পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণনের গতি কমতে শুরু করেছিল ২০১০ সাল থেকে। এর প্রভাব সম্প্রতি বেশ চোখে পড়তে শুরু করেছে। কারণ পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে কিন্তু গতি শ্লথ হচ্ছে না। এই পার্থক্য স্থায়ী হলে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের স্থিতাবস্থা এবং দিন-রাতের দৈর্ঘ্যওে পার্থক্য বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে দীর্ঘ হবে দিন। তার ওপর পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ প্রতি বছর প্রায় দেড় ইঞ্চি করে দূরে সরে যাওয়ার কারণেও পৃথিবীর গতি ধীর হতে থাকবে। এ কারণেও পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকবে।
সম্প্রতি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণনের গতির তারতম্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা। ‘নেচার’ জার্নালে এ গবেষণার বিষয়বস্তু প্রকাশিত হয়েছে। এই বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর ম্যান্টল অংশের তুলনায় অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণন গতি ক্রমশ কমছে। এই অংশটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি নিচে অবস্থিত। এখানে রয়েছে লোহা ও নিকেল এবং এই অংশটি অকল্পনীয় উষ্ণ। এই তথ্যের ওপর গবেষণার
জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী জন ভিদাল এবং তার সহকর্মীরা ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের আশপাশে ১২১টি পুনরাবৃত্তিমূলক ভূমিকম্পের ডাটা এবং সেই সঙ্গে সোভিয়েত, ফরাসি ও আমেরিকান পারমাণবিক পরীক্ষার ডাটা বিশ্লেষণ করেন।
জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক সাইট ‘টাইম অ্যান্ড ডেট’-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পৃথিবীর গতি সাময়িকভাবে বেড়ে যাওয়ার পর ২০২৩ সালে কমতে শুরু করায় দিনের গড় দৈর্ঘ্য প্রথমবারের মতো বেড়ে গিয়েছিল। এ গতির মন্দা সম্ভবত ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে, যেখানে ২০২৪ সালে একটি দিনের দৈর্ঘ্য এর আগের বছরগুলোর দিনের তুলনায় কয়েক মিলিসেকেন্ড দীর্ঘ হতে পারে। অনুমান বলছে, ২০১৯ সালের মার্চের পর থেকে সবচেয়ে বড় দিনের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ২০২৫ সালের মার্চ। প্রায় ২০ কোটি বছর পর পৃথিবীতে একেকটা দিন ২৫ ঘণ্টা পর্যন্তও দীর্ঘ হতে পারে।
পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে সার্বিক এ মন্দা চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণেও ঘটে। পৃথিবীর মহাসাগরগুলো চাঁদের ওপর নিজস্ব একটি মহাকর্ষীয় টান প্রয়োগ করে। এ মিথস্ক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠে ঘর্ষণ সৃষ্টি হয় ও এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে আসে। আর এটা চাঁদের কক্ষপথের ওপরও প্রভাব ফেলে। এর ফলে চাঁদ পৃথিবী থেকে আরও দূরে সরে যায়।
এ ছাড়া পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। মেরু অঞ্চলে বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ায় কিছুটা অবদান রাখতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন