গল্পঃ- "একজন নীলের জীবন কথা"

লিখেছেন লিখেছেন রবিন আহম্মেদ রাজ ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:০৭:১৮ রাত

নীলের বয়স ১৫ বছর । এই বয়সে তার অন্যসব বাচ্চাদের মতো স্কুলে যাবার কথা , কিন্তু ও সেটা করতে পারেনা । অন্যসব বাচ্চাদের মতো নীলের ও ইচ্ছে হয় মাঠে খেলাধুলা করতে , স্কুলে যেতে । ওর সেটা করার সময়'ই হয়ে উঠে না । নীলের বয়স যখন ৩ বছর তখন ওর মা মারা যায় , বাবা তখন আবার বিয়ে করে । কয়েক বছর সত্‍ মায়ের আদর ভালোবাসা পেলেও ওনার নিজের সন্তান হবার পর থেকে সেটা ক্রমাগত কমতেই থাকে ।

নীলের বাবাও সারাদিন রিক্সা চালিয়ে এসে ছেলের ততটা খেয়াল রাখতে পারতো না । তাই "সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে" প্রবাদ'টির মতোই নীল ও বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে যায় । একে তো সত্‍ মা ওর খোজঁ নেয় না , তার উপর বাবাও ব্যস্ত থাকেন । আর নীল প্রথমে টোকাই ছিল , সারাদিনে মুটামুটি ভালোই আয় করতে পারতো । পরর্বতীতে রাজ এবং রবিনের সাথে পরিচিত হবার পর থেকে নীল বাসায় তেমন একটা যায়না । ওদের সাথেই এখানে সেখানে যাওয়া , থাকা সবকিছু । বাসার সাথে যোগাযোগ এক প্রকারের বিচ্ছিন্ন'ই বলা যায় ।

আস্তে আস্তে অনেকের সাথেই ওর সখ্যতা গড়ে উঠে । একদিন শখের বশেই ও সিগারেটে ফুঁক দেয় । মূলত সঙ্গী-সাথীদের এই বদ অভ্যাসের জন্য'ই ওর কৌতুহলটা বেড়েছিল । বাড়বেই বা না কেন , এই বয়স'টাতেই তো সবকিছু সমন্ধে জানার আগ্রহ বেশি থাকে । আর আশেপাশের মানুষ যেটা করে সেটা সমন্ধে কৌতূহল হাজারগুনে বেড়ে যায় , নীলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ।

নীল আস্তে আস্তে গাঁজা , ইয়াবা সহ সব ধরনের মাদকদ্রব'ই নিতে থাকে । ও এখন আর টোকাই এর কাজ করেনা । রবিনের এক বড় ভাইয়ের হয়ে কাজ করে । ওনি সবার কাছে বড়ভাই নামেই পরিচিত । ওনার হয়ে নীল , রাজ এবং রবিন'সহ আরো কয়েকটা ছেলে কাজ করে । ওরা মূলত মাদকদ্রব পাচাঁর করে , আর সবার বয়স'ই কম হওয়াতে পুলিশের চোখেও সন্দেহ কম হয় ।

প্রত্যেকটি কাজ সফলভাবে হবার পর বড়ভাইয়ের পক্ষ থেকে ওদেরকে কিছু টাকা করে দেয়া হয় । এমনিতেও ওনিই ওদের সবার ভরণপোষনের খরচ দিয়ে থাকেন । কাজের শেষের টাকাটা ওদের কাছে বকশিশ হিসেবেই আসে । ওরা নিজেরা কখনো ভেবে দেখেনি যে ওরা কি করে দেশ এবং জাতির ভবিষ্যতকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছে । ভাববেই কি করে , ওদেরকে তো কেউ কোনদিন বলেনি যে এটা কতটা ক্ষতিকর । ওরা পেটের দায়ে কাজ করে , আর ক্ষুধার জ্বালা কতটুকু সেটা যে না পেয়েছে সে কখনো বুঝবে না ।

নীলের অবশ্য এসব নিয়ে এখন মাথাব্যাথা নেই । ও মনে করে আগে সত্‍ মার সংসারে ৩ বেলা ঠিক মতো পেট পুরে খেতে পারিনি , আর এখন কত খাবার নষ্ট করি । আরও ভাবে বড়ভাই না থাকলে ও কবেই অনাহারে মারা যেত , বড়ভাইয়ের এখানে এনে দেয়ার জন্য রবিনের প্রতি ওর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই ।

আজ প্রায় ২-৩বছর হয়ে গেল পরিবারের কারো সাথে ওর কোন রকমের যোগাযোগ নেই । থাকবেই বা কি করে , ও তো সেই কবেই বাসা থেকে চলে এসেছিল । বাবার কথা মাঝে মধ্যে যে মনে পড়েনা তা নয় , আসলে ও কি করে বাবার সামনে যাবে সেটাই ভেবে পায়না ।

বছর দুয়েক পরের কথাঃ-

নীল এখন একজন ফেরারি আসামি , দুইটি খুন সহ কয়েকটি মামলা রয়েছে ওর নামে । তার সাথে সব ধরনের নেশায় আসক্ত , নেশার টাকা জোগাড় করতে সব ধরনের কাজ'ই ও করতে পারে । পৃথিবীর সবথেকে ঘৃনিত কাজ করতেও ওর হাত কাঁপেনা , একটুও মায়া লাগেনা । ও এখন আর বড়ভাইয়ের হয়ে ঠিকমতো কাজ করেনা । নিজেই রবিন এবং রাজকে নিয়ে গ্যাং খুলেছে । কারন এখন আর আগের মতো কাজে মনযোগ দিতে পারেনা , তাছাড়া এখন তারা মুক্তভাবে কাজ করতে পারে ।

হঠাত্‍ করেই নীল কয়েক কেজি গাঁজা ও কয়েকশ ফেন্সি নিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে । আগে বড়ভাই সবকিছুর সমাধান করতো , এখন তো ও আর ওনার হয়ে কাজ করে না তাই পুলিশ ও নীলকে র্কোটে চালান করে দেয় । ও অবশ্য এর আগে রাজ এবং রবিনের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল কিন্তু ওরা কেউই আসেনি । নীল তখন নিজেকেই ধিক্কার দিয়ে বলল "পৃথিবীটাই বেঈমান হয়ে গেছে" ।

নীলের পক্ষে কোন উকিল না থাকায় এবং আগের জোড়া খুনের মামলা থাকায় ওর সাজা হয়ে গেল ।

নীল এখন জেলের ভিতর বসে বসে ভাবছেঃ- "সত্যিই কি আমি মানুষের জীবন নিয়ে এতদিন বেঁচে ছিলাম , এটাকে তো জীবন বলেনা । সত্যিই এই শাস্তিটা পাওয়া আমার উচিত ছিল , না হলে জীবনের মানেটাই বুঝতে পারতাম না"

অফটপিকঃ- মানুষ তখন'ই তার ভুলটা বুঝতে পারে যখন সে তার ভুলটার জন্য শাস্তি পায় । তখন'ই তার মনে অনুশোচনার জন্ম হয় । তাই "পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করুন,পাপীকে তার ভুলটা শোধরে নেবার সুযোগ দিন"

বিষয়: বিবিধ

৮৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File