ছাগলকাণ্ডের জেরে গণমাধ্যমের খোরাক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি কিছুদিন ধরেই আত্মগোপন করে আছেন। নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ থাকা এই নারী আত্মগোপনে থেকেই অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। উপজেলা পরিষদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার পর থেকে লাকি তার দপ্তরে আর আসেননি। পরিষদের কোনো মিটিং-সভাতেও তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তার এ অনুপস্থিতির কারণে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, লাকি কি আদৌ দেশে আছেন নাকি এর মধ্যেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন? প্রসঙ্গত, মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মি আক্তার ইতোপূর্বেই তার দুই সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে।
এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লাকি উপস্থিত না থাকায় বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ তার দপ্তরে বিভিন্ন সেবার জন্য এসে পড়ছে ভোগান্তিতে; ফিরে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে। গত রবিবার অনুষ্ঠিত রায়পুরা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা ও গত সোমবার নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা সমন্বয় কমিটির সভায়ও লাকি যোগ দেননি বলে জানা গেছে। রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আ.লীগের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি এভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। জনগণের কাছে তার একটা দায়বদ্ধতা আছে। তার কারণে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও আটকে থাকবে।
রায়পুরা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজ তাহমিনা মানিক জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক বছর লায়লা কানিজ কখনোই নিয়মিত অফিস করতেন না, মাঝে মধ্যে আসতেন। পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় তিনি উপস্থিত থাকতেন না। আর ঈদের পর থেকে তিনি আর আসেনই নাই।
রায়পুরা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন বলেন, এটা রায়পুরার জন্য একটা দুঃখজনক অধ্যায়, লজ্জাজনক ঘটনা। স্বামীর অবৈধ টাকার প্রভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। রায়পুরা উপজেলা আ.লীগকে তিনি তছনছ করে দিয়েছেন।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হাসান বলেন, অফিসের কর্মচারীদের বিভিন্ন বেতন ওঠানোর ফাইলে লাকি সাইন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক কোনো সমস্যা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, ওনি যদি লংটাইম অফিসে না আসেন, তবে তো দাপ্তরিক কার্যক্রমে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।
নরসিংদীর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) মৌসুমী সরকার বলেন, লাকির কার্যালয়ে অনুপস্থিতির ব্যাপারে আমরা অফিসিয়ালি কোনো কিছু জানি না। এ ছাড়া আমরা ওনার কাছ থেকে ছুটির কোনো দরখাস্ত পাইনি। ওনার অনুপস্থিতির কারণে পরিষদের কার্যক্রমের যদি কোনো বিঘ্ন ঘটে এবং আমরা যদি অফিসিয়ালি জানতে পারি, সে ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়পুরা উপজেলা পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে, লাকির দপ্তরে তার নামফলক সাঁটা থাকলেও কক্ষে ঝুলছে তালা। এর একদিন আগে, গত মঙ্গলবার উপজেলা কার্যালয়ের সামনে দেখা হয় ফালানি বেগম নামে এক বৃদ্ধার সঙ্গে। তিনি দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী থেকে এসে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান লাকির একটি স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও তাকে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান বৃদ্ধা। ফালানির মতো অনেক সেবা নিতে আসা লোকজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় ইসি এ নির্বাচন স্থগিত করে। এরপর এ পর্যন্ত নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। আর নতুন নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লায়লা কানিজ লাকিই দায়িত্বে বহাল রয়েছেন।
এ ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লাকির সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরসহ একাধিক ফোন নম্বরে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি নতুবা তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন