মুসলিমরাই জিতত যদি পাকিস্তান হেরে যেত

লিখেছেন লিখেছেন ঈনসাফ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫২:৩৭ সকাল

মার্চ ২, ২০১৩। ইন্ডিয়া-পাকিস্তান খেলা চলছে! তীব্র উত্তেজনা খেলার মাঝে!খেলার অন্তিম মুহূর্তে টানটান উত্তেজনা!মুসলমানের বাচ্চারা ইন্ডিয়া হারলেই খুশি-সেটা যেম্নেই হোক!বাংলাদেশ জিতলে ফেলানি হত্যার প্রতিশোধ আর পাকিস্তান জিতলেও কোন না কোনভাবে ফেলানি হত্যার প্রতিশোধ কিংবা মুসলিমরাই তো জিতসে!মুসলিম হয়ে ব্রাম্মণ্যবাদী ইন্ডিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তান সাপোর্ট না করে পারা যায়? পাকিস্তানের একটা উইকেট পড়ল তো ইন্ডিয়া সমর্থকদের লম্ফঝম্ফে গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছে গরু খাওয়া মুসলিমের বাচ্চাদের।সাথে সাথে পাকিস্তানের চার-ছক্কায় দর্শকদের মাঝে হিজাবীদের দেখে গর্বে বুকটাও উঁচু হয়ে যাচ্ছে সেই মুসলিমের বাচ্চাদের! মা-বোনকে দেখিয়ে বলছে- “দেখছ!পাকিস্তানিরা খেলা দেখতে আসছে কিন্তু হিজাব দিয়ে খেলা দেখতে আসছে!এই না হল সাচ্ছা মুসলিম!আমাদের দেশের গুলা করেটা কি!শাহবাগীর জাত ইন্ডিয়ান গুলারে দেখসো? কিরকম ...”

খেলা শেষ!ইন্ডিয়া হারলো পাকিস্তান জিতল!খেলা শেষে আফ্রিদি-হাফিজ কয়েকবার আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহ্‌র ভাগটাও আদায় করেছে দেখে মুসলিমদের বাচ্চাদের আনন্দ দেখে কে!ফেসবুকে মুসলিমদের জয়োল্লাসের মুহুর্মুহু আপডেটের সাথে সাথে ইন্ডিয়া হারেনি হারতে বসেছে মুসলিম জাতি।কারুনের ধনের মত দিন দিন তলানিতে পৌঁছে যাওয়াই যেন তাঁর নিয়তি? আশ্চর্য লাগে ? মনে হচ্ছে হুজুরের দল পারস না কিছু করতে আসছ খালি বাগড়া দিতে!

আচ্ছা একটা ঘটনা বলি কেমন!আমেরিকার এক মুসলিমের বাচ্চা উস্তায নুমান আলী খানকে প্রশ্ন করে বসল যে Shaykh, Can I continue sleeping with my girlfriend as long as giving her Dawah? প্রশ্নটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে? মনে হচ্ছে না ওই ছেলেকে কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে যে দাওয়াহর মত রেকম্মেন্ডেড কাজ করতে গিয়ে তোকে ব্যাভিচারের মত জঘণ্য কবীরা গুনাহ করে তৃপ্ত হতে বলেছে কেরে আহাম্মক? চুরি কিংবা ব্যভিচার করতে গিয়ে বিসমিল্লাহ্‌ বলে শুরু করার মত স্পর্ধা দেখানোর মত একটা ঘটনা যেন তাইনা!

একই কথাটা মুসলিমের বাচ্চা ক্রিকেটখোরদের জন্যও যে খাটে- ইনক্লুডিং প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ব্রাদারস এবং গ্যালারিতে বসে মাথায় ফরজ দায়িত্ব খেদানোর চেষ্টা করা হিজাব পরা মেয়েটাও। তোমাদের কথামতে মালাউনের বাচ্চা ইন্ডিয়াকে নাকানিচুবানি দেয়া মুসলিমের বিজয় দেখতে গিয়ে গিয়ে হারামে নাক ডুবাতে তোমাকে কে বলেছে? খেলার উছিলায় জাতীয়তাবাদের বিষ ঢুকে এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে শুধু মাত্র দেশ ভিন্ন হওয়ার কারণে যে ঘৃণা করতে শেখে সেটাও কি এখান থেকেই আমদানি হচ্ছেনা? ছেলে-মেয়ে একসাথে বসে গ্যালারীতে খেলা দেখবে, গানের তালে তালে ভাড়া করা এবং ভাড়া না করা চিয়ার গার্লসরা নাচবে, জুয়াড়িরা জুয়াতে মাতবে, ওভার শেষে টিভিতে নগ্নতার পসরা সাজানো অ্যাড গুলো হাজির হবে তবুও ইসলামে এই খেলা দেখা হালাল হবে?

পাকিস্তান যদি হেরে গিয়ে ফাইনালে উঠতে না পারত মুসলিমরাই জিতত!ফাইনাল খেলা দেখতে গিয়ে মুসলিমের বাচ্চারা আরও ৮ টা ঘন্টা নষ্ট করতনা।গ্যালারিতে খেলা দেখতে গিয়ে দিনের ২-৩ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ছেলেমেয়েগুলো সবগুলো নামাজই খুইয়ে বসতোনা!গ্যালারিতে শিশ দিয়ে গানের তালে নাচানাচি করে মেয়েদের দেখে শিশ দিয়ে লালায়িত হতে পারতোনা! যে ভাই নিয়মিত নামাজ পড়ে সে জামাআত বাদ দিয়ে ঘরে তাড়াহুড়ো করে নামাজ পড়তনা কিংবা পরে জামাতে গিয়ে নামাজের ১ টা রাকাত খুইয়ে আসতনা! কিংবা হাঁপাতে হাঁপাতে নামাজ পড়তে গিয়ে খেলার চিন্তা সিজদায় গিয়ে করতনা।কিংবা যে ভাইরা কখনো মেয়েদের দিকে মুখ তুলেও তাকান না টিভিতে খেলা দেখতে গিয়ে ক্যামেরাম্যানের বদৌলতে আরও কতকিছু দেখতে যে তাঁরা বাধ্য হয়েছে সেটার যেদিন হিসেব হবে সেদিন তাঁরা আল্লাহ্‌র কাছে কিভাবে দাঁড়াবেন? শয়তান তো মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাদের খেলা দেখতে বাধ্য করেনি!মুসলিমের যে ১১ টা বাচ্চা মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে এতজনের আমলের সর্বনাশ করে খেলা শেষে আলহামদুলিল্লাহ্‌-সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র বলে রসিকতাটুকু করল তাদের নামাজের কথা নাই বা বললাম!

সময়কে কোন ব্যাঙ্ক ভল্টে রাখা যায়না, মুসলিমদের সময় হয় আল্লাহ্‌র পথে যাবে তা না হলে একদম ড্রেনে চলে যাবে। ওই সময়ে খেলা না দেখে তাঁরা যদি একবার শুধুমাত্র “সুবহান-আল্লাহি ওয়াবিহামদিহি”(ফেরেশতারা এটা বলেই আল্লাহ্‌র যিকির করেন, এটা অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির)ও বলত তবুও মুসলিমরাই জিতত! মুসলিমরাই জিতত যদি পাকিস্তান হারত!এই ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে হওয়া হারামের মেলা থেকে একটা হারাম থেকেও যদি মুসলিমরা বাঁচত তবে মুসলিমরাই জিতত!

রসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন “Whoever loves a people is one of them.” অর্থাৎ যে যাদের ভালবাসে যাদের অনুসরণ যাদের আইডল মনে করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।অতচ আজ আমরা খালিদ সলফে সালেহিন, সালাহ-আদদীন আইয়ুবী, ইউসুফ বিন তাশফিন, তারিক বিন যিয়াদদের ভুলে ক্রিকেট স্টার, ফুটবল স্টার, মিডিয়া স্টারদের পেছনে ছুটছি।আমরা কি তাদের দলভুক্ত হয়ে কেয়ামতের ময়দানে পুনরুত্থিত হতে চাই?

অবশ্য এক কথায় বলে দেয়া যায়না যে ক্রিকেট খেলা হারাম যেমনি ভাবে ছুরি দিয়ে খুন করায় ছুরির ব্যবহারকে হারাম বলা যায়না।কারন ছুরি দিয়ে আপেলও কাটা যায় আবার মানুষও খুন করা যায়।পার্থক্য তৈরি করে দেয় এর ব্যবহার।আমি যদি বিকেলে সময় পেয়ে একটু ক্রিকেট-কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলি সেটা অবশ্যই হালাল তবে সেটা প্রফেশনাল পর্যায়ে চলে গেলে এবং চলে যাওয়া মাত্রই উপরে লিখা ঘটনাগুলো এক অপ্রিতিরোদ্ধ বাস্তবতা।আরও নানাবিধ কারণে মুজতাহিদ আলিমরা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে প্রচলিত ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলাকে হারাম বলেছেন [এখানে ক্লিক করুন, যদিও প্রশ্নের প্রেক্ষাপটটা ফুটবল তবুও আলচনার সার্বিক দিক নিয়ে পরিষ্কার একটা ধারণা পাবেন]

ইসলামিস্টদের অনেকে আফগান-পাকিস্তানের জয়ে আমোদিত হয়ে লিখালিখি করছেন যার ফলে সাধারণ মানুষ ও খেলোয়াড়রা বাণিজ্যিকভাবে হওয়া হারাম ক্রিকেট খেলাকে হালাল মনে করছে। যেহেতু সে ভাবছে এ ধরনের বাণিজ্যিক ক্রিকেট খেলা হালাল তা না হলে এসব বিজ্ঞ ইসলামিস্ট এটাকে প্রমোট করছে কেন? তাই সে কখনো ঐ হারাম থেকে তওবা করার চেষ্টাও করছে না। মনে রাখা উচিৎ আমরা যদি গুনাহকে গুনাহ মনে করি হারামকে হারাম মনে করি তবুও মাঝেমধ্যে সেই ভুল করে ফেলি কিন্তু সেটাকে হারাম জেনে ঘৃণা করতে শিখি তাহলে আমাদের জন্যে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে হেদায়েত এক সময় না এক সময় আসবেই।কিন্তু আমরা যদি কুরআন-হাদিস অনুযায়ী বিচার-বিবেচনা না করে নিজের পছন্দমত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই তারপর নিজের পছন্দকে জায়েয করার জন্য যুক্তি-দলিল খুঁজে বেড়াই মানে ফতওয়া শপিং করি হেদায়েত সরে যাবে অনেক দূরে!এই ধরনের দাম্ভিক-অহংকারী যুক্তিবাদীরা হেদায়েত খুব কমই পায়।মুসলিম হয়েও ক্ষতিগ্রস্তদের খাতায় নামটা লিখে ফেলে।

কাফিরদের আকাঙ্ক্ষা হল তাৎক্ষণিক তৃপ্তি, আর পরকালে বিশ্বাসী মুসলিমদের হল অপেক্ষার পর আখিরাতের জন্য তুলে রাখা অনন্তকালের তৃপ্তি। আজ হয়ত আফগান পাক কিংবা বাংলাদেশিরা জিতবে বলে আমরা কাফিরদের মত তাৎক্ষণিক একটা তৃপ্তি পাব কিন্তু আসলে সেটা আমাদের ঈমান ও আখিরাতের জন্য অকল্যাণকর!অন্যদিকে তাঁরা হারলে আমাদের খারাপ লাগবে কিন্তু তাদের এই হারের ফলে খেলা দেখার পরমাণ একটু কমে আসাও আমাদের জন্য কল্যাণকর।

“আর হতে পারে তোমরা কোনো-কিছু অপছন্দ করলে, অথচ তা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক, আবার হতে পারে তোমরা কোনো-কিছু ভালোবাসলে, অথচ তা তোমাদের জন্য মন্দ। আর আল্লাহ জানেন, যদিও তোমরা জানো না।’’[সূরা বাকারা,২:২১৬]

ডিস্ক্লেইমারঃ মুসলিমদের "মুসলিমের বাচ্চা" ট্যাগ এজন্য দিয়েছি যে আমরা আসলে প্রকৃত মুসলিম হতে অনেক দূরে আছি।সাহাবীরা কত অ্যাক্টিভ ছিলেন সেটা চিন্তাও করা যায়না, তাঁরা রসুলুল্লাহ সঃ এর পাশে থাকতেন, নিজেদের পরিশুদ্ধ করতেন, পরিবারের রুটি-রজির ব্যবস্থা করতেন, পরিবারের সদস্যদের ইসলাম শেখাতেন, নিজে কুরআন হিফজ করতেন আরও কত কি !পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হিজাব দাঁড়ি এগুলো তো আসলে মিনিমাম রিকয়ারমেন্ট।আমরা তাদের পথে না হেঁটে ক্রিকেট নিয়ে প্রগলভ হচ্ছি।সেটা আবার পাব্লিকলি ফ্ল্যাশ করে অপরাধটা লঘু করে দিচ্ছি। এজন্যই নিজেদের মুসলিমের বাচ্চা বলেছি কারণ আসলে আমরা মুসলিমের মত মুসলিম হতে পারিনি।অধিকাংশ মানুষই আল্লাহকে বিশ্বাস করে তবে আমাদের কাজকর্মে আখিরাত যে সত্য সেটা বোঝা যায়না।আমরা আল্লাহকে আখিরাতকে সেভাবে বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি যেমনটা করা উচিৎ।বুঝলে ক্রিকেট খেলা নিয়ে মাতামাতি করতাম না।

আমি যে মাঝেমধ্যে পথহারা হয়ে ক্রিক ইনফো কিংবা টিভির রিমোট ঘুরিয়ে খেলা দেখতে ঢুকে পড়িনা সেটা স্বীকার না করলে মিত্থ্যা কথা বলা হবে, তবে আমি সেটা যখন করি সেটা ভুল এবং না দেখাটাই হচ্ছে ঠিক ! অন্তত এই লিখা নিজে লিখার পর আমি পুনরায় সেই ভুল করতে গেলে অবশ্যই একটা শক্তপিছুটান আসবে এটাও কিন্তু ঠিক আলহামদুলিল্লাহ্‌। মুসলিমের বাচ্চা আমি নিজেও ভালো হতে চেয়েছিলাম এজন্যই নোটটা লিখা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262240
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:২০
কাহাফ লিখেছেন : সর্বাংগীন সুন্দর একটি লেখা সন্দেহ নেই,কিন্তু ইচ্ছে করলেই কি চোখ-কান বন্ধ রেখে চলা যাবে বর্তমান এই সময়ে? দু'টি মন্দের তুলনামুলক কম মন্দ কে দিয়ে বেশী মন্দ মোকাবেলার প্রয়াস এগুলো। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
262304
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৩৭
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : ভালো লাগল । গুরুত্ব পূর্ন লিখাটির জন্য, ধন্যবাদ.।.।.।
262352
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৩
নূর আল আমিন লিখেছেন : আপনি যেভাবে গালাগালী কটাক্ষ্য করে পোষ্ট দিয়েছেন সন্দেহ হচ্ছে আপনি মুসলিম কি না

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File