ইয়েমেন ইস্যুঃ সৌদি আরব সংশ্লিষ্টতা-হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
লিখেছেন লিখেছেন সত্যকথা ২৯ মার্চ, ২০১৫, ০৫:২৫:৩০ বিকাল
এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি যে, থরথর করে হাত কাঁপছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। লিখার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনলাইনে ইস্যুটি নিয়ে পড়তে গিয়েই চোখ অশ্রু এসে গেল? ভাইয়ের রক্ত নিয়ে হোলিখেলার মত নিকৃষ্ট কাজ কি করে করা যায়? নিজের ক্ষমতাকে নিশ্চিত করার স্বার্থে কতটা নিচে নামা যায় ? কি করে সাম্রাজ্যবাদীদের পুতুল হয়ে আপনজনের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানো যায় ? সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধ দেখলে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুব সহজেই পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, বলছি ইয়েমেন বর্তমানে সৌদি আগ্রাসনের কথা। বলছি এক মুসলমানের আরেক মুসলমানকে হত্যার কথা।একই উম্মাহর রক্তখেলা দেখে পশ্চিমা আর ইসরাইলীদের অট্টহাসির কথা।
আমি জানি সৌদি আরব মানেই মুসলমানদের কাছে পবিত্রতার এক নাম। শ্রদ্ধা আর ভালবাসার দেশ। কেন এই ভালবাসা তা ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কি ? একটু ভেবে দেখেছেন? ইয়েমেনের সাম্রতিক সমস্যা নিয়েই আজকের এই লিখা। ইয়েমেন ইস্যুকে বুঝতে আমি দুটি দৃশ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।
একঃ
মিশরের মসজিদে হাজারো নাড়ি-পুরুষ-শীশু আশ্রয় নিয়েছে। রক্তপিপাসু জেনারেল সিসির বাহিনী একের পর এক গুলি করে মসজিদের মধ্যে রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে।ইখওয়ানের মজলুম মানুষদের পক্ষে সারা পৃথিবীবাসি প্রতিবাদ মিছিল করছে। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সিসিকে ধিক্কার জানাচ্ছে। শুধু সৌদি আরব আর ইসরাইল সিসির পক্ষে বিবৃতি দিলো। ইসরাইল তো বিশ্ব হারামজাদা। ওদের নিয়ে কথা বলার রুচি কোন বিবেকবান মানুষেরই থাকতে পারে না। কথা হচ্ছে মুসলমানদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিক সৌদি সরকারের বিবৃতি নিয়ে। ওরা বললো সিসি সৌদির পরম বন্ধু।সন্ত্রাসী ইখওয়ানের বিরুদ্ধে যে কোন একশনে সৌদি আরবের পুর্ণ সমর্থন আছে। শুধু বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বলা হয় ইখওয়ান বিরোধী অভিযানে সিসি সরকারকে সৌদি আরব ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে।কি করুন ইতিহাস ! সৌদি আরবের প্রধান সাম্রাজ্যবাদী মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট পর্যন্ত সিসির এই ন্যাক্কারজনক হামলা আর অবৈধ ক্ষমতা গ্রহনকে নিন্দা জানিয়েছিল।ইখওয়ানের সাথে শান্তিপুর্ণ আলোচনার আহবান করেছিল। অথচ সৌদি আরব ইখওয়ানের শিশুদের সন্ত্রাসী বলতে এতটুকুও পরোয়া করে নি। বলা হয়ে থাকে সৌদি আরবের অনুরোধেই মার্কিন সরকার সিসির সরকারকে মেনে নিয়েছে।
দুই,
গত বছর ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষগুলোর উপর বর্বর জানোয়ার ইসরাইলীদের কাপুরোষিত বিমান হামলার প্রতিবাদে সারা পৃথিবী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো। অনেক ইহুদী মানুষও এই হামলার প্রতিবাদ করলো। তখন সৌদি আরব বললো ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।হামাসের বাড়াবাড়ির কারনেই ইসরাইল হামলা করছে। আর হামাসকে পিছন থেকে উস্কানী দিচ্ছে ইরান আর তুরস্কের এরদোগান।
দুটি ঘটনা তুলে ধরলাম-আপনাদের মনে একটি প্রশ্নের উদ্রেক করার জন্য।
প্রশ্নঃ কেন সৌদি আরব মজলুম মুসলমানদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে ?
উত্তরঃ কারন মজলুম মুসলমানদের আন্দোলন ইখওয়ান আর হামাস টিকে গেলে তার ঢেউ সৌদি আরবেও লাগতে পারে।
“ঢেউ লাগতে পারে”-এই আশংকার ব্যাপারটি বুঝতে পারলে আজকের আলোচনার বিষয় “ইয়েমেন ইস্যুঃ সৌদি আরব সংশ্লিষ্টতা-হৃদয়ে রক্তক্ষরণ” বুঝা সহজ হবে।
এবার আসুন ইয়েমেনের দিকে ফিরে যাই। সমস্যার মুলে ইয়েমেন সরকার আর হুথি বিদ্রোহী। তাহলে জেনে নেই হুথি বিদ্রোহের আদ্যোপান্ত।
হুতি বিদ্রোহের পটভূমিঃ
হুতি বিদ্রোহের পটভূমি বর্ণনা করতে হলে আমাদের ‘আরব বসন্ত’ এ ফিরে যেতে হয়। সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন যে, ২০১১ সালে তিউনিশিয়া থেকে উত্থিত গণতান্ত্রিক বিপ্লব আরব জাহানে আঘাত হানে। সামন্তবাদ, গোত্রবাদ এবং একনায়কত্ববাদের বিরুদ্ধে ইয়ামেনের জনগণও জেগে উঠে। দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কলহ অবশেষে ক্ষমতা ছাড়েন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহ। দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচার বলে কথিত সালেহ-এর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন সূচিত হয়। প্রেসিডেন্ট সালেহ তার জাত ভাই মিশরীয় হুসনি মোবারকের মত অনেক টালবাহানা এবং সময়ক্ষেপণ শেষে পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় ঐকমত্যের প্রার্থী মানসূর হাদি একক প্রার্থী হিসেবে জাতির ম্যান্ডেড লাভ করেন। শতকরা ষাট ভাগ দক্ষিণাঞ্চলীয় সুন্নি এবং উত্তরাঞ্চলীয় চল্লিশ ভাগ শিয়া-এই দুই মাজহাবের মতপার্থক্য এবং পূর্বে থেকে চলমান উত্তর-দক্ষিণ বিরোধ তার জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া গোত্রগত শতধা বিভক্তিতো রয়েছেই। মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত চেপে বসে আল-কায়দা।
বর্তমান সংকটের তাত্ক্ষণিক কারণ হিসেবে জানা যায় যে উত্তর ইয়ামেনের সাদা প্রদেশের হুতি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। রাজনৈতিক উদ্যোগ এবং সমঝোতা প্রয়াস ব্যর্থ হলে তাদের মিলিশিয়া বাহিনী গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানী সানায় প্রবেশ করে। রাজধানীতে মিলিশিয়া বাহিনীর প্রবেশ এবং নিয়ন্ত্রণ আগে থেকেই সরকারকে অকার্যকর করে দিচ্ছিল। মধ্যস্থতাকারীদের সমন্বয়ে হুতি মিলিশিয়ারা জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনে রাজি হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর থেকে সমঝোতা চুক্তি আর যুদ্ধ বিরতির অব্যাহত ‘খেলা’ চলছিল।
ইয়েমেনের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিয়া মুসলমান। হুথিরাও শিয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। উত্তর ইয়েমেনের শিয়া আলেম বদর উদ্দিন আল হুথির নাম অনুসারে এই প্রতিরোধ আন্দোলনের নামকরণ করা হয়েছে। বদর উদ্দিন আল হুথির এক ছেলে হোসেন আল হুথি সরকারী বাহিনীর হাতে এর আগেই নিহত হয়েছেন। অপর ছেলে আব্দুল মালিক আল হুথি বর্তমানে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যম হুতি নেতাকে ‘প্রেসিডেন্টের প্রেসিডেন্ট’ বলে বর্ণনা করছেন। হুতি বিদ্রোহীরা সামরিকভাবে এতই শক্তিশালী যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের কাছে প্রেসিডেন্টের গার্ড বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।
ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ব্যাপক হামলা চালিয়েও এখন পর্যন্ত শিয়া হুথি যোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভাঙ্গতে পারেনি। বরং হুথি যোদ্ধারা উত্তর ইয়েমেনের সা'দা প্রদেশের ১৫ টি প্রশাসনিক অঞ্চলের প্রায় সবক'টিই নিয়ন্ত্রণ করছ। হুথিরা প্রথম থেকেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান চাইলেও ইয়েমেনের সরকার দেশটির উত্তরাঞ্চলের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে হুথি আন্দোলনকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, চলতি সংঘর্ষে ইয়েমেনের সরকারী বাহিনীর সাথে সৌদি বাহিনীও অংশ নিচ্ছে। সৌদি আরব হুথিদের উপর হামলার জন্য ইয়েমেনের সরকারকে তার ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার ফলে সংঘর্ষ নতুন মোড় নিয়েছে। সৌদি আরব ইয়েমেন সীমান্তের জাবাল দোখান ঘাঁটিটি হুথিদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইয়েমেনকে অনুমতি দেয়ার পরপরই হুথিরা তা দখল করে নেয়। এরপর এই অজুহাতে সৌদি আরব হুথিদের উপর সরাসরি হামলা শুরু । হুথিরা কয়েক জন সৌদি সেনাকে হত্যা ও বন্দী করার দাবি করেছে। সৌদি আরবও কয়েক জন হুথি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে। হুথিরা সৌদি আরবের এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লংঘন বলে ঘোষণা করেছে। হুথি আন্দোলনের নেতা আব্দুল মালিক আল হুথি বলেছেন, সৌদি আরব সব সময় ইয়েমেনের জনগণের সাথে শত্রুতা করেছে। এবার হামলার মাধ্যমে ইয়েমেনের স্বার্বভৌমত্ব লংঘন করেছে।
ইয়েমেনের শিয়া হুথিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রভাব সৌদি আরবের শিয়াদের উপর পড়তে পারে, এই আশংকায় সৌদি নেতৃবৃন্দ নিজেকে এই যুদ্ধে জড়িয়েছে। সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তের কয়েকটি শহরে শিয়া মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ইয়েমেনের সা'দা প্রদেশের অধিবাসীদের সাথে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। সৌদি শিয়া মুসলমানরাও তাদের সাথে সরকার বৈষম্যমূলক আচরন করছে বলে অভিযোগ করে আসছে। সৌদি আরব মনে করছে, ইয়েমেনে হুথিদের নিশ্চিহ্ন করা গেলে সৌদি শিয়া মুসলমানরা চীরতরে স্তব্ধ হয়ে যাবে।
ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা সেখানকার শিয়া মুসলমানদের সাথে বৈষম্য ও অন্যায় আচরনের প্রতিবাদে সংগ্রাম করলেও কোন কোন মিডিয়া তাদেরকে সন্ত্রাসী ও আল-কায়েদাপন্থী বলে প্রচার চালাচ্ছে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, আকিদাগত ও রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে শিয়া মুসলমান ও উগ্র আলকায়েদার মধ্যে সুস্পষ্ট মৌলিক বিরোধ রয়েছে। ইয়েমেনের হুথি নেতা আব্দুল মালিক আলকায়েদা সম্পর্কে বলেছেন, আল কায়েদা গোষ্ঠী হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়নক এবং ইহুদিবাদী ইসরাইলের কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য এই গোষ্ঠীকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া হুথি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ইরানের সাথে যোগাযোগ এবং ইরান থেকে অস্ত্র পাবার মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এমন সময় এই অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে যখন ইরান সব সময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইয়েমেন সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট সংঘর্ষরত সকল পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ইয়েমেনের পরিস্থিতি খোদ ইয়েমেন, সৌদি আরব ও ইরানসহ গোটা অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে দেশটির আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইয়েমেন সংকটের শুরুটা কিন্তু এতটা জটিল ও ব্যপ্তিময় ছিল না। উত্তর ইয়েমেন বিশেষকরে সা'দা প্রদেশের যাইদি শিয়া মুসলমানরা দীর্ঘ দিন ধরে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসানের পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছিল। ইয়েমেন সরকারের জন্য এসব দাবি পূরণ করা খুব একটা কঠিন বিষয় ছিলনা। কিন্তু ইয়েমেনের সরকার ঐসব ন্যায্য দাবি পূরণ না করে ঐ এলাকার জনগণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। পাঁচ বছর আগে সা'দা প্রদেশে শিয়া মুসলমানদের উপর সরকারী বাহিনীর প্রথম হামলায় সেখানকার শিয়াদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা সাইয়্যেদ হোসেন আল হুথি শাহাদাৎবরণ করেন। এই ঘটনার পর হুথিদের আন্দোলন জোরদার হয় এবং তারা আর্থ-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার বাস্তবায়নে আর সোচ্চার হয়ে উঠে।
ইয়েমেনের শিয়া হুথি নেতৃবৃন্দ প্রথম থেকেই বিরোধ মীমাংসার জন্য যুদ্ধবিরতি ও সংলাপের কথা বলে আসছেন। কিন্তু সরকার সংলাপের প্রস্তাব বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছে। ভ্রাতৃঘাতি এ লড়াইকে শিয়া নেতৃবৃন্দ এখনও টিকিয়ে রাখার পক্ষে নন। তারা এখনও যুদ্ধবিরতির কথা বলছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ শান্তি প্রস্তাবের জবাব দিচ্ছে গোলা ও ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে। যুদ্ধে সৌদি বাহিনীর অংশগ্রহণ মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর সংগঠন ও দেশগুলোকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শিয়া মাযহাবের প্রতি বিদ্বেষের কারণেই মূলত সৌদি আরব, ইয়েমেনের মুসলমানদের উপর হামলা চালিয়েছে।
সৌদি আরব অতীত কাল থেকেই ইয়েমেনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে এসেছে এবং ইয়েমেনের যাইদি শিয়া মুসলমানদের ওহাবি মতবাদে দিক্ষীত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তারা তাতে সফল হতে পারেনি। উল্টো উত্তর ইয়েমেনের জনগণ সাইয়্যেদ হোসেন আল হুথির প্রভাবে বিপ্লবী ইসলামের পথে অগ্রসর হয়েছে। ইয়েমেনের ঐ এলাকার মুসলমানরা সজাগ ও সচেতন হয়ে উঠায় সৌদি আরব এখন ভীত-সন্ত্রন্ত। কারণ ইয়েমেনের শিয়া অধ্যুষিত ঐ এলাকার সাথে সৌদি আরবের শিয়া অধ্যুষিত এলাকার সীমান্ত রয়েছে। সৌদি শিয়া মুসলমানরা যাতে ইয়েমেনের মুসলমানদের মতো তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠার সাহস না দেখায় সে লক্ষ্যেই রিয়াদ ঐ যুদ্ধে নিজেকে সরাসরি জড়িয়েছে এবং হুথি সংগ্রামীদের মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার জন্য সার্বিক চেষ্টা বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান সম্প্রতি হুথি যোদ্ধাদের অবিশ্বাস্য প্রতিরোধের প্রতি ইঙ্গিত করে লিখেছে, সৌদি বাহিনী হুথিদের কাছে পরাজয়বরণ করবে। হুথিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে সফল না হতে পেরে সৌদি বাহিনী আকাশ,জল ও স্থল পথে ক্ষেপনাস্ত্র ও বোমা নিক্ষেপ করে লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে।
ইয়েমেনের জনগণের উপর সৌদি ও মার্কিন বাহিনী ব্যাপক হামলা চালানোর পাশাপাশি এই ইস্যুতে ইরানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন অব্যাহত রেখেছে। তারা বলছে, ইরান নাকি হুথি যোদ্ধাদের অস্ত্র সাহায্য দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে যে ইয়েমেনের সৌদি সীমান্ত ও রেড সি উপকূল দিয়েই কেবলমাত্র ইয়েমেনের শিয়া মুসলমানদের সাথে ইরানের সংযোগ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু এই দুটি স্থানেই সৌদি আরব ও ইয়েমেনের বাহিনী কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে । আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার, ইয়েমেনের প্রায় প্রতিটি নাগরিকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে কারণ দেশটির আইনে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ব্যাপারে কোন বাধানিষেধ আরোপ করা হয়নি। কাজেই ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধাদের ভিন্ন কোন দেশের কাছে অস্ত্র সংগ্রহের প্রয়োজন।
এই হচ্ছে ইয়েমেনে সৌদি হামলার যৌক্তিকতা ! ইয়েমেনে হউথি আন্দোলনের বিজয় সৌদি রাজ ক্ষমতার জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াতে পারে-এত্টুকু বিবেচনায় ইয়েমেনের শিয়া মুসলমানদের রক্তকে নিজেদের জন্য বৈধ মনে করে নিল আমাদের প্রাণপ্রিয় সৌদি সরকার !“ঢেউ লাগতে পারে” তত্তের আল্টিমেট রেজাল্ট। ইয়েমেনের সমস্যার জন্য কে দায়ী-বিতর্ক পরে। আগে বিবেচনায় নিতে হবে ইসরাইল কাদের পক্ষে। আমরা জানি ইসরাইল খুব নগ্নভাবে ইয়েমেনের সরকারের পক্ষালম্বন করেছে। তারা হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আক্রমন শুরু করেছে। ওকজন মুসলমান হয়ে হুথি বিদ্রোহীদের পক্ষালম্বন করার জন্য এতটুকু যুক্তিই বেশী যে ইসরাইল হুথিদের বিরুদ্ধে।
মাঝে মাঝে আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন আবার কখনো আমি বড় ভাইদের প্রশ্ন করি-কেন সৌদি আরব বাংলাদেশের চলমান আন্দোলন নিয়ে ইসলাম্পন্থিদের পাশে দাঁড়ায় না? মিশর ইস্যু, ফিলিস্তিন ইস্যু, এবং ইয়েমেন ইস্যু নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করার পর উত্তরটা আমি পেয়ে গেছি। নিশ্চয় আপনারাও পেয়েছেন? হায়রে কাবা ঘরের খাদেম ! কিয়ামতের দিন মজলুমদের শত প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শুধু কাবার খাদেম হওয়ার অযুহাতে জান্নাতে চলে যাবেন ?
বিষয়: বিবিধ
১১৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন