রহস্যময় গল্পঃ গভীর জলের মাছ
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ইসলাম ৃন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:২২:২৩ রাত
একা একা বসে কাঞ্চন বাবু মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করতেছিলেন এরই মধ্যে তার বাসার ফোন রিসিভারটি বেজে ওঠলো এবং ফোনের শব্দটি পেয়ে কাঞ্চনবাবু ফোনটি রিসিভ করলেন কাঞ্চনবাবু ফোনটি ধরে হ্যালো বলে জিজ্ঞাসা করলেন হ্যালো কে? কমল ।আরে কে নমস্কার দাদা নমস্কার । কাঞ্চন দাদা ভাল আছেন হ্যা কমল তা তোমার খবর কি মনে করে এতদিন পরে দাদার কাছে ফোন দিলে? না তেমন কিছুনা দাদা । তা কাল একবার এদিকে একটু এসো দেহি দাদা তোমার সাথে কিছু কথা আছে ও একটা পরামর্শ আছে ।হাতে একটি নতুন মামলা আছে।কি বললে কমল নতুন মামলা হ্যা দাদা তবে আর বোলছি কি ?
তা কি মামলা বা পরামর্শ বলদেহি কমল না দাদা আজ ফোনে না কাল তোমার সমুর্খে সরাসরি কথা হবে ।তাহলে দাদা আজ ফোন ছাড়লাম আচ্ছা ঠিক আছে কমল । কাল সকালে ১০ নাগাত তোমার অফিসে দেখা হবে ।অনেক দিন হয় অমলের হাতের চা য়ের স্বাদ গ্রহন করা হয় না ।কালকে তার হাতের চায়ের স্বাদ গ্রহন করা হবে তোমার সাথেও কথা হবে ।কাঞ্চন বাবু এই কথা শেষ করে ফোন রিসিভারটি টেবিলে রেখে বারিন্দায় গিয়ে বসলেন আর ভাবতে লাগলেন হঠাৎ আজ অনেক দিন পরে আবার কমল ফোন দিলো কি যেন একটি নতুন মামলা আছে বলে ।অবশ্য আমি আর কোন নতুন মামলা হাতে নিতে ইচ্ছুক না কেন না এই মামলা পিছনে আমার সারাটি জীবন পার হয়ে গেছে ।
যাই হোক কাল একবার কমলের অফিসে যাই আর কমলের সাথে কথা বলে ওকে বুঝিয়ে বলে আছি না হোলে ছেলেটি মনে কষ্ট পাবে যেহেতু ও আমাকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করে এবং বড় মুখ করে আমার কাছে ফোন দিয়েছে ।
২।
পর দিন সকাল দশটায় কমলের অফিসে চলে গেলেন কাঞ্চনবাবু ।কমল কাঞ্চনবাবু অফিসে আসবেন বলে তার কাজের লোকটির হাতে অমলদার দোকান হোতে চা আনতে পাঠিয়ে দিলেন চায়ের সাথে অমলদার দোকানের লুচি ভালো টেষ্ট পাওয়া ও খাওয়া জম্বে ।
কাঞ্চনবাবুকে অফিসে ডুকতে দেখে কমল দাড়িয়ে আরে দাদাযে এসো ভেতরে এসো বস । দুজনে বসে কথা এখন শুরু করে নাই এর মধ্যে কাজের লোকটি চা আর লুচি দিলেন তাদের সামনে ।
কমল কাঞ্চনবাবুকে বললেন এসো দাদা অমলদার দোকানের গরম চা আর লুচি আগে খেয়ে নি তার পর আলাপন হবে । খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজনে বসে পরলেন আলাপনে ।
কাঞ্চনবাবু কমলকে বললেন কমল শুরু কর এবার শুনি তোমার নতুন মামলাটির কথা । কাঞ্চনবাবু নাষ্টা শেষে চা দু চুমক ঠোটে লাগিয়ে বললেন কমল আমি তোমায় বেশি সময় দিতে পারবো না তাই যত সংক্ষেপে সম্ভব তোমার নতুন মামলাটির বিষয় বলবে ।
কমল বলছে দাদা এত তারা কিছের কত দিন পরে তোমার সাথে দেখা বলতো একটু অন্য বিষয় নিজেদের ভালো মন্দ কিছু আলাপ করি তার পর না মামলার বিষয় কথা হবে ।
না কমল তেমন সময় হাতে নেই আজ ক দিন ধরে তোমার বৌদি মনির শরীরটা তেমন ভাল যাচ্ছে না ।
তার উপরে বুঝয়তো আমাদে সাধারন ডিকেটিব লোকদের সবসময় এ পাশ থেকে ওপাশ দৌড়াদৌড়ি আছেই তাই আজ কদিন থেকে মনে মনে ভাবছি এসব গোয়েন্দার ঝামেলা ছেড়ে দেব ।
যাই হোক দাদা তোমার হাতে যেহেতু বেশি সময় নাই তাহলে মূল কথায় ফিরে যাই । শোন দাদা এক রহস্য হত্যা কান্ড আর হত্যা করার পর থেকে এখন পযন্ত খুনির কোন আলামত পাওয়া যাইনি ।
খুনিও পলাতক । কে বা কাহারা খুন করেছে তার কোন সঠিক প্রমান আমাদের হাতে নেই বা এখন সংগ্রহ করতে পারিনি ।
কাঞ্চন বাবু কমলকে বললেন এতো অনেক ভয়ানক মামলা কমল ।
হ্যা দাদা তা ঠিকি বলেছ ভয়ানক কিছুটা আর আমি জানি দাদা এ কেচের একটা শেষ তুমি এনে দিতে পারবে । তোমার ওপরে দাদা আমাদের পুর ডিপারমেন্টের বিশ্বাস আছে ।অপরাধী ঘটনা ঘটিয়ে সে পলাটক হলেও তাকে আমাদের খুজে বের করতে হবে ।
সবই ঠিক আছে কমল ঘটনা কোথায় ঘটেছে তাতো বলবে নাকি । হ্যা দাদা তা বলছি শোন ঘটনা ঘটেছে বৃঞ্চপুরের প্রদিপরায়য়ের সাথে। এঘটনা ঘটে গত গত ১৬ তারিখ রাতে বৃঞ্চপুর বাজার থেকে
প্রদিপ রায় বাড়িতে ফিরছিলেন হঠাৎ তাকে টাক করে কে বা কারা যেন গুলি করে আর সে গুলি লাগে প্রদিপ রায়য়ের বুকে প্রদিপ সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে হাসপাতালে সেখানকার ডাক্তার অরুন রয় তাকে মৃত্যু বলে জানান ।
প্রদিপ রায়ের এই দিন কূলে এক বোনের ছেলে ছাড়া আর কেও নাই । প্রদিপ রায়য়ের সকয় বিষয় সম্পতির এক মাত্র মালিক এখন তার বোনের ছেলে । তার সাথে কথা বলে আমরা যততুক জেনেছি তাতে একে বারে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এই পৃথিবীতে কারো সাথে জগড়া বা কোন বিবাদ নাই । কাঞ্চনবাবু কমলকে বললেন হুম কমল মামলাটা কিছুটা জটিল হবে বলে মনে হচ্ছে । আচ্ছা কমল প্রদীবরায়ের কে একজন বোনের ছেলে আছে যে বললে উনি কোথায় থাকে ।
হ্যা দাদা ঐ একমাত্র বোনের ছেলেই যে প্রদীবরায়কে সব সময় দেখে শুনে রাখে । প্রদীবরায় তার বোনকে ঐ গ্রামের এক প্রভাবশালি ব্যক্তির ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন । সেই সূত্রে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলের তাদের গ্রামে চারটি বিশাল বড় বাড়ি আছে তার মধ্যে একটি বাড়ি নিয়ে থাকতেন প্রদীবরায়ের বোনের ছেলে ।
হুম তা কমল প্রদীবরায়ের বোনের ছেলেটি করে কি?
না দাদা উনি তেমন কিছুই করেন না এক মাত্র মামাকে দেখা শুনা আর উনি মাঝে মাঝে জঙ্গলে শিকার করতে বের হতেন খুব ছোট থেকেই নাকি উনার শিকার করার নেশাটা হয়ে ওঠে । হুম সবই বুঝলাম ।
আচ্ছা আচ্ছা কমল টা ঘটনার দিন রাতে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলে কোথায় ছিল ?
হ্যা দাদা ঘটনার দিন রাতে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলের কয়েকজন বন্ধু শহর থেকে আছে তারা গ্রাম গুরে দেখার জন্য ।
ঘটনার দিন বিকেলে মামার সাথে দেখা করে বন্ধুদের সাথে নিয়ে রাতে শিকারে যাবে বলে ঐ দিন বিকেলেই তাদের বাড়ি চলে যায় । হুম তা কমল সে কি রাতে শিকারে গেছিলেন ।
হ্যা দাদা উনি ঐ দিন রাতে শিকারে গেছিলেন ।
কাঞ্চনবাবু কমলকে বললেন হুম কমল সবই বঝলাম মামলা বড় জটিল একটু খুটিয়ে দেখতে হবে ।
তা দাদা কি ভাবে মামলার তদন্ত শুরু করতে চান ।
কমল হ্যা দাদা বলুন কাজ যত বেশি জটিল হবে তত বেশি কাজ করে আমি মজা ও আনন্দ পাই ।কমল আমি তোমার এ কাজটি করে দিচ্ছি । তুমি এক কাজ কর কালকে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলেকে বিকেলে বাড়িতে থাকতে বল আমি আর তুমি কালকে উনার সাথে কথা বলবো । ঠিক আছে দাদা তাই হবে আমি বরং এখনি তাকে ফোন করে দেই । হ্যা তাই কর তাহলে কমল আমি আজ ওঠলাম ঠিক আছে দাদা । ও হ্যা কমল তুমি আজ বিকেলে প্রদীবরায়ের পোষ্ট মডামের রিপটটি নিয়ে আমার বাড়িতে এসো ।
ঠিক আছে দাদা বলে কমল কাঞ্চনবাবুকে বিদায় দিলেন ।কাঞ্চনবাবুও কমলের কাছ বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেলেন ।
রাতে কমল প্রদীবরায়ের পোষ্ট মডেমের রিপোট নিয়ে কাঞ্চনবাবুর বাড়িতে চলে গেলেন ।
কাঞ্চনবাবু কমলকে জিজ্ঞেস করলেন কি কমল কোন রহস্য খুজে পেলে রিপটের ভিতরে । দাদা কিযে বললেন এত সহজে কি এ খুনের রহস্য খুজে পাওয়া যাবে ।
যাবে যাবে কমল সব রহস্যের যখন একটা শেষ আছে তখন মনে কর এর একটা শেষ আছে ।
বস কমল আজ রাতে দুজনে এক সাথে ডিনার করবো । কমল কাঞ্চনবাবুর হাতে প্রদীব রায়ের রিপটটি দিলেন । কাঞ্চনবাবু কমলের হাত থেকে রিপটটি নিয়ে সব কিছু দেখলেন ।
কাঞ্চনবাবু কমলকে বললেন হুম সব ঠিক আছেতো এটাই তো প্রদীব রায়ের রিপট নাকি ?
কমল কাঞ্চনবাবুকে বললেন হ্যা দাদা এটাই প্রদীব রায়ের রিপট ।
ঠিক আছে কমল চলো আমরা ডিনার শেষ করি রাত হতে চলছে
তোমাকেও বাড়িতে যেতে হবে হ্যা দাদা তাই করি চলুন অনেক রাত হতে চলছে ।
ডিনার শেষ কাঞ্চনবাবু কমলকে বিদায় দিলেন আর বললেন কমল কাল বিকেলে আমরা তাহলে যাচ্ছি কিন্তু প্রদীব রায়ের ভাগ্নের বাড়িতে । দাদা হ্যা যাচ্ছি আর আজকেই ফোন করে ওনাকে বলে দিয়েছি আমাদের কালকে যাওয়ার কথা সুতারাং কালকে আমরা যাবো ।বিদায় নিয়ে কমল চলে গেল ।
পরদিন বিকেলে কমল চলে গেল কাঞ্চনবাবুর অফিসে কাঞ্চনবাবু কমলকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন প্রদীবরায়ের বোনের বাড়িতে ।
কাঞ্চনবাবু ও কমল ওখানে পৌছানোর পরে দেখলেন প্রদীবরায়ের বোনের ছেলে বাড়িতে নাই ।
কমল ঐ বাড়ির একজন কাজের লোকছিল তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল তোমার কর্তা কোথায় উনি বলল দাদাবাবু আজ অনেক সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন যাওয়ার সময় বলছে উনি আসতে লেট হলে আপনাদের বসতে ।
দাদা আপনেরা বসুন আমি আপনাদের চা নাস্টা ব্যবস্থা করছি ।
কাজের লোকটি চা নাস্টা ব্যবস্থা করতে চলে গেলেন এর মধ্যে
কমল ও কাঞ্চনবাবু বাড়িটি একটু গুরে ফিরে দেখছেন ।
হঠাৎ করে কাঞ্চনবাবুর নজরে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলে যে বন্দুকটি দিয়ে শিকার করে সে বন্দুকটি তার নজরে পড়লো । কাঞ্চন বাবু বন্দুক হাতে নিয়ে বন্দুকের ভিতরে থাকা গুলিগুলো চেক করলেন । কাঞ্চনবাবু দেখলেন বন্দুকে ভিতর থেকে শুধু একটি গুলি খরচ হয়েছে বাকি সবগুলো গুলি বন্দুকের ভিতরে আছে । সব থেকে বেশি চিন্তায় পরে গেলেন কাঞ্চনবাবু এই ভেবে প্রদীব রায়ের শরীরে যে গুলি পাওয়া গেছে সে গুলি আর এই বন্দুকের ভিতরে থাকা গুলি একই গুলি যাই হোক কাঞ্চনবাবু বিষয়টি মাথায় রাখলেন । কমলকে তখন কাঞ্চনবাবু কিছু বললেন না ।
কমল ও কাঞ্চনবাবু বসে কথা বলছেন এর মধ্যে অনেকটা সময় পার হতে চলছে কিন্তু ভাগ্নের কোন খবর নাই । তাই তারা চিন্তা করলেন ঐদিনকার মত চলে যাবে এরই মধ্যে প্রদীবরায়ের বোনের ছেলের কন্ঠ শুনতে পেলেন ।
উনি ভিতরে প্রবেশ করলো পরে তিনজন মিলে চা টেবিলে বসলেন চা খাওয়ার মাঝে কমল কাঞ্চনবাবুর সাথে ভাগ্নের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ।
তো কাঞ্চনবাবু ভাগ্নেকে জিজ্ঞাসা করলেন যে সময় উনি মারা গেলেন সে সময় আপনি কোথাই ছিলেন । জি স্যার আমি ঐ সময়টা ঠিক মামা যে বনের পাশে পরেছিলেন গুলির আঘাত অবস্থায় আমি ঠিক সে সময় বনের ভিতরে ছিলাম সন্ধা তখন পুরপুরি হয় নাই কিছু আলো দেখা যাচ্ছিল এর মধ্যে আমি একটি হরিনের পিছু নিলাম এক সময় হরিণটিকে টার্গেট করে আমি গুলি করলাম হরিণটি পালিয়ে যায় আর তখন কে যেন একজন চিৎকার করলো সাথে সাথে বনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ওখানে একটি পরে আছে আমরা তার কাছে গেলে দেখতে পাই উনি আর কেও না উনি আমার মামা ।
পরে মামাকে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার তখন মামাকে মৃতু বলে আমাদের জানান ।
কাঞ্চনবাবু বলেন হুম বুঝেছি ঘটনা আচ্ছা ওখানে আপনেরা ছাড়া আর কেউ ছিল না স্যার ওখানে আমারা ছাড়া আর কেউ ছিলনা ।
কাঞ্চনবাবু তখন তার পকেট থেকে একটি গুলি বের করে ভাগ্নেকে দেখালেন দেখুনতো এই গুলিটি চিনুন কি না ভাগ্নে বল্ল হ্যা স্যার এটা আমার বন্দুকের গুলি ।
ঠিক ধরেছেন এই রকম একটি গুলি আপনার মামার শরীরে পাওয়া যায় ।
স্যার আপনি কি বলতে চাচ্ছেন একটু খুলে বলবেন ।
হুম বলছি আগে থানায় চলুন । হুম কমল তুমি ঘটনার রহস্য কিছু বুঝেছ হ্যা দাদা আমাকে আর কিছু বলতে হবে না আমি বুঝেছি ।
ভাগ্নেকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন । কমল গাড়িতে উঠে কাঞ্চনবাবুকে বলেন দাদ আপনি আসলে একজন গভীর জ্বলের মাছ । আপনি না থাকলে এ রহস্যের কোন কূল কিনারা করতে পারতাম না । দাদা আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ ।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৬০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন