এরকম ইসলামী নাটক বানানো গেলে ইসলামী মদ বানাতে সমস্যা কি ?

লিখেছেন লিখেছেন ঈনসাফ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:১২:০৮ রাত

দুজনের সাথে আমার কথা হচ্ছিলো বেশ কয়েক মাস আগে। সেই কথাবার্তার কিছু অংশ তুলে ধরলাম:

"আমি তো অশালীন প্রোগ্রাম দেখি না। আজে বাজে হিন্দি সিরিয়াল অনেক আগেই বাদ দিয়েছি। হিন্দি সিরিয়ালে পূজা দেখায়, আবার নাচগানও থাকে। আর তাছাড়া ইদানীং হিন্দি সিরিয়ালের মেয়েদের পোশাক অনেক অশালীন হয়ে গেছে। আমি বাংলা কিছু সিরিয়াল দেখি। কারো পোশাক তেমন অশালীন নয়। নাচগান নেই। আর গল্পের বিষয়গুলি ভালো। হিন্দি সিরিয়ালের মতো নয়। পরিবারের সকলে মিলে দেখা যায় এগুলি। এগুলি দেখাও কি ইসলামে নিষেধ নাকি?" - এই কথাগুলি বললেন একজন।

আরেকজন বলছিলেন এমন "আমি মুসলিমদের নাটক দেখি। নাটকের চরিত্রগুলি মুসলিম। একজনও আজেবাজে পোশাক-তো পড়েই না বরং অনেকেই বেশ রক্ষণশীল। সামান্য কিছু পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা নিয়ে দেখায়, যা থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। আর নাচগান একদম নেই। ইসলামিক কালচার দেখা যায় নাটকে। এমন নাটক দেখা নিশ্চই ইসলামে নিষেধ নেই, তাই না?"

কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর আমার কথা ছিলো এরূপ:

আপনারা যেমন নটকের কথা বলছেন তার চাইতেও অনেক ভালো নাটকের খবর আমার কাছে আছে। শুনবেন সেই নাটকের কাহিনী?

<কাহিনী শুরু>

স্বামী বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। স্ত্রী তার পাশে বসলেন এবং মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে মধুর সুরে ডাকছেন আর বলছেন:

- এই যে, ঘুম থেকে উঠো। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে না?

- (স্বামী চোখ খুলে বলে) সেই তো সৌভাগ্যবান স্বামী যার এমন স্ত্রী আছে। (স্ত্রীর মুখে হাসি এবং তখনও মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন।)

- (কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুরে স্ত্রী বললেন) আমার সৌভাগ্য তোমার কাছ থেকে ইসলামের অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এমন স্বামী ক'জনা পায়।

তারপর দুজনে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে মুনাজাত করলেন। তারপর ফজরের আজান শুনে স্বামী চলে গেলেন মসজিদে আর স্ত্রী ঘরে নামাজ আদায় করলেন।

<কাহিনী শেষ>

কাহিনী বলার পর আমাদের কথোপকথন ছিলো অনেকটা এমন:

- এখন আপনারাই বলুন, এমন একটা নাটক কি আপনারা দেখতে চাইবেন?

- অবশ্যই চাইবো। এটা তো আরো ভালো নাটক।

- কিন্তু যদি বলি, এই নাটকেও সমস্যা আছে। তাহলে কি করবেন?

- শিবলী এই সব কি বলছো তুমি? এটা কেন দেখা যাবে না? ইসলাম কি এতো কড়াকড়ি নাকি? আর এখানে তো খারাপ কিছুই নাই।

- আচ্ছা, আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে বলুন তো, এই নাটকটিতে কি সমস্যা থাকতে পারে, যেখানে কিনা তাহাজ্জুদ সলাত আদায় করা হলো, ফজরের সলাত আদায় করা হলো?

- কি জানি, বুঝতে পারছি না তো। এই নাটকে তো কোনো প্রকার সমস্যাই দেখতে পারছি না।

যাই হোক, পাঠক আপনারা কি একটা সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন? আশা করি অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন।

(১) নাটকে স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে যারা অভিনয় করেছে, তারা কি আসলেই স্বামী-স্ত্রী?

