রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতি হত্যার ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে বাহিনীগুলো। এর মধ্যে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে জব্দ করা একটি ফুলপ্যান্ট ঘিরে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিভাগ। ধারণা করা হচ্ছে, ওই প্যান্টের মধ্যে রক্তের কোনো দাগ বা চিহ্ন থাকতে পারে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে জব্দ হওয়া প্যান্টটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পিবিআইর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার পর বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। বাড়িটির সামনে গেট থাকলেও হত্যার শিকার দম্পতি এলাকায় সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যেহেতু চুরি কিংবা ডাকাতির কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে হত্যার অন্য কোনো কারণ আছে। পরিবারের সদস্যরাও হত্যার কারণ হিসেবে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। হত্যার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পারে এমন সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পিবিআই পুলিশ সুপার (ঢাকা দক্ষিণ) মিজানুর রহমান শেলী কালবেলাকে বলেন, সন্দেহজনক আলামত হিসেবে ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে একটি প্যান্ট জব্দ করা হয়েছে। সেখানে রক্তের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে সেটা যে হত্যাকারীরই সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফরেনসিক পরীক্ষার পর কোনো কিছু পেলে তখন নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে।
এদিকে এই ঘটনা তদন্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের আশপাশের ২-৩ কিলোমিটার জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ওই দম্পতি হত্যার ঘটনাস্থল অর্থাৎ নিহত দম্পতির বাড়ির মধ্যে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এমনকি আশপাশের কয়েকটি ভবনেও সিসিটিভি ফুটেজ না থাকার কারণে হত্যাকারীদের শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে।
ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ কালবেলাকে বলেন, এই হত্যার ঘটনায় শুধু ডিবি নয়, অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। হত্যার কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে নিজ বাড়িতে খুন হন শফিকুর রহমান-ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতি। বাড়ির গ্যারেজে শফিকুর রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ এবং দোতলার বাসভবনে ফরিদা ইয়াসমিনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ওইদিন রাতে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী নিহত দম্পতির একমাত্র ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার কার্যালয়ে উপপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত।
আবদুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে জানান, যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা অবশ্যই তাদের পরিচিত; কিন্তু কারা এটি ঘটিয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় জমি নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে তাদের কিছু ঝামেলা আছে। তবে এই কারণে এত বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে, তা তিনি মনে করেন না।
ঘটনার তদন্তের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস কালবেলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত কী কারণে এই হত্যা হয়েছে, তা আমরা জানতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন