বাবার হাত ঘড়ি
লিখেছেন লিখেছেন আর জে তৌহিদ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:২০ রাত
যখন আমি নিজে দাদা হব তখন তো আমাকে ও গল্প শোনাতে হবে ।
অনেক দিন পর কলম দেখে হাতে সুড়সুড়ি অনুভব করছি ,তাই থাকতে না পেরে কগজে ঘষাঘষি শুরূ করলাম।
এখন যে দেশে শিক্ষার অভাব নেই !!!!!,
তা A+ আর ঢাকার রাস্তাই নামলেই বুঝতে পারবেন।
কি ভাবছেন !! নেমেই দেখুন না .।
একটা গল্প দিয়ে শুরু করি, ঠিক গল্প নয় আমার ছেলেবেলা র ছোট্ট কিছু কথা।
[দিন ক্ষণ মনে নাই, দিন খন মনে থাকলে এত দিন এ আত্মজীবনী লিখে ফেমাস হয়ে যেতাম ]
আনুমানিক,
১৯৯৪ সাল,তখন এই অধমের প্রথম সুযোগ হয়েছিল আম্মু র হাত ধরে ঢাকা শহরে বেড়াতে যাবার।
গন্তব্যঃ ঢাকা, শ্যমলী । (মেজো আম্মু) খালার বাড়ী।
সংসারঃ ২ ছেলে ,১ মেয়ে , মেজো আম্মু এবং এখনো জমের মত ভয় পাই যে মানুষ টিকে মেজো আব্বু । বেশ সাজানো গোছানো সংসার বলতে পারেন ।
"ঢাকা যাচ্ছি " এই খবরটা আনন্দের কিনা বুঝতে পারছি না !!!!
বাবার হাত ধরে বাজার এ জাচ্ছি ,
বাবাকে নানান প্রশ্ন করছি ।
বাবা ঢাকা কোথাই ? ঢাকা কত দূর ? ঢাকা কিসে করে জেতে হয়?
আসসা বাবা ঢাকা তে কি কি আছে? ঢাকা তে কারা থাকে?
ঢাকা তে কি হয় ??
আরও কত যে অদ্ভুত প্রশ্ন।
বাবা হাসলেন, আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ।
আব্বু সুন্দর দেখে প্যনয়ট ,গেঞ্জি ,নতুন জুতো কিনে দিলেন।
আমি তো লাফাতে লাফাতে একটি দোকানের সামনে চেচিঁয়ে উঠে বললাম বাবা এটা আমাকে কিনে দেবে?
বাবা হাস্লেন, আরও একটু বড় হও কিনে দেব।
কি কিনতে চেয়ে ছিলাম আখন নয় পরে বলছি ।
তবে শর্ত দিলেন "ঢাকা তে কি কি দেখেছি , তা যদি বাবাকে শোনাই , তবেই কিনে দেবেন।
নতুন জামা প্যান্ট পরে ছোটাছুটি করছি সারা বাড়ি, আমার পেছনে ছুটছে "মা"।
ধরা পড়লাম আম্মুর হাতে, অমনি ছাপ মেরে দিলেন, কপালে ইয়া বড় চাঁদ মামা , তার পর দিলেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ,ট্যালকম পাউডার নামক ধুলো। উফফ.........
আম্মু হাত থেকে বেরিয়ে দিলাম দৌড়, আব্বু অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছেন,এক লাফ দিলাম আব্বুর দিকে, আব্বু আমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়লেন...
সত্যি খুব মজা পেয়ে ছিলাম .....
বাবা বললেন, আাজ তাহলে তোমরা যাচ্ছ??? আমি মাথা নাড়লাম।।
রিক্সাতে বাবার কোলে চুপচাপ বসে আছি,
বাবা আমাকে চিপস, চকলেট, পানির বোতল কিনে দিয়েছেন।
আম্মুর পাশে বসে আছে "নূমী আম্মা "মানে সেজ খালা,ও আমার ছোট খালাতো ভাই মনির,আমি আর মনির লাফালফি করে বাসে উঠলাম। কোলে বসেই বাদরামি করছি।
বাস চলতে শুরু করেছে ,
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। গাছপালা-বাড়ি দোকান-পাট আমাদের ছেড়ে পেছনে চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে,
তন্দ্রা দখল করতে শুরু করেছে আমাকে।.........।
যখন চোখ খুললাম "আম্মু হাস্লেন" ।
আমি প্রশ্ন করলাম আম্মু আমরা কি ফেরি পার করে এসেছি???
আম্মু বললেন "হ্যাঁ " ,
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, বাবা বলেছিলেন ফেরি তে করে ঢাকা যেতে হয়। বড় বড় গাড়ি নাকি ফেরিতে উঠে!!!
আর বুঝি ফেরি দেখা হল না .........।।
একটু সামনে এগুতেই ,
নদী দেখা যাচ্ছে, অনেক গাড়ি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ চোখ টা জ্বলে উঠলো,
সাদা রং এর বিশাল একটা জাহাজ, যার পেটের ভেতর আমাদের বাস ঢুকে যাচ্ছে।
চোখে পানি চলে এলো মুখ লুকিয়ে ফেললাম আম্মুর আঁচলে।
আম্মা হাসে,নুমি আম্মু ও হাসে সাথে বলদ মনির টাউ হাসছে, ইচ্ছে করছে বলদ মনির এর পিঠ এ কষে আক্তা কিল বসাতে পারতাম!!!!
আমি ও সবার মতো করে হাস্তাম
আরে গাধা তুই তো বুঝিস নাই আম্মু রা কেনো হাঁসলো চুপ ....
ফেরী চলছে,, অম্মু হাত ধরে নামালেন।
আমাদের আন্নন্দ আর দেখে কে ...।
খুব লাফা লাফি করলাম , নদীর ভেতর দিয়ে যাচ্ছি ভাবতেই অবাক লাগছে,
চিপস খেলাম ,চকলেট খেলাম ,হিসু করলাম।
ফেরি পার হতেই রোগ পেয়ে বসলো "আম্মু ঢাকা কত দূর ?
আর কত দূর ?? আম্মু আর কতক্ষণ লাগবে??? ............
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি,
চোখ খুলে o দেখি বাস এখনো চলছে...।এ বাস আর থামবে না .........।
একটু পর আম্মু বললেন,, আমরা ঢাকা পৌঁছে গেছি ।
আমার চারিদিকে অচেনা এক শহর , উচু-উচু দালান কোঠা ,অনেক অনেক গাড়ী ,
আর রঙিন - রঙিন লাইট।
ঝলমল করছে এক শহর ,আমাদের ঢাকা শহর.........।।।।
ঘুম ভেঙে নিজেকে বাবার কোলের ভেতর আবিস্কার করলাম,
এক বার দেখে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম ...।।
অনেক ভাল লাগছে.........বাবা কে জড়িয়ে ......।।
সকাল এ ঘুম থেকে উঠে বাবার বুকের ওপরে উঠলাম ,
বিরক্ত করছি,
বাবা আমাকে চ্যাং দোলা করে বিছানা থেকে উঠলেন ।
আব্বু আর আমি ব্রাশ করছি।
বাবা বললেন, ঢাকা তে কেমন মজা করলে ???
খুব মজা করেছি বাবা .........।।
মেজ আম্মু অনেক আদর করেছেন,সবুজ ভাইয়া -সুরূজ ভাইয়ার সাথে ঘুরলাম।
আমি মনির আর বুড়ী...।
বাবা অফিস থেকে ফিরলেন দুপুরে_ খাবার শেষে বাবার কোলে ঢুকে গল্প শুরু করে দিলাম।
জানো বাবা আমরা না ফেরীতে উঠেছিলাম, নদীর ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো।
বাবা, হাসলেন ।
বললেন ঢাকা তে কোথায় কোথায় ঘুরলে ???
আঙ্গুল গুনে গুনে উত্তর দিলাম, চিড়িয়াখানা তে গিয়েছি, শিশু পার্কে গিয়েছি,
যাদুঘর দেখলাম,শহীদ মিনার, তারপর আরো কত কি ........
জানো বাবা চিড়িয়াখানা তে না বাঘ আছে,হাতি আছে,সিংহ আছে,হরিণ আছে আর
ইয়া বড় খাচাই কনেক বাঁদর লাফালাফি করছে।
আমরা বাঁদর কে বাদাম খেতে দিয়েছিলাম।
মেজ আব্বু বললেন আমি আর মনির নাকি বাঁদরের মত লাফালাফি করি।
আচ্ছা বাবা তুমিই বলো আমি কি বানর?
বাবা_ হাসলেন,
বললেন শিশু পার্কে কিসে কিসে উঠেছো?
প্লেনে উঠেছি, ট্রেনে উঠেছি ঘোড়াতে উঠেছি....
আমার গল্প যেন শেষ ই হয়না......
বাবা এখনো হাসছেন.....
অনেক দিন গত হয়ে গেছে ঢাকার গল্প এখন আর বলিনা।
ক্লাস আর EXAM নিয়ে ব্যস্ত,ক্লাস ফাইভ পাশ করে সিক্স এ উঠবো।
রেজাল্ট বেরিয়েছে, সকালে আব্বুর হাত ধরে স্কুলে গেলাম....
এখন আমি আর আব্বু সেই দোকানের সামনে দাড়িয়ে,
যে দোকানের সামনে চেচিয়ে বায়না ধরেছিলাম।
বাবা বেছে বেছে খুব সুন্দর ঘড়ি কিনে দিলেন।
হলুদ রং এর উপরে সুন্দর কার্টুন আছে, কার্টুন তুলে দিলে সময় দেখা যায়।
ও হ্যা ঘড়ির সাথে লাইট আছে, রাতে দেখতে দারুণ লাগে.....
ঘড়ি কেনাই মনে হয় কাল হয়ে দাড়ালো !!!!
এখন ঘড়ি দেখে রোজ স্কুলে যাই তবে একা একা ।।
আগের মতন আর আব্বুর হাত ধরে ঝুলতে ঝুলতে স্কুলে যাওয়া হয় না.....
অনেক বছর কেটে গেছে.....
প্রাকিতিক নিয়মে সখের সেই ঘড়িটি ও নষ্ট হয়ে গেছে,
নষ্ট হয়ে গেছে বাবার হাত ঘড়িটি ও ...।।
আমার টা হারিয়ে গেলেও , বাবার টা এখনো আছে।।
মাঝে মাঝে ড্রয়ার থেকে ঘড়ি টা বের করে অপলক চেয়ে থাকি ।।
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে,ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ।।।
"নয়ন দুটো কে প্রশ্ন করলাম" "নয়ন তুমি কি কাঁদছো"???
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন