সর্বজনীন পেনশন স্কিম ঘোষণার পরপরই ক্ষোভে ফুঁসছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এটি বাতিলের দাবিতে রোববার মানববন্ধন করেছেন তারা। দাবি আদায় না হলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যয় স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাদের সর্বজনীন পেনশনের অন্তর্ভুক্ত করবে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে। যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখের বেশি। এ ধরনের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতন থেকে ১০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। যেটা আগে কাটা হতো না। এ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বর্তমানে পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশনপ্রাপ্ত হন; কিন্তু নতুন এ স্কিমে পেনশনাররা ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থায় ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সেটা সুস্পষ্ট করা হয়নি। সব থেকে বড় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ থেকে ৬০ বছর করা হয়েছে। মাসিক চিকিৎসাভাতা, উৎসবভাতা, বৈশাখী ভাতা নতুন প্রত্যয় স্কিমে প্রদান করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য যে প্রত্যয় স্কিম আরোপ করা হয়েছে, তা তাদের পারিবারিক সুরক্ষা নষ্ট করছে। এ প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে না। আর তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন। এদিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন ঘোষণা করেছে, মঙ্গলবার সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন। এরপরও দাবি না মানা হলে ৪ জুন সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তারপরও দাবি মানা না হলে ওইদিনই আন্দোলনের বৃহত্তম কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সবর্জনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ৬ মে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। এখন তারা সারা দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার পররিকল্পনা করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুর রহীম বলেন, সর্বজনীন পেনশন ঘোষণার প্রথমদিকে যে চারটি পেনশন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে প্রত্যয় স্কিম ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একটি পেনশন স্কিমের মধ্যে থাকা সত্তে¡ও নতুন করে পেনশন স্কিম চালু করা হলো। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হিসাবে এ প্রত্যয় স্কিম চালু করা হতে পারে।
ঢাবি কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহŸায়ক এবং কর্মচারী সমিতির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার মোর্শেদ বলেন, হঠাৎ এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করায় সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র : ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
ঢাবি : সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই মানববন্ধন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভ‚ঁইয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। মানববন্ধনে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ওহিদুজ্জামান, টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভ‚ঁইয়া, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কাউসার, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুন, শিক্ষক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
জবি : মানববন্ধ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসানের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন বিভিন্ন অনুষদের ডিন, আওয়ামীপন্থি ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।
শাবি : মানববন্ধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শাবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম।
সিলেট : মানববন্ধন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে সিকৃবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ছফিউলাহ ভ‚ঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা বক্তৃতা করেন।
রাবি : ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান তারা। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকিং ও ইনসুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। অধ্যাপক মো. ওমর ফারুক সরকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মানিকুল ইসলাম, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম, একই বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, আমীরুল ইসলাম প্রমুখ।
ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করেছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়।
মানববন্ধনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. এমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান, অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ওয়ালীউলাহ, অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বর্তমান পেনশনব্যবস্থা থেকে বের করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন