ভারতের হিমালয়ের কোলের লাদাখে সেচের জন্য পানির জোগান দিতে কৃত্রিম হিমবাহ বানিয়েছেন স্থানীয় এক প্রকৌশলী। লাদাখের থিকসের কাছে নাং নামের এক গ্রামে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করেছেন তিনি। ছেওয়াং নোরফেল নামের মানুষটি স্থানীয় অনেকের কাছেই পরিচিত ‘আইস ম্যান’ হিসেবে। পেশাগত কাজে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হতো ছেওয়াং নোরফেলকে।
এই সময় নোরফেল লক্ষ করেন, ৮০ শতাংশ কৃষক চাষের জন্য পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। অথচ লাদাখের ওই এলাকায় তুষারপাত এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী শতাব্দীর শেষ নাগাদ পুরো হিমালয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হিমবাহই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। হিমালয় অঞ্চলে চাষবাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহের বরফ গলা পানি।
সেই পানি জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করে। অথচ ফসলের বীজ বপনের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাসেই। হিমবাহের অব্যবহৃত বরফ গলা পানি সংরক্ষণে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন নোরফেল। ধীরে ধীরে লাদাখের ১০টা গ্রামে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করেন তিনি।
নোরফেল জানান, হিমবাহের পানি সম্পদ হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা মাথায় এসেছিল একটা কল দেখে। শীতকালে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে সে এলাকায় কল চালু রাখা হয়। নয়তো পাইপে পানি জমে গিয়ে তা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। নোরফেল চালু থাকা কলের নিচে পাতলা বরফের একটি ছোট চাদর লক্ষ করেন। কলের নিচে ছায়ায় ঢাকা জায়গায় পানি জমে জমে বরফ হয়ে গেছে, কারণ ওই অংশে সরাসরি রোদ পড়েনি।
এ থেকেই ছেওয়াং নোরফেল কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির ধারণাটা পান। বুঝতে পারেন কলের অপচয় হওয়া পানি ধরে রাখা সম্ভব হলে পুরো গ্রামের জন্যই কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করা যাবে। গ্রামবাসীকে নিয়ে বিশেষ কৌশলে পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় কৃত্রিম হিমবাহ তৈরিও করেন তিনি। নাং গ্রামের কৃষক রিংজেন ওয়াংগিয়াল বলেন, ‘আমরা সেচের পানির জন্য শুধু একটা বেলচা নিয়ে শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় কাজ করেছি। এখন এই কৃত্রিম হিমবাহ আমাদের চাষের কাজের পানির প্রধান উৎস।’ সূত্র : বিবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন