দেশের সব বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে বলে সতর্কবাণী দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। টানা বৃষ্টির কারণে আগামী তিন দিন দেশের পার্বত্য এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথা জানানো হয়। এদিকে দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় চলতি জুলাইয়ের প্রথম ভাগে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্লাবিত হতে পারে দেশের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চল।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নেই। তবে দেশের সব বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় আগামী ৫ বা ৬ তারিখ পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এ জন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে গতকাল সকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। একই দিন সারাদেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সড়কে গণপরিবহন কম থাকার পাশাপাশি ছিল তীব্র যানজট। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে হিমশিম খান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারে ১৩৪ মিলিমিটার। ঢাকায় ৩২ মিলিমিটার। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছেÑ সারাদেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। রবিবার সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। আজ সোমবার সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বর্ধিত পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে বর্তমানে মেঘনা বেসিনের নদনদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র বেসিনের পানিও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে বিপদসীমা অতিক্রম করে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় জানান, আগামী তিন দিনে দেশের ভেতরে ও উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। ফলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে ব্রহ্মপুত্র বেসিনের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি আর মেঘনা বেসিনের নদনদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এতে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীগুলোর পানি সমতল দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জের কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবো জানিয়েছে, তাদের পর্যবেক্ষণের ১১০টি স্টেশনের মধ্যে গতকাল রবিবার পানির সমতল বেড়েছে ৬৬টিতে, কমেছে ৪৩টিতে। একটি স্টেশনের তথ্য পাওয়া যায়নি। কুশিয়ারার পানি মারকুলিতে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন