রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যার প্রধান আসামী মেয়র আক্কাছ আলী ১০ দিন থেকে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। সোমবার বাঘা পৌর কার্যালয়ে গিয়ে তাকে দেখা যায়নি।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের মধ্যে ২২ জুন সংঘর্ষের পর থেকে তাকে অফিস করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে পৌরসভার মানুষ সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।
সংঘর্ষের বাবুল নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলা দুটিতে নামে ও বেনামেসহ আসামি করা হয়েছে ৫২৮ জনকে। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে বাঘা থানায় ও আরেকটি হয়েছে রাজশাহীর আদালতে। এ মামলায় ১০ জন গ্রেফতার হলেও প্রধান আসামি বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
জানা গেছে, বাঘায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের মধ্যে ২২ জুন সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আঘাত করা হয়। তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরদিন ২৭ জুন বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর গাওপাড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা আমিরুল ইসলাম আমুর কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়।
সংঘর্ষের পর ২৩ জুন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা যুব লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলীকে প্রধান আসামী করে ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ মামলাটি ২৬ জুন হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে এ মামলার দুই নম্বর আসামী পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম মেরাজসহ মারুফ হোসেন, তরঙ্গ আলী, শাজামাল লিটন, নাসির উদ্দিন, মতিউর রহমান, গোলাম মোস্তফা, শফিউর রহমান শফি, রফিকুল ইসলাম, জহুরুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এর মধ্যে মেরাজ, মারুফ, তরঙ্গ, শাজামাল, নাসির, মতিউর, মোস্তফাকে আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ২৭ জুন একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে ২৮ জুন তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
অপরদিকে বাজুবাঘা ইউনিয়নের তেপুকুকুরিয়া গ্রামের আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ২৭ জুন রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি করেন। বাবুল হত্যার মামলার বাদী উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা যুব লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টুকে প্রধান আসামি করে ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামান মামলা গ্রহণ করে তা এজাহার হিসাবে রেকর্ড করার জন্য বাঘা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম বলেন, মেয়র আক্কাছ আলী এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করে আসছিলেন। তিনি কখনো আওয়ামী লীগের মূল ধারার রাজনীতি করেন না। তিনি সন্ত্রাসীদের নিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে জীবন দিতে হলো। এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও বাবুল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোয়েব খান বলেন, বাবুল হত্যা মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করে একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলাটিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন