সুমনের গল্প.।.।.।.।.।।
লিখেছেন লিখেছেন সমাধান ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:২৬:১৮ সকাল
সুমন ১৩/১৪ বছরের একটি সুন্দর মনের বালক। ক্লাস ৯/১০ এ পড়ার সময়ের গল্প বলছি।যেমন তাঁর মন তেমনি তাঁর ব্যবহার সব গুনে গুণান্বিত।
চারিদিকে সুমনের শুধু নামডাক। এ বলে সুমনের মত ছেলে হয়না ও বলে ইশ আমার যদি সুমনের মত একটি ছেলে থাকত। সেই সুমন আজ.।। কি? সুমন আজ আর সুন্দর মনের মানুষ নয়, সুমন আজ কু মনের অধিকারী ওর চারিদিকে শুধুই অন্ধকার নেশা,
যত ধরনের খারাপ কাজ আজ তাঁর সঙ্গী, আজ সবাই ওকে বাজে ছেলে বলে। কিন্তু কেন?.।.।.। কেন সুমন খারাপ হল? কিভাবে? এই সব কাহিনি জানবেন? তাহলে আর একদিন গল্প বলব সুমনের নষ্ট হবার গল্প, বুক ফেটে কান্নার গল্প।
পাঠক আজকেই কি বুক ফাটার গল্প শুনতে চান?
না আজকেও না, আজও আপনাদের বলব সুমনের সুখেরি কিছু কথা। যদিও আজ এই ভোর বেলায় যখন এই লেখা লিখছি তখনও সুমনের বুকের মাঝে হু হু করে বইছে কোন এক টর্নেডো। সুখের গল্প অল্পতেই শেষ করবো তারপর, তারপর এক এক করে সব খুঁটিনাটি। মন খারাপ হল নাতো? ১৯৯৮-২০০৩ সুমন যে দিকে হাত বাড়ায় সেই খানেই সাফল্য।
বেরথ হতে চাইলেও সফলতা এসে ওর পায়ের কাছে পরে। চারিদিকে সফলতা আর টাকা আর কি চাই জীবনে? ১৯৯৮-২০০৩ সুখের গ্রাফ যেমন তর তর করে উপরে উঠছিল তেমনি না না তারও দ্রুত নামা শুরু হল পতনের দিকে।
২০০১ সালে বাবা-মা পরিবারের পছন্দে বিয়ে নামক গলায় ফাঁশির দড়ি ঝুলিয়া নিল সুমন নিজের গলায়।
বিয়ের প্রথম রাত থেকেই প্রবলেম নামক জীবনের শুরু.।.।.।.।.।
বিয়ে ২০০১ এর ৪ আপ্রিল,বাসর রাত ৪ জুন। বাসর রাতে বৌ এর প্রথম কথা আমি শিক্ষিত!!!!! এবং বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে আমি জীবনে খাবার পর প্লেটটিও কখনও পরিষ্কার করি নাই "so remember about it".আমার তো আক্কেলগুরুম হবার জোগাড়, বলে কি এই মেয়ে। সে তাঁর সব কথা বলা শেষে সারমর্ম হোল সে সাংসারিক কোন কাজ করতে পারবে না এবং আমাকে "ঘর জামাই" হিসাবে তাঁর বাবার বাসায় থাকতে হবে অথবা সংসার খান খান হয়ে যাবে। আমার মাথায় ততক্ষণে আকাশ ভেঙ্গে পরেছে। অনেক বোঝানোর পরেও যখন সে তাঁর অবস্থানে অনড় সেই দিনের মত মনের মধ্যে একটা খসখসানি ভাব নিয়ে শুয়ে পরলাম। দিন যতই বয়ে যায় তাঁর দাবী ততই জোরাল হতে থাকে, আর হতে থাকে আমাদের মাঝে দুরত্তের সৃষ্টি। আমাদের মাঝে যখন যোজন যোজন মাইলের দূরত্ব তখনও শুধু আমরা দুইজন ছারা কেউ এই ব্যাপার গুলো জানে না, কারণ ওই একটা অনুরধ সে আমার রেখেছিল। আমি জানতাম আমি বা আমরা সুখী নই এইটা আমার বাবা-মা জানলে খুবই কষ্ট পাবে। দিনের বেলা আমরা সবার সামনে খুবি হাসিখুশি থাকতাম কিন্তু রাত হলেই আমাদের মাঝে নেমে আসত রাজ্যের নিরবতা। বিছানায় আমি একদিকে আর ও অন্য দিকে মুখ করে শুইতাম। কখনও কখনও ১/২/৩ মাসে একদিন হয়তো প্রচণ্ড শারীরিক যন্ত্রণার কারণে আমরা একসঙ্গে হতাম। অনেক বুঝানোর পরেও যখন তাকে তাঁর অবস্থান থেকে সরাতে পারলাম না, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম পৃথক হয়ে যাবার। ইতিমধ্যে বাবা-মাও অনেক কিছুই বুঝে ফেলছেন। প্রায় ২ বছরের মাথায় তালাক দিলাম। তালাকের কাগজ হাতে পাবার পর সে আমাকে জানালো আমার জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সংবাদ যে সে গর্ভবতী...............।
এখন? এখন কি করবো? মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হচ্চিল। সিদ্ধান্ত নিলাম আগামী প্রজন্মের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবো। এরপর শুরু যোগাযোগ, এখানে ওখানে ধর্না ধরা। কিছুই হচ্চিল না। চেয়ারম্যান, এম পি, গণ্যমান্য বাক্তি বর্গ কেউই কিছু করতে পারছিলনা। শেষমেশ দুই জন মিলে বৈঠকে বসলাম ওর এক বান্ধবীর বাসায়, ইতিমধ্যে আমার একটি ফুটফুটে ছেলে জন্মায়। ওর জন্মের পর আমি আরও পাগলপ্রায়।
২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমার সন্তানের জন্ম আর আমি ওকে প্রথম দেখি ২০০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী।
প্রথম সন্তান আর প্রথম দেখা বুকে জরিয়ে নিয়ে আবেগের সাগরে ভাসতে ভাসতে ওর( আমার সন্তানের মা ) হাত ধরে নিয়ে বের হয়ে পরলাম ওর বান্ধবীর বাড়ি থেকে, বার বার মনে হচ্ছিল চেয়ারম্যান, এম পি, গণ্যমান্য বাক্তি বর্গ যেখানে প্রব্লেমের সমাধান করতে পারে নাই আমার সন্তান আজ সেই সমাধান করে ফেলল। সমাধান, সমাধান, সমাধান সব কিছুর সমাধান। সমাজ ভয় দেখাল আমাদের বহিষ্কারের, বাবা-মা ভয় দেখাল ত্যাজ্য বানানের কিন্তু কোন কিছুই আজ আমাকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারল না।
আমি, আমার সন্তান আর ওর মা নতুন ভাবে জীবন শুরু করলাম।
২য় বারের নতুন দাম্পত্য জীবন, ছেলে বৌ নিয়ে ভালই জীবন কাটাতে লাগলাম কিন্তু.।.।.।.।.।.।।
কথায় আছে কপালে সুখ না থাকলে ঢক ঢকই হবে কি?
সব চেষ্টাই আমার বিফলে গেল বনিবনা না হওয়াতে ২০০৭ সালে আবার তালাক। "তালাক দিলাম ও মন তরে তালাক দিলাম" প্রথম পর্বের আর একটু বাকি অনেক কেস মেস শেষে বাবুটা আমার কাছেই থাকল আজও আছে।
দ্বিতীয় পর্বের শুরু.।.।.।.।।
প্রথম বৌকে তালাক দিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করলাম, এবার আমার জীবন সঙ্গী আমার ৪ বছরের সন্তান। ভালই চলছিল জীবন কিন্তু ভুলে ভরা মানুষ আমি ভুল না করে থাকব ক্যামনে?
বাবা-মা আবার আমার জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু করল। বাবা-মা কে আবারো কষ্ট না দেয়ার জন্য আবার বিয়ে করবো না আই চিন্তা করে বললাম বিধবা কোন মেয়ে পেলে বিয়ে করবো। আমার ধারণা ছিল বিধবার কথা শুনে বাবা-মা হয়ত আপাতত পিছিয়ে পড়বে।
কিন্তু বিধি বাম ওনারা ঠিকই বিধবা মেয়ে জোগাড়ও করে ফেললেন, মেয়ের জীবনে বিশাল tragedy বিয়ের ৩ দিনের মাথায় রোড দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু এমন একজন বিধবা। চিন্তায় পরে গেলাম "কি করা উচিত?" পরিবারের সবার চাপে আবারো ভাবতে বাধ্য হলাম। কথা বলতে চাইলাম মেয়ের সঙ্গে, দিন তারিখ ঠিক হল, খুলে বললাম সব কথা পূর্বের বৌ দাম্পত্য জীবন,বাচ্চা সব সব কিছু খুলে বললাম। সেও সব কিছু কে গ্রহন করল খুবই স্বাভাবিক ভাবে। এদিকে আমার ছোট ভাইটারও বিয়ে ঠিক। বাবার কথা একই দিনে দুই বৌ বারিতে আনব। আমিও ওকে বলে দিলাম, কিন্তু কে জানত আমার এই ওকে বলার ভিতরেও লুকিয়ে আছে আমার জীবনের আর এক চরম অধ্যায়? ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিয়ে করে দুই ভাই বৌ নিয়ে আনলাম বাড়িতে। আমার ৪ বছরের ছেলেও খুশি তাঁর নতুন "মা" কে পেয়ে। সন্তানের আনন্দে আমার চোখে আনন্দাশ্রু। আমিও সকল কষ্ট ভুলে গেলাম ভাবলাম যাক আইবার আমার জীবনে সুখ ভোর করল.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।২০০৭-২০০১৪ আজ যখন এই লেখাটি লিখছি তখন আমার এই পক্ষের দুই দুটি সন্তান একটি ডিজিটাল আব্দুল্লাহ আল শাকিব আর একটি পুতুল জান্নাতুল ফেরদৌস মাইশা। আজ ১৪/১২/২০১৪ রাত ৩।০৩ মিনিটে আমি শুধু একা আমার পাশে না আমার জীবন "সাথী" না প্রথম পক্ষের "আব্দুল্লাহ আল শাফি", দ্বিতীয় পক্ষের ডিজিটাল "আব্দুল্লাহ আল শাকিব" ও পুতুল "জান্নাতুল ফেরদৌস মাইশা" কেউ নাই আমার পরিবারের কেউ আমার পাশে নেই কারণ.।.।.।.।.।.।????????? পাঠক যদি জানতে চান কেন নাই তবে মতামত দিন জানাব, মন খুলে সব জানাব।
"একা আমি একা আমার আপন কেউ নাই.।.।.।.।।।"
বিষয়: বিবিধ
৪৬৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন