অনলাইন সাংবাদিকতার হাতে কড়ি

লিখেছেন লিখেছেন নয়া জামানার ডাক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:৪৬:৫৩ রাত



অনলাইন সাংবাদিকতা বলতে বুঝায় ইন্টারনেট পত্রিকা বা গনমাধ্যমে সাংবাদিকতা। বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া এ ব্যাপারে বলা হয়েছে-Online journalism is defined as the reporting of facts produced and distributed via the internet. জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এ অত্যাধুনিক যুগে প্রযুক্তিগত কারণে মিডিয়ার গুরুত্ব যেমন বেড়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনলাইন নিউজ ও গণমাধ্যম কর্মী। কোন ঘটনা( সংবাদের উৎস) পুর্বে যেমনি ঘটত এখনও তাই ঘটে । কিন্ত বর্তমানে মিডিয়া প্রসারের কারণে গনমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকায় এক নিমিষেই বিশ্বজুড়ে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়ে যায়। সিলেটের রাজন হত্যা কাণ্ডের সুবিচার এবং টেলি যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক কোম্পানি রবি’র বিজ্ঞাপনে গানের অভিনয়ে কক্সবাজারসাগরপাড়ের কিশোরবালক জাহিদের মত জীবন পালটিয়ে দেওয়ার মত প্রতিনিয়ত অসংখ্য ঘটনা মিডিয়া বা গনমাধ্যমের ভুমিকাই অপরিসীম।

অনলাইন সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য

১. তাৎক্ষাণিকতা

যে কোন ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই রেডিও টিভির মতো এতে প্রকাশ করা যায়। আবার মেইলে খবরের আপডেট পাঠানোর সুবিধা আছে । গুগল ফীডবার্নারসহ বিভিন্নভাবে এটা করা সম্ভব।

২. স্থায়িত্ব

অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টের দায়িত্ব অনেক বেশি । প্রকাশিত রিপোর্টগুলো আর্কাইভ করে রাখার ব্যবস্থা থাকায় তা যে কোন সময় দেখা যায়। অন্য যে কোন মিডিয়ার ( প্রিন্ট, রেডিও ও টিভি) চেয়ে এটা খুজে বের করা অনেক সহজ।

৩. উপভোগ্য

অনলাইনে সংবাদপত্রে লেখার পাশাপাশি গ্রাফিক্স, অডিও, গান, ভিডিও ফুটেজ ও অ্যানিমেশন সংযুক্ত করা সম্ভব। ফলে এটা উপভোগ্য হয়ে উঠে।

৪. ইন্টার-অ্যাকটিভ ( interactive)

অনলাইন সাংবাদিকতা একটি ইন্টার-অ্যাকটিভ ( interactive) প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পাঠককে নিজের মতামত দ্বারা প্রভাবিত করার সুযোগ বিদ্যমান। এখানে একটি লেখার সঙ্গে একই বিষয়ের অন্যান্য লিংক প্রদান করা যায়। ফলে পাঠক খুব সহজেই একই বিষয়ে অন্যান্য লেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারে। তাছাড়া এতে লেখার সুত্র উল্লেখ করা যায় বিধায় পাঠক রিপোর্টের বা লেখার বস্তনিষ্ঠতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।

৫. পূর্ণাঙ্গ, সমৃদ্ধ ও সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশনা

অনলাইন সংবাদ পত্রে জায়গার কোন সমস্যা নেই। রেডিও কিংবা টিভির মতো সময়েরও সীমাবদ্ধতা নেই । ফলে একজন অনলাইন সাংবাদিক তার স্টোরিকে বিভিন্ন তথ্যে সমৃদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেন। আবার প্রিন্ট মিডিয়ায় একবার প্রকাশিত হয়ে গেলেতা আর সংশোধন করার সুযোগ থাকে না। কিন্ত অনলাইনে নিচে মন্তব্যের জায়গায় কমেন্ট করে সংশোধনী লেখা যায় এবং এডমিন সরাসরি পোষ্ট সংশোধন কিংবা মুছে দিতে পারে। এ জগতের সাংবাদিকরা ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা আপডেট দিতে পারে।

প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতার উপর ইন্টারনেটের প্রভাব

প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মী, সাংবাদিক ও সম্পাদকদের কাছে ইন্টারনেট বর্তমানে সময় বাঁচানো গবেষণাসম্পদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছ। বিশেষ করে কোন বিষয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড জানার ক্ষেত্রে এটি অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। ইন্টারনেটে প্রিন্ট ও সম্প্রাচার মিডিয়ার বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ,কলাম ও ধারাবাহিক ফিচার পাওয়া যায়, যা জ্ঞানার্জনে অনেক সহায়ক হচ্ছে।

কিভাবে শুরু করবেন অনলাইন সাংবাদিকতা?

