরু
অর্থ: তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন করো, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। (বুখারী:৬৯)
ইসলামের অন্যতম একটি মূলনীতি হলো, ধর্মীয় বিধিবিধান ও দুনিয়ার কোনো বিষয়ে কঠোরতা করা যাবে না, যেটা সহজ সেটা গ্রহণ করতে হবে। মানুষকে আশার সংবাদ দিতে হবে, খুশীর সংবাদ দিতে হবে। মানুষের মাঝে ঘৃণা-বিদ্বেষ বা বিরক্তিকর কিছু ছড়ানো যাবে না। সহজ করতে হবে দ্বীন পালনে, মানুষের মাঝে ফায়সালা গ্রহণে, শাসনে, বিচারের ক্ষেত্রে। মানুষকে ভালো কিছু শোনাতে হবে, বিরক্তি সৃষ্টি করা যাবে না।
টিকা: হাদীসটি আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে বুখারী: ৬৯, মুসলিম:১৭৩৪ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে।
২৮.
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيثِ
বাংলা উচ্চারণ: ইয়্যাকুম ওয়াযন্না ফাইন্নায যন্না আকযাবুল হাদীসি
অর্থ: তোমরা কুধারণা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখো। কারণ কুধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। (তিরমিযী:১৯৮৮)
মনের মাঝে কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখা যাবে না। ধারণা বা অনুমান করে কিছু বলা বা করা ঠিক নয়। মনের মাঝে যদি খারাপ ধারণা আসে সেটা প্রকাশ করা যাবে না। কেননা ধারণা সত্য নাও হতে পারে, অধিকাংশ ধারণাই মিথ্যা হয়। আর কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। কারো সম্পর্কে যদি খারাপ ধারণা প্রকাশ পায় তাহলে সে কষ্ট পাবে। আমরা মনের খারাপ ধারণা বা অনুমানগুলো মুখে প্রকাশ করবো না, ধারণা অনুযায়ী কাজ করবো না।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে। বুখারী: ৫১৪৩, মুসলিম:২৫৬৩ সহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে।
২৯.
خَيْرُ الْكَسْبِ كَسْبُ يَدِ الْعَامِلِ إِذَا نَصَحَ
বাংলা উচ্চারণ: খইরুল কাসবি কাসবু ইয়াদিল আ'মিলি ইযা নাসাহা
অর্থ: শ্রেষ্ঠ উপার্জন হল কর্মীর হাতের উপার্জন; যদি সে (যার জন্য কাজ করা হয় তার কাজে) হিতাকাঙ্ক্ষী হয়। (সহীহুল জামে':৩২৮৩)
নিজ হাতের কামাই হলো সর্বোত্তম উপার্জন। নিজের হাত দ্বারা যা উপার্জন করা হয়, সেটা হতে পারে কৃষিকাজ, ঘরের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা হস্তশিল্প। শ্রমিকের হাতের কামাই সর্বশ্রেষ্ঠ হবে যদি সে তার কাজ সঠিকভাবে করে, মালিকের কল্যাণে কাজ করে। যেখানে কোনো ধোঁকা থাকবে না।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে মুসনাদে আহমাদ:৮২০৭, বাইহাকীর শুআবুল ঈমানে:১২৩৬ । দ্রষ্টব্য: সহীহুল জামে':৩২৮৩
৩০.
كِيلُوا طَعَامَكُمْ يُبَارَكْ لَكُمْ
বাংলা উচ্চারণ: কীলু ত্বআ'মাকুম ইউবারাক লাকুম
অর্থ: তোমরা তোমাদের খাদ্যদ্রব্য মেপে নিবে, তাতে তোমাদের জন্য বরকত হবে।(বুখারী:২১২৮)
ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেনের সময় যাবতীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন, চাল, ডাল, খেজুর,গম, যব, তেল, সবজি ইত্যাদি মেপে নিতে হবে। এতে সন্দেহ দুর হবে আর আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত অবতীর্ণ হবে। তেমনি ভাবে রান্নার সময় লোক অনুপাতে খাদ্যদ্রব্য মেপে রান্না করতে হবে যাতে অপচয় না হয়। তবে নিজের কাছে জমাকৃত খাবারের ভান্ডার তথা গোলার সম্পূর্ণ খাদ্য মাপা ঠিক নয়। আল্লাহর উপর ভরসা করে খরচ করতে থাকবে।
টিকা: হাদীসটি মিকদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে বুখারী:২১২৮, ইবনু হিব্বান: ৪৯১৮ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে।
#ছোটদের_সহজ_হাদীস_পাঠ (চতুর্থ পর্ব)
৩১.
يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلاَّ الدَّيْنَ
বাংলা: ইউগফারু লিশশাহীদি কুল্লু যানবিন ইল্লাদদাইনি
অর্থ: ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল গুনাহ্ই ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসলিম:১৮৮৬)
মানুষের পাওনা বা ঋণ পরিশোধ না করার যে পাপ সেটা ছাড়া শহীদের (যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়) সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আরেকজনের কাছ থেকে কোনোকিছু ধার নিয়ে তা সময় মতো পরিশোধ করতে হয়, নইলে গুনাহ হয়। এই গুনাহ বান্দাহ মাফ না করা পর্যন্ত আল্লাহ মাফ করেন না। আমাদের মানুষের পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং কোনো ঘাটতি থাকলে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রা.) থেকে বর্ণিত। সহীহ মুসলিম:১৮৮৬, সহীহুল জামে':৮১১৯
৩২.
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
বাংলা উচ্চারণ: মান কানা ইয়ুকমিনু বিল্লাহি ওয়াল ইয়াউমিল আখিরি ফালইয়াকুল খইরান আও লিইয়াসমুত
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (বুখারী:৬০১৮, মুসলিম:৪৭)
একজন মুসলমান হিসেবে ভালো কথা ছাড়া কোনো কথা বলা উচিত নয়। যে সব কথায় কোনো কল্যাণ নেই, উপকার নেই সেই সব কথা বলা যাবে না। কেননা মানুষের প্রতিটি কথা আল্লাহ তাআলা সংরক্ষণ করে রাখছেন, পরকালে তার হিসেব দিতে হবে। আল্লাহ বলেন-
"মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ: ১৮)
আমরা মন্দ কথা, মিথ্যা কথা বলবো না। উপকার ছাড়া কোনো কথা বলবো না। বেশি কথা বলবো না, বরং দরকারি কথা ছাড়া অন্য সময় চুপ থাকবো। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- مَن صَمَتَ نَـجَا (মান ছমাতা নাযা) "যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায়।" (তিরমিযী:২৫০১)
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী:৬০১৮, মুসলিম:৪৭ সহ অন্যান্য গ্রন্থে।
৩৩.
آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
বাংলা উচ্চারণ: আ-ইয়াতুল মুনাফিকি সালাসুন ইযা হাদ্দাসা কাযাবা ওয়া ইযা ওয়া'দা আখলাফা ওয়া ইযা'তুমিনা খ-না
অর্থ: মুনাফিকের লক্ষণ হলো তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা দিলে খেলাপ করে এবং চুক্তি করলে ভঙ্গ করে। (বুখারী: ৩৩, মুসলিম:৫৯)
যাদের অন্তরে কপটতা থাকে, যাদের বাইরে এক রূপ ভিতরে আরেক রূপ তারা হলো মুনাফিক। যারা মুখে বলে ইসলাম, গোপনে করে কুফুরি, কাজ করে কপটতার। হাদীসে মুনাফিকদের চিহ্ন বা আলামত বলা হয়েছে তিনটি।
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। সুতরাং যারা মিথ্যা কথা বলে, কথা দিয়ে কথা রাখে না, আমানতের খিয়ানত করে তারা হলো মুনাফিক।
টিকা:আবূ হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন বুখারী, মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীসের ইমামরা। (বুখারী:৩৩,২৭৪৯, ৬০৯৫, মুসলিম:৫৯)
৩৪.
لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ نَمَّامٌ
বাংলা উচ্চারণ: লা ইয়াদখুলুল জান্নাতা নাম্মাম
অর্থ: চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। (মুসলিম:১০৫)
মানুষের মাঝে শত্রুতা ও ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে একজনের গোপন কথা আরেকজনকে বলে দেওয়াকে ‘চুগলি করা’ বলে। আরবিতে একে নাম্মাম (نَمَّامٌ ) এবং কাত্তাত (قَتَّاتٌ ) বলে। একজনের কথা আরেকজনকে বলে বেড়ানো অনেক বড় পাপ। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন এই ধরণের লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
কারো কথা আঁড়ি পেতে শোনা, গোপন কথা ফাঁস করে দেয়া খুবই খারাপ কাজ। আমরা মানুষের মাঝে ঝগড়া, বিবাদ লাগাবো না বরং আপোষে মিলমিশ করে দিবো।
টিকা: হাদীসটি হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত। বুখারী:৬০৫৬, মুসলিম:১০৫
৩৫.
خَيْرُ النَّاسِ أنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ
বাংলা উচ্চারণ: খইরুন নাসি আনফাউহুম লিন্নাসি
অর্থ: মানুষের জন্য যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকারী মানুষের মাঝে সেই ব্যক্তিই উত্তম। (সহীহুল জামে':৩২৮৯)
যে ব্যক্তি মানুষের জন্য উপকারী, যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণ করে, যার থেকে মানুষ কোনো কষ্ট বা ক্ষতি পায় না সেই ধরণের মানুষ আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম। আমরা মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবো না। মানুষের উপকার করবো, তাদের ভালো চাইবো।
টিকা: হাদীসটি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত আছে ইবনে হিব্বানে, তাবারানী, দারাকুতনী সহ অনান্য গ্রন্থে। দ্রষ্টব্য: সহীহুল জামে':৩২৮৯, মুসনাদুশ শিহাব:১২৩৪, সহীহাহ:৯০৬
৩৬.
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَأْكُلْ بِيَمِينِهِ وَإِذَا شَرِبَ فَلْيَشْرَبْ بِيَمِينِهِ
বাংলা উচ্চারণ: ইযা আকালা আহাদাকুম ফালইয়া'কুল বি ইয়ামীনিহি ওয়া ইযা শারিবা ফালইয়াশরাব বিইয়ামীনিহি
অর্থ: যখন তোমাদের কেউ খাদ্য খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান করে, সে যেন ডান হাতে পান করে। (মিশকাত:৪১৬২)
খাবার খাওয়া ও কিছু পান করার আদব হলো, ডানহাতে পানাহার করা। কেননা শয়তান বামহাতে পানাহার করে থাকে। পানাহারের নিয়ম হলো, বিসমিল্লাহ বলে ডানহাতে বসে পানাহার করা।
টিকা: হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে মুসলিম:২০২০, আবু দাউদ:৩৭৭৬, তিরমিযী: ১৮০০ সহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে।
৩৭.
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُتَنَفَّسَ فِي الْإِنَاءِ، أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ
বাংলা উচ্চারণ: নাহা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আইঁয়ুতানাফ্ফাসা ফিল ইনায়ি আও ইয়ুনফাখা ফীহি
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে অথবা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ:৩৭২৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খাবার গ্রহণ ও পানি পানের আদব শিখিয়ে দিয়েছেন। পানাহারের সময় পাত্রে ফুঁ দেয়া এবং তাতে নিঃশ্বাস ফেলা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সা. পানি পানের সময় তিনবারে (তিনবার শ্বাস নিয়ে) পানি পান করতেন, যাতে পানির পাত্রে নিঃশ্বাস না পড়ে। খাবার যদি গরম হয়, তাহলে ফুঁ না দিয়ে অন্য উপায়ে ঠান্ডা করবো। খাবার গ্রহণ ও পানি পানের সময় তাড়াহুড়ো করবো না, আস্তে ধীরে গ্রহণ করবো।
টিকা: হাদীসটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আবু দাউদ:৩৭২৮, তিরমিযী:১৮৮৮
৩৮.
كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ ثَقِيلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ
বাংলা উচ্চারণ: কালিমাতানি খফীফাতানি আ'লাল লিসানি সাক্বিলাতানি ফিল মীযানি হাবীবাতানি ইলার রহমানি "সুবোহানাল্ল-হি অবিহামদিহী সুবোহানাল্ল-হিল আযীম"
অর্থ: দু’টি বাক্য এমন যা মুখে উচ্চারণ করা অতি সহজ, পাল্লায় অতি ভারী, আর আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়। তা হলো- "সুবোহানাল্ল-হি অবিহামদিহী সুবোহানাল্ল-হিল আযীম" (অর্থ:আমি আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি সমস্ত প্রশংসার সাথে,আমি সুমহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’) (বুখারী:৬৬৮২, মুসলিম:২৬৯৪)
এই দুইটি কালিমা জিহ্বাতে উচ্চারণ করা খুবই সহজ অথচ হিসাবের পাল্লায় তা হবে খুবই ভারি। আল্লাহর কাছে এই দুইটি কালিমা খুবই প্রিয়। আমরা বেশি বেশি এই দুটি কালিমা পড়বো।
টিকা: হাদীসটি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। বুখারী, মুসলিম সহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে হাদীসটি এসেছে।
৩৯.
السَّلاَمُ قَبْلَ الْكَلاَمِ
বাংলা উচ্চারণ: আসসালামু কবলাল কালামি
অর্থ: কথা-বার্তা বলার আগেই সালাম দিতে হয়। (তিরমিযী:২৬৯৯)
মানুষের সাথে দেখা হলে সুন্নাত হলো কথা বলার পূর্বে সালাম দিয়ে শুরু করা। সালাম দেয়া সুন্নাত আর তার জবাব দেয়া ওয়াজিব।মুসলামান কারো সাথে দেখা হলে আমরা সালাম দিবো- আসসালামু আলাইকুম বলে। আর কেউ আগে সালাম দিলে তার জবাব দিবো- ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি বলে। সালাম দেয়া খুবই গুরুত্ব ও ফযিলতময় কাজ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট অগ্রগণ্য সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম দেয়। (তিরমিযী:২৬৯৪)
টিকা: হাদীসটি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিরমিযী:২৬৯৯, আবূ ইয়া‘লা: ২০৫৯, মিশকাত:৪৬৫৩
৪০.
أَفْضَلُ الذِّكْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ الْحَمْدُ لِلَّهِ
বাংলা উচ্চারণ: আফদ্বলুয যিকরি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু' ওয়া আফযলুদ দুআ'য়ি 'আল-হামদুলিল্লাহি'
অর্থ: সর্বোত্তম জিকির হলো- ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ আর সর্বোত্তম দু‘আ হলো- ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’। (সহীহ ইবনে হিব্বান:৮৪৬)
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ" হলো তাওহীদ তথা একত্বাদের বাণী। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আলহামদুলিল্লাহ হলো আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাক্য। অর্থ হলো- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। আমরা বেশি এই দুটি বাক্য বলবো।
টিকা: হাদীসটি জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিরমিযী: ৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ: ৩৮০০, হিবনে হিব্বান:৮৪৬, সহীহ আত্ তারগীব: ১৫২৬, সহীহুল জামে‘: ১১০৫
সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম
#দরসে_হাদীস
বিষয়: বিবিধ
২২৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন