প্রয়োজন এক ইসলামী ঐক্যের

লিখেছেন লিখেছেন নয়া জামানার ডাক ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:২৪:০৬ রাত



ভৌগূলিক দিক থেকে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ দক্ষিণ এশী্যায় অবস্থান যার চার পাশে ঘিরে রয়েছে কট্ট্রর পন্থী অমুসলিম রাস্ট্র।দক্ষিণ পূর্ব দিকে রয়েছে কট্টর বৌদ্ধ ভীক্ষুদের সেনা শাসিত দেশ মায়ানমার ।যেখানে বৌদ্দ ভীক্ষুদের দাংগায় প্রতি বছর শিশু সহ অসংখ্য মুসলীম নারী পুরুষ হত্যার ঘটনা ঘটে,গুলি করে,আগুনে পুড়িয়ে চালানো হয় হত্যা যজ্ঞ । আরাকানের বন জংগলে ও নদীর ধারে না খেয়ে খুলা আকাশের নিছে দিনাতিপাত করছে অসংখ্য বনি আদম।ভূলুন্ঠিত হচেছ মানবাধিকার।যেখানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সহ জাতি সংঘ মহাসচিব ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার উদ্ধেগ প্রকাশেও দমিয়ে দিতে পারেনি বৌদ্ধ ভিস্কুদের আগ্রাসী হাত।পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শত শত ঘর বাড়ি ,গবাদি পশু,ফসলাদি সহ অসংখ্য মুসলিম অধ্যুসিত গ্রাম।নির্যাতিতদের আর্তনাধ ও পুড়া লাশের গন্ধে আরাকানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে যায়।অপরাধ তাদের একটাই তারা মূসলিম।সম্প্রতি মায়ান্মারের সর্বশেষ আদমশুমারীতে আরকানের মুসলমানদের শুমারীর আওতায় আনা হয়নি অর্থাৎ নাগরিকত্বও দেয়নি।অপর দিকে চার-তৃতিয়াংশ এলাকা জ়ূড়ে আমাদের কে ঘিরে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।এ দেশটি সাংবিধানিক ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ দাবী করলেও প্রতিনিয়ত সংখ্যা লঘূরা নির্যাতিত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের দিক দিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম মূসলিম অধ্যুষিত দেশ ভারত। সে দেশে প্রতিনিয়ত উগ্র হিন্দুদের দাঙ্গায় মারা যায় অসংখ্য মুসলিম নর-নারী।ভারতের গুজরাট,আসাম ওড়িষ্যা প্রদেশের নিরহ মুসলিমরা হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে থাকে সংখ্যালগুদের হাতে। সর্বশেষ আসাম রাজ়্যে বুড়ৌ উগ্রবাদীদের দাংগায় প্রাণ হারায় ৩৫ জ়ন মুসলমান।মূলত এসব দাংগায় নেতৃত্ব দেয় সে দেশের রাজ়নৈতিক নেতৃবৃন্দরা।রাজ়নৈতিক পরিবেশ অনুকূলে আনার জন্যে এ দাঙ্গা বেধে দেয় ফলে রাজনৈতিক বলি হয় অসাহায় মুসলমানরা।এমনকি তারা সূরা বাকারার ১৯১ নং ও সূরা তাওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি আর পি সি ১১৫(ক) ও ২৯৯ (ক) উদ্বৃতি দিয়ে পবিত্র কোর আন কে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী উল্ল্যেখ করে ১৯৮৫ সালের ১০ ই এপ্রিল সে দেশের ২ জন সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল শিং কোর আনের সকল আরবী কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাই কোরটে আবেদন জানিয়েছিল যদিওবা বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে তা খারিজ করে দিতে বাধ্য হয়।তাছাড়াও ১৯৯২ সালে সে দেশের মুসলমানদের সরবোচ্চ ধরমীয় প্রতিষ্ঠান বাবরী মসজিদ কে ধংশ করে মাঠির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল।পৃথিবীর প্রতিবছর মোট ৫৭% ধর্মীয় দাংগা ঘটে শুধু ভারতেই।এসব দাঙ্গায় প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে উসকানি দেয় সে দেশের বৃহত্তম উগ্র হিন্দু বাদী রাজনৈতিক দলগুলো।এসব হত্যাকান্ড তারা শুধু ভারতের অভ্যন্তরেই সীমিত রাখে না মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মিরেও ছড়িয়ে দেয়।অপরদিকে আমাদের সিমান্তে হানা দিয়ে প্রতিনিয়ত পাখির মত গুলি করে হত্যা করে অসংখ্য বাংগালী মুসলমানদের ।সীমান্ত পাড় থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয় মুসলমানদের উপর।

আমাদের সবুজ শ্যামল,শষ্যা শূফলা বাংলাদেশ,শরীয়ত ঊল্লহ,তিতুমির,খানজাহান আলি,শাহ জালাল ও শাহ পরানের এ মুসলিম জনপদে আবাহমান কাল ধরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্তানে বসবাস করে আসলেও ইদানীং এ ঐতিহ্য কে ম্লান করে দিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।স্বাধীনতার স্বপক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি বলে এ বিভাজন সৃষ্ঠি করে আজ জাতীয় ঐক্য হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের বিরাট একটি অংশ নিজেকে মুসলিম দাবি করলেও তাদের আচার আচরণ ও সংস্কৃতি মোটেও প্রমাণ করে না তারা মুসলিম।এমনকি তাদের লেখনি, প্রচার,প্রকাশনা,মিডিয়া প্রতিদিনের সংগ্রাম যেন ইসলামের বিরুদ্বে।তাদের অধিকাংশ নীতি নির্ধারনী ব্যাক্তিদের উক্তি যেমনঃ কূদচিত মহিলারা চেহেরা ঢাকার জন্য বোরকা পড়ে থাকেন,এটা আরব্যদের সংস্কৃতি যা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।অথচ পর্দা শরীয়তের একটি ফরয বিধান।তারা আরো বলে থাকেন¬-আমি মুসলিমও নয় হিন্দুও নয়,বাংলাদেশকে ইসলামি রাস্ট্র বানানোর জন্য মুক্তি যুদ্ধ করিনি,তথা কথিত আল্লাহর আইন দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নতি হবে না,বাংলাদেশ থেকে ধর্মের শেষ শিকড়টি পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হবে,মাদ্রাসা জংগি তৈরীর কারখানা,এদেশ থেকে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করা হবে,ফতোয়া বন্ধ করতে হবে,দেশে আশংকাজনক হারে বোরকার ব্যবহার বেড়ে গেছে,মাদ্রাসার বিরূদ্ধ আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি এবং মা দূর্গা গজে ছড়ে এসেছেন তাই ফসল ভাল হয়েছে ইত্যাদি উক্তি কারী পবিত্র ইসলামের সাথে সম্পর্ক সন্দেহ গড়ে তুলে নিশ্চয়।তাদের মূল থিউরী হল সেকূলার।অক্সফোর্ড ডিকশনারীর মতে যার আভিধানিক অর্থ ধর্ম নিরপেক্ষতা বা ধর্ম হীনতা। অধিকাংশ মুফাসসীরে কেরামগণের মতে এ মতবাদ একটি কুফরি মতবাদ।মুসলমান তার দর্মের পক্ষেই থাকবে নিরপেক্ষ নয়।সুতরাং এ মতবাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পরক নাই। সেকুলার মতবাদের জনক তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা।তার শাষনামলে পার্লামেন্টে বোরকা পড়ে আসার অপরাধে মহিলা সংসদ সদস্যার পদ বাতিল করেছিল ।আর এরকমই একটি মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমাদের দেশীয় কিছু চেতনা ধারী মনিষী দিন রাত সংগ্রাম করে চলছে।এ মতবাদ দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত সকল ধর্মের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চরম ব্যর্থ হয়েছে তা নয় বরং ধর্ম বিরোধীতাই জন্ম দিয়েছে।মূলত আমার দেশের চেতনা ধারীরা ভারতের এমন সব অনুকরণ করছে যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সাংঘর্ষিক। তারার ধর্ম নিরপেক্ষেতার দোহায় দিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এ বাংলাদেশের সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্তা ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তুলে দেওয়া হয় এবং রাজনৈতিক দলের কর্মপদ্ধতিতে মহান আল্লাহই সকল ক্ষমতা ও সার্বভোমত্বের মালিক উল্ল্যেখ থাকায় ঐ রাজনৈতিক দলের নিবন্দন বাতিল করে দেওয়া হয়। এভাবে কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইসলাম বাদ দেওয়া হয়েছে,সেলিম উল্লাহ মুসলিম হল থেকে মুসলিম বাদ দেওয়া হয়েছে, সর্ব শেষ দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বি এন ইসলামিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে বি এন স্কুল এন্ড কলেজ করা হয়েছে। এছাড়াও একাডেমিক পাঠ্য পুস্তকে ইসলামী শিক্ষাকে সংকোচিত করে অপরদিকে ভালবাসার কৌশল শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

আশ্চ্যর্য হলেও সত্য যে আজকে আমার দেশের তাফসির মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারী করা হয় আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার নামে নগ্ন নরতকীদের নৃত্তানুষ্ঠান পুলিশি পাহারায় উদযাপন করা হয়।আর সেখানে বিজাতীয় পরণো নরতকীদের ভারত থেকে বন্যার মত আগমন ঘটে যেখানে এদেশের এমপি আর মন্ত্রীরা চেয়ারে জায়গা না পেয়ে ঘাশের উপর বশে তা উপভোগ করে।এত সব অনুষ্ঠানের হরতা করতা তারাই যারা এ মুসলিম জনপদের ইসলামের শেষ শিকড় পরযন্ত উপড়ে ফেলতে চাই।

আজকে ইসলামী সংস্কৃতি এদেশে বিলুপ্ত প্রায়।হয় না আর তাফসীরুল কোর আন মাহফিল যেখানে লাখ-লাখ নারী-পুরুষ ও তৌহীদি জনতার অশ্রুসিক্ত কন্ঠে দেশ ও জাতির সমৃদ্বির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মুনাযাত করা হয় এবং অসংখ্য অমুসলিম তার স্ব ইচ্ছায় শান্তির ধর্ম ইসলাম সাদরে গ্রহণ করে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা।হয়ত বা নাও দেখতে পারি যদি সমগ্র বাংলাদেশের সকল তৌহিদী জনতা,আলেম-ওলামা ও তরুণদের সমন্বয়ে এক ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়তে না পারি।এজন্য এক বরেণ্য আলেম মন্তব্য করে বলেছিলনঃ বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশের উত্তর গগণে কালো মেঘ জমা হয়েছে,আবহাওয়ার পূরবাবাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে,সঠিক সময়ে তার মোকাবেলা করা না গেলে এমন অমাবশ্যার রাত আসতে পারে যার সুবহে সাদিক হওয়াটা অসম্ভব হবে। সুতরাং অদুর ভবিষ্যতে এ মুসলিম জনপদের মুসলমানিত্বের দিক দিয়ে ভারতের মালাপ্পুরাম অংগ রাজ্যের মুসলমানদের ভাগ্য বরণ করতে হবে।ভারতের যে অংগ রাজ্যে সবছেয়ে বেশী মাদক দ্রব্য বেছা কিনা হয়।মদ ছাড়া কোন অনুষ্ঠানই উদযাপিত হয়না।এমনকি ঈদের দিনেও মদ আপ্যান করা হয় অতিথিদের।সেখানকার মুসলিমরা জানেনা মুসলিম হিসেবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব কি? এমনই মুসলিম তৈরীর জন্য এ দেশেরই একটা বিশাল অংশ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাছে।যা আমাদের মুসলিম এ জন পদের আলেম ওলামাদের দীর্ঘ দিনের সাধনা,ইসলামের শিক্ষা,সংস্কৃতি চর্চা ও ঈমান আকিদা রক্ষার আন্দোলন হবে পন্ডশ্রম।দীর্ঘ দিনের লালিত সপ্ন ও ঐতিহ্য হবে ধুলিষ্যাত।

এমনি এ পিরিয়ডে অত্যান্ত প্রয়োজন হয়েছে ইসলামী দল ও মতের সমন্বয়ে এক মহা ইসলামীক ঐক্য যা ইসলামের সার্থ ছাড়া বাতিল শক্তির কাছে কোন বিষয়ে আপোষ করবেনা।কারন ইসলামী দল ও রাজনীতি বন্দের জন্য বাতিলেরা আজ ঐক্যবদ্ধ।তাই সকল আলেম ওলামা ও ইসলামী সংগঠন সব এক একাকার হয়ে একই ব্যানারে,একই মঞ্চে মিলিত হয় সেই চেতনায় যে চেতনা ও তামান্না নিয়ে দশ বছরের তরুণ আলী যেভাবে আবুসুফিয়ান আর আবু জাহেলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রাসুলের পাশে এসে দাড়িয়েছিল,বিজয়ের সেনা নায়ক তরুণ সেনাপতি খালিদ মুসলিম জাহানের বিজয় পতাকা রোম-পারস্য পর্যন্ত ছুয়ে দিয়েছিল,জিব্রাল্টার পাড়ি দিয়ে তরুণ সেনা নায়ক তারেক স্পেনের বুকে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেছিল,মাত্র ১৭ বছরের তরুণ মুহাম্মদ বিন কাসেম সিন্দু পাড়ি দিয়ে ভারত বর্ষে ইসলামের বিজয় মশাল জ্বালিয়েছিল।আমরা বাংগালীদের ভূলে যাওয়ার প্রবনতা অন্য জাতির ছেয়ে একটু বেশি।অল্প দিনেই ভূলে যাই সবকিছু।কারণ ভূলে গেছি বাতিলের কারাগারে যুগ শ্রেষ্ঠ মুফতি ও আলেমদের বন্দি করে অযুর পানি না দেওয়া অতঃপর গৃহবন্দি অবস্থায় মারা যাওয়ার দৃশ্য,ভূলে গেছি বরেণ্য আলেমদের বন্দি করে রিমান্ড ও নিরযাতন করে মূমুরষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার দৃশ্য।আজ দিবালোকের মত প্রতীয়মান যে ভাল লোক গুলো বাতিলের বন্দি কারাগারে আর যত সব অপরাধের মূল হুতারা চষে বেড়াচ্ছে রাজ পথ। আজ কোর আন-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য কে বলা হচ্ছে জিহাদী বই ও জংগী প্রকাশনা।তার পরও কি আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবেনা ?ভূলে গেলে চলবেনা আমরা খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরী। চলবে……

লেখকঃমুহাম্মদ শাহ জাহান,প্রবাসী।

বিষয়: বিবিধ

১৩০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File