প্রথম স্তর

১. প্রথমেই আপনাকে সাংবাদিকতার প্রাথমিক ধারণা নিতে হবে। কীভাবে সংবাদ লিখতে হয়, সংবাদের উপাদানগুলোই বা কী ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেটা আপনি বই পড়ে জানতে পারবেন। তাছাড়া এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্টান বা সংস্থা সেমিনার বা কোর্চের আয়োজন করে থাকেন সেখানেও সংবাদ মাধ্যমের প্রথমিক পূঁজি সম্পর্কে জানা যায়।

২. কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এমএস ওয়ার্ডে বাংলা ও ইংরেজি লিখা জানতে হবে। তাছাড়া ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভাল।

৩. ইন্টারনেট সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু ওয়েব ব্যাসিক এবং প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা থাকলে ভাল। তবে প্রোগ্রামিং ভাষা খুব বেশি দরকার নেই। যাদের বিভিন্ন ব্লগে লেখার অভ্যাস আছে তারা এ ক্ষত্রে অনেকটা এগিয়ে আছেন।

৪. লেখার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্যকর উপায় হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে বেশি বেশি লেখা এবং ভালো কোন লেখক বা সম্পাদকের দ্বারা সম্পাদনা করিয়ে নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করা।

দ্বিতীয় স্তরঃ-

১. প্রথমে আপনার লেখার (ফিচার, নিউজ, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি) বিষয় নির্ধারণ করুন।

২. আপনার বাছাই করা বিষয়ে কিছু নিমুনা লিখে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে নিজের কোন ওয়েবসাইট থাকলে তাতে লেখাগুলো প্রকাশ করুন। নিজের ওয়েবসাইট না থাকলে হতাশার কিছু নেই। বর্তমানে অনেক ফ্রি ওয়েবসাইট ( বিভিন্ন ব্লগ, ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম ইত্যাদি) পাওয়া যাবে যেখানে আপনি চাইলেই লিখতে পারেন।

৩. এবার ফ্রিল্যান্সারদের লেখার দায়িত্বে আছেন এমন সম্পাদক/সহ সম্পাদক অথবা অনলাইন নিউজ পোর্টেলের এডমিনের সাথে যোগাযোগ করে লেখা পোষ্ট নিশ্চিত করুন।

৪. তাঁদেরকে আপনার পরিচয় প্রদান করে আপনি যে লিখতে ইচ্ছুক তা জানিয়ে মেইল করুন। তাদের কাছে অ্যাসাইনমেন্ট চাইতে পারেন। তবে অবশ্যই তাদের কাছে আপনার লেখার দু একটির নমুনা কপি পাঠাবেন। তাছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে লেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সম্পাদকের সঙ্গে ফোনে বা মেইলে আলাপ করতে পারেন। ৫. এসব কাজের পাশা পাশি বিভিন্ন প্রতিষ্টানে আপনার যোগাযোগ বাড়ান এবং আপনাকে লেখার সুযোগ দিতে অনুরুধ করুন। একই সময়ে আপনার ব্লগ কিংবা সাইটে নিয়মিত লিখতে থাকুন। উল্লেখিত উপায়ে কাজ করলে পাশা পাশি লেখারমানভালহলেআপনারলেখার সুযোগ পাবেন, একথা বলা যায় নির্দ্বিধায়।

তৃতীয় স্তরঃ

এবার বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় আপনার সিভি পাঠান। সাথে সাথে হাউসগুলোতে আপনার যোগাযোগ অব্যাহত রেখে নিয়মিত সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ পেতে চেষ্টা করুন।

অনলাইন সাংবাদিকতাঃ নৈতিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা

সম্মান জনক ও আত্ম মর্যাদাশীল পেশা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য অনলাইন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সংবাদ কর্মীকে অবশ্যই দৃঢ় নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ অনলাইন বর্তমানে একটি গবেষণা সম্পদ হিসেবে কাজ করছে। ফলে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য দিয়ে কোন লেখা দিলে তা ইতিহাস বিকৃতির চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সততা না থাকলে এ পেশায় বেশি দিন ঠিকে থাকতে পারবে না।পোর্টাল বদলানো যাবে কিন্ত বেশি দূর আগানো যাবে না। তাই নিজের প্রতিভা বিকশিত করতে এবং এ মহান পেশার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে একজন সংবাদকর্মীকে নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়ার বিকল্প নেই। এছাড়া একজন গণমাধ্যম কর্মী একই সময়ে অনেকগুলো সংবাদপত্র বা পোর্টালে লিখতে পারবে। তাছাড়া তথ্য সুত্র সঠিক ভাবে প্রদান না করলে নিজ ও সংশ্লিষ্ট সংবাদ বা সংবাদপত্র বিশ্বাসযোগ্যতা,সুনাম হারাবেনএবং আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377873
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File