হঠাৎ একদিন !

লিখেছেন লিখেছেন নীল অভ্র ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:২৭:৪০ রাত

বই পড়ার আমার অত অভ্যাস নেই। বই পড়তে একটা অন্যরকম ধৈর্য্য লাগে। সবার মধ্যে তা থাকে না। আবার মাছ ধরতেও ধৈর্য্য লাগে। আমার সেটা নেই। নেই বলেই বই পড়তে ভাল লাগে না। তবে ভাল না লাগলেও মাঝে মাঝে পড়তে ইচ্ছে হয়। আর ইচ্ছে হলেই চলে যাই বইএর দোকানে। তিন-চারটা বই একসাথে নিয়ে একেবারে শেষ পৃষ্ঠাটা পড়ে ফেলি। এরপর আরেকটা বই হাতে নেই। ওটার সাথেও একই ব্যবহার করি। বই এর শেষ পৃষ্ঠা পরে ফেললে সেই বইটা আমার কাছে অর্থহীন হয়ে যায়। সুতরাং ওটা আর কেনার প্রশ্নই ওঠে না। এ কারনে ঐ দোকানদার আমার ওপড় বেশ বিরক্ত। আমি বই নিয়ে শেষ পৃষ্ঠা পড়ে আবার বইটা রেখে দেই। প্রথম কদিন মুখ ফুটে কিছু না বললেও একদিন প্রায় আমাকে ধমকই দিয়ে দিল। আমি তাকে একটা বুদ্ধি দিলাম। বললাম,'আপনি এভাবে বই বিক্রী না করে অন্যভাবে টাকা আয় করতে পারেন। সবাই যে যার মত এসে বই পড়বে। আবার রেখে দিবে। কিন্তু বই পড়তে তাকে একটা ফি দিতে হবে। এতে হবে কি আপনার বই আপনার কাছেই থাকলো উল্টো কিছু টাকা আয় হল। সাথে চা-কফির ব্যবস্থা করতে পারেন। এটাও একটা দারুন ব্যবসা!' ভদ্রলোক আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন তাতে মনে হল আমার আর এখানে থাকা ঠিক হবে না।

আমি বললাম,'আপনি চাইলে আজ থেকেই ব্যবসাটা শুরু করে দিতে পারেন। কারন আমার কাছে পুরো বিশ টাকার একটা নোট আছে।'

'দেখেন ভাই আপনি এমনিতেও আমাকে অনেক জ্বালাতন করেছেন। দয়া করে এখন চলে যান প্লিজ।'

'ভাই এক কাপ চা খাবেন গরম চা।'

'আমার চা-টা খেতে হবে না। আপনি চলে যান।'

আমি বের হয়ে গেলাম। আবার ফিরলাম ঐ দোকানে সাথে দুটো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে। দোকানদার আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছিল না। আমি একটা চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,'নিন চা খান। মাথা যখন গরম হয় যখন বুঝবেন আপনার রক্ত গরম হয়ে গেছে তখন অতিরিক্ত চিনি দিয়ে এক কাপ চা খাবেন গরম চা। আপনার কাপেও আমি ৮ চামুচ চিনি দিতে বলেছি। কথার বরখেলাফ করেনি নিশ্চয় ।' দেখি দোকানদার ভাই আমার দিকে বেশ খানিকটা ঝাজ নিয়ে তাকাল। আমি আবার বললাম,'আপনি আমার টাও খেতে পারেন। এটাতে চিনি পরিমান মতই দেয়া আছে।' এই বলে আমার চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিলাম। দোকানকার চা খেতে খেতে বললেন।

'ভাই আপনার নাম কি?'

'আমার তো কোন নাম নেই। যখন যে যে নামে ডাকে সে নামে সাড়া দেই।'

'এটা আবার কেমন কথা। তাই বলে একটা মানুষের নাম থাকবে না?'

'নামের মধ্যে কি আছে ভাই? সব তো হল মানুষের কর্মে। আপনি কি বলতে পারেন চশমা আবিষ্কার করেছে কে?'

'নাহ। কখনো শুনিওনি।'

'সেটাই। আমরা অনেক মানুষকে মনে না রাখলেও তার আবিষকার ঠিক ই মনে রাখি এবং প্রতিনিয়ত তা ব্যবহার করি। তা আমার নাম বাদ দিন। আপনার নাম কি?'

'আমার নাম সবুজ। প্রায় ৫-৬ বছর হল দোকান করছি। মাস্টার্স পাশ করে চাকরির অনেক চেষ্টা করেছি হয় নি। তাই ব্যবসায় নেমে পরি।'

'খুব ভাল। নিজ ব্যবসায় মজাই আলাদা।'

'ভাই একটা কথা বলব?'

'বলুন তাতে অনুমতি চাওয়ার কি আছে?'

'কিছু মনে করবেন না। আমি আপনাকে মনে মনে খাটাশ বলে গালি দিয়েছিলাম।'

'বেশ তো খাটাশও তো একটা জাতি। আর মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত সকল জাতিকে সম্মান জানানো। কাউকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।'

'আমার দোকানে যে শুধু আপনি এসে ফ্রি বই পড়ে যান তা নয়। আরেকজন কর কি জানেন? প্রায় ই এসে একটা বই কিনে নিয়ে যায়। একদিন পর আবার বইটা পড়ে ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যায়। আজ আবার আপনি আসার আগেও বই কিনতে এসেছিল। দিলাম এক ধমক। তার ঝাজ কিছুটা আবার আপনার ওপরও ঝাড়লাম।'

'ও কিছু না। আমাদের আসলে সবসময় সব রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আমিও আপনার ওপর গরম হয়ে যেতাম এমনকী আপনার নাকের ওপর কষে একটা ঘুষিও লাগিয়ে দিতাম। কিন্তু এই ৮ চামুচ চিনিওয়ালা চা খেয়ে রাগ অনেকটা কমে গেছে।'

'আপনি দেখি অদ্ভুতধরনের কথা বলেন।'

দোকানদারের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে বের হয়ে গেলাম। ঘুরে ঘুরে দেখি কারো রাগ চরম পর্যায়ে চলে গেছে কিনা। পেলেই ১০ চা চামুচ চিনিওয়ালা গরম চা খাইয়ে দেব।

বিষয়: Contest_father

১৬৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File