মুসলিমদের একটি ঘাতক ব্যাধি "আল ওয়াহ্‌হান" ও তার প্রতিকার-২

লিখেছেন লিখেছেন ইসলামী দুনিয়া ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৩১:৩৪ দুপুর

তৃতীয়ত: ‘তোমরা হবে সমুদ্রের ফেনা রাশির মতো, যা স্রোতে সহজেই ভেসে যায়।’

এটাহচ্ছে, বেশি সংখ্যক হওয়ার পরও মুসলিম উম্মাহর এই অবস্থার একটি অসাধারণবর্ণনা। সাগরের ফেনা বিপুল পরিমাণ পানির উপর ভেসে থাকে ঠিকই, বিপুল জলরাশিনিয়ে সে গর্ব করে, এই জলরাশি তার কোন কাজে আসে না। তার নিজের কোন দৃঢ়অবস্থান নেই। সাগরের ফেনার যেভাবে কোন শক্তি নেই, শুধু উপর থেকে দেখতে অনেকমনে হয়, অন্যদিকে নিচের পানির স্রোত তাকে যেদিকে ইচ্ছা নিয়ে যায়। ফলে এইসংখ্যা নিয়ে গর্ব করা এক প্রকার মিথ্যা আত্মতুষ্টি অনুভব করা। নিজেকেচালিতবা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ফেনারাশির নেই, সাগরের ফেনাকে নিয়ন্ত্রণক রেনিচের জলরাশি।

মুসলিম উম্মাহও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু কোনক্ষেত্রেই তাদের কোন ভূমিকা কিংবা অবস্থান নেই। তাদের প্রতিটি দেশই সুদভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে পরিচালিত, আল- কুরআন সুন্নাহ বিবর্জিতপশ্চিমাবাদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-পুঁজিবাদী-রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থায় তাদের দেশগুলি পরিচালিত হচ্ছে। আর ইসলামের গন্ডি শুধুমাত্রমসজিদ ও কতিপয় পারিবারিক আইনে সীমাবদ্ধ। এ যেন সংখ্যায় বেশি হয়েও তারাসংখ্যালঘু. কাফের-মুশরিক-ইসলামের শত্রুরা ঔদ্ধত্যের সাথে আল্লাহ ও তাঁররাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে কিন্তু মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলেরএকটি কথাও বলতে পারে না। অথচ সমুদ্রের ফেনা রাশির মতোই মুসলিম উম্মাহ ওসংখ্যাধিক্য নিয়ে আনন্দিত, উল্লাসিত, গর্বিত। আর এই বিভক্তিই যে দুর্বলহওয়ার প্রথম শর্ত তাও কোরআনে পরিষ্কার বলা আছেঃ

“আরআল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরেবিবাদে/বিরোধে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবংতোমাদের প্রভাব (ত্রাস) শত্রুদের মন থেকে চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণকর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা`আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে।”সূরা আনফাল ৮:৪৬

চতুর্থত: ‘আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের মধ্যে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’

এখান থেকে দুটি বিষয় প্রতীয়মান হয়।

ক.মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। ইসলাম কোন বৈরাগ্যবাদী ধর্ম নয়, কিংবা ‘অহিংস পরমধর্ম’ প্রকৃতির গৌতমীয় বাণীতে বিশ্বাস করে না। বরং, ইসলামেভালোবাসা ও ঘৃণা (আল ওয়ালা ওয়াল বা’রা) একটি গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট। অনেকআধুনিক এবং পরাজিত মন মানসিকতার অধিকারী মুসলিম যাদের মন-মগজ পশ্চিমাশিক্ষা-ব্যবস্থা, ডিস, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে সঠিক ইসলামের শিক্ষাথেকে দূরে সরে গেছে, তারা যতই এ ব্যাপারটায় তাদের বিদেশি বন্ধুদের কাছেঅপ্রীতিকর অবস্থায় পড়েন না কেন; আল্লাহর রহমত, তিনি আল-কুরআন ও সহীহহাদিসকে অবিকৃত রেখেছেন। তা না হলে এরা ইসলামকে বিকৃত করে কোথায় নিয়ে যেতো।

আল্লাহ বলেন:

"ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে আউলিয়া (সাহায্যকারী বন্ধু, অন্তরঙ্গ, অভিভাবক)হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের আউলিয়া। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকেআউলিয়ারূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ জালিমদেরকে সৎপথেপরিচালিত করেন না।

বস্তুতঃ যাদের অন্তরেরোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে।তারা বলেঃ 'আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই।' অতএব, সেদিন দুরে নয়, যেদিন আল্লাহ তাআলা বিজয় প্রকাশ করবেন অথবা নিজের পক্ষথেকেকোন নির্দেশ দেবেন - ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্যে অনুতপ্তহবে।মুসলমানরা বলবেঃ 'এরাই কি সেসব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞাকরত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি?’ তাদের কৃতকর্মসমূহ বিফল হয়ে গেছে, ফলেতারাক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে।

ওহে যারা ঈমান এনেছ!তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায়সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারামুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারাআল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না।

এটিআল্লাহর অনুগ্রহ - তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণকরে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী।"

~ সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৫১-৫৬

মুসলিমদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বাদ দিয়ে, বিজাতীয় প্রভুদেরকে বন্ধু-অভিভাবক করে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

খ.মুসলিমদের উচিত তাদের শত্রুদেরকে ভীত সন্ত্রস্থ রাখা। আর তাদের অন্তরেআমাদের ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক । যদি না থাকে, বুঝতে হবে, কোন সমস্যা আছে।কারণ রাসুল (সা.), আমাদের দুরবস্থার একটি কারণ হিসেবে তাদের মনে, আমাদের ভয়না থাকাকে উল্লেখ করেছেন। আর আল্লাহ তো পবিত্র কুরআনে ঘোষণাই দিয়েছেন, যাবেশির ভাগ মুসলিম সেনাবাহিনী তাদের কুচকাওয়াজে না বুঝে মন্ত্রের মতো পাঠকরে থাকে।

‘আর তাদেরকে মুকাবিলা করারজন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব-বাহিনী সদা প্রস্তুত রাখবে যদ্দ্বারা তোমরা ভয়দেখাতে থাকবে আল্লাহর শত্রু আর তোমাদের শত্রুকে, আর তাদের ছাড়াওঅন্যান্যদেরকেও যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন। তোমরাআল্লাহর পথে যা খরচ করো তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে, আরতোমাদের সাথে কখনো জুলুম করা হবে না।’সুরা-আনফাল ৮: ৬০

এআয়াতের ব্যাখায় উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বরের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় এইআয়াততেলাওয়াত করতে শুনেছি যে, 'তোমরা সামর্থ অনুযায়ী শক্তি অর্জন কর।' অতঃপররাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্তির ব্যাখ্যায় বলেনঃ

'জেনে রাখো! শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা, জেনে রাখো! শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা, জেনে রাখো! শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা।'

তাইকাফিরদের মনে ভয়-ত্রাস সৃষ্টি করা মুসলিমদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ। কেআছে এমন যে আল্লাহর এই হুকুমকে অস্বীকার করতে পারে। আর এক্ষেত্রে মুসলিমরাশুধু ‘চোরের কাছে পুলিশ যে রকম ত্রাস সৃষ্টি করে’ যা ডা. জাকির নায়েক বলেথাকেন, সে রকম ত্রাস সৃষ্টিকারী নয়, বরং ‘সুলায়মান (আ.) যেভাবে বিলকিসেররাজত্বে তার শিরকের কারণে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন’ সে রকমও ত্রাসসৃষ্টিকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি সাল্লামকে যে ছয়টি বিষয়েঅগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হলঃ ‘আমি অনেক দূর থেকে শত্রুবাহিনীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয় প্রাপ্ত হই’ – হাদিসটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ছিলো, আমাদের প্রথম সমস্যা, আরদ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, আল্লাহ আমাদের মাঝে ‘ওয়াহ্হান’ ঢুকিয়ে দিবেন।

বিষয়: বিবিধ

১১১৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

265770
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : এই সিরিজটা আমি,সরলপথ নামক একটি ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে !
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:১৭
209526
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : ঠিক ধরেছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File