আট মাস ইসরাইলের হাতে বন্দি ছিলেন গাজার আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া। এরপর তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তি পেয়ে তিনি বলেছেন, ইসরাইল তার জেলখানায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর রাতদিন নির্যাতন চালায়। ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়াকে মুক্তি দেয়ার ফলে ইসরাইলের রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এর নিন্দা জানিয়ে সমালোচনা করেছেন। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সদস্য বেনি গান্টস জানতে চেয়েছেন, কে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সব জেলখানা বন্দিতে পূর্ণ। এ কারণে ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া সহ ৫৫ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। এর উল্লেখ করে সরকারি কিছু অফিসকে খালি করে বন্দিদের জন্য ‘জেলখানা’ বানানোর আহ্বান জানিয়েছেন বেনি গান্টস। তাদের জন্য বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় বেশ সঙ্কটে পড়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
তিনি ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া সহ অন্য বন্দিদের মুক্তি দেয়ার বিষয়ে অবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ তথ্য দিয়েছে তার অফিস। নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বলা হয়েছে নেগেভে অবস্থিত শ্যেড টেমান ক্যাম্প থেকে বন্দিদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। কে সেই পিটিশন দিয়েছেন তা নিশ্চিত নয়। তবে মুক্তি পাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া ইসরাইলি বন্দিশিবিরগুলোর অবস্থা তুলে ধরেছেন। তিনি মুক্তি পেয়ে খান ইউনুসে বলেন, সীমা লঙ্ঘন নিয়ে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর কোনো অনুশোচনা নেই। তারা বন্দিদের সঙ্গে এমন আচরণ করছে, যেন তারা জড় পদার্থ। তারা ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে রাতদিন নির্যাতন করছে। এমনকি ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পরিবর্তে ইসরাইলি মেডিকেল স্টাফরা তাদেরকে প্রহার, মারধর ও নির্যাতন করছে।
আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া ইসরাইলি জেলখানায় নিজের অভিজ্ঞতা সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরেন। এতে তিনি বলেন, ইন্টারোগেশন সেলে বা জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই অনেক বন্দি মারা গেছেন। ইসরাইলি বাহিনীর কাছে ফেলে এসেছি ফিলিস্তিনের হাজারো বন্দিকে। ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে প্রহার ও নির্যাতন করে ইসরাইলি চিকিৎসক ও নার্সরা। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন যেন তারা অনুভূতিহীন জড় পদার্থ। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে থাকা বন্দিরা প্রতিজন প্রায় ৩০ কেজি করে ওজন হারিয়েছেন। তাদেরকে খাবার দেয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে তিনবার বিচার বসালেও কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি দখলদার বাহিনী। এর অর্থ তারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল রাজনৈতিক উদ্দেশে। আমাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিদিনই ইসরাইলি সেনারা বন্দিদের সেলে প্রবেশ করে এবং তাদেরকে নির্যাতন করে। বন্দি থাকার সময়ে আমাদেরকে কোনো আইনজীবীর সুবিধা দেয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। দু’মাস ধরে কোনো বন্দিকেই দিনে এক পিস পাউরুটির বেশি খাবার দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, তাদেরকে আমি খুবই করুণ অবস্থায় ফেলে এসেছি। আমার বার্তা হলো- সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি না দেয়া হলে কোনো রকম সমঝোতা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আল শিফা হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে। এটা শুধু গাজার মানুষ নয়, সব ফিলিস্তিনির স্বাস্থ্যসেবার এক আলোকবর্তিকা হবে। উপযুক্ত সময়ে দ্রুতই আমি দায়িত্ব শুরু করবো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন