কে ছিলেন ঊম্মে নিদাল? - আল্লাহ্র রাহে এক গর্বিত সন্ত্রাসী মায়ের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন ঈনসাফ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩০:৩৭ বিকাল
“উম্মে নিদাল” নামটার সাথে আমার প্রথম পরিচয় “Hamas: Behind The Mask” এই ডকুমেন্টারিতে যোগ হওয়া একটা সাক্ষাৎকারে।আসল নাম মারিয়াম ফারাহাত হলেও তিনি উম্মে নিদাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। হামাসের কাসসাম রকেটের উদ্ভাবক ছিলেন তাঁরই ছেলে যিনি পরে শহীদ হয়েছিলেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রতিরোধ যুদ্ধে তাঁর তিন-তিনটি ছেলে হারিয়েছিলেন তিনি।হতাশ তো হননি মোটেই বরং আরও বড় আত্মোৎসর্গের জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন সবসময়।তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে আমার ইসলামের প্রাথমিক যুগের আরবের মায়েদের কথা বার বার মনের ভেতর ভেসে আসছিল যারা সন্তানদের আল্লাহ্র পথে শহীদ হওয়াকে দেখতেন আল্লাহ্র কাছ থেকে পাওয়া এক বিরল অনুগ্রহ ও সম্মান হিসেবে।১৪০০ বছর আগে মুসলিমদের সেই প্রেরণা আর ব্যক্তিত্বের অসাধারণ উদাহরণ এই মুসলিমাহর কথা যতই শুনছিলাম ততই আশ্চর্য হচ্ছিলাম আমি যে এতো বড় কুরবানি করা কিভাবে সম্ভব হতে পারে ?
হ্যাঁ সম্ভব, কারণ তাঁরা ইসলামকে আমাদের মত রসম-রেওয়াজ বানিয়ে ফেলেননি বরং জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছিলেন।আমাদের মত অন্যায়কে অন্তর থেকে ঘৃণা করে সর্বনিম্নস্তরের ঈমান নিয়ে তেলাপোকার মত বেচে থাকার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তাঁরা।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর কিছুদিন আগে তিনি মারা গিয়েছেন। আল্লাহ্ ওনাকে সম্মানিত করেছেন এই পৃথিবীতে এবং ইনশাল্লাহ সর্বাধিক সম্মানিতদের অন্তরভুক্ত করুন আখিরাতেও।
উম্মে নিদাল ফিলিস্তিনের অন্য ছেলেদের মত নিজ ছেলেদের কখনো রাস্তায় পাথর ছুড়তে দিতেন না, খালি হাতে দখলদার ইহুদীদের বন্দুকের বিপরীতে পাথর ছুড়ে জীবনটা নষ্ট করার ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি।বরং আরো বড় কিছুর জন্য নিজ ছেলেদের তৈরী করেছিলেন তিনি।শহীদরা আল্লাহ্র রাস্তায়ই মরবে তবে আল্লাহ্র কথামত "তাঁরা আল্লাহ্র রাস্তায় মরে এবং মারে" এই পর্যায়ের শহীদ বানানোর জন্য ক্রমেই প্রস্তুত করেছেন নিজকে এবং তাঁর ছেলেদেরকেও।
মিডিয়ায় সচরাচর মুসলিম নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা মধ্যে যে ইসলাম টা পাওয়া যায় সেটা বড়ই Apologizing...সাক্ষাৎকার ওনার কথায় এর লেশমাত্রও ছিলোনা।সত্য কথা কুফফারের কাছে যতই অমানবিক(?) বা মৌলবাদ(আলহামদুলিল্লাহ্!) মনে হোক না কেন খুবই সাবলীল এবং সাহসী গলায় কথা বলে যাচ্ছিলেন তিনি।
যেহেতু ভিডিও শেয়ার করলে অনেকেই দেখার সুযোগ পাননা তাই সাক্ষাতকারটা ইংরেজি সাবটাইটেল থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিলাম।
-উপস্থাপিকা
--উম্মে নিদাল
(সাক্ষাতকারের শুরুতে উম্মে নিদাল বলছেন)
--আমি আমার ছেলেদের আল্লাহ্র প্রতি অবাধ্যতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখি,আল্লাহ্ খুশি হবেন না এমন পথ তাঁরা পছন্দ করুক সেটা থেকেও তাঁদের দূরে রাখি।আমার ছেলেদের জন্য আমি এটাকেই আমি ভয় করি(যে তাঁরা আল্লাহ্র অবাধ্য হবে এবং এমন পথ পছন্দ করে বসবে যেটা আল্লাহ্ পছন্দ করেন না)। কিন্তু আত্মোৎসর্গের ক্ষেত্রে , আল্লাহ্র পথে জিহাদের ক্ষেত্রে কিংবা তাঁদের ওপর থাকা দায়িত্ব পালনের কাজ গুলো আমাকে সবসময়ই খুশি রাখে।
-তাঁদের উপর থাকা দায়িত্বটা কি?
--এটা হচ্ছে আল্লাহ্র পথে জিহাদ-যেটা তাঁদের দ্বীন তাঁর কাছে দাবি করে।এটা ইসলামের ফরজ কাজগুলোর মধ্যে একটা যেটা কখনোই পরিত্যাগ করা যাবেনা।যে আল্লাহ্র পথে জিহাদকে পরিত্যাগ করবে সে অবশ্যই গুনাহগার হবে।আমি আমার সব ছেলেদের আল্লাহ্র পথে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করেছি-সেটা আক্রমণাত্মক হোক বা অন্য যে কোন প্রকারে হোক।আমি নিজেকেও এর জন্যই প্রস্তুত করেছি।যে নিজেই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ কঠিন পথ বেছে নিয়েছে তাকে তো সেটার ফলাফল বহন করার জন্যও তৈরি থাকতে হবে।কারো কাছে হয়তো এই পরিণতিকে ট্র্যাজেডি মনে হতে পারে কিন্তু আল্লাহ্র কসম এটা আল্লাহ্র রহমত ছাড়া কিছুই নয়।যখন আমি মুহাম্মাদের শাহাদার কথা শুনলাম...
-আচ্ছা আপনি আমাদের মুহাম্মাদের অপারেসানের ঘটনাটা বলুন তো...সে আসলে কি করেছিল?
--সকল প্রশংসা আল্লাহ্র।তাঁর অভিযান ছিল এক মহা সাফল্য!প্রথম এবং দ্বিতীয় ইন্তিফাদার মধ্যে সবচেয়েসফল অপারেসান ছিল এটা।
-আপনি নিশ্চয়ই জানেন হাজার হাজার মানুষ ঘরে বসে এই সাক্ষাৎকারটা কিন্তু দেখছে এবং তাঁরা মুহাম্মাদ কি করেছিল এটা জানতে অপেক্ষা করেছিল। আমি জানি তারা এটা শুনে আতঙ্কিত যে মুহাম্মাদ নিরীহ নারী ও শিশুদের মধ্যে গিয়ে (বিস্ফোরণ ঘটিয়ে) নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে! সে কি নিরীহ শিশু-নারী কিংবা সিভিলিয়ানদেরকে হত্যা করার জন্য ঘর থেকে বের হয়নি?এটা হলে তো সে মানুষের সহানুভূতি হারাতে বাধ্য।
--মুহাম্মাদ তাঁর অপারেসান চালিয়েছিল একটা মিলিটারি একাডেমীতে,তাঁরা প্রত্যেকেই ছিল সেনাবাহিনীর সৈন্য।কিন্তু নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে যেই অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে উঠছে-কারোই আমাদের অভিযুক্ত করা উচিত না।এটা War Necessity ছাড়া আর কিছুই না।আমারা কখনোই নিরীহ বেসামরিক লোকজন,নারী কিংবা শিশুদের টার্গেট করিনি।কিন্তু যদি তাঁরা সংঘাতের মাঝখানে পড়ে যায় এটাকে War Necessity হিসেবেই ধরতে হবে।
(আবার মুহাম্মাদের প্রসঙ্গে ফিরে)মুহাম্মাদ কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাঁর অস্ত্র নিয়েই ইসরায়েলিদের সেটেলমেন্টে ঢুকেছিল-যেখানের প্রতিটা ইঞ্চিতে মৃত্যু তাঁর জন্য ওঁত পেতে বসে ছিল।
-ও আচ্ছা তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন সে নিজেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দ্যায়নি?
