এ এক অসাধারন পাশবিক আনন্দ অভিজ্ঞতা!

লিখেছেন লিখেছেন সত্যকথা ২৬ মে, ২০১৫, ০৬:৩১:০৬ সন্ধ্যা

সমস্যাটা নাঈম ও তার পিতার। আমি পড়েছি তার যাঁতাকলে। দু'জনের বিরোধের গভীরে গিয়ে দেখি...গাছের ডালে কাক,শালা আমিতো অবাক! সাথে আনন্দিতও। পিতা-পুত্রের লড়াইয়ে মাঝে পাশবিক আনন্দ পাওয়ার অভিজ্ঞতা আর ক'জনেরই আছে !

নাঈম সেই ২০১০ এএকদিন বাসায় এসে হঠাত হাজির। চোখে আনন্দের স্ফুলিঙ্গ! অনেক সাধনার সাবজেক্টে সে চান্স পেয়েছে ! আরাধ্য কিছু পেলে যা হয় আর কি ! সঙ্গীত ও নাট্যকলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট বিজ্ঞানে পড়ে কেউ সংগীত ও নাট্যকলার জন্য এতটা ব্যাকুল হতে পারে, নাঈমকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। আপাত প্রতিষ্ঠিত অনেক ভাল সাবজেক্ট ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকলেও নাঈম সংগীত ও নাট্যকলা ই পড়তে চায়। সংগীত ও নাট্যকলা নিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত নেগেটিভ দারস কে বিশেষ সুত্রে পরিচিত ব্রাদার নাঈম-এ আর নতুন কি বলে সাইড দিয়ে দিল। কিছুটা অবাক হলেও ইন্সট্যান্ট মুখে হাসি এনে ওর সিদ্ধান্তকে কনগ্রাচুলেট করতেই দেখি ওর মুখ কালো হয়ে গেল। আরে এ কি ? ৫ বছর ধরে চিনি ওকে। এমন হঠাত করে তো ওকে কখনো মুখ গোমরা করতে দেখি নি। কি হয়েছে প্রশ্ন করার সাথে সাথেই উত্তর - আব্বু আমাকে সংগীত ও নাট্যকলায় ভর্তি হতে দিবে না। অনুমতি চাইতে গিয়েই অনেক বকাঝাকা করছে। আযিযুল হক কলেজে প্রয়োজনে যে কোন সাবজেক্টে পড়তে বলছে, তবুও ঢাবিতে সংগীত ও নাট্যকলার কথা মুখে আনা যাবে না। মহামুশকিল ! এই উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে আমি তাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি। দাবীর সুরে বললো বাবাকে ম্যানেজ করতে হবে। নাঈমের দাবীকে উপেক্ষা করতে পারি নি। অচেনা এক বাবাকে কি বলে যেন ম্যানেজও করেছিলাম। জানি না স্পেসিফিক কি বলেছিলাম। তবে নাঈমের বাবা ফোনে বলেছিল--কেন জানি তোমার কথা মেনে নিলাম। তবে পরের জিম্মাদারিও তোমার।

প্যাচটা লাগলো গত মাস খানিক আগে। নাঈম ঢাকায় কি এক নাট্যদলের সাথে কাজ করে। বিভিন্ন টিভিতে তাদের অভিনিত নাটক প্রদর্শিতও হয়। নাঈম তার অসাধারণ প্রতিভার গুনে ঐ নাট্যদলে খুব দ্রুতই অভিনয় করার সুযোগ পেল। মোটামুটি মুল চরিত্রেই। সবকিছু স্বপ্নের মতই চলছিল। টিভিতে কোন নাটক প্রচার হলেই গর্বের সাথে ফোন দিয়ে বলতো ভাই অমুক আরটিভি টিউন করবেন প্লিজ...বাংলাভিষন প্লিজ......এনটিভি প্লিজ। ওর ফোন পেলেই বুঝতাম কোন এক চ্যানেল টিউন করতে হবে।

দিন সাতেক আগে স্ক্রিনে নাঈমের নাম্বার ভেসে উঠলো। বাসায় বসে আছি। এক হাতে ফোন উঠাচ্ছি আর আরেক হাতে রিমোট নিয়ে টিউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। রিসিভ করেই নাঈমের কন্ঠ শুনে ভাবলাম সাম্থিং রং। হু হু করে কান্না। সে আর থামেই না। মিনিট দুয়েক কেঁদে বললো সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে।

কেন ?

আব্বু কোন এক চ্যানেলে আমার অভিনিত নাটক দেখে আমাকে তাজ্যপুত্র ঘোষনা করেছে। এবার গাছে ডালে কাক না বসলেও আমি ঠিকই অবাক হয়ে গেলাম। এতটুকুতেই তাজ্যপুত্র ঘোষনা ?

বুঝলাম পাক্কা অভিনেতা নাঈম আত্মহত্যার হুমকী দিয়ে আসলে বলতে চাইছে-আপনি একটা উদ্যোগ নিন। নইলে......

আত্মহত্যার ব্যাপারটিকে পাত্তা না দিয়েই নাঈমের ফোন রেখে দিলাম নাঈমের আব্বুকে ফোন। নিজের সন্তানকে যে বাবা এত সিলি গ্রাউন্ডে তাজ্য করতে পারে, সে বাবা আমার ফোন রিসিভ করে সন্তানকে নাট্যকলায় ভর্তি করার উকিলকে যে কি করতে পারে বুঝতেই পারছি। তবুও সাহস করে ফোন দিলাম। সালামের পরেই কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলাম। ওনি অত্যন্ত শান্ত গলায় বললেন আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।

শিক্ষক মানুষ। ব্যক্তিত্যের দৃড়তা টের পেলাম। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলার পর সরাসরি নাঈমের ব্যাপারটা তুলে ধরলাম। আংকেল আরো বেশী শান্ত হয়ে বললেনঃ আমি শিক্ষক, সংস্কৃতির পাঠ আমিও দেই। নাট্যকলা, সংগীত আর রুপালী পর্দার কথা আমিও জানি। সাথে জানি তার ভিতরের অপ্রকাশিত বীভৎস এক্টিভিজম গুলোও। আমি আমার সন্তানকে স্টুপিড বানাতে পারি না। আমি মুসলিম মিশনারী নই হয় তো, তাই বলে আমার সন্তানকে মিশনের বিপরীতের আরেক মিশনের নায়ক বানাতে পারি না। তুমি আমার এলাকায় এসে দেখো। প্রতিবেশীরা ছি ছি পড়ছে। আমার ছেলে আরেক মেয়ের কোমর ধরে নাচানাচি করবে, মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে মন্ত্র জপে সাতঁপাকের হাটাহাটি করবে-আর আমি তাকে সংস্কৃতি চর্চা বলে পাশ কেটে যাব -তা হতে পারে না। তোমার কথা শুনেই ওকে ভর্তি হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ ? আর নয়। আমি তোমাদের কোন শুপারিশ শুনতে চাই না। হয় ও আমাদের ছাড়বে নয় তো ওই ঘৃণ্য কাজ ছাড়বে।

নিঃশব্দে আমি কথাগুলো শুনছিলাম। আর কিছু বলার সাহস পাই নি। চুপ করেই ফোন কেটে দিয়েছিলাম।

আমি এই ঘটনাটা কেন আপনাদের আরজে পেশ করলাম?

সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে। হ্যা। সংস্কৃতির সংজ্ঞা। আমার দেশের বাবারা এভাবেই সংস্কৃতিকে ট্রিট করে। সংস্কৃতির সংজ্ঞা যদি হয় "what we are" তাহলে নাঈমের বাবার এই চেতনাকে অন্ধযুগের ভ্রান্ত আদিম চেতনা বললেই সংস্কৃতির জাহেলী চেতনার ইজ্জত রক্ষা পায় না। নাঈমের বাবার এ সংস্কৃতি অনেক দিন ধরে বহমান চিরায়ত সংস্কৃতি। সত্য চেতনার। মুক্তির। বাংলাদেশের লাখো-কোটি মানুষ চকচকে জাহেলী কালচারকে এভাবেই মুল্যায়ন করে। তাদের কাছে সংস্কৃতির মুল্য জাহেল সন্তানের চেয়েও অনেক বেশী।

আজ নাঈমের সাথে কন্টাক্ট করলাম। কথা শুনে মনে হলো ও তাজ্যপুত্র হওয়াকে মেনে নিয়েছে। বাবা-মা কে ছেড়ে হলেও সে অভিনয় করেই যাবে। একটু গভীরে ঘেটে দেখলাম-নায়িকাও জুটে ফেলেছে। And is going to be married soon.

কি দারুন সংস্কৃতির খেলা। কি দারুন চেতনার খেলা ! বাবা তার সন্তানকে তাজ্য করে হাসিমুখে আর সন্তান আলিঙ্গন করে আরেক রমণীর বাহু !

আমার পাশবিক আনন্দের উপলক্ষ্য ঠিক এখানেই। এ জমীনে ওই জাহেলী সংস্কৃতি হয় তো অনেক বেশী গ্ল্যামার আর চকচকে পপুল্যারিটি এনে দিয়েছে কিন্তু গ্রামের ঐ বাবার ঈমানী অনুভুতিকে এতটুকুও নাড়াতে পারে নি। আমি নিশ্চিত দৃশ্যমান গ্ল্যামার আর পপুলারিটির আড়ালে জাহেলী অভিনেতাদের প্রতিনিয়ত তার অস্তিত্বদানকারীদের সাথে লড়তে হচ্ছে। মোহাচ্ছন্ন গ্ল্যামার আর খ্যাতি তাকে যতটাই পুলকিত করুক না কেন, যতই প্রাপ্তির ব্যাঞ্জনা ছড়িয়ে দিক না কেন-দিনশেষে নিজের অস্তিত্বের সাথে লড়াইটা নিশ্চয় তারা উপভোগ করতে পারেন না। এ এক অফ দ্যা রেকর্ড হার্টের লড়াই। বিশ্বাসের সাথে জাহেলিয়াতের লড়াই। যেখানে জাহেলরা বরাবরই হারে। সবাই তো সেলিব্রেটিদের উপরের চাকচিক্যময়, জৌলুসে ভড়া গ্ল্যামার দেখেন, খ্যাতি দেখেন-----তাদের ভিতরের অপ্রকাশিত লড়াইটা যদি একবার দেখতে পেতেন ! জাহেলিয়াতের জ্বলজ্বলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিপরীতে সুস্থ, সুন্দর সাংস্কৃতক লড়াইয়ের চারা এখনো গাছ হয়ে ওঠে নি সত্য। তবে এ জমীন, পরিবেশ, মাটি, ক্ষেত জাহেলী সংস্কৃতির জন্য অনেক বেশী এঁটেল আর আদর্শিক সংস্কৃতির জন্য ঠিক ততটাই উর্বর।

আমি আনন্দ পাই এটা ভেবে কেউ সুখ পায় অবৈধ কারও বুকে মাথা রেখে আর কেউ সুখ খোজে কলিজার টুকরো বৈধ সন্তানকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে!

এ এক অসাধারন পাশবিক আনন্দ অভিজ্ঞতা!

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

322710
২৬ মে ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
আফরা লিখেছেন : সঠিক সময়ে সঠিক সিন্ধান্ত না নিতে পারলে এরকমই হয় ।
322772
২৭ মে ২০১৫ রাত ১২:৫৪
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : ভাইয়া এটা কি সত্যির ঘটনা Surprised Surprised
সত্যির হলে আসলেই বেদনা দায়ক।
+

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File