(২) মহিলা তার স্বামী চরিত্রের লোকটির পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছেন এবং মাথায় হাত বুলিয়েছেন। এই কাজ তিনি অনেকগুলি মানুষের সামনে করেছেন (টেকনিশিয়ান গ্রুপ)।

(৩) হয়তো দৃশ্যটি একবারে ধারণ হয়নি। বেশ ক'বার হয়তো শুটিং করতে হয়েছে। তারমানে খুব সম্ভাবনা আছে ঐ মহিলা অনেকবার ঐ লোকটির পাশে বসেছেন এবং মাথায় হাত বুলিয়েছেন।

আমাদের কথাবার্তা তখনো চলছে, একজন বললেন:

- আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু আমি তো শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য দেখি। আমি যেগুলি দেখি, সেগুলি দেখে তো আর ওদের মতো খারাপ হয়ে যাচ্ছি না।

- মানলাম আপনি প্রভাবিত হচ্ছে না কিন্তু হয়তো অন্য কেউ হচ্ছে। ঠিক আছে, শেষ একটা উদাহরণ দেই। আচ্ছা বলুন তো, আপনার ঘনিষ্ঠ আত্নীয় বা আপনার পরিবারের কেউ, যিনি বিবাহিত, তিনি যদি আপনার ঘরে অন্য মহিলাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকে বা ঘনিষ্ঠ ভাবে আদর করে, নিজ চোখে অমন দৃশ্য দেখতে আপনার কেমন লাগবে?

- অ-ব-শ্য-ই খুব খারাপ লাগবে।

- Ok, fine, তাহলে আপনি ভালো করেই জানেন যে, ঐ সকল অভিনেতা অভিনেত্রীদের অনেকেই married এবং কে কার আসল husband wife তাও জানেন। অথচ তারা একেক নাটকে একেক জনকে স্বামী-স্ত্রী চরিত্র বানিয়ে প্রকৃত স্বামী-স্ত্রীর মতোই ঘনিষ্ঠ আচরণ করছে, সেটা কেনো হজম করছেন? সেটা দেখেও কি আপনার খারাপ লাগার কথা না? লজ্জা পাবার কথা না?

আমাদের আলোচনা ওখানেই শেষ হয় সেদিনের মতো।

(একটি বাস্তব আলোচনা কিছুটা মার্জিত করে উপস্থাপন করলাম।)

আমার ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ফিল্ম/নাটক/এ্যড বানিয়ে থাকেন। আল্‌হাম্‌দুলিল্লাহ্‌, এদের মাঝে কেউ কেউ practicing muslim-ও আছেন। নাটক/সিনেমা/এ্যড যাই বানাই, খেয়াল রাখতে হবে যে, শুধু ক্যামেরায় যতটুকু ধারণ হচ্ছে বা দেখানো হবে সেটুকুতে ভালো কন্টেন্ট থাকলেই হবে না। পুরো কাজটা করতে গিয়েও নন-ইসলামিক কাজ যেনো না হয়ে যায় সেদিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়টি হয়তো খুব সহজ নয়। বিষয়টি নিয়ে হয়তো অনেক তর্ক বিতর্ক থাকতে পারে। তবে আমি যাদের সাথে আলোচনা করছিলাম তারা বর্তমানের সেই সকল নাটক সিনেমার দর্শক যেগুলির মূল বিষয় love and relationship problem এবং যেখানে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা আছে।

~ অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করেছেন এক বড় ভাই, শিবলী মেহেদী

বিষয়: বিবিধ

২২৮৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262811
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:২৯
আহমাদ তাহসীন লিখেছেন : বাস্তবতা র দিকে খেয়াল রেখে চিন্তা করা উচিত। ইসলামিক ম্যুভি মানে যে অন্য ম্যুভি গুলোর মত হবে এমন ভাবা হয়ত ঠিক না। সেক্যুলার মিডিয়ার বিকল্প হিসেবে মানুষের সামনে কিছু দিতে না পারলে শুধু বিরোধিতা করে কোন ফায়দা নেই।

০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:২৮
206576
ঈনসাফ লিখেছেন : ইসলাম জানতে হলে যে স্বয়ং ইসলামটাকে খুইয়েই মুভি বানাতে হবে এটা শয়তানের কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। ১০০ বছর পড়ে আর দেখে শেষ হবেনা এরকম অথেনটিক ইসলামী ম্যাটেরিয়ালস আপনাকে দিতে পারি। এরকম বিপজ্জনক শর্টকাটে ইসলামকে শেখাতে গেলে হারাম জিনিস হালাল হয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়, আর যেহেতু মানুষ মনে করছে যে সে ভালো কিছুই করছে তাই সে এই ভুলের জন্য তাওবাও করেনা! খুবই বিপজ্জনক ! নিজের ঈমানকে যারা এত সস্তা মনে করে তারাই তাদের ঈমানকে এরকম পরিক্ষা আর বিপদে সম্মুখীন করে।

মা আসসালামা
262855
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৩০
কাহাফ লিখেছেন : হটাৎ করে একবারেই সব কিছু বদলানো যায় না,ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে হয়। বিনোদন বিষয়ে অনৈসলামী কাজের আধিক্যতা রোধ কল্পে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অনেক ধন্যবাদ ভাই.......।
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩০
206577
ঈনসাফ লিখেছেন : বারাকাল্লাহু ফিক
262884
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:২১
ঈনসাফ লিখেছেন : দুঃখিত, আয়েশা আপার মেসেজটা ভুলক্রমে মুছে গেছে। ওনার মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে বলেছি,

দ্য মেসেজ নিয়ে আমার এক বড় ভাই বলেছিলেন -
"আমার সারা জীবনের দুঃখ (আমার ধারণা আরো অনেকের) যে আমি আমার জাহিলিয়্যাতের সময়ে ইসলামিক কাজ ভেবে " the message" দেখেছিলাম। আজকে এত বছর পরও আমি হামজা ( রাঃ ) এর কথা ভাবলে এন্থনি কুইন নামের ওই কাফিরের চেহারা মনে আসাকে রোধ করতে পারিনা। অথচ আমার পরিবার যখন একজন বোনকে NBC'র উমার সিরিজ দেখতে নিষেধ করতে গেল islamQA এর ফাতওয়ার রেফারেন্স দিয়ে (যেটা কিনা আসলে অনেক আলেমদের পুরানো মতামতেরই সংকলন), তখন তাকে শুনতে হলো "শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ তো এটাকে impermissible বলেছেন, হারাম বলেননি।" (!!!!) সকলেই এই ধরনের মুভি বা সিরিয়াল দেখাকে কেবল অন্য মতামত ফলো করার উপর দিয়ে চালিয়ে দিতে চান। অথচ এটিতে কি সমস্যা তা নিচের লিংক পরলেই বুঝা উচিত ইনশাআল্লাহ ।

http://islamqa.info/en/72204

আমরা যদি নিজের হাওয়া কে suit করে এমন ফাতওয়া খুঁজি , আমার মনে হয় সব কিছুরই ফাতওয়া পাওয়া যাবে।"
262943
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:০১
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৫
207042
ঈনসাফ লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক তাওহীদ মেনে জীবনযাপন করার তাওফিক দিন।
262975
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৩১
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : ভালো লাগল! রসগোল্লা খুব মিষ্টি ও অনেকের পছন্দ তাই বলে যে জানে যে এই রসগোল্লাটা ড্রেন থেকে তুলে সাতবার ধুইয়ে পরিবেশন করা হয়েছে তারপরও সে খেতে চাইবেনা কারন সে জানে! সে রকমই আল্লাহ ও সঠিক ধর্ম পালনকারিদের যাচাই-বাছাই করে নেবেন! ড্রেনের রসগোল্লা নেবেন না!
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৪
207041
ঈনসাফ লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক তাওহীদ মেনে জীবনযাপন করার তাওফিক দিন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File