--না, এটা কোন বম্বিং অপারেসান ছিলোনা।সে একটা কালাসনিকভ(AK-47)আর কিছু হ্যান্ডগ্রেনেড নিয়ে ওই মিলিটারি একাডেমীতে ঢুকেছিল।সেখানে অনেকগুলো রুম ছিল,সে একটা একটা করে রুমে গিয়ে তাদের গুলি করেছে।তাঁর গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ২২ মিনিট ধরে তাঁর অভিযান চালিয়ে গিয়েছিলো এবং এসময়ে সে পুরোপুরি একাধিপত্য করেছে।যদি তাঁর হাতে আরও গোলাবারুদ থাকতো সে অবশ্যই লড়াই চালিয়ে যেত।
আলহামদুলিল্লাহ্,তাঁদের চড়ামূল্য দিতে হয়েছে।তাঁদের ক্ষয়ক্ষতি সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।তাদের ১০ জন সৈন্য নিহত হয়েছিল আর আহত হয়েছিল আরও ২৩ জন।কিন্তু ইসরায়েলি প্রচারমাধ্যম সবসময় তাদের ক্ষয়ক্ষতি আর পরাজয়কে অন্যদের কাছ থেকে গোপনই রেখে দ্যায়।আলহামদুলিল্লাহ অপারেসানটা সফল হয়েছিলো।
-শত্রুপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি কি আপনার নিজের সন্তান হারানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেনাএখানে?দেখুন আমি নেতিবাচকভাবে ব্যাপারটা তুলে ধরতে চাইছিনা, কিন্তু আপনি নিজের সন্তানের জীবনের দিকে না দেখে বারবার দৃষ্টি দিচ্ছেন অপারেসানে কি সাফল্য পেলেন সেদিকটায়!
--অবশ্যই আমি আশা করছিলাম যে সে শহীদ হবে।হয়তোবা সে ফিরে আসতে পারত কিন্তু সত্যি বলতে কি এই অভিযান থেকে জীবিত ফিরে আসার কোন সম্ভাবনাই ছিলোনা।এই অভিযানের ফলাফল ছিল একটাই-শাহাদাত।একবার সেটেলমেন্টে ঢুকলে সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসা বলতে গেলে অসম্ভব।তাঁর শাহাদাত ছিল একমাত্র পরিণতি।আমি খুব অস্থিরভাবে তাঁর অপারেসানের ফলাফল জানতে অপেক্ষা করে ছিলাম।আমি এটা আশাও করিনি যে সে দুটির বেশি ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যা করতে পারবে!শাহাদার অন্বেষণকারীরা সেটেলমেন্টে ঢোকার ব্যাপারটাই একটা প্রকাশ্য বিজয়।সেখানে ঢোকাটাই একটা মারাত্মক কঠিন ব্যাপার।কারণ পুরো সেটেলমেন্টটাই দুর্গের মত ঘেরা একটা জায়গা।শাহাদার অন্বেষণকারীরা সেখানে ঢোকাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর একটা!
আমি যখন প্রথম অভিযানের ফলাফল শুনলাম এটা সত্য যে আমার ছেলের জন্য আমার খারাপ লেগেছেল,এটা অস্বীকার করা যাবেনা।
-আপনি কি কেঁদেছিলেন?
--প্রথম দিকে আমি কাঁদছিলাম না।খবরটা শোনামাত্র আমি আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করে আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতায় সিজদায় পড়ে গিয়েছিলাম।সত্যি বলতে আমি আল্লাহ্র কাছে “আল্লাহ্,আমার এই ট্র্যাজেডিতে আমাকে সাহায্য করুন”-এই কথা বলতেও লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম,কারণ এটা কোন ট্র্যাজেডি ছিলোনা-এটা ছিল আল্লাহ্র কাছ থেকে আসা একটা অনুগ্রহ।তারপর আমি হালুয়া আর চকলেট বানিয়ে তাঁর বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।
-কিন্তু পশ্চিমে এই ধরনের ঘটনা... এটা শুধু এমন কিছু না যে তারা বুঝবেনা কিন্তু এটা তাদের বুঝে আসেনা যে কিভাবে একজন ফিলিস্তিনি মা তাঁর সন্তানের মৃত্যুতে উল্লাসিত হয় এবং শাহাদার খবর শুনেই আল্লাহু আকবর বলে উঠে?তারা শুধু এটাকে অদ্ভুতই ভাবেনা বরং তারা এই বলে এর সমলোচনা করে যে এইসব ফিলিস্তিনি মায়েদের কোন মানবিক অনুভুতিই নেই।অন্যভাবে বলা যায় উদ্দেশ্য যত মহৎ-ই হোক না কেন অথবা সাফল্য যত বড়ই হোক না কেনপৃথিবীর কোন মা-ই তাঁর সন্তানের মৃত্যুতে এরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনা!আপনার এবং সব ফিলিস্তিনি মায়েদের সম্পর্কে যথেষ্ট লিখলিখি হয়েছে।তারা আপনাদের আবেগকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
--তারা পুরোপুরি ইসলাম আর ইসলামের চেতনা সম্পর্কে অজ্ঞ।কিন্তু আমরা আলহামদুলিল্লাহ মুসলিমিন-মুমিনিন,এসব ব্যাপারে তাদের সাথে আমাদের আকাশপাতাল পার্থক্যই থাকবে।তারা তো ইসলাম কি এটাই বোঝেনা।
-কিন্তু মানুষ তো সব একই, এক সৃষ্টিকর্তাই তো আমাদের সবাইকে একইরকমভাবে সৃষ্টি করেছেন।
--অবশ্যই,মানুষ হিসেবে আমি এসব আবেগকে গভীরভাবেই অনুভব করি।বিশ্বাস করুন যখন আমার সন্তানদের কথা আসে,আমি অবশ্যই সবচেয়ে মমতাময়ী মা-দের একজন।কিন্তু আল্লাহ্র পথে জিহাদ এমন এক পবিত্র দায়িত্ব-কোন আবেগই এটাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনা।শুধুমাত্র আমরা কষ্ট পাই বলেই শাহাদাৎ কে থামিয়ে দেয়া চলবেনা।শাহাদার তাৎপর্যটা কি?আত্মোৎসর্গ তো সেখানেই যেখানে একজন তাঁর কাছে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটা বিসর্জন দ্যায়,কোন ফেলনা জিনিস দিয়ে না।আমার সন্তানরা তো আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান নিয়ামত।এজন্যই আমি তাঁদেরকে একটা বৃহত্তর স্বার্থে কোরবানি দিয়েছি-আল্লাহ্র জন্য কুরবানি দিয়েছি,তাঁর চেয়ে মূল্যবান সত্ত্বা আর কে হতে পারে?আমার সন্তানের মূল্য তাঁর প্রভু আল্লাহ্র চেয়ে বেশি নয় নিশ্চয়ই!আমার সন্তান ইসলামের পবিত্র স্থান,তাঁর মাতৃভূমির সর্বোপরি ইসলামের চেয়ে বেশি দামি না,মোটেই না।
-কিছু মানুষ বলে আপনি কেন জীবনের জন্য তৈরি না করে নিজের সন্তানদের মৃত্যুর জন্য তৈরি করছেন?আমি আনন্দ-প্রাচুর্যের জীবনকে বোঝাচ্ছিনা কিন্তু তাঁদের বেঁচে থাকার প্রাপ্তি তো মৃত্যুর প্রাপ্তির চেয়ে বেশি হতেই পারতো?বেঁচে থাকলে তাঁরা হয়তো প্রখ্যাত মিলিটারি কমান্ডার কিংবা চিন্তাবিদ হতে পারতো যেটা দখলদারদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারতো।তুলনা করে তো বলা যায় তাঁরা তাঁদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়েছে।তাই নয় কি?
--কিন্তু সে তো নিজেকে মৃত্যু কিংবা ধ্বংসের দিকে থেলে দ্যায়নি! এটা কখনোই মৃত্যু নয়! একে মৃত্যু বলেনা-একে বলে শাহাদাহ।
-সাম্প্রতিক সময়ে রেস্টুরেন্ট কিংবা বাণিজ্যিক ভবনে অনেকগুলো অপারেসান চালানো হয়েছে যেগুলোকে বাকি বিশ্ব মিলিটারির বিরুদ্ধে চালানো অপারেসান থেকে পুরোপুরি ভিন্নচোখে দেখছে।এসব জায়গায় চালানো বোমাহামলা গুলো তো পুরো বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থকে দুর্বল ও সমালোচিত করে দিচ্ছে।এমনকি খোদ ফিলিস্তিনের ভেতরে গাযা ও পশ্চিম তীরের মানুষও এক্ষেত্রে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছে।
--এই ইস্যুতে সকল ফিলিস্তিনির দৃষ্টিভঙ্গি একই,তাঁরা মোটেই বিভক্ত নয়।যারা আমাদের সাথে সহমত নয় কিংবা অন্যভাবে চিন্তা করে অবশ্যই তারা সবাই বিদেশী যাদের আমাদের কিংবা আমাদের অধিকারের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই এবং তারা আমাদের সম্বন্ধে মোটেই কিছু জানেনা।তারা মনে করে আমরা নিরীহ লোকজনদের হত্যা করে বেড়াচ্ছি।অতচ আমরা মুসলিম হিসেবে সম্পুর্ণ ভিন্নভাবে চিন্তা করি।আমরা কুর’আন থেকে জানি “যে তোমাকে আক্রমণ করে,তাকেও একই ভাবে আক্রমণ কর”এগুলো সবই যুদ্ধের প্রয়োজনে-তা না হলে আমরা জয়ী হব কেমন করে?
এটা ঠিক যে আমরা দখলদার সেনাবাহিনীর সৈন্যদের উপর নিয়মিতভাবে আক্রমণ পরিচালনা করি কিন্তু এর মধ্যে কিছু বেসামরিক লোকজন মারা গেলে সেটা War Necessity।শুরু থেকে চিন্তা করলে তারা সবাই অবৈধ দখলদার।বাইরে থেকে উড়ে এসে যারা ফিলিস্তিনের মাটিতে ঘাঁটি গাড়বে তাদের প্রত্যেকেই দখলদার-হোক সে নারী কিংবা বৃদ্ধ!তারা সবাই দখলদার।এছাড়াও এটা মোটেই ভুলে গেলে চলবেনা যে তারা প্রত্যেকেই একটা নির্দিষ্ট সময়ে আর্মিতে বাধ্যতামূলকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।তারা সবাইকে সৈন্য হিসেবেই ধরতে হবে,তারা সবাই রিজার্ভড সৈন্যের দল।তারউপর এরা জানে যে এই ফিলিস্তিনের মাটি ফিলিস্তিনিদের,তাদের এখানে কোন অংশও নেই,তাহলে কিভাবে তুমি আরেকজনের মাটিতে এসে বসবাস করা শুরু করে দিচ্ছ? তাই প্রত্যেকটা ইসরায়েলি ফিলিস্তিনের দখলদার হিসেবে চিহ্নিত হবে-এখানে সে কি নারী কিংবা পুরুষ এটা কোন পার্থক্য তৈরি করবেনা।
-কিন্তু উম্মে নিদাল,অনেকেই মনে করেন যে...
--প্রত্যেকটা আইনসম্মত(Legitimate)উপায়েই আমাদের তাদেরকে মোকাবেলা করতে হবে।
-এই Legitimate শব্দটাই আমি খুঁজছিলাম!
--সবকিছুই আইনসম্মত(Legitimate)যতদিন পর্যন্ত দখলদারিত্বের অবসান না হয়।
-আপনি কি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও সামরিক আর বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে আলাদা করে দেখতে পারছেন না?
--এখানে কোন পার্থক্য নেই, এটাই ইসলামের আইন।আমি তো নতুন করে কোন কিছু আবিষ্কার করিনি।আমি এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুসরণ করছি মাত্র।একজন মুসলিম নির্দোষ নিরীহ লোকজনকে কিভাবে হত্যা করবে যখন সে জানে যে এই কাজের জন্য তাকে আজীবন জাহান্নামে জ্বলতে হবে? এই ইস্যুটা অবশ্যই খুব সোজা সাধারণ কিছু না।আমরা শুধুমাত্র ইসলামের বিধানের উপরই ভরসা করি যখন আমরা বলি যে এই লোকগুলোকে হত্যা করতে কোন নিষেধ নেই।
-আপনার কাছে “শান্তি” শব্দটা কি বোঝায়?
--আমরা বর্তমানে যেই প্রকারের শান্তি দেখছি “শান্তি” শব্দটা এ ধরনের কোন কিছুকেই বোঝায় না।এই ধরনের শান্তিপ্রক্রিয়া আসলে আত্মসমর্পণ এবং চূড়ান্ত অপমান ছাড়া আর কিছুই না।শান্তি মানে হল (জর্ডানিয়ান) নদী থেকে(মেডিটারনিয়ান) সাগর পর্যন্ত পুরো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা।যখন এই লক্ষ্য অর্জিত হবে তখন যদি তারা শান্তি চায় আমরা তার জন্য প্রস্তুত।ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে তারা তখন বসবাস করতে পারে।ভবিষ্যতের এই ফিলিস্তিনের জন্যই আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।
-অনেকেই বলে থাকেন যে এই ধরনের দাবি শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায় কারণ ইসরায়েলিরা কখনোই ফিলিস্তিন ছাড়তে রাজি হবেনা...
--তাদের অরাজি-ই থাকতে দিন।তারা রাজি হবে বলে আমরা আশাও করিনা।এইসব লোক দখলদার আমরা তাদেরকে অবশ্যই ফিলিস্তিন থেকে উৎখাত করে ছাড়ব।
-(উপস্থাপিকা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে)উম্মে নিদাল,যিনি এখন আমার সামনে বসে আছেন তিনি সারা বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত(একথা শোনার পর উম্মে নিদালও প্রথমবারের মত একটা মুচকি হাসি দিলেন),এমনকি তিনি সন্ত্রাসীর উৎপাদনকারীও বটে!হা হা হা!
--তাদের যেভাবে ভালো লাগে তারা সেভাবেই আমাকে চিহ্নিত করুক,আমি আল্লাহ্র রাহে সন্ত্রাসী হতে পেরে গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করছি।“Prepare for them whatever force and steeds you can in order to strike terror in the hearts of the enemy of Allah and of your own” আমি নিজে কুর’আনের এই আয়াতের বাস্তবায়ন করতে পেরে এবং আল্লাহ্র রাহে সন্ত্রাসী হতে পেরে খুশি”
-আপনার দশটা ছেলে আছে তাই না?
--জি,আলহামদুলিল্লাহ।
-যদি এদের মধ্যে আরও একজন মারা যায়...তাহলে কি আপনার হৃদয় অসহনীয় দুঃখে ভরে যাবেনা?
--না,না।আলহামদুলিল্লাহ্ আমি নিজেকে প্রস্তুত করছি-আমি তাঁদের প্রত্যেককেই আল্লাহ্র পথে কুরবানি দেবো ,যদি আমার দায়িত্বের প্রয়োজনে আমাকে আমার সকল সন্তানকেই উৎসর্গ করতে হয় আমি তাই করবো।যদি আমার শত শত সন্তানেরও শহীদ হতে হয় আমি মোটেই অমত করবোনা এতে।
(সাক্ষাৎকার এখানেই শেষ)
আল্লাহ্ আজকের পথহারা মুসলিম উম্মাহকে ওনার মত মা দান করুক যাতে আমরা পৃথিবীর বুকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং ইসলামকে নিজেদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে আমরাই যে শ্রেষ্ঠ জাতি সেটা আবার প্রমাণ করে দেখাতে পারি।
সুত্রঃ ১।Documentary: http://www.deen-ul-islam.org/hamas-mask/
বিষয়: বিবিধ
১৩৯২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন