সেদিন রোকেয়া কেদেছিলো...
লিখেছেন লিখেছেন নিরবে ২০ মে, ২০১৫, ১১:২৪:২৮ রাত
বিয়ার আগে আপনি আমারে দ্যাখছেন!!! মাসুমের দিকে তাকিয়
বিস্ময়ে ও লজ্জায় আধমরা হয়ে রোকেয়া প্রশ্ন করে ।
"হুম, দেখছি না? দেখছি তো । খালার বিয়েতে গিয়ে তোমারে পরথম দেখছিলাম বউ। তুমি খালার পাশে বসে ভেউ ভেউ করে কাদছিলে যে..."
লজ্জায় রোকেয়ার মুখ এতটুকু হয়ে গেল আবার।
সত্যিই এই মানুষটা তাকে বিয়ে করার জন্য বলা যায় আদা জল খেয়ে লেগেছিলো। কতবার যে রোকেয়ার আব্বাজান ফিরিয়ে দিয়েছেন মাসুমকে তার ই্য়ত্তা নেই। কিন্তু তবুও এই মেয়েকে তার বিয়ে করা লাগবে। বিয়ের আগে রোকেয়া মাসুমকে দেখেছে বলে মনে পড়ে না। কিন্তু তার এই পাগলা বরটা তাকে দেখেছে । ফিক্ করে হেসে ফেলে রোকেয়া। মাসুম সেটা ধরে ফেলে। "এই ক্যান হাসলা তুমি? "
"এমনি"।
একটা কিছু বলবে মাসুম তখনই রোকেয়া খেয়াল করলো মানুষটার মুখ কেমন জানি বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। যেন কেউ মাসুমের দেহটা দুমড়ে মুচড়ে সবখানি প্রানশক্তি বের করে নিচ্ছে।
"কি হইচে আপনার? কষ্ট হচ্ছে ? কোতায় কষ্ট হচ্ছে?"
মা, ওমা আপনার ছেলে কেমন জানি করতেছে। ও মা , মা..."
চিতকারে পুরা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে রোকেয়া। সবাই ছুটে আসে । গ্রামের বাড়ি।আশপাশের লোকজনও আসে এগিয়ে।
মাসুমের মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না। ওর মা সমানে কাদছেন। রোকেয়া সারা বাড়ি ছুটোছুটি করছে।একবার পানি নিয়ে আসছে , একবার তেল নিয়ে আসছে। ও ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে। এরই মধ্যে সবাই ওকে দোষ দিচ্ছে, গালিগালাজ করছে, কেউ অভিশাপ দিচ্ছে।
কেউ একজন ডাক্তার নিয়ে আসলো। ডাক্তার দ্রুত ঢাকায় নিতে বললেন। বুক ভেঙে কান্না আসছে রোকেয়ার। মাত্র ৬ মাসেই সে এই মানুষটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। এতটা কষ্ট পাচ্ছে মাসুম কিন্তু রোকেয়া কিছু করতে পারছে না। আ্যম্বুলেন্সে উঠবে তখন কেউ ওকে যেতে দিলনা।
ও নাকি এই বাড়ির জন্য অভিশাপ। চলে গেল মাসুমের আ্যম্বুলেন্স ।আর কিছুক্ষন পর চলে গেল মাসুম। খবরটা শুনে রোকেয়া একটুও কাদেনি।
ওকে বাপের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করা হলো। যাবার আগে ওর শাশুড়ির হাত ধরে ও বলেছিল " মা ,আমার পেটে মাসুমের সন্তান।" বিস্ময়ে হা করে তাকিয়ে রইলেন ওর শ্বাশুড়ি। এর মধ্যেই ওর আব্বাজান ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে ভ্যানে উঠালেন। রোকেয়া শুনলো ওর শ্বাশুড়ি ওকে আবার গালি দিচ্ছে। তখনো কাদেনি রোকেয়া।
আজ ১ মাস হলো রোকেয়া বাপের বাড়ি এসেছে।এতটুকু মেয়ে বিধবা জেনে সবাই সহানুভুতি দেখায়। এই বিধবা শব্দটা রোকেয়া খুব ওপছন্দ করে। এটা যেন ওর কলিজা ফালি ফালি করে কেটে ফেলে। বাপের বাড়িতে কেউ ওর অযত্ন করেনি কিন্তু তবু ওর মন পড়ে থাকে শ্বশুরবাড়ি।ওর সন্তান বাপ-দাদার ভিটায় জন্মাক এটা ও মনেপ্রানে চায়।
(চলবে) আগামী পর্ব শেষ পর্ব।
বিষয়: সাহিত্য
১০৪৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপুজি । পরের পর্বের আমন্ত্রন রইল
খুবি ভালো লাগলো গল্প(জীবন থেকে নেয়া?) এবং লিখার স্টাইলটি! পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায়.....
আমাদের সমাজে রোকেয়ারা বড়ই অসহায়.....
এরখম করে কেউ লেখে যে নিশ্বাস নেবার সময় পাওয়া যায় না
এই যে আপপপপি
ধন্যবাদ
পেরের পর্ব কই? লিংক প্লিজ
মন্তব্য করতে লগইন করুন