সুখ ও সম্মৃদ্ধ জীবনের পথে-৪

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:৫৮:০৩ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

মুমিন হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী:



আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের চাইতে বেশি সুন্দর চরিত্রের ছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম:২১৫০) আল্লাহ বলেন-

“আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বালাম: ৪)



আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’ (বুখারী ও মুসলিম:২৩২১)

নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘‘পুণ্য হল সচ্চরিত্রতার নাম। আর পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’ (মুসলিম:২৫৫৩)

আবূদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মুমিনের দাড়িপাল্লায় সচ্চরিত্র ও সদাচারের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোন জিনিস হবে না। কেননা, আল্লাহ তা'আলা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযী: ২০০২, আবূ দাউদ: ৪৭৯৯)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেনঃ মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিযী: ২০০৪, ইবনু মাজাহ: ৪২৪৬, আহমাদ: ৭৮৪৭)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিযী: ১১৬২, আহমাদ: ৭৩৫৪, দারেমী: ২৭৯২)

আবূ উমামাহ বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’’ (আবূ দাউদ:৪৮০০)

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই মু’মিন তার সদাচারিতার কারণে দিনে (নফল) রোযাদার এবং রাতে (নফল) ইবাদতকারীর মর্যাদা পেয়ে থাকে।’’(আবূ দাউদ: ৪৭৯৮, আহমাদ :২৩৮৩৪)

সদাচার ও উত্তম চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রাহঃ) বলেন, তা হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, উত্তম জিনিস দান করা এবং কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা। (দ্রষ্টব্য, তিরমিযী: ২০০৫)



লজ্জাশীলতা:



আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জা-সন্ত্রম হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের (ঈমানদারের) জায়গা জান্নাতে। নির্লজ্জতা ও অসভ্যতা হচ্ছে দুর্ব্যবহারের অঙ্গ, আর দুর্ব্যবহারের (দুর্ব্যবহারকারীর) জায়গা জাহান্নামে। (তিরমিযী: ২০০৯)

ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তার ভাইকে লজ্জাশীলতার কারণে তিরস্কার করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে ছেড়ে দাও; কেননা লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি অঙ্গ। (বুখারী, মুসলিম)

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর শুধুমাত্র কদর্যতাই বাড়িয়ে দেয়। আর লজ্জা কোন জিনিসের সৌন্দর্য তাই বাড়িয়ে দেয়। (তিরমিযী: ১৯৭৪)



অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ করা অবৈধ:



আল্লাহ বলেন-

“ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হতে পারবে না।” (সূরা ইসরা: ৩৭)



“মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।” (সূরা লুকমান: ১৮)



“এ আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর মুত্তাকীদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম।” (সূরা ক্বাসাস: ৮৩)



আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ একটি লোক বলল, ‘মানুষ তো ভালবাসে যে, তার পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহংকার নয়, বরং) অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’ (মুসলিম: ৯১, তিরমিযী: ১৯৯৯, আবূ দাউদ: ৪০৯১)

হারিসা ইবনু ওয়াহব আল-খুজাঈ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না যে, কারা জান্নাতী হবে? জান্নাতী তারা হবে যারা দুর্বল, অসহায় এবং যেসব ব্যক্তিকে দুর্বল মনে করা হয়। তারা আল্লাহ তা'আলার নামে (কোন বিষয়ে) শপথ করলে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা পূরণ করেন।

আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব না যে, কোন সব ব্যক্তি জাহান্নামী হবে? প্রত্যেক অবাধ্য, আহাম্মক ও অহংকারী (জাহান্নামী হবে)। (বুখারী: ৪৬৩৪, মুসলিম: ২৮৫৩, তিরমিযী: ২৬০৫)

আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকারও (সামান্যতম) যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আর সরিষার দানা সমপরিমান ঈমানও যার অন্তরে আছে সে জাহান্নামে যাবে না। (তিরমিযী: ১৯৯৮)

ক্রোধ সংবরণ ও কষ্ট সহ্য করার মাহাত্ম্য:

মানব জীবনের যে কোনো পর্যায়ে 'ক্রোধ' তথা রাগ ধ্বংস করে দিতে পারে জীবন, সম্পদ, সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। সুতরাং জীবনের নানা পর্যায়ে সব রকম পরিস্থিতিতে মাথাকে রাখতে হবে ঠান্ডা আর সহনশীল। দিতে হবে আত্মসংযম ও ধৈর্যশীলতার পরিচয়। পরিপূর্ণ ও সুখী জীবনের জন্য এবং পরকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কারের জন্য ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আল্লাহ বলেন-

"যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।" ( সূরা ৩ আলে ইমরান: ১৩৩)



আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কুস্তীগির বীর সে নয়, যে প্রতিদ্বন্ধীকে চিৎপাট করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’’ (বুখারী: ৫৭৬৩, মুসলিম: ২৬০৯, আহমাদ: ৭১৭৮)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অবিচল থাকবে।’’ (মুসলিম: ২৫৫৮, আহমাদ: ৭৯৩২, ২৭৪৯৯)

মুআয ইবনে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধকে কার্যে পরিণত করার ক্ষমতা রেখেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টি সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যে কোন হূর নিজের ইচ্ছামত বেছে নেয়ার অধিকার দান করবেন। (তিরমিযী: ২০২১, ২৪৯৩, আবূ দাউদ: ৪৭৭৭, ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে তা অন্য কিছু সংবরণে নেই। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)

ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি যেন (এখনো) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীদের মধ্যে এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা অজ্ঞ।’’ (বুখারী: ৩২৯০, মুসলিম:১৭৯২)

ক্ষমাশীলতার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য:

ক্ষমা মহৎ গুণ। কখনো কখনো কারো আচরণ, কথা বা কাজে কষ্ট পেলে বা বিরক্ত হলে আমাদের কর্তব্য হলো ক্ষমার দৃষ্টিতে ব্যাপারটা দেখা। আর এতেই রয়েছে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলে সুদৃঢ় বন্ধনের রাস্তা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ,৭: ১৯৯ )



“তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা হিজর,১৫: ৮৫)



অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ। (সূরা শূরা, ৪২: ৪৩)



“এবং অনুগ্রহ করো যেমনিভাবে আল্লাহ তোমার উপর অনুগ্রহ করেছেন।” (সূরা কাসাস : ৭৭)



"তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে, তাদের কিছুই দেবে না; তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।" ( সুরা নূর ২৪:২২)



জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: ‘আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করেন না যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা:৪৯৪৭)।

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম: ২৩২৭)

সহনশীলতা ও ধীরস্থিরতা:



ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাজ্জ আল-আসারীকে বলেনঃ নিশ্চয় তোমার মধ্যে এমন দু’টি উত্তম স্বভাব বিদ্যমান, যা আল্লাহ পছন্দ করেনঃ সহনশীলতা ও লজ্জাশীলতা। (তিরমিযী: ২০১১)

আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস আল-মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম আচরণ, দৃঢ়তা-স্থিরতা ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে নাবুওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ। ( তিরমিযী: ২০১০)

সহজ, সরল, নরম ও কোমলতা:

সহজ-সরল-নম্রতা-কোমলতা-ভদ্রতা মানব জীবনের অন্যতম গুণাবলী। পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ করতে নম্রতা-ভদ্রতার বিকল্প নেই। আর আল্লাহ প্রত্যেক নম্রতা ও কোমলতাকে ভালোবাসেন।

আল্লাহ বলেন-

“ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ: ৩৪-৩৬



ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সে সমস্ত লোক সম্পর্কে বলব না, যারা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা যাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? এ (আগুন) প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের নিকটবর্তী, নরম, সহজ ও সরল।’’ (তিরমিযী: ২৪৮৮, আহমাদ: ৩৯২৮)

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না এবং (লোকদেরকে) সুসংবাদ দাও। তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’ (সহীহুল বুখারী: ৬৯, মুসলিম: ১৭৩৪)

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে সমস্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয়।’’ (মুসলিম:২৫৯২)

আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কোমল; তিনি প্রত্যেকটি ব্যাপারে কোমলতা ও নম্রতাকে ভালবাসেন।’’ (বুখারী: ৬৯২৭ ও মুসলিম:২১৬৫) অপর বর্ণনায় এসেছে-

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতাকে ভালবাসেন। তিনি নম্রতার উপরে যা দেন তা তিনি কঠোরতা এবং অন্য কোন জিনিসের উপর দেন না।’’ (মুসলিম:২৫৯৩)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নম্রতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সুন্দর বানিয়ে দেয় এবং তা যে জিনিস থেকেই বের করে নেওয়া হয়, তাকে তা অসুন্দর বানিয়ে দেয়।’’ (মুসলিম: ২৫৯৪)

চলবে--

বিষয়: সাহিত্য

৫৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File