কৌটিল্য হতে কূটনীতি
লিখেছেন লিখেছেন আমজনতার কথা ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:০৫:৫০ দুপুর
কূটতর্ক, কূটনীতি এ শব্দগুলির উৎপত্তি কোথা হতে তা কি আমরা জানি? কূটনীতি বর্তমান বিশ্বে খুব সম্মানজনক ও দামি পেশা হলেও এখানে কূট শব্দাংশটি মূলত নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। কূট অর্থ বাঁকা, ধুরন্দর, ঝানু ইত্যাদি। অর্থাৎ কূটনীতিককে শুধু মেধাবী হলেই হবে না, বাঁকা বুদ্ধির অধিকারীও হতে হবে।
মূলত Kautilya বা কৌটিল্য(খ্রি.পূ. ৩২৭) ছিলেন প্রাচীন ভারতের কূট রাজনীতিবিদ। অনেক কূটবুদ্ধি তথা চিকন বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন এ ব্যক্তি। মেধাবীও ছিলেন বেশ। তিনি অর্থশাস্ত্রের প্রণেতারূপে পরিচিত। কেবল কৌটিল্য নয়, ইতিহাসে তাঁকে চাণক্য এবং বিষ্ঞুগুপ্ত বলেও উল্লেখিত হতে দেখা যায়।
গ্রিক সম্রাট আলেক্সান্ডার খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ সনে ভারত অভিযানে আসেন। কৌটিল্যকে এই সময়কার রাজনীতিক বলে অনুমান করা হয়। আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের অব্যবহিত পরে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাহ্মণ পন্ডিত কৌটিল্য বা চাণ্যক্য চন্দ্রগুপ্তের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। প্রতিদ্বন্ধী এক রাজার কাছ থেকে রাজ্য অধিকারে কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রণাদাতা হিসাবে কাজ করেন এবং চন্দ্রগুপ্তের শাসনকালে তাঁর প্র্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে চন্দ্রগুপ্তের শাসনের বিস্তারিত বিবরণ আছে। ৬০০ শ্লোকে গ্রন্থখানি রচিত। এর অধ্যায় সংখ্যা ১৫০। এ গ্রন্থের গুরুত্ব ও তাৎপর্য্ এখানে যে, এর মধ্যে রাষ্ট্র শাসনের সর্ববিষয়ে সম্রাট তথা শাসকের করণীয় সম্পর্কে উপদেশ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রাষ্ট্র বা শাসকের প্রকৃতি সম্পর্কে গ্রীক এরিস্টটলের ‘পলিটিকস’ এর ন্যায় তাত্ত্বিক আলোচনা না থাকলেও শাসকের করণীয় সম্পর্কে কৌটিল্যের উপদেশাবলী থেকে রাষ্ট্র ও শাসক সম্পর্কে তাঁর একটি ধারণারও আভাস পাওয়া যায়। শাসকের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্র এবং নিজের শাসনকে রক্ষা করা। তার শাসনকে রক্ষা করার জন্য তাকে শত্রু মিত্রকে চিহ্নিত করতে হবে। সম্রাটের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো ষড়যন্ত্র সৃষ্ট হচ্ছে কিনা, তা জানার জন্য তাকে গুপ্তচর নিয়োগ করতে হবে। শাসককের রাষ্ট্রের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতে হবে। তার কর্মচারীবৃন্দকে নির্দেশ দিতে হবে। ‘অস্ত্রশাস্তের’ মধ্যে সম্রাটের দৈনন্দিন কার্যের বিভিন্ন ভাগ ও প্রহরকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র ও নিজের শাসনকে রক্ষা করার জন্য শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সম্রাটকে প্রয়োজনে নির্মম হতে হবে। এ লক্ষ্যে কোনো কৌশল গ্রহণেই সম্রাটকে দ্বিধা করা চলবে না। সম্রাটের শাসনের লক্ষ্য হবে প্রজাদের সুশাসন করা। সম্রাটকে সুশাসনের জন্য শপথ গ্রহণ করতে হবে। এই শপথের মর্ম হবে আমি প্রজাদের নির্যাতন করলে মৃত্যুর পরে আমার যেন নরকবাস ঘটে। ‘অর্থশাস্ত্রে’ শাসনের যে কূটনীতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় তাতে এই গ্রন্থকে সমসাময়িক গ্রিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের ‘পলিটিক্স’ গ্রন্থের কোনো কোনো আলোচনার সঙ্গে সাদৃশ্যের ভিত্তিতে তুলনা করা চলে। শাসককে নিজের শাসন রক্ষা করার জন্য কোনো কৌশল গ্রহণেই দ্বিধা করলে চলবে না-অর্থশাস্ত্রের এরূপ উপদেশ ইউরোপের পঞ্চদশ শতকের ম্যাকিয়াভেলীকে ই্উরোপের কৌটিল্য বলে আখ্যায়িত করা চলে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট! এ ধরনের মৌলিক পোষ্ট দেবার মত ব্লগারের সংখ্যা কমে গেছে। বাকী পোষ্ট গুলো সময় করে পড়ে নেব। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন