সেদিন রোকেয়া কেদেছিল... (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন নিরবে ২১ মে, ২০১৫, ১০:০৭:১৫ রাত
একটা বাচ্চা ছেলে বাইরের দরজার দাড়িয়ে বাড়ির ভেতরটা নিরীক্ষন করার চেষ্টা করে।
রোকেয়া ঘোমটা টেনে আওয়াজ দেয় ,
"কি রে বাবা , কারে চাইস?"
"বুবু, এটা আব্বায় আপনারে দিতে কইছে"। কথাটার রেশ বাতাসে মিলিয়ে যাবার আগেই একটা হলুদ খাম ধরিয়ে দিয়ে ছেলেটা উধাও হয়ে যায়। মনে মনে হাসে রোকেয়া। কি কপাল তার!
বুবু হবার বদলে সে মা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আচ্ছা এটা ভালো না খারাপ? নিজেকে প্রশ্ন করে ও। মাসুম বেচে থাকলে আজকের দিনটা হয়ত অন্যরকম হত। ১ম সন্তান নিয়ে ওরা ২ জন একসাথে স্বপ্ন দেখত। আর...
"রোকেয়া ...রোদে দাড়িয়ে কি করছিস...
ঘরে আয়..." মায়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় ও। যায় মা।
বিকালে চিঠিটা পড়ে আশ্চর্য হয়েছিলো রোকেয়া । শ্বশুর আব্বা তাকে নিতে আসবেন খুব শিঘ্রই। সত্যি!!!
পরের সোমবার রোকেয়া ওর স্নেহময়ী মাকে ফেলে চলে গেল শ্বশুরবাড়ি। সব কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে । মাসুমের ঘরটা কালো অন্ধকার হয়ে আছে। রোকেয়া একবার ও যায়নি ও ঘরে। শুধু দূর থেকে একপলকে তাকিয়ে থাকে। ছোট দুই দেবর এসে সালাম দিয়ে দাড়ায় ।
"ভাবি শরীর ভালা?"
"হ্যা ভাই ভালো ।"
নিজেকে সংকুচিত করে ফেলে রোকেয়া। ও বেচে থাকতে এদের সাথে কথা বলত না সে। দ্রুত পায়ে হেটে নিজের ঘরে গিয়ে ঢোকে ও। শ্বাশুড়ি মা তিন বেলা খাওয়ার জন্য তাগিদ দেন । যত্ন আত্নির ত্রুটি করেন না। তিনিও তো মা তাই হয়ত আরেক আভাগী মায়ের দু:খ বুঝতে পেরেছেন। কটু কথা যে একেবারে শোনে না ও তা নয়। পড়শীরা সবাই ওকে শাপ-শাপান্ত করে।
" ইস রে। ছুড়ির একটুও দয়া মায়া নেই। কেমন করে গপ গপ করে খাচ্ছে দেক দিকি"।
হাসে রোকেয়া আর খাওয়ার গতি আরও বাড়ায় । তার সোনা মানিকটার যে খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ওর জন্যই তো এখনও রোকেয়া হাসে, স্বপ্ন দেখে আর গভীর রাতে জোছনার দিকে তাকিয়ে ওর বাবার সাথে কথা বলে।
পরদিন গোসল করতে গিয়ে রোকেয়া দেখে ওর হাত পা কেমন ফুলে গেছে। আয়নার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ও ভয় পেয়ে যায়। কি ভয়ন্কর দেখাচ্ছে ওকে। " না, এটা রোকেয়া না। " বিড়বিড় করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ও।
চোখ মেলে দেখে চারপাশে ওনেক মানুষ। সবাই কেমন ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে। ওর শ্বাশুড়ির মুখটা চিনতে পারে ও। তাকে কেমন জানি হতাশ দেখাচ্ছে। ডাক্তার এসে বললেন , " বিষ সবটা বের করা যায়নি। ওর রক্তে কিছু মিশে গেছে। তমনে হয় বাচ্চা বাচবে না। "
মাথাটা আরেকবার ঝিম ধরে হঠাত রোকেয়ার সামনের সব আলো নিভে যায় ।
আজ ২ মাস রোকেয়া বাপের বাড়ি চলে এসেছে। শ্বশুরবাড়ির এলাকায় রটে গেছে রোকেয়া বিষ খেয়েছিলো ,বাচ্চা মেরে ফেলতে চাইছিল ইত্যাদি। ওর বিবেকে সায় দেয়নি বলতে যে ওর শ্বাশুড়ি মা ওর খাবারে বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে চাইছিলেন।
ওরা এই পরিকল্পনা করেই ওকে নিয়ে গেছিল ওবাড়ি। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? রোকেয়া বেচে আছে আর ও জানে ওর সন্তান ও বেচে আছে। আর কিছুদিন পরই তো ও এই জগতের আলো দেখবে...
হয়ত রোকেয়া ভাবিদের মুখ ঝামটা আরো বেশী শুনবে, পড়শীদের কানাকানিও বাড়বে, কিন্তু তবুও ওর সোনামানিক এই দুনিয়ায় আসবে। কারন স্রষ্টার নিশ্চয় কোন সুনিপুন পরিকল্পনা আছে। তার ভরনপোষনের চিন্তা রোকেয়া করে না, শুধু চিন্তা ওর বাচ্চার নাম কি হবে , দেখতে কেমন হবে এসব। নিজের মনে বলে ও "কিরে তুই আমার দু:খ দুর করবি নে, সোনা?"
এতদিন পর আজ এক ফোটা ওশ্রু রোকেয়ার মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। সেই ওশ্রু যেন ওকে সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে দাড়ানোর শক্তি এনে দেয়।
বিষয়: সাহিত্য
১০৪৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রোকেয়ার জন্য আসলেও মনটা কেঁদে উঠলো! মানুষ আজ মানুষের কাতারে নেই!
মর্মান্তিক ঘটনা গল্পাকারে শেয়ার করারা জন্য শুকরিয়া!
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।এটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। মেয়েটা এখন সন্তান জন্মের অপেক্ষায় আছে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন