রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেছেন সহকর্মী পুলিশ কনস্টেবল কাওসার আলী। ডিউটি রোস্টার নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে কাছে থাকা এসএমটি নাইন মডেলের সাবমেশিনগান দিয়ে গুলি করে ঝাঁজরা করে দেন।
নিহত মনিরুলের শরীরে ছয়টি গুলি পাওয়া গেছে। আশপাশ থেকে ৩৪টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রথম গুলি করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনিরুল। এরপরও উপর্যুপরি গুলি চালাতে থাকেন কাওসার। মনিরুলের রাইফেলটিও কাওসার তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।
নৃশংস এই ঘটনার পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন কাওসার আলী। এই সমস্যার কারণে একাধিকবার চিকিৎসাও নিয়েছেন বলে দাবি করছে পরিবার।
প্রশ্ন উঠেছে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত একজন কনস্টেবলকে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পাড়ায় কীভাবে দায়িত্ব পান। কীভাবে তাঁর হাতে দেওয়া হয় সাবমেশিনগান যেটা থেকে মিনিটে ৬০০ গুলি বের হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনই প্রশ্ন করছেন নেটিজেনরা।
ফেসবুকে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, এক যুগ ধরে মানসিক রোগী থাকা একটা মানুষ কিভাবে পুলিশে কাজ করে? আরেক ব্যক্তি লিখেছেন, মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে অস্ত্র দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।
এ ঘটনায় মানুষ যেমন প্রশ্ন তুলছে মানসিক ভারসাম্যহীন পুলিশ কীভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মারণাস্ত্র নিয়ে দায়িত্ব পায়। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
কর্মজীবনে পুলিশ সদস্যদের বিপদ, চাপসহ নানামুখী ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। অনেকেই পরিবার থেকে দূরে সমাজের অবক্ষয়-অস্থিরতার ঢেউ সামলাতে হয় তাদের। ফলে তাদের মানসিক সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও নেই। ফলে প্রায়ই পুলিশ সদস্যদের আত্মহনন, অন্যকে গুলি করার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা সামনে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের মানসিক গঠনে পরিবর্তন আসছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাদের কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে পেশাগত কাউন্সেলিং ভালো ভূমিকা রাখে। পুলিশের মতো পেশাজীবীদের কাজের ফাঁকে গান শোনা জরুরি। মানসিক প্রশান্তির জন্যই বিভিন্ন পেশার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মতের আদান-প্রদান এবং মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাওয়া দরকার। কাউন্সেলিংয়ের জন্য পুলিশে সাইকোলজি ইউনিট গঠনেও জোর দেন তারা। এমনকি পুলিশে মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেছেন সহকর্মী কাওসার আলী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন