স্যার ড. আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল (১৮৭৭-১৯৩৮ খ্রি.)
লিখেছেন লিখেছেন আমজনতার কথা ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:০১:৫০ বিকাল
ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুসলিম কবি ও দার্শনিক। মুহম্মদ ইকবাল জন্মগ্রহণ করেন শিয়ালকোট শহরে, ৯ নভেম্বর, ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে। পাঞ্জাব, ক্যাম্ব্রিজ ও মিউনিকে তিনি দর্শন ও আইনবিদ্যায় জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯০৮ সালে মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকবার তাঁর ‘পারস্যে তত্ত্ববিদ্যার বিকাশ’ বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেটাফিজিক্স ইন পারসিয়া’ শীর্ষক গবেষণার জন্য ডক্টর অব ফিলসফি উপাধি অর্জন করেন।
লাহোর সরকারি কলেজে মুহাম্মাদ ইকবাল কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯২৭ সালে তিনি পাঞ্জাব আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি কেবল জ্ঞান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনেও বিশেষ সক্রিয় ছিলেন।
১৯৩০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ সংগঠনের বার্ষিক অধিবেশনে মুহাম্মদ ইকবাল সভাপতিত্ব করেন। ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁর সাহিত্যকীর্তির জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ ‘নাইট’ খেতাবে ভূষিত করেন। এরপর থেকে তিনি স্যার মুহাম্মাদ ইকবাল নামেই সর্বত্র পরিচিত হন।
ইকবাল তাঁর সাধনা ও জ্ঞানচর্চা করেন প্রধানত উর্দূ ও ফারসী ভাষায়। তাঁর কাব্যের প্রধান সুর ও বিষয় হচ্ছে মুসলমানদের হারানো অতীত ঐশ্বর্য্য এবং ঐতিহ্যের স্মৃতি এবং বর্তমান হতোদ্যম মুসলমানের প্রতি নব জাগরণের উদাত্ত আহবান। ইকবালকে তাই মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়। মুসলমানের স্বাতন্ত্র্য, শক্তি ও স্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইকবালের ঐকান্তিক প্রয়াসের জন্য তাঁকে পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ পাকিস্তানের ভাবজনক বলে আখ্যায়িত করা হতো।
মুহাম্মাদ ইকবালের দার্শনিক চিন্তাধারাও মুসলমানদের উন্নতির উপায়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। তাঁর মতে মুসলমানের মুক্তির পথ হচ্ছে (১)ইসলামের বিধানের প্রতি আনুগত্য পোষণ, (২) আত্মসংযম, (৩) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ অর্থাৎ নবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন। মানুষের মুক্তির উপায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন হলেও ইকবাল কিসমত বা পূর্বনির্ধারিত ভাগ্যের তত্ত্ব গ্রহণ করতে চান নি। মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে ব্যক্তির নিজের স্বাধীনতাও কম নয়। ইকবালের চিন্তাধারায় পারস্যের বিখ্যাত সুফী কবি জালালউদ্দীন রুমী, জার্মান দার্শনিক নিৎসে এবং ফরাসী দার্শনিক বার্গসঁর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইকবালের ‘আসরারই খুদী’র মধ্যে তাঁর দর্শনের পরিচয় পাওয়া যায়। বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ। কিন্তু আল্লাহ এক নির্দিষ্ট সময়ে যে বিশ্বের সমস্ত ভবিষ্যৎ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, একথা ভাবা যায় না। আল্লাহ বিশ্বের ভূত-ভবিষ্যতের স্রষ্টা ও দ্রষ্টা তাঁর মূলগত সম্ভাবনার ভিত্তিতে; তাঁর প্রতিটি বাস্তব সৃষ্টির ভিত্তিতে নয়। অন্য কথায় আল্লাহ বিশ্ব সৃষ্টির কাজ সম্পূর্ণ করেছেন, একথা ঠিক নয়। আল্লাহ বিশ্বকে সৃষ্টি করে চলেছেন। আল্লাহর বান্দা মানুষও কেবল ক্রীড়নক নয়। মানুষও আল্লাহর প্রবহমান সৃষ্টিকার্যের সক্রিয় অংশীদার। এ তত্ত্বের মধ্যে বার্গসঁর ক্রিয়েটিভ ইভোল্যুশন এর প্রভাব স্পষ্ট।
ইকবালের প্রধান দার্শনিক রচনা হিসাবে তাঁর ‘দি রিকন্সট্রাকশন অব রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম’ গ্রন্থ পরিচিত। এই গ্রন্থে কবি বলেছেন, সামাজিক ক্ষেত্রে মুক্তি এবং অগ্রগতির জন্য ইসলামকে অবশ্যই গোঁড়ামি এবং অতীতের অবাস্তক শেকল থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। এক কালের বিধান অপর কালের মানুষের বিচারের উর্ধে্ব হতে পারে না। বর্তমানের মুসলমানকে অতীতের বিধান বিচার করে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে অগ্রসর হওয়ার পথ নির্ণয় করতে হবে। এরূপ তত্ত্বে ইকবালের অগ্রসর বা প্রগতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। ইকবালের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে ‘রামুজে বেখুদী’ এবং ‘জাবিদনামা’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘জাবিদনামাকে’ তাঁর প্রধান কাব্যিক সৃষ্টি বলে মনে করা হয়। স্যার মুহাম্মাদ ইকবাল ২১ এপ্রিল, ১৯৩৮ সালে লাহোরে পরলোকগমন করেন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন