শিরকে ভরা সমাজ - গন্তব্য জাহান্নাম !
লিখেছেন লিখেছেন নয়া জামানার ডাক ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩৬:০৬ বিকাল
আবাহমান কাল ধরে আমাদের সমাজে চলে আসছে কুসংস্কার। মূলত অধিকাংশ কুসংস্কার যুগযুগ ধরে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে এ দেশে সংক্রমিত হয়ে আসছে। তা আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছেছে। এ সব কুসংস্কারের মধ্যে ত্বাগা বা রক্সা বন্ধন, তাবিজ ও মাজার পূজা অন্যতম।
ত্বাগা বা রক্সা বন্ধনঃ তাগা বা রক্সা বন্ধন সাধারনত নিরাপত্তা বিধান বা সেলফ কেয়ারের উদ্দেশ্যে হাতে বাধা হয়। ভারতের তামিলনাড় ও আন্দ্রা প্রদেশে এর প্রচলন বেশি। আন্দ্রা ভাষায় এটাকে বলা হয় তাইত্যেম। বিশেষ করে লাল ও খয়েরী রঙের সুতা দিয়ে এটা তৈরী। কিশোর থেকে শুরু করে বুড়ো বয়স পর্যন্ত প্রায় পুরুষেরা এটা ব্যবহার করে থাকে। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে জীবনের নিরাপত্তা বিধান, ভাগ্য নির্ণয় ও দুর্ঘটনা থেকে মুক্তিই পাওয়ার উদ্দেশ্যে এটার ব্যবহার। সাধারনত ফকির, গনক ও দরগা বা মাজারের খাদেমের কাছে এটা পাওয়া যায়। দরগায় চাদা বা মান্নতের টাকা পাঠালে এটা ফ্রি পাওয়া যায়। ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আমদানিকৃত এই প্রথা এখন মুসলমান কিশোর ও তরুণদের ফ্যাশন। সাধারনত আমাদের সমাজে শিশুদের হাতে (বল্ল্যা) পরিয়ে দেওয়া হয়। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। বর্তমানে এটাকে আধুনিকায়ন করে রাবার, লেদার, তামা এবং স্টীলেও পরিবর্তন করা হয়েছে।
তাবীজঃ লোহা, পিতল, তামা বা এলুমিনিয়ামের তৈরী বক্স বা খোলের মধ্যে কোন আয়াত বা নকশা জাতীয় কিছু অংকন করে সুতা বা তাগা দিয়ে শরীরের যে কোন অংশে ঝুলিয়ে রাখার নামই তাবীজ। তাবীজের ব্যাপারে আমাদের কোন ইসলামিক ধারণা নাই বললেই চলে। একদা হযরত উক্ববা বিন আমের (রঃ) বলেন, রাসুল (সঃ)খিদমতে একদল লোক আসল। অতঃপর দলটির ৯ জনের বায়’আত নিলেন এবং একজন বাকী রাখলেন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সঃ) আপনি ৮ জন কে বায়’আত করালেন আর একজন কে ছেড়ে দিলেন। রাসুল (সঃ) বললেন,তার কাছে তাবীজ আছে। তখন লোকটি হাত ভিতরে ঢুকিয়ে তাবীজ ছিড়ে ফেলল।তখন রাসুল (সঃ)তার বায়’আত গ্রহণ করলেন। (সুসনাদে আহমদ হা/১৭৪৫৮;সহীহ হা/৪৯২)। তাবীজের ব্যপারে মহানবী হযরত মহাম্মদ (সঃ) বলেছেন-যে ব্যক্তি নিজের শরীরে তাবিজ লটকালো সে শিরক করল।(মুসনাদে আহমদ-৪/১৫৬)। শিরকের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন; আর তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের অবশ্যই ওহী হয়েছে যে,তুমি শিরক করলে নিশ্চই তোমার কৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্ত্ররভুক্ত হয়ে পড়বে।( ‘সূরা যুমার-৬৫)। কারণ তাবীজ ব্যবহারকারী ভাবে,তার বিপদ মুসিবত,ভাল মন্দ,অসুখ বিসুখ সব কিছুর থেকে তাবীজই মুক্তি দেবে। আর যারা তাবীজের প্রতি অভ্যস্ত তারা সরাসরি আল্লাহর কাছে তাওয়াক্কুল বা আশ্রয় চাই না। যদিও বা চাই সেটা তাবীজের মারফত বা উচিলা করে ভাবে। আর এটা যদি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয় সেটা হবে শিরকে আসগর এবং সরাসরি তাবীজই তার ভাল মন্দ ভাবে তাহলে সেটা হবে শিরকে আকবর। আর শিরক হল আল্লাহ প্রদত্ব বেধে দেওয়া সীমা বন্ধনের সর্বশেষ সীমা লংঘন। শিরকের ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন-তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্ত তার শরীক করে। সূরা আল ইউছুফ-১০৬। তিনি আরো বলেন-কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্ত ভাবে (বহু আমলকারী) তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে (সূরা গাশিয়া-৩-৪)। জ্বীন ভূতের আসর থেকে শুরু করে গর্ভে সন্তান-সন্ততি না হলেও তাবীজের আশ্র্য় নেয় এ সংস্কৃতি মানুষেরা। কোর আন মজিদের কিছু আয়াত বা সূরা লিখে শরীরে ঝুলিয়ে পায়খানা বা অন্য কোন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে কোর আনের অবমাননা ও অমর্যাদা হবে এবং এটাকে উছিলা করায় শিরক করা হয়। এভাবে কয়কটি তাবীজের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়-সেখানে রাসূল (সঃ) এর জুতার নকশা, মুহাম্মদ (সঃ)এর নাম,হযরত আবু বকর(রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত উসমান (রঃ),হযরত আলী (রঃ) ও হযরত ফাতেমা (রাঃ)এর নাম ও দেখা যায়। আরেকটি তাবীজে লেখা আছে-ইয়া ইলাহী খিদমতে খিদমীর। অর্থাৎ জ্বিনের সরদার আমাকে মাফ করুণ। আরেকটি তাবীজে লেখা আছে ইয়া বুদ্দুহ, ইয়া বুদ্দুহ, ইয়া বুদ্দুহ,ইয়া বুদ্দুহ। বুদ্দুহ সেও একজন জ্বিনের সরদার। তাবীজের উপরে লেখা আছে ৭৮৬,আশ শাইত্বানু ফেরাউন হামান ইয়া বুদ্দুহ তাহ ইয়া বুদ্দুহ। এখানে শাইত্বান, ফেরাউন,হামান এবং বুদ্দু’র কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। যা সরাসরি শিরকে আকবর। আল্লাহ বলেন-নিশ্চয় শিরক বড় যুলম (সূরা লুকমান-১৩)। এ ক্ষেত্রে পানি পড়া বা রোখীয়া শরীয়ত সম্মত। যাদু বা রোগ বালাই থেকে নিরাময়ের জন্য রোখীয়া জায়েজ আছে বলে ওলামায়ে কেরাম গণের অভিমত। অনেকে এটাকে কোর আনিক ট্রিটমেন্ট বলে থাকেন।
মাজারঃ মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া অধ্যুষিত দেশে যেমন-ইরাকের কারবালার ঈমাম হোসাইন, নাজাফের ঈমাম আলী (রঃ)ও সামেরাহ প্রদেশের ঈমামেন আজকারী। ইরানের মাসহাদ ও সিরাজী প্রদেশের ঈমাম রেজা ও শাহ চেরাগ অন্যতম। এদিকে উপমহাদেশের ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মাজার পূজারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-ইসলামের প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে মিশর, সিরিয়া ও তুরস্কে যখন ইসলামের বাণী নিয়ে যায় তখন ঐ সব অঞ্চলে খৃস্টান সন্যাসীরা গির্জায় তারা সন্যাস এবং বৈরাগ্য জীবন যাপন করত, মিশরে তখন নয়টা আশ্রাম ছিল, এসব অঞ্চলে কিছু অবুঝ মুসলিমরা এসব আশ্রামে যাতায়ত করতে করতে তাদের এ বৈরাগ্যবাদকে ইসলামে ঢুকিয়ে ফেলছে। তেমনি পীর মুরিদও একধরনের বৈরাগ্যবাদ। কারণ-ইসলামের ত্বরিকা একটি কিন্ত এসব পীরেরা অনেক ত্বরিকা যেমন-নকসবন্ধি, চিশতিয়া, হারুনীয়া, মুজাদ্দেদিয়া ও শাজেলিয়া ত্বরিকা ইত্যদি। অথচ আল্লাহ পবিত্র কোর আনের ৭নং সূরার ১৫৩ নং আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-ওয়ান্না হাযা সিয়াত্বল মুস্তাক্বীমা ফাত্তাবিওনি ওয়ালা তাত্ত্বাবিওস সুবুল, ফাতা ফাররাকা বিকুমান সাবিলি -অর্থাৎ ইসলামে একটা মাত্র সরল পথ অনূস্মরন কর, বিভিন্ন ত্বরিকার অনূস্মরণ করুনা, যদি তোমরা বিভিন্ন পথ অনুস্মরণ করতে চাও তাহলে তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাবে আমার ইসলাম থেকে বহু দূরে । সুতরাং বহু ত্বরিকার অনুস্মরণ করা যাবে না । মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া সম্প্রদায় মাজার পূজায় জড়িত হলেও ভারত ও বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায় এর প্রচলন জ্বিয়েই রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াওমুল আশরা বা মহররমের দশ তারিখ নিজের শরীরে নিজেই ছুরি দিয়ে রক্তপাত ঘটায় শিয়া সম্প্রদায় আর এদিকে আমাদের দেশেও একটি সম্প্রাদায় তা হুবহু অনূকরণ করে থাকেন। শিরক সম্পর্কে আল্লাহ আরও বলেন-যে ব্যক্তি যেনে শুনে শিরক করল, তওবা না করে মারা গেলে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামীঃ আল কোর আন। এ ব্যাপারে রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন-তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করবেনা, যদিও তোমাকে কেটে পেলা হয় বা আগুনে পুড়ে হত্যা করা হয়।তাই আসুন শিরক থেকে নিজে বাঁচি সমাজ দেশ ও জাতি কে বাচাই।
বিষয়: বিবিধ
১৭০৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন