শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি...
লিখেছেন লিখেছেন নিরবে ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৮:১৮ সকাল
প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা(যদিও অবৈধ)
আসসালামু আলাইকুম।সাধারন মানুষকে কষ্টে ফেলে ভালো আছেন কিনা জানিনা। মানুষ হলে ভালো থাকার কথা নয়। যাহোক আমাকে আপনি চিনবেন না। কিন্তু আমি আপনাকে আরও হাজারো নিপীড়িত বাংলাদেশীর মত হাড়ে হাড়ে চিনি।
আপনাকে আমি কিছু কথা আজ স্মরন করিয়ে দিতে চাই।
আমি খুব সাধারন একটা মেয়ে । মধ্যবিত্ত পরিবারের বড়সন্তান।আমার বাবা একজন শিক্ষক । আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বেচে থাকাকালিন কোন সনদ নেননি কারন তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ সনদের জন্য নয়। আমার দাদির মুখে শুনেছি গ্রামে যারা রাজাকার ছিল তারা এখন নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছে !!
আমার বাবা সহজ সরল একজন মানুষ । তিনি ইসলামকে ভালবাসেন, ইসলামের বানি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান। আমাদের জীবনে কোন কষ্ট ছিলোনা আপনি ক্ষমতায় আসার আগে। আপনি ক্ষমতায় আসলেন , আমাদের সবকিছু ওলট পালট হয়ে গেল। আমি সেই সময় মাত্র কলেজে যাওয়া শুরু করেছি। আমার ভাইবোনগুলো সব ছোট। শুরু হল পুলিশি ধরপাকড় । আব্বু বাড়ির বাইরে থাকা শুরু করলেন। ভাইটা বাইরে থাকা শুরু করল। আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি অন্য শহরে এক কলেজে ভর্তি হলাম। তারপরও আমার রক্ষা হল না। আমাকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করা হল। আমি আমার এই জীবনটাকে বনাস মনে করি । কারন সেদিন আমি প্রায় কিডন্যাপ হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি অলৌকিকভাবে বেচে যায়। পুলিশ আমাদের বাড়ি আসা শুরু করে রাতে দিনে সবসময় । আম্মার নিরাপত্তার কথা ভেবে আব্বু সবাইকে নানাবাড়ি পাঠিয়ে দেন। আমি থেকে যাই সেই শহরে একা। আব্বু আত্নগোপনে ছিলেন সেই একই শহরে।
কিছুদিন পর আমার নানাবাড়িতে পুলিশ যায়। আম্মাকে গ্রেফতার করতে। আম্মা অন্যজায়গায় ছিলেন সেদিন। আলহামদুলিল্লাহ তিনি বেচে যান। এরপর পুলিশ আমাদের বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়। যদিও একটা নড়বড়ে টিনশেড বাড়ি তবুও সেই বাড়ির মালপত্র তছনছ করে ওরা ।
এই ঘটনাটা ঘটছে ২ বা ১ মাসে না। প্রায় সাড়ে তিন বছর। আম্মা ভাইবোনগুলোর পড়ালেখার কথা চিন্তা করে আবার শহরে আসলেন ।বাসা ভাড়া নিলেন। ওদেরকে স্কুলে ভর্তি করালেন। আব্বু তখন ক্রসের আসামি।
সত্যি কথা বলতে কি এখন তিনি ক্রসের আসামি। আব্বুর খুব কাছের ২ জন ক্রসে মারা গেছেন।
আব্বুর চাকরী গেছে , আম্মা একটা চাকরী জোগাড় করেছেন। সংসার চালাচ্ছেন অসীম ধৈর্য সহকারে।
এতকিছুর উপর এখন দারোগার স্ত্রীর নজর পড়েছে আমাদের বাড়ির জমিটাতে। সে তিনবেলা খবর পাঠাচ্ছে বাড়িটা বিক্রি করার। দাম দিবে অর্ধেকের ও কম। আম্মা ভয় পাচ্ছেন আমার ছোট ভাইকে নিয়ে। ওরা ওকে কিডন্যাপ করে মুক্তিপন দাবি করবে কিনা, অথবা এভাবে বাড়িটা হাতিয়ে নেবে কিনা।
এই হলো মোটামুটি আমাদের অবস্থা । আমার বাবার নামে যে কেস সেগুলো ভিত্তিহীন।
অর্থনৈতিকভাবেও আমরা খুব ভালো নেই।
আমার নিজেরই তিনবেলা খাওয়ার টাকা নেই।এই মাসেরও হোস্টেল ভাড়া না দিলে ওরা আমাকে বের করে দিবে। বাবার ও সেই একই অবস্থা। এতসব আপনাকে বলছি কেন? কারন এখন ও আশা করি ন্যায়বিচারের। নিশ্চিতভাবেই ১৯৭১ সালে দাদা এজন্য যুদ্ধ করেননি যে তার বংশধরেরা বিনা অপরাধে তিলে তিলে মরবে।
আমি একা নই । আমার মত হাজারো মেয়ে , ছেলে, হাজারো পরিবার এই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। হয়ত আমার চেয়ে অনেক বেশী কষ্টে তারা আছে। আমি শুধু এই হাজার মানুষের একজন। আমার গল্প সেই হাজার গল্পের একটা।
আশা করছি একদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এই বাংলায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আশা করছি একদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এই বাংলায়
ইনশাল্লাহ
আন্তরিক ভাবে দোয়া করি মহান আল্লাহ আপনাদের পরিবারকে এই কঠিন পরিক্ষায় পাস করার তৌফিক দান করুন। পরিবারিক সম্পদ আল্লাহ হেফাজত করুন।
সাহাবাদের মক্কা জিন্দেগীর মত ইমতেহান দিয়ে যাচ্ছেন আপনারা। আর আমরা বিদেশে কত আরামে দিন কাটাচ্ছি। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়
আপনাদের সমবেদনা জানানো ভাল লাগল
বিপদ যত বড়ই হোক চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু প্রতিটি বিপদের বিনিময়ে আল্লাহ চিরস্থায়ী অনুগ্রহ বরাদ্ধ করেন...
মন্তব্য করতে লগইন করুন