পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, পুলিশেও শুদ্ধি অভিযান হবে এবং তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রধানের এই বক্তব্যের সূত্র ধরে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটি শুদ্ধি অভিযানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করছে।
সাম্প্রতিক সময় পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমকে সতর্কতার সঙ্গে দুর্নীতির তথ্য পরিবেশন করার জন্য পুলিশ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, সেই বিবৃতি নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকও হয়েছে।
তবে অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা এ ধরনের বিবৃতির পক্ষে ছিলেন না বলে জানা গেছে। কয়েকজন মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা যারা এসোসিয়েশনকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা এই ধরনের বিবৃতির মূল উৎস বলে জানা গেছে। তাদের কারণেই এই বিবৃতি পুলিশ এসোসিয়েশনের নামে দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক পুলিশের কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা মনে করেন যে, তাদের সুনাম এবং মর্যাদার ব্যাপারে আপোষ করা যাবে না। দু একজন কর্মকর্তার জন্য ঢালাও ভাবে যে পুলিশের বদনাম হচ্ছে সেটি বন্ধ হওয়া দরকার। তারা মনে করেন, পুলিশের ভেতর যে দুর্নীতিবাজ রয়েছেন, অসৎ কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের জন্য যেন সামগ্রিকভাবে পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারেও নজর রাখার জন্য তারা আগ্রহী। আর এ কারণেই পুলিশের ভেতর একটি শুদ্ধি অভিযান চলছে।
বর্তমানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদগুলোতে যারা রয়েছে তাদের সকলেরই একটি স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। তারা সকলেই সৎ এবং ভালো কর্মকর্তা হিসেবে প্রশংসিত এবং প্রতিষ্ঠিত। তাদের ইমেজ ভালো। বিশেষ করে পুলিশের বর্তমান আইজিপি হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন তার সততা সকলের জন্য অনুকরণীয় বলে মনে করেন অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তারা। আর এরকম বাস্তবতায় যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, যারা বিভিন্ন পদে থেকে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে তাদের ব্যাপারে পুলিশ কঠোর হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আবার চুক্তির হিড়িক: প্রশাসনে অস্বস্তি
কিভাবে পুলিশের শুদ্ধি অভিযান পরিচালিত হবে-এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলেও একাধিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসমস্ত কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের ব্যাপারে পুলিশ নিজে থেকেই অনুসন্ধান করবে এবং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ তার নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত পরিচালনা করে দেখবে কারা দুর্নীতিবাজ এবং কারা সৎ। পাশাপাশি গণমাধ্যমে যেসমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হবে সে অভিযোগগুলো সম্পর্কেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খোঁজ খবর নিবেন এবং তার সত্যতা যাচাই করবেন। সত্যতা যাচাই করে যদি দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা ঐ সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
একাধিক সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দু-একজন পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সামগ্রিকভাবে পুলিশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। এটি দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্যই অত্যন্ত উদ্বেগের। আর একারণে পুলিশ তাদের নিজেদের ভেতরে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের ব্যাপারে শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন