রাত পোহালেই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। গত এক সপ্তাহের তুলনায় রবিবার চাঁদরাতে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে বেচাবিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। হাটে যারা এসেছেন তারা অনেকেই সঙ্গে করে গরু নিয়ে বাসায় ফিরছেন। এই রাতে ছোট, মাঝারি, বড়– মোটামুটি সব সাইজের গরু ও ছাগল বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রবিবার (১৬ জুন) চাঁদরাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার ধোলাইখাল পশুর হাট ও পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট সংলগ্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময় হওয়ায় অনেকটা কম দামেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জানান, এই গরু ২০-২৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় এনেছি আবার যদি ফিরিয়ে নিতে হয় তাহলে দ্বিগুণ খরচ হবে। তারচেয়ে লোকসান যেন না হয় সে অনুযায়ী ক্রেতা পেলেই গরু বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন পশুর হাটে ফরিদপুরে গরু ব্যবসায়ী বেল্লাল ২৫টা গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, এবার ছোট গরুর চাহিদা বেশি, বড় গরু বিক্রি হচ্ছে না, আশানুরূপ দামও বলছেন না ক্রেতারা। ১৫টা বড় গরু এনেছি এখনও ১৩টা রয়ে গেছে। তবে ছোট এবং মাঝারি আকারের গরুগুলো ভালো বিক্রি হয়েছে। বড় গরু বিক্রি করতে না পারলেও বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এই গরু ব্যবসায়ী।
পুরান ঢাকার হাটগুলোতে গরুর পাশাপাশি ছাগল-ভেড়ার বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার করিম ব্যাপারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি গরু এনেছি ১২টা, ছাগল এনেছি ১০টা। গরু-ছাগল যা এনেছি মোটামুটি সব বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আর মাত্র দুটো গরু আছে। এগুলোর দাম একটু বেশি। কোনওমতে খরচ পোষালেই বিক্রি করে দেবো।
তবে বেচাকেনা ভালো না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীর মন খারাপ। চুয়াডাঙ্গা থেকে গরু ব্যবসায়ী মো. আলম ৫০টা বড় গরু নিয়ে ঢাকার হাটে এসেছেন। প্রতিটার দাম ৪ লাখের উপরে। বিক্রি হয়েছে মাত্র চারটি। বাংলা ট্রিবিউনকে আলম বলেন, আমার স্টাফসহ রেগুলার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। যাতায়াত এবং খাবারে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের খরচ যাবে ৫ লাখের মতো। অথচ বিক্রি হয়েছে ৪টি গরু। কী আর বলবো দুঃখের কথা, ব্যবসা মনে হচ্ছে ছেড়ে দিতে হবে।
‘হাটে বড় গরু এনে মহাপাপ করেছি’
রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে তেমন একটা বড় গরুর ক্রেতা নেই। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে থেকে রাজধানীতে বড় গরু নিয়ে আসা গরু ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। বেশি দামে বিক্রির আশায় বাড়তি যাতায়াত খরচ দিয়ে ঢাকার পশুর হাটে এনে ১০-১২ লাখ টাকা হাঁকানো গরুগুলো বেশিরভাগ অবিক্রিত থেকে গেলো। এনিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত গরু ব্যবসায়ীরা।
গরু ব্যবসায়ী আফজাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেশি দামে বিক্রির আশায় গ্রাম থেকে ঢাকার হাটে বড় গরু এনে মহাপাপ করেছি। ছোট ও মাঝারি আকারের তিনটা গরু বিক্রি হলেও আমার একটাও বড় গরু বিক্রি হয়নি। খামার থেকে দেখে দেখে ৬টা বড় গরু এনেছি। খরচ হিসেব করে সেই অনুযায়ী একেকটার ৬-১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম চেয়েছি। কিন্তু একটা বড় গরুও বিক্রি হয়নি। ছোট ও মাঝারি সাইজের তিনটা গরু এক লাখ পাঁচ, এক লাখ বিশ এবং এক লাখ ৬২ হাজার দরে বিক্রি করেছি। এখন আবার এগুলো টেনে বাড়ি নিয়ে যাওয়া লাগবে।
সাদ্দাম ব্যাপারী নামে একজন গরু ব্যবসায়ী বলেন, নেত্রকোনা থেকে ২৮ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া করে ঢাকায় গরু আনছি আটটা। এরমধ্যে মাত্র দুইটা গরু বিক্রি হয়েছে। বাকি ছয়টা গরু বিক্রি হয় নাই। ছয়টার মধ্যে পাঁচটাই বড় গরু। ক্রেতারা কোনোরকম দাম-দর করে চলে গেছে, কেউ কেনার মতো দাম বলে নাই। কেনার মতো দাম বললে দিয়ে দিতাম। একটা গরু আমি সাড়ে সাত লাখ টাকা চেয়েছি। সেই গরুর দাম ক্রেতারা সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছে। অথচ ওই গরুর পিছনে আমার খরচই আছে পাঁচ লাখ টাকার মতন। কেউ যদি ৫ লাখ টাকাও বলতো আমি গরু বিক্রি করে দিতাম।
ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন পশুর হাটের গরু ব্যবসায়ী হোসেন ব্যাপারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি কান ধরছি ঢাকায় আর বড় গরু আনবো না। দরকার হলে কসাইয়ের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে দেবো। তবু ঢাকায় গরু আনবো না। গ্রামে অল্প লাভ হলেই ভালো। ঢাকায় একটু বেশি লাভের আশায় এত কষ্ট করে আসা ও কষ্ট করে থাকার পরও কোনও লাভ হয় নাই। এ কয়েক দিন গরু নিয়ে শুধু কষ্ট পোহাতে হয়েছে। আমি হাটে ৪টা গরু নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে দুইটা বড়, দুইটা মাঝারি। বড় দুইটা গরুর দাম ৬ লাখ আর সাড়ে ৬ লাখ টাকা চেয়েছে। মানুষ এই দুইটার দাম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বলছে। আর একটা গরু বিক্রি করছি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে। কোনোরকম যাওয়া-আসার এবং থাকা খাওয়ার টাকা ম্যানেজ হয়েছে। লাভের চিন্তা আর করি না। এখন হাট ছেড়ে বাড়ি যেতে পারলেই শান্তি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন