ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন
কৌশলগতভাবে অবস্থিত বন্দর চালানোর জন্য চীনের প্রচেষ্টার মধ্যে ভারত বাংলাদেশে মংলা বন্দর পরিচালনা এবং সেখানে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইরানের চাবাহার বন্দর ও মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরের অপারেশনাল অধিকার ইতোমধ্যেই ভারতের রয়েছে। এটি পেলে তা হবে ভারতের প্রতিবেশী এলাকায় তৃতীয় বিদেশী বন্দর পরিচালনার অধিকার। ইকোনমিক টাইমসসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সফল হলে নয়াদিল্লি ভারতের নিকটবর্তী এলাকায় চীনের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত উপস্থিতির প্রতি ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে। সে সাথে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের পশ্চিম ও পূর্ব উভয় অংশে বন্দর পরিচালনার নেট নিরাপত্তা সুবিধা পাবে দিল্লি।
বিশ্লেষক মতে, ভারত বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রেও এটি একটি মাইলফলক হতে পারে। চলতি মাসের শেষের দিকে বা জুলাইয়ের শুরুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-এর টানা তৃতীয় জয়ের পর মঙ্গলবার রাতেই হাসিনা মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চীন হাসিনাকে তার সফরসূচিতে বেইজিংকেও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করছে কিন্তু তিনি তার ভারত সফরের আগে সেই সফরে যেতে আগ্রহী নন।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একতরফা ভোটের’ পশ্চিমা অভিযোগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনের পর তার সরকারকে বৈধতা প্রদান করে নয়াদিল্লি শেখ হাসিনা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে নেপাল, ভুটান, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কার নেতৃবৃন্দসহ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের নিকটবর্তী এলাকায় মূল অবকাঠামো প্রকল্প পরিচালনার জন্য চীনা পদক্ষেপ ভারতের জন্য অস্বস্তির বিষয়। হাসিনা-মোদি বৈঠকে আন্তঃসীমান্ত সংযোগ প্রকল্প এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো ফোকাস পাবে।
Pause
Unmute
Remaining Time -9:56
Close PlayerUnibots.com
ভারত ইতোমধ্যেই ১,৬৫০ কিলোমিটার চিকেনস নেক করিডোর এড়িয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর উভয়েরই ট্রান্সশিপমেন্ট অ্যাক্সেস পেয়েছে। গত মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীল মুকুন্দনের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেডের একটি ভারতীয় প্রতিনিধিদল, মংলা বন্দর পরিদর্শন করে এর অপারেশনাল সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে স্টাডি করেছে। আলোচনা সফলভাবে এগিয়ে গেলে ইরানের চাবাহার বন্দর এবং মিয়ানমারের সিতওয়ের পর মংলা হবে ভারতের তৃতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর অপারেশন, যেটি উভয়ই ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড দ্বারা পরিচালিত হবে। শ্রীলঙ্কায়, একটি ইন্দো-রাশিয়ান যৌথ উদ্যোগ চীন পরিচালিত হাম্বানটোটা বন্দরের আশপাশে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনার অধিকার পেয়েছে।
আইপিজিএলকে বিবেচনার জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি জানান, প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে প্রস্তাব পাওয়ার পর মূল্যায়ন করা হবে এবং লাভজনক প্রমাণিত হলে সিদ্ধান্তের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
মংলা বন্দর তার পাঁচটি জেটিতে কনটেইনার ও বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ পরিচালনা করে। ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দেয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার কারণে বর্ধিত পণ্যসম্ভার পরিচালনার জন্য আরো দু’টি জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ভারতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, লাভজনকতা বিবেচনা করে প্রস্তাবটি মূল্যায়ন করবে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরটি বর্তমানে কনটেইনার ও বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ পরিচালনা করে এবং ট্রান্সশিপমেন্ট থেকে বর্ধিত কার্গো ভলিউম পরিচালনার জন্য আরো দু’টি জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র্র সচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পেও জাপানের সাথে যৌথভাবে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ প্রকল্পটিতে বিনিযোগের ব্যাপারে চীন অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের বাধার কারণে চীনকে এ প্রকল্প বাস্তবাযনের জন্য দেয়া হচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে।নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন