ইন এ রিলেশনশীপ উইথ ..

লিখেছেন লিখেছেন অপার্থিব ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫৯:০৮ বিকাল

জানিস ফাষ্ট ইয়ারে না জটিল কিছু মেয়ে ভর্তি হয়েছে বন্ধু সুদীপ্ত বলল। আমি বললাম তাই নাকি। বন্ধু বলল চল যাই দেখে আসি। বয়সের তাড়না কিংবা কৌতুহল যাই বলি না কেন এক পা দুই পা করে ফাষ্ট ইয়ারের ক্লাসের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।দেখলাম ক্লাস থেকে লম্বা লিকলিকে একটা মেয়ে বের হয়ে আসছে। এটাই ছিল তাকে দেখার আমার প্রথম মুহুর্ত। নারীর প্রতি পুরুষের জৈবিক আকর্ষনই হোক কিংবা কবিদের ভাষায় কাব্যিক প্রেম যাই বলি না কেন তাকে দেখে বুকের মধ্যে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম। এই ব্যাথা কেই মনে হয় বলে সুখের মত ব্যাথা।

একের পর এক দিন চলে যায়।আমিও সুযোগ পেলে ফাষ্ট ইয়ারের ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে থাকি।আমার কাতর নয়ন দুটি খুজে ফিরে এক পরিচিত মুখকে।যদি তাকে একবার দেখতে পাই তখন মনে হয় অন্তত আজকের জন্য আমার জীবনটা সার্থক।কিন্ত এভাবে আর কত দিন ?একদিন মনে হল যাই তাকে গিয়ে বলি আমার হ্নদয়ে তার জন্য জমে থাকা তীব্র ভালবাসার কথা।হ্নদয় বলছে আমার তীব্র আবেগময় এই ভালবাসার আবেদনকে সে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।কিন্ত যুক্তি বলছে অন্য কথা।আমি গ্রাম থেকে আসা তথাকথিত আনস্মার্ট ছেলে। ঠিকমত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।রেজাল্টও খুব একটা ভাল না। সে কি রাজী হবে? হ্নদয় বনাম যুক্তির লড়াই কিছু দিন চলল।শেষপর্যন্ত ঠিক করলাম কিছুদিন অপেক্ষা করবো এর মধ্যে নিজেকে আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। তিনটা টিউশনী নিলাম।এক মাসে বেতন পেয়ে নিউ মার্কেট থেকে নুতুন শার্ট প্যান্ট কিনলাম।পাশাপাশি গুছিয়ে কথা বলার প্র্যাকটিস করতে লাগলাম নিয়মিত। প্রতিদিন শার্ট প্যান্ট পরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে দেখি আর উপলদ্ধি করার চেষ্টা করি আর কতটা আধুনিক হওয়া সম্ভব আমার পক্ষে। ইতমধ্যে বুঝতে পেরেছি কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিতে পেরেছি নিজেকে এবং অন্যদের। কারন বন্ধু বান্ধবদের অনেকে একটু অন্য চোখে আমার দিকে তাকায়। তাদের বিস্মিত দৃষ্টি দেখে আমার আত্ববিশ্বাস আরও বাড়তে লাগলো।সেই সঙ্গে পড়াশোনা করতে লাগলাম নিয়মিত। শুনেছি সুন্দর মেয়েরা নাকি ভাল রেজাল্ট ধারীদের গুরুত্ব দেয়। এভাবেই চলতে লাগলো আমার দিন। এদিকে আমার হ্নদয় গর্ভে জন্ম নেয়া ভালবাসা নামক ভ্রুণটির বয়স প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ছে।প্রতিদিন একটু একটু করে সে পুর্ণতার দিকে এগোচ্ছে। হটাৎ একদিন মনে হল আচ্ছা ফেসবুক থেকে ওকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাতেতো পারি। যা ভাবা তাই কাজ।ওই দিনই ফেসবুকে ওর আইডি খুজে বের করে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠালাম। এরপর প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুকে নোটিফিকেশন চেক করে দেখি। কিন্ত না কোনো রেসপনস নেই।আমার হতাশা দিনকে দিন বাড়তে লাগলো। তারপর একদিন নোটিফিকেশনে কনফ্রামেশন মেসেজ পেলাম। সেদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিনগুলোর একটি। মনে হল প্রেম নামক মহাযুদ্ধের প্রথম লড়াইটা আমি বিশাল ব্যবধানে জিতে নিয়েছি।এরপর প্রতিদিন ফেসবুকে ঢুকে ওর ষ্ট্যাটাস পড়া, লাইক দেয়া,কমেন্ট করা আমার প্রাত্যহিক কাজের অংশ হয়ে গেল। এরই মধ্যে সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেল। অতিরিক্ত টেনশন এবং ফেসবুক আসক্তির কারনে পরীক্ষা খুব একটা ভাল হল না। পরীক্ষার পর এক সোমবার আমাদের ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক অনুষ্ঠানের দিন ঠিক হল।ঠিক করলাম ওই দিন অনুষ্ঠানে শেষে ওর সামনে দাড়িয়ে বলব আমার দীর্ঘ দিনের অব্যক্ত ভালবাসার কথা।এও ঠিক করলাম ও যদি রাজী হয় তাহলে ওকে একদিন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একবার তুমি কবিতা আবৃত্তি করে শোনাবো । আগের রাতে কি বলবো তা বারবার প্র্যাকটিস করছি আবার টেনশনে কিছুক্ষন পর তা ভুলে যাচ্ছি। হটাৎ মনে হল আজ সারাদিনে তো একবারও ফেসবুকে ঢোকা হয়নি । তাই তাড়াতাড়ি ফেসবুকে লগইন করে ওর প্রোফাইলে গেলাম। সেখানে নুতন একটা ষ্ট্যাটাস,ইন এ রিলেশনশীপ উইথ .. ।

আমার হ্নদয় চূর্ন বিচূর্ন ,দেহ রক্তশূন্য । মনে হল যদি পৃথিবী যদি সত্যিই কখনও ধ্বংস হয় তবে আজই হোক না কেন। কিবা এসে যায় তাতে।হটাৎ আজ অনেকদিন পর বুকের মধ্যে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম এই ব্যাথা সেই প্রথম দিনের ব্যাথা থেকে সম্পুর্ন আলাদা।এই ব্যাথা হ্নদয়ে রক্ত ক্ষরনের ব্যাথা। মনে হল কে যেন চাবুকের আঘাতে প্রতিনিয়ত আমার হ্নদয়কে জর্জরিত করছে ।একটু একটু করে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে সেখান থেকে।

আমি প্রায়ই পুর্নিমার রাতে পদ্মার তীরে বসে জ্যোস্না দেখি। প্রকৃতির রুপে মুগ্ধ হই,বিষন্ন মনে জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলাই । রাত যত গভীর হয় পুর্নিমার উদ্ভাসিত আলোয় আলোকিত হতে থাকে পৃথিবী । শুধু আমার হ্নদয় কুঠরীতে অমাবশ্যার তীব্র অন্ধকার ।কার সাধ্য সেই কুঠরীতে একটু অপার্থিব চাদের আলো পৌছায় ?

বিষয়: বিবিধ

৯২৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262157
০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৩৬
কাজি সাকিব লিখেছেন : Happy I Don't Want To See